You are here
Home > Blog > নিজের ভালো বা মন্দ বুঝতে পারার গুরুত্ব

নিজের ভালো বা মন্দ বুঝতে পারার গুরুত্ব

আমার খুব ইচ্ছা ছিল লেখক হবার। চাকুরি বাকরি করবো না- শুধু লিখবো। পত্রিকা, ম্যাগাজিন আর বই লিখবো। অনেক কিছু লিখবো এমন চিন্তা ছিল। গল্প, উপন্যাস, রিসার্চ আর্টিকেল, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতি, খেলা, কম্পিউটার বা আইসিটি এমনি অনেক টপিকে অনেক কিছু লেখার চিন্তা ছিল। অল্প লোক পড়লেও আমার কোন আপত্তি ছিল না।
তাই ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি মানে আজ থেকে ২১ বছর আগে সাইবার ক্যাফেতে বসে পড়ি ইন্টারনেট নিয়ে জানার উদ্দেশ্যে। সেখানেও চিন্তা ছিল অনলাইনে লিখবো এবং লিখেছি অনেক। ব্লগে লিখেছি আর গত প্রায় ৯ বছর ধরে ফেইসবুকে।
ফেইসবুকে লেখালেখি শুরু হয় অনেকটা দুর্ঘটনা ক্রমে বা হটাৎ করেই। ই-ক্যাব এর প্রেসিডেন্ট এর দায়িত্ব নিতে হয় কারন অন্য কেউ একদম শূন্য থেকে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড় করাতে আগ্রহী ছিল না। তখন আমার ফ্রেন্ড লিস্টে মনে হয় ১৬১ জন ছিল। এমন অবস্থা থেকে চেষ্টা করতে হয়েছিল। ফেইসবুকের আমি তেমন কিছু জানতাম না। জানতে হয়েছে, শিখতে হয়েছে। এরপর যত দিন যায় আমার লেখা দিয়ে ফেইসবুকে অনেক কিছুই করতে পেরেছি।
তবে এসব লেখা ছিল ছোট ছোট পোস্ট। মূল উদ্দেশ্য ছিল কখনো ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠা, কখনো সার্চ ইংলিশের মাধ্যমে মানুষকে ইংরেজি শিখতে উৎসাহিত করা, উইতে দেশি পণ্যের ই-কমার্সকে জনপ্রিয় করা, ডিজিটাল স্কিলস গ্রুপে লেখাপড়ার ভিত তৈরি করতে ফেইসবুকের ব্যবহার মানুষকে বুঝানো, সোয়াপিবুকস গ্রুপে কিশোর ক্লাসিক বই পড়ানো, টেস্ট বিডিতে হোম মেইড ফুডের প্রচার এমনি অনেক গ্রুপে অনেক কিছু করা অন্যদের জন্য।
তা করতে গিয়ে অনেক ভক্ত পেয়েছি, অনেক অভক্ত পেয়েছি। আইডিয়া গুলোর জন্য অনেকে উপহাস করেছে আবার সেগুলো ফলো করেছে এবং আমার অবদান অস্বীকার করেছে। যেমন পুরো ২০২১ সালে আমি প্রতিদিন বলেছি যে দেশি পণ্যের উদ্যোক্তারা যেন নিজের প্রফাইলে নিজের প্রডাক্ট আর বিজনেস নিয়ে পোস্ট দেয়। তাহলে এক সময় সেল হবে।
অনেকেই এ নিয়ে উপহাস করেছে যে আমার কারনে প্রফাইলকে বাজার বানাচ্ছে মানুষ। তারপর তারা এক সময় প্রফাইলকে বাজার বানিয়ে ফেলে এবং এই আইডিয়া যে আমার দেয়া তা অস্বীকার করে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি টু এপ্রিল এই ৪ মাস জিআই পণ্যের ডকুমেন্টশনের ভিত তৈরি করতে চেষ্টা করেছি। তা করতে গিয়ে দেখেছি যে দুটি দিকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি- বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলা সাহিত্য। তাই বলা শুরু করলাম যে প্রতিদিন মাত্র ১০ পেইজ বই পড়ে একটা পোস্ট দিতে। অনেকেই ঝাপিয়ে পরলেন এবং তারপর নাই হয়ে গেলেন।
বছরে বাংলা সাহিত্য নিয়ে ৩ হাজার পেইজ পড়লে আপনার লস আমার লাভ- এমন কথাও আড়ালে আবডালে বলে লোকে। তা বলুক। তাতে আমার কি? লেখাপড়া লস বলে মনে হলে করবে না- এর বাইরে আর কি বলার আছে আপনার বা আমার?

জিআই পণ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সবচেয়ে বড় যে শক্তি তা হল আশা আপুর ডেডিকেশন। আপু লেখাপড়ার অংশটা সামলান আর আমি ফেইসবুকে মানুষকে এই লক্ষ্যের দিকে এক করে এগিয়ে নেবার অংশটা সামলাই। মানে বলা যায় আমার মত আরেকজন রাজিব আহমেদকে পেয়েছি আশা আপুর মধ্যে। ফলে দারুন সাফল্য এসেছে। মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে অনেক এগিয়ে গেছি।
ঐ যে আমার একটা আইডিয়া যে ১০০ দিন এক মনে চেষ্টা করে গেলে ভাল কিছু সম্ভব- তা নিয়েও অনেকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেছে। তবে এটা কপি করা অনেক কঠিন কারন এক মনে চেষ্টা করা আসলেই কঠিন। খুব কম মানুষ পারে। আর যারা পারে তাদের রাজিব আহমেদকে বিদ্রুপ করার সময় বা আগ্রহ কোনটাই নেই। তারা নিজেদের কাজে সাধনা করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।
এই পোস্ট অলরেডি অনেক বড় হয়ে গেছে- ৫০০+ শব্দ লেখা বা টাইপ করে ফেলেছি। বড় পোস্ট পড়ার অভ্যাস তৈরি করার জন্য ১০ মিনিট রাইটিং পোস্ট গুলো খুব কাজের। তাই কিছু লোক আমার লেখা বেশ মন দিয়ে পড়ে।

যাদের সাথে ইভেন্ট গুলোতে দেখা হয় তাদের অনেকেই বলেন যে আমার লেখার কারনে তারা মানসিক শক্তি পান। অনেকে ঘুম থেকে উঠে ফেইসবুকে বসলে সবার আগে নাকি আমার লেখা পড়েন। তবে এই আগ্রহী বেশি দিন ধরে থাকেন তেমন কারো মধ্যেই। এ নিয়ে আমার খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। যাদের ভাল লাগবে টিকে থাকবে।
আগে এসব নিয়ে মন খারাপ হত। না পাঠকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে না। আসলে আমার প্রফাইলে লাইক কমেন্টের সংখ্যা তেমন কমে নি। পাঠকের সংখ্যাও কমে নি। যা কমেছে তাহল নিয়মিত টিকে থাকার লোকের সংখ্যা।
আমার মন খারাপ হত এজন্য যে যারাই বলেছে চরম খারাপ সময়ে আমার পোস্ট গুলো পড়ে মনে শক্তি পেয়েছে, জীবনে টিকে গেছে, এগিয়ে গেছে, আমার কাজের কারনে লাখ টাকা সেল হয়েছে, চাকুরি পেয়েছে বা প্রমোশন পেয়েছে ইত্যাদি মানে কোন না কোন ভাবে উপকৃত হয়েছে তারা টিকে থাকলে তো আরো উপকার পেত। টাকা পয়সার ব্যপারও নেই। আমার একটা পোস্ট ২-৩ মিনিটে পড়ে তারপর ৪-৫ মিনিট সময় দিয়ে একটা কমেন্ট করা। এই তো।
কিন্তু এখন আর মন খারাপ হয় না এজন্য যে যার যার ভাল তার নিজের কাছে। আমার পোস্ট নিয়মিত পড়া যদি ভাল মনে না হয়, আমার কিছু করার নেই। বরং পুরানো চলে যাবে নতুনরা আসবে। জীবনের এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।

তাই এখন আর এসবে কোন প্রতিক্রিয়া হয় না। আজ যে আমার কারনে জীবনে হতাশা থেকে মুক্তি পেয়েছে বলছে কাল সে আমাকে তেল দিতে পারবে না বলে গালি দিলেও কোন অনুভূতি হয় না আমার মনে। বরং তেল দেয়ার মত খারাপ কাজ থেকে নিজেকে কেউ মুক্ত করতে পেরেছে তাতেই আমার ভাল লাগে।
আমি তো আমার মত চলছি, লিখছি, চিন্তা করছি, আইডিয়া নিয়ে ভাবছি ইত্যাদি। আসলে বয়স হয়ে গেছে ভালোই। তাই এখন আর কোন কিছু নিয়েই আবেগ প্রবন হই না। কাউকে বুঝাতেও যাই না বা কারো জন্য টেনশনও করি না।
আমি মনে করি প্রতিদিন ১০ পেইজ বই পড়া ভাল। বাংলা ভাষায় তা পড়া কঠিন কিছু না। কিন্তু বেশীরভাগ মানুষ উল্টা ভাবে চিন্তা করে। বই পড়ে কি লাভ, লাইক কমেন্ট আসে না কেন, বই পড়ে অন্যদের পাবলিসিটি হচ্ছে এই হিংসাও অনেকের কাজ করে।
প্রায় ৯ বছর আগে ই-ক্যাব নিয়ে চেষ্টার কারনে ফেইসবুক লেখক হয়ে যাই। তখন থেকে চিন্তা ছিল অন্যদের ঘিরে। তরুনরা ভাল করুক, তারা যেন প্রতারিত না হয়, ই-কমার্স তাদের জন্য সুযোগ নিয়ে আসুক- এসব চিন্তা ছিল। হ্যাঁ, ই-কমার্স, ই-লার্নিং অনেক সুযোগ তৈরি করেছে এতে সন্দেহ নেই। এসবে বাংলাদেশে আমার অবদান কতটা তা নিয়ে অবশ্যই দ্বিমত থাকতে পারে তাতে কোন সমস্যা নেই।

আমার আগে চিন্তা হত যে আমি থেমে গেলে এমন ভাবে অন্য কেউ চেষ্টা করবে না। এখন আর এই টেনশন নেই কারন ৯ বছরে ফেইসবুকের দুনিয়া এদেশে অনেক বড় হয়েছে। অনেক সুযোগ আছে, রাস্তা আছে।
এসব বলছি এজন্য যে আমি সব সময় চেয়েছি ফেইসবুককে মানুষ ভাল কাজে লাগাক। ভাইরাল টপিক নিয়ে মাতামাতি না করে লেখাপড়া করুক। তবে খুব কম মানুষ তা চায়। এটাই আসল সমস্যা। অন্য সব কিছুর সমাধান আছে কিন্তু আপনি কিছু না চাইলে তাতে ভাল করা সম্ভব না।
১ হাজার পোস্টের একটি লেখা লিখতে পেরে ভাল লাগলো। এটা পড়তে আপনার হয়তো ৪-৫ মিনিট লাগলো।

লেখকঃ রাজিব আহমেদ, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)

খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top