You are here
Home > Blog > ধারাবাহিক উন্নতির মূলমন্ত্র: ‘Kaizen’ (কাইজেন)

ধারাবাহিক উন্নতির মূলমন্ত্র: ‘Kaizen’ (কাইজেন)

কোনো একটা মোটিভেশনাল স্পিচ শুনে বা বই পড়ে আমরা বেশির ভাগ সময় হঠাৎ করেই খুব বেশি মোটিভেটেড হয়ে যাই। ভাবি যে, আজ থেকেই একদম পুরোপুরি বদলে ফেলব নিজেকে, সব স্কিল ডেভেলপ করে ফেলব, সব বদঅভ্যাস বাদ দিয়ে দিব ইত্যাদি ইত্যাদি। খুব স্পিডে হয়তো এই বদলে যাওয়ার মিশনও শুরু করে ফেলি, কিন্তু হঠাৎ এই পরিবর্তন আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে ম্যাচ করতে পারে না, আমাদের ব্রেন বিদ্রোহ করে, ফলে আরও বেশি ক্লান্তি বোধ করি আমরা, তাই দ্রুত বদলে যাওয়ার আগ্রহও হারিয়ে ফেলে আগের জীবনযাত্রায়ই ফিরে যাই। বিন্দুমাত্র পরিবর্তনও আর করতে পারি না এভাবে নিজের। তাই পরিবর্তনের পদক্ষেপ হতে হবে খুব ছোট ছোট এবং স্বাভাবিক, যেন আমাদের বর্তমান রুটিনে এটি খুব বেশি প্রভাব ফেলতে না পারে, অতিরিক্ত কষ্ট আমাদের না হয়, এর জন্য যেন বাড়তি স্ট্রেস ফিল করতে না হয়। এই ছোট ছোট পদক্ষেপই আমাদেরকে এক সময় অভ্যস্ত করে ফেলবে। ধীরে ধীরে আমরা এর পরিমাণ আরও বাড়াতে পারব কোনো রকম বাড়তি মেন্টাল ব ফিজিকাল প্রেসার না নিয়েই।
“Doing something small is better than nothing.”

যেমন ধরেন, আমি লিখতে খুব পছন্দ করি। সব সময় মাথায় অনেক অনেক টপিক ঘুরে যেগুলো নিয়ে বিশাল বিশাল আর্টিকেল লিখব বলে চিন্তা করি আর সার্চ করে পড়ি। এতো বেশি সময় আমি যাস্ট লেখার জন্য প্ল্যান করা, সার্চ করা, চিন্তা করা ইত্যাদি করে কাটাই যে আমার লেখাই শুরু করা হয় না। বিশাল আর্টিকেল লিখতে বসার প্রেসার মাথায় নিয়ে আজকে না কালকে করে করে এক সময় লেখার আগ্রহই হারিয়ে ফেলি। কিন্তু আমি যদি একটা টপিক চিন্তা করে সেটা নিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১ ঘন্টা সুনির্দিষ্ট ভাবে সময় দিতাম আর মাত্র ১০০-২০০ শব্দ করে লিখে যেতাম, তাহলে সপ্তাহে ৭০০-১৪০০ শব্দের একেকটা স্ট্যান্ডার্ড আর্টিকেল হয়ে যেত। এটা আমার ব্রেনে বাড়তি কোনো চাপও ফেলত না, আমার দৈনন্দিন রুটিনেও খুব বেশি পরিবর্তন এর জন্য আনতে হত না।

আবার দেখেন, জিআই পণ্যের খুঁজে আমরা বাংলা সাহিত্যের চর্চা করছি। যারা হয়তো একদমই কোনো বই পড়তাম না, তারাও প্রতিদিন এখন পড়ছি। কারণ @Razib Ahmed স্যার খুব সংক্ষিপ্ত একটা গাইডলাইন দিয়েছেন যে, প্রতিদিন মাত্র ১০ পেইজ করে পড়েন আর তা নিয়ে লিখেন। এটা একদমই সহজ একটা গাইডলাইন। এর জন্য ১ ঘন্টা সময়ের থেকে বেশি কোনোভাবেই লাগার কথা না, একদমই কষ্ট হওয়ারও কথা না, নিজেদের কাজ বাদ দিয়ে এই সময় বের করতে হবে এমনও না। বরং এই সময়টা হয়তো বই পড়ার ফলে আপনার কোনোভাবে হেলায় নষ্ট করা সময়টুকুর সদ্ব্যাবহার হচ্ছে। পাশাপাশি সাহিত্য আপনার বিনোদনের খোরাক হচ্ছে, লেখার, চিন্তা করার এবং স্টোরি টেলিং স্কিল বাড়াচ্ছে আপনার অজান্তেই।

‘Kaizen’ পড়ে শেষ করলাম আজকে। ‘Kaizen’ শব্দটার সাথে আমার প্রথম পরিচয় ঘটেছিল MBA এর ক্লাসে। টোটাল ৪টা সেমিস্টারে Jewel Kumer Roy স্যারের মার্কেটিং, হিউম্যান রিসোর্স, ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ৪টা কোর্সের ক্লাস পেয়েছিলাম। আর প্রত্যেকটা কোর্সের ক্লাসেই স্যার বিভিন্ন উদাহরণ দিতে গিয়ে জাপানের এই Kaizen থিউরির কথা এতো বেশি বার বলেছেন যে, সব সময় কানে বাজত আমার “Kaizen means Continuous Improvement.” তখন থেকেই এটা নিয়ে আরও জানার আগ্রহ কাজ করত। ইন্টারনেটে সার্চ করে তখন বেশ কিছু আর্টিকেলও পড়েছিলাম।
জাপানের সংস্কৃতি নিয়ে জানতে খুব ভালো লাগে আমার, অনেক ইউনিক আইডিয়া পাওয়া যায়। এর বিভিন্ন দিক নিয়ে অনেক স্টাডি করেছিলাম গতবছর। সেখান থেকে দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে জাপানের ‘ফুরোশিকি’ প্যাকেজিং আইডিয়াকে কাজে লাগাতে পেরেছি খুব ভালো ভাবেই।

বইটা আমাকে খুব ভালো ভাবেই প্রভাবিত করতে পেরেছে। কাইজেন কী এবং আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা কীভাবে এই কাইজেন স্ট্রাটেজি ফলো করে অবস্থার পরিবর্তন এবং উন্নতি করতে পারি তা খুবই সুন্দরভাবে লেখক উপস্থাপন করেছেন। এই পরিবর্তন হতে পারে শারীরিক, মানসিক বা আর্থিক, হতে পারে বাসার কাজের বা কর্মক্ষেত্রের, হতে পারে সম্পর্কগুলোর উন্নয়নের, হতে পারে নতুন কোনো স্কিল ডেভেলপমেন্টের বা কোনো একটা শখের কাজ শেখার ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। ২৭০ পেইজের এই বইটায় আসলে অনেক অনেক মেসেজ আর এডভাইস আছে যেগুলো সব একবারে মাথায় নেয়া কঠিন। তাই কয়েকটা স্পেসিফিক পয়েন্ট আমি আমার মাথায় সেট করে নিয়েছি যেগুলো আমি নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার চিন্তা করছি।

  • মানুষের একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, একদম কিছু না করে থাকতে না পারা। হোক পজিটিভ না নেগেটিভ, কিছু একটা করে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেই হবে, নিজের উপস্থিতি সম্পর্কে সবাইকে বার বার অবগত করতে হবে। বর্তমানে এই এটেনশন সিকিং এবং নেগেটিভলি নিজেদের ব্যস্ত রাখার প্রবনতাটা বেড়েছে এটা সবাই ভালোই বুঝতে পারি বিভিন্ন ভাইরাল টপিক নিয়ে যেভাবে সবাই ঝাঁপিয়ে পরে তা দেখে। নেগেটিভ কিছু এবং বাজে কোনো অভ্যাস আমাদেরকে খুব দ্রুত এফেক্টেড করে। আর যেহেতু মানুষ কিছু না করে থাকতে পারে না প্রাকৃতিক ভাবেই। তাই কোনো একটা নেগেটিভ দিক বা বাজে অভ্যাসকে রিপ্লেস করতে হবে এর বিনিময়ে কোনো একটা ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে।
  • একই সময়ে যে কোনো একটা কাজে ফোকাস করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যখন যাই করি তাতে সর্বোচ্চ মনযোগ দিতে পারলে এর রেজাল্টটা অসম্ভব ভালো হয়, খুব সাধারণ ব্যাপার থেকেও অসাধারণ রেজাল্ট আসতে পারে। আমরা দেখা যায় খেতে খেতে টিভি দেখি, সোসাল মিডিয়া স্ক্রল করি৷ এটা খুব একটা ভালো অভ্যাস না। খাওয়ার সময় শুধু খাওয়াটাকেই এঞ্জয় করা উচিত, খাবারের প্রত্যেকটা উপাদানকে ফিল করা উচিত। এর অনেক সাইকোলজিকাল এবং ফিজিকাল ইমপেক্ট রয়েছে।

এছাড়া আমি নিজের ক্ষেত্রে সব সময় এটা দেখেছি যে, যখন আমি কোনো কাজের প্রতি খুব সিরিয়াস হই আর শতভাগ ফোকাসড থাকি, তখন অনেক দ্রুত অনেক অসাধ্যও সাধন করে ফেলতে পারি। এই বছর জিআই নিয়ে যা যা করেছি তা প্রায় অসাধ্য সাধনের মতো কাজই ছিল। বিশেষ করে প্রথম ৩ মাস জিআই ডকুমেন্টেশন আমার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিশেবে মাথায় সেট করে নিয়েছিলাম, সোসাল মিডিয়ায়ও খুব একটা ঢুকতে ইচ্ছে করে নি কাজের সময়টায়, বরং মাঝে মাঝে ফেইসবুকে ঢুকে ২-৩ মিনিট স্ক্রল করাটাও বিরক্তিকর মনে হত। আসলে অভ্যাস জিনিসটাই এমন যে, একবার কোনো কাজের অভ্যাস তৈরি হয়ে গেলে এটা আমাদের মনের ভেতর মিশে যায়, ব্রেনে সেট হয়ে যায়। কোনো অভ্যাস হয়ে যাওয়া কাজ করতে আর আপনাকে বাড়তি স্ট্রেস নিতে হয় না, শরীর মন অটোমেটিক কাজ করতে থাকে।

আর কাইজেন ফলো করতে হলে প্রথমে আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে আপনি কোন দিকে পরিবর্তন করতে চান? কী নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে চান, পুরনো কী অভ্যাস বাদ দিতে চান? সব পরিবর্তন একসাথে করা যাবে না, তাই আপনার প্রায়োরিটি অনুযায়ী সিরিয়াল করতে হবে, নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে যে, কোনো পরিবর্তনটা আপনার সবচেয়ে বেশি দরকার, কেনো দরকার?
এটা ঠিক করার পর, প্রতিদিনের রুটিনে যেন খুব একটা পরিবর্তন না আনতে হয় সেভাবে ছোট ছোট গোল সেট করে নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
আমার যেমন অনেক অভ্যাস পরিবর্তনের দরকার আছে বলে ফিল করি। আর এর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা আমি আলাদা করেছি তা হলো – পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করা, অতিরিক্ত খরচ কমানো এবং ধর্মীয় চর্চা বৃদ্ধি। ইনশাআল্লাহ প্রতিদিন অল্প অল্প করে এই পরিবর্তনগুলোর দিকে চেষ্টা করে যাব।
তো, কাইজেনের মাধ্যমে আপনার কী ধরনের পরিবর্তন দরকার বলে মনে হয়?

খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top