You are here
Home > Blog > দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির থট লিডার রাজিব আহমেদ

দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির থট লিডার রাজিব আহমেদ

Thought Leadership কী?

‌থট লিডারশীপ হচ্ছে কোনো ব্যাক্তির বিভিন্ন আইডিয়া এবং চিন্তার সমন্বিত রূপ যা প্রকাশ করে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা নির্দিষ্ট একটি সেক্টরের উপর তিনি বিশেষ এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞ। অনেক বিজনেস লিডার এবং এক্সিকিউটিভরা থট লিডার হতে চান তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি যা দরকার, তা হল সেই বিষয় বা সেক্টর নিয়ে প্যাশনেট হতে হবে, অনেক কিছু পড়তে হবে, জানতে হবে, শিখতে হবে। থট লিডার হওয়ার জন্য অবশ্যই অনেক বেশি ডেডিকেশন ও ধৈর্য দরকার, অনেক কৌশলীও হতে হয়।

থট লিডাররা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে তাদের অর্জিত দক্ষতা, জ্ঞান শেয়ারিং এর মাধ্যমে কোনো ব্যাক্তি, কোম্পানি বা কোনো একটা সেক্টরের উন্নতিতে কাজে লাগায়। কন্টেন্ট রাইটিং এবং সোসাল মিডিয়া এক্টিভিটিকে থট লিডাররা কাজে লাগায় মানুষকে ইনফ্লুয়েন্স করার জন্য।

দূর দৃষ্টিসম্পন্ন উদ্ভাবনী সব চিন্তা এবং আইডিয়ার উদ্ভাবকরাই হলো আসলে থট লিডার। তারা খুব দ্রুত মানুষের চিন্তাভাবনায় প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাদের লেখা ও কথা মানুষকে অনুপ্রাণিত করে থাকে।

তাই দেখা যায় এ ধরণের থট লিডারদেরকে বিভিন্ন কনফারেন্স, ইভেন্ট, কনভোকেশন ইত্যাদিতে তাদের সমৃদ্ধ চিন্তাভাবনা বক্তৃতার মাধ্যমে শেয়ার করার জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়। তারা তাদের গভীর বিশ্লেষণধর্মী বক্তব্য দ্বারা মানুষের চিন্তার জগৎকে পজিটিভ দিকে পরিচালিত করে এবং একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।

আমাদের জন্য থট লিডারশীপের সবচেয়ে আদর্শ উদাহরণ হলেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় Razib Ahmed স্যার। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি অনলাইন মাধ্যম বিশেষত ফেইসবুককে কাজে লাগিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে চেষ্টা করছেন এবং একজন ই-কমার্স এক্সপার্ট হিসেবে দেশি পন্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিতেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন অনেক বছর ধরে। স্যারের যে কোন আইডিয়া, লেখা বা কথাই তাই অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে, অনেক বেশি মানুষকে প্রভাবিত করে, অনুপ্রাণিত করে।

এই তো রিসেন্টলি, স্যারের এক ডাকে গত কয়েকদিনে খাবারের উদ্যোক্তাদের ২০হাজার হোমমেইড কাবাব বিক্রি হয়ে গিয়েছে ছোট্ট একটা হোমমেইড খাবারের গ্রুপ থেকে!!

এই টপিকটা আজ পড়তে পড়তেই থট লিডারশীপের সেরা উদাহরণ হিশেবে এর থেকে ভালো কিছু আর এই মুহূর্তে মাথায় এলো না।

“Inspiration creates the highest levels of engagement” – Gifford Thomas

একজন থট লিডারের কী কী গুণাবলি থাকা উচিত?

একজন থট লিডার খুব ভিশনারি বা স্বপ্নদর্শী, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী চিন্তার অধিকারী এবং খুব শক্তিশালী ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ হয়। তাদের দ্বারা ঠিক কতটা অর্জন করা সম্ভব এর পরিষ্কার চিত্র তারা দেখতে পায়। সব সময় থট লিডার বর্তমানে যা আছে এর বাইরে গিয়ে চিন্তা করে, ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলো তাদের চোখে খুব স্পষ্টভাবে ধরা দেয়। তাই একজন থট লিডার যা দেখতে পায়, যা অনুমান করতে পারে তা অন্যরা পারে না।

থট লিডারের কথা কাজ অন্যদের অনুপ্রাণিত করে, সাহস জোগায় নিজেকে পজিটিভলি পরিবর্তন করতে। তারা মানুষের জীবনে ইস্টের মতো; ময়দা পানির মিশ্রনে পারফেক্ট ডো তৈরিতে যেমন ইস্টের প্রয়োজন হয়, তারাও ঠিক তেমন ভাবেই অন্যের জীবনের সাথে ইমোশনাল কানেকশন তৈরি করে তা ভালোর দিকে পরিবর্তন করে।

থট লিডার কিন্তু ইনফ্লুয়েন্সার বা মোটিভেশাল স্পিকার নয়, এসব কিছুর সমন্বয় তারা, সবকিছুর উর্ধ্বে তারা এবং লিডারশীপের সর্বোচ্চ পর্যায় বলতে পারি আমরা থট লিডারশীপকে। কারণ তিনি কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর এতোটাই দক্ষ হোন যে, সেই বিষয় নিয়ে অডিয়েন্সদের মনে যত প্রশ্নই তৈরি হোক না কেনো, সব প্রশ্নের উত্তরই তিনি দিতে পারেন।

Thought leadership Storytelling

আমরা প্রতিদিন যা করি, যে সব ঝুঁকি নেই, যে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, যে সব পরিকল্পনা করি সবই আমাদের গল্প।

আমি কে, আমি কি করি, আমি কি জানি… প্রতিটি প্রশ্নই একেকটি গল্প তৈরি করে।

খুব বেশি কিছু না আসলে, আমাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা এবং সুদূরপ্রসারী চিন্তার প্রকাশই আমাদেরকে এক সময় থট লিডার করে তোলে।

আমাদের প্রত্যেকের জীবনে শুধু সফলতার গল্প না, অনেক ব্যর্থতা এবং সেই সব ব্যর্থতা থেকে উত্তরণের গল্পও আছে। আমরা সবই শেয়ার করতে পারি। আমাদের সফলতার গল্প যেমন মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারে, তেমনি ব্যর্থতার গল্প থেকেও শিক্ষা নিতে পারে, সাহস ও মনোবল বৃদ্ধি করতে পারে।

তাই বিনিময়ে কিছু পাওয়ার আশা না করে থট লিডার নিজের অভিজ্ঞতা, গভীর উপলব্ধি, সৃজনশীল চিন্তাধারা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি ওপেনলি শেয়ার করে। এই কোয়ালিটিই তাকে এক সময় থট লিডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

আমি এখানে উদাহরণ হিসেবে রাজিব আহমেদ স্যারের কথা বলব। স্যার নিজের ব্লগে অনেক বছর ধরে টানা লিখে গিয়েছেন। আমরা ব্লগে স্যারের অনুপ্রেরণামূলক লেখাগুলো পড়ে অনুপ্রাণিত হই, উজ্জীবিত হই। স্যার কিন্তু সেগুলোতে নিজের গল্পই লিখেছেন বেশি, যার প্রতিটিতেই তরুণ প্রজন্মের জন্য অনেক মেসেজ, মোরাল আর শিক্ষা রয়েছে।

থট লিডারশীপ কন্টেন্ট রিডারদেরকে প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বাসযোগ্য তথ্য প্রদান করে। এগুলো বাস্তব দুনিয়ার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়, মানুষের চিন্তার জগতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, প্রতিটি পদক্ষেপে অনুপ্রেরণা যোগায়, পৃথিবীকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে উৎসাহিত করে, গভীর উপলব্ধি ক্ষমতা প্রদান করে, সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটায়।

থট লিডার কারা?

কোনো বিষয়ে আইডিয়া নেয়ার জন্য আপনি কার কন্টেন্টের উপর নির্ভর করেন? কার কথার উপর আপনার পূর্ণ আস্থা আছে যে, তিনি যা বলছেন সত্য বলছেন, আমাদের ভালোর জন্য বলছেন? সামনে কি আসছে, ভবিষ্যতের ভালো মন্দ সব ধরণের ট্রেন্ড এবং তথ্য জানার জন্য কাকে সোসাল মিডিয়ায় অনুসরণ করেন? এই মানুষগুলোই থট লিডার। তাদের আমরা বিশ্বাসযোগ্য ইন্ডাস্ট্রি লিডার এবং বিশ্বাসযোগ্য সোর্সও বলতে পারি, মানুষ যাদের যে কোনো তথ্য এবং মতামতের উপর নির্ভর করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে এবং করণীয় ঠিক করে থাকে।

থট লিডার হিসেবে মানুষের কাছে এই গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করার অন্যতম উপায়ই হচ্ছে কন্টেন্ট, বিশেষ করে স্টোরি টেলিং কন্টেন্ট। কারণ থট লিডার হতে হলে মানুষের সাথে গভীর কানেকশন তৈরি করতে হবে, আর গল্প এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরি পন্থা।

** ফেইসবুককে কাজে লাগিয়ে লেখাপড়া এবং বিজনেস করা এই দুইটা দিকে থট লিডার হিশেবে রাজিব আহমেদ স্যারের নামই প্রথমে আসবে। এছাড়াও ই-কমার্স এবং দেশি পণ্য নিয়ে চেষ্টার দিকে যদি চিন্তা করি এদিকেও থট লিডার হিশেবে তিনিই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। রাজিব আহমেদ স্যার ই-ক্যাবের সাবেক ও প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ছিলেন বলে না, এদেশের এই দুইটা ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এতো বছর ধরে টানা লেগে থাকা, ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে এনালিসিস করা, রিসার্চ করা, মানুষকে ই-কমার্স এবং দেশি পণ্য সম্পর্কে জানিয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা এই সবকিছুর জন্যই তাকে আমরা এই ইন্ডাস্ট্রির লিডার বা থট লিডার বলতে পারি। তাঁর মতো এভাবে এতোটা ব্যাতিক্রমধর্মী চেষ্টা আমরা আর কাউকে করতে দেখি নি। তাই ই-কমার্স এবং দেশি পণ্য বিষয়ক যে কোনো আইডিয়া, তথ্য, উপাত্ত, ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যৎ, বিভিন্ন সমস্যা সম্ভাবনা ইত্যাদি জানার জন্য আমরা স্যারের ফেইসবুক পোস্ট, লেখা এবং কথার উপরই বেশি নির্ভর করি। শুধু আমরাই না, দেশের এবং দেশের বাইরের নিউজ মিডিয়াও এই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে স্যারের মতামতকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কারণ এই ইন্ডাস্ট্রি রিলেটেড সব প্রশ্নের উত্তর স্যার দিতে পারেন অনেক বছর ধরে টানা এদিকেই সময় শ্রম দিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে।

থট লিডার মানে তো এটাই। কোনো একটা নির্দিষ্ট দিকে চিন্তাভাবনা এবং নলেজের দিকে সবার থেকে এগিয়ে থাকা, সবার থেকে আলাদাভাবে চিন্তা করতে পারা, গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারা। এজন্যই থট লিডারের প্রতিটি কথাই মানুষ খুব গুরুত্বের সাথে নেয়, যেমন আমরা রাজিব আহমেদ স্যারের যে কোনো কথাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি, স্যারের সব গাইডলাইন এবং উপদেশগুলোকে আমাদের সুন্দর আগামীর জন্য অবশ্যই করণীয় বলে জানি।

রাজিব আহমেদ কিভাবে থট লিডারশীপের উদাহরণ হয়ে উঠলেন?

প্রথমত, অনেক বছর ধরে তিনি একদিকে চেষ্টা করে গিয়েছেন। আর আমরা খেয়াল করলেই দেখতে পাব স্যারের কয়েক লাইনের ছোট একটা পোস্ট বা লেখায়ও উদ্দীপক বা অনুপ্রেরণা মূলক কিছু থাকে, যা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কোনো মেসেজও দিয়ে থাকে এবং সেটার পেছনে বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো গল্পও থাকে সুপ্ত বা প্রকাশিত। রাজিব আহমেদ স্যার কিন্তু শুধু ফেইসবুকের উপরও পুরোপুরি নির্ভরশীল ছিলেন না। তাঁর নিজের নামে একটা ব্লগ বা ওয়েবসাইটও রয়েছে। সেখানে দেখবেন স্যারের প্রচুর ইন্সপাইরেশনাল লেখা রয়েছে। নিজের জীবনের গল্প লেখার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ব্যর্থতা থেকে সফলতার গল্প (অ্যালেক্স হ্যালি), টিম হয়ে কাজ করার গুরুত্ব (রিক্সাওয়ালাদের গল্প), শুন্য থেকে সেরা হওয়ার গল্প, তরুণ প্রজন্মের জন্য উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং দিক নির্দেশনা মূলক গল্পসহ বিভিন্ন ফিকশন গল্পের অংশ বিশেষও গল্প আকারে লিখেছেন মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য। স্যারের এসব লেখা পড়ে আমরা অনেকেই নতুন করে স্বপ্ন দেখেছি, নিজের স্বপ্নের জন্য আরও সিরিয়াস ও ডেডিকেটেড হয়েছি। থট লিডারশীপের বৈশিষ্ট্য এবং সৌন্দর্য কিন্তু এখানে বেশ স্পষ্ট।

** ফেইসবুকে ওয়েভ করাঃ

একজন থট লিডার হিশেবে রাজিব আহমেদ স্যারের তৈরি করা অন্যতম গল্প হলো, ফেইসবুক ওয়েভ যা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিং বা প্রমোশনাল এক্টিভিটি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটা স্ট্র্যাটেজি।

দেশি পন্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির প্রমোশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রেখেছে এই ওয়েভগুলো। একটা ওয়েভ শুধু একটা গল্প না, অসংখ্য নতুন গল্প তৈরি করে। এ পর্যন্ত স্যারের ডাক দেয়া জামদানি ওয়েভ, দেশি শাল ওয়েভ, দেশি থ্রীপিস ওয়েভ এবং হোমমেইড কাবাব ওয়েভ… প্রত্যেকটিই সর্বোচ্চ সফলতা পেয়েছে এবং দারুণ সব গল্পও তৈরি করেছে।

রিসেন্ট যেহেতু কাবাব ওয়েভ হয়েছে, তাই এর গল্পগুলোই উদাহরণ হিশেবে দিচ্ছি।

যেমনঃ

ক্রেতাদের মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং এর গল্প আমরা পেয়েছি-

শাম্মী সিদ্দিক আপুর হোমমেইড খাবারের পূর্বের ক্রেতা ছিলেন শামীমা নাসরিন আপু। যেহেতু ক্রেতা হিশেবে শামীমা আপু শাম্মী আপুর প্রতি বেশ সন্তুষ্ট ছিলেন, তাই তিনি স্যারের কাবাব ওয়েভের ডাকে শাম্মী আপুর কাছেই কাবাব অর্ডার করেন। আপু শুধু অর্ডার করেই তাঁর দায়িত্ব শেষ করেন নি, বরং শাম্মী আপুকে জিজ্ঞেস করে যখন জানতে পারেন তিনিই এই ওয়েভে কাবাবের প্রথম ক্রেতা তখন সাথে সাথে পোস্ট করে অন্যদেরকেও আপুর ক্রেতা হতে উৎসাহিত করেন। এটা স্যারের চোখে পরায় তিনি শেয়ার করেন পোস্টটা এবং এরপর অনেকেই শাম্মী আপুর কাবাবের ক্রেতা হোন। যেখানে এই পোস্ট শেয়ারের আগে শাম্মী আপুর মাত্র ১৫টার মতো কাবাব বিক্রি হয়েছিল, সেখানে স্যারের শেয়ারের কারণে একদিনেই ৫০০ এর বেশি কাবাব বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এই গল্প থট লিডারশীপের শক্তিই না শুধু ক্রেতা সন্তুষ্টির সুন্দর দিকও প্রমান করেছে। আর খাবারের স্বাদের পাশাপাশি এই ক্রেতা সন্তুষ্টির অন্যতম কারণ ছিল শাম্মী আপু ডেলিভারি চার্জ ফ্রি দেন।

উদ্যোক্তারা একে অন্যের প্রতিযোগী না, বরং সহযোগী-

হ্যাঁ, পোস্টের প্রথম লাইনে রোকসানা আক্তার আপু ঠিক এমনটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন এবং ছোট্ট করে লিখেছিলেন শাম্মী আক্তার পাম্মী আপুর সংগ্রামী জীবনের গল্প। নিজে ক্রেতা হওয়ার পর এই পোস্টের মাধ্যমে অন্যদেরকেও পাম্মী আপুর কাবাবের ক্রেতা হতে উৎসাহিত করেছিলেন তিনি। পাম্মী আপুর হাজবেন্ড মারা যাওয়ার পর, ছোট ছেলেটাকে নিয়ে তাঁর যে কঠিন পথচলার গল্প  তা বেশ ইমোশনাল একটা প্রভাব ফেলেছিল সবার মনে। আর এই পোস্টও যখন রাজিব আহমেদ স্যার শেয়ার করে সবাইকে আহবান করলেন আপুর কাবাবের ক্রেতা হওয়ার জন্য, তখন তাঁর কাবাবের অসংখ্য ক্রেতা তৈরি হলো। যেখানে হয়তো আপুর ২০-৫০ টা কাবাব বিক্রি হতো, সেখানে স্যারের শেয়ারের কারণে ৮০০ এর বেশি কাবাব বিক্রি হয়ে গেলো এবং উঠে আসল আরও অনেক গল্প।

প্রবাসী ক্রেতাদের অংশগ্রহণঃ

প্রবাসীরা আমাদের দেশের জন্যই অন্যতম প্রধান ব্লেসিং বলব আমি। দেশে না থেকেও দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে তারাই। এমনই কয়েকজন সম্মানিত প্রবাসী কাস্টমার আমাদের দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রির জন্যও আশীর্বাদ হয়ে আছেন সব সময়। কখনো তারা দেশি পণ্যকে সুদূর বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন অর্ডার করে, আবার কখনো দেশে থাকা তাদের প্রিয়জনদের জন্য উপহার পাঠাচ্ছেন দেশি খাবার এবং পোশাক। প্রবাসী ক্রেতাদের মাঝে অন্যতম আমাদের সবার পরিচিত রবিন ভাই এবং শারমিন আরা আপু। রবিন ভাই অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেক বছর ধরে রাজিব আহমেদ স্যারের একজন সাপোর্টার হিশেবে পাশে আছেন এবং দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদেরকে সবদিক থেকেই সাপোর্ট করে যাওয়ার পাশাপাশি দেশি পণ্যের সব ওয়েভেও স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

শারমিন আরা আপুও নিউইয়র্ক থেকে একইভাবে দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট করে যাচ্ছেন। এইবার কাবাব ওয়েভেও তিনি ৩০০ এর বেশি কাবাব কিনেছেন এবং দেশে থাকা আত্মীয়দের উপহার হিশেবে পাঠিয়েছেন।

এছাড়াও একই ধরণের পণ্য নিয়ে কাজ করার পরও উদ্যোক্তারা একে অন্যের ক্রেতা হচ্ছেন, সাপোর্ট করছেন। এমন দৃশ্য খুব একটা আমরা দেখি না বলা যায়। আমাদের দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রিতেই এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের একজন নির্ভরযোগ্য থট লিডার রাজিব আহমেদ স্যার আছেন বলে, যিনি নিঃস্বার্থভাবে এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এবং আমাদেরকে পরস্পরের সহযোগী হয়ে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমরা তাঁরই আদর্শ নিয়ে চলছি বলেই আমাদের ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাচ্ছে, দেশি পণ্যের পরিচিতি এবং চাহিদা বাড়ছে।

একজন থট লিডার হিশেবে স্যারের চিন্তা থাকে সব সময় স্টোরি তৈরি করা। প্রতিদিন তিনি চিন্তা করেন এরপর কার স্টোরিটাকে কিভাবে তুলে আনা যায়, যে স্টোরি অন্যদেরকে প্রভাবিত করবে, এই দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকের কাজে লাগবে, উপকার হবে। তাঁর সব স্কিল এবং অভিজ্ঞতাকে তিনি এদিকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন।

একজন থট লিডার আরও অসংখ্য থট লিডার তৈরি করতে পারেন।

যেহেতু থট লিডারের বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষের গভীর চিন্তার জগতে প্রভাব ফেলতে পারা, তাই তিনি এই গুণ দ্বারা অনেক মানুষকে পরিবর্তন করতে পারেন এবং এর কিছু সংখ্যককে থট লিডার হিশেবেও গড়ে তুলতে পারেন।

রাজিব আহমেদ স্যার যেমন কাকলি আপুকে তৈরি করছেন।

প্রথমত কাকলি আপুকে আমরা জামদানি ইন্ডাস্ট্রির একজন থট লিডার বলতে পারি। কারণ আপু জামদানি নিয়ে অনেক বেশি জানেন। কাকলি আপুর অনেক লেখা রয়েছে জামদানি নিয়ে, তিনি বিভিন্ন মিডিয়ায় জামদানি নিয়ে অনেক কথা বলেছেন, অনেক ইন্টারভিউ দিয়েছেন। জামদানি সম্পর্কিত যে কোনো প্রশ্নের উত্তর আমরা কাকলি আপুর লেখা ও কথায় খুঁজে পাই, জামদানি নিয়ে জানার জন্য আমরা আপুকেই খুঁজি। তাই এদিকে তিনি জামদানির জন্য একজন থট লিডার।

আবার রাজিব আহমেদ স্যার আপুকে তৈরি করছেন ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে স্যারের পরের ধাপে স্যারের মতো করে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। এই ইন্ডাস্ট্রিতে অবশ্যই স্যারের বিকল্প হতে পারে না। তারপরও স্যারের যেহেতু বয়স হয়েছে, আগের মতো এতো পরিশ্রম করতে পারেন না এবং স্যার এখন নিজের কাজের জন্যও সময় দিতে চাচ্ছেন। তাই স্যারের শূন্যস্থান পূরণে এই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর আদর্শের লোক দরকার। এই জায়গাটার জন্য কাকলি আপু সবচেয়ে বেশি যোগ্য। ইতোমধ্যে ইডিসির প্রেসিডেন্ট হিশেবে তিনি এই পথে হাঁটতে শুরু করেছেন এবং এখন অনেক ইভেন্টে স্যার না গিয়ে কাকলি আপুকে পাঠান। আশা করা যায়, কাকলি আপুও এক সময় দেশি পন্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির একজন থট লিডার হয়ে উঠবেন এবং স্যারের আদর্শ, গাইডলাইন, আইডিয়া আরও অনেক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবেন।

নিগার আপুও স্যারের পরামর্শে দেশি পন্যের সিলেবাস নিয়ে যেভাবে কয়েক বছর ধরে টানা চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তিনিও এদিকে থট লিডারশীপের দিকেই এগুচ্ছেন।

পপি আপু দেশি পন্যের ইন্ডাস্ট্রিতে সার্ভে এক্সপার্ট হয়ে উঠছেন। বেশ কয়েকটি সার্ভে তিনি সফলভাবে করে ফেলেছেন, যা দেশি পন্যের ইন্ডাস্ট্রির বিশাল একটা গ্যাপ পূরণ করছে। সামনে তিনি সার্ভে বিষয়ে হয়তো ক্লাসও নিবেন। অনেক মানুষ তাহলে সার্ভে নিয়ে জানতে পারবে আপুর থেকে এবং নিজেদের উদ্যোগের ক্ষেত্রে এপ্লাই করতে পারবে। তিনিও তাই এই দিকে একজন থট লিডার হতে পারেন।

সিরাজুম মুনিরা আপু দেশি আবায়া হিজাবকে রিপ্রেজেন্ট করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। শুধুমাত্র দেশি মডেস্ট পোশাক নিয়ে এভাবে কাউকে লেগে থাকতে দেখিনি আমরা এর আগে এবং দেশি আবায়া হিজাব হয় এটাই আমরা বেশির ভাগই মুনিরা আপুর লেখা থেকে প্রথম জেনেছি। এই সম্পর্কে আপু সবচেয়ে বেশি জানেন। তাই আপুকে দেশি মডেস্ট পোশাকের থট লিডার হিশেবে আমরা ভাবতেই পারি।

থট লিডার কোনো একটা ইন্ডাস্ট্রি বা সেক্টরকে রিপ্রেজেন্ট করে এবং নিঃস্বার্থভাবে এর জন্য কাজ করে। একটা ইন্ডাস্ট্রিতে যেহেতু অনেক লোক থাকে, তাই একজন থট লিডারের সব আইডিয়া, সব কাজ সবার পছন্দ হবে, সবার মন মতো হবে এমনটা সম্ভব না। ইন্ডাস্ট্রির কিছু না কিছু লোকের চিন্তাভাবনা  এবং কাজের সাথে থট লিডারের আইডিয়াগুলো কনফ্লিক্টেড হয়েই যায়। কিন্তু থট লিডার কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে শুধু কাজ করে না, নিজের স্বার্থেও কাজ করে না। থট লিডার যা করে, যা বলে, যা চিন্তা করে এবং যা আইডিয়া দেয়, তা পুরো একটা ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থের জন্য। অভারঅল ইন্ডাস্ট্রির ভালো কীভাবে হবে এবং কীভাবে সবচেয়ে বেশি মানুষ উপকৃত হবে সেই চিন্তা করেই কোনো একটা সিদ্ধান্ত দেয় এবং আইডিয়া জেনারেট করে একজন থট লিডার।

রাজিব আহমেদ স্যার ই-কমার্স এবং দেশি পন্যের ইন্ডাস্ট্রির জন্য কাজ করতে গিয়ে অনেক গালি খেয়েছেন, অনেক ভেজাল আর খোঁচাখুঁচির সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু তিনি এক মনে তার কাজ করে গিয়েছেন, কারণ তিনি জানেন এই ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিতে হলে তিনি যেভাবে চাইছেন, যেভাবে কাজ করছেন এভাবেই আগাতে হবে। এর বিকল্প নেই। একজন থট লিডারকে নিজের সিদ্ধান্তে এভাবেই অটল অবিচল থাকতে হয় বৃহৎ স্বার্থের কথা চিন্তা করে।

একজন থট লিডার হতে হলে আসলে কী করতে হবে?

ধরেন আপনি চাচ্ছেন আপনার ফিল্ডের একজন থট লিডার হতে। অর্থাৎ আপনি যা নিয়ে কাজ করছেন, আপনার সেই পণ্য নিয়ে আপনি বিশেষজ্ঞ বা থট লিডার হতে চান। সেটা হোক জামদানি, বেনারসি, দেশি খাবার, দেশি মিষ্টি, দেশি শাল বা দেশি থ্রিপিস। তাহলে আপনার করণীয় কি হবে?

প্রথমেই আপনাকে একটা টার্গেট সেট করতে হবে, আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব জানতে হবে, অনেক বেশি জানতে হবে এবং অর্জিত নলেজ শেয়ার করতে হবে অন্যদের জানানোর জন্য।

অবশ্যই থট লিডার হতে হলে আপনাকে নিঃস্বার্থ হতে হবে। আমাদের রাজিব আহমেদ স্যারকেই দেখেন। উনি যদি উনার থট লিডারশীপ এবং জনপ্রিয়তার সুবিধা নিতে চাইতেন, নিজের লাভের জন্য কাজে লাগাতে চাইতেন, তাহলে তিনি হয়তো আরও অনেক উপরে উঠতেন, অনেক টাকা উপার্জন করতেন, কিন্তু এই ইন্ডাস্ট্রিটা কিন্তু তাহলে এতোটা বড় হতো না। আমরাও তাহলে স্যারের ডাকে হয়তো দেশি পণ্যের ওয়েভগুলোতে এভাবে যোগ দিতাম না, স্যার উনার স্বার্থে এগুলো করছেন জানলে উনার কথাকে এতো বেশি হয়তো আমরা গুরুত্ব দিতাম না।

থট লিডার হতে হলে তাই নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করলে হবে না। তবে স্যারের মতো এতোটা নিঃস্বার্থও আপনাকে হতে হবে না, মোটামুটি এর কাছাকাছি হলেও ভালো হবে। তাই স্বার্থ এবং নিঃস্বার্থের মাঝে ব্যালেন্স করতে হবে আপনাকে। যেহেতু আপনি উদ্যোক্তা, আপনার বিজনেসের চিন্তা, সেলের চিন্তা তো আপনার করতেই হবে, তবে আপনি থট লিডার হতে চাইলে সেলকে আপনার কম প্রায়োরিটি দিতে হবে। আপনার মূল টার্গেট থাকবে উদ্যোগের পন্য নিয়ে জানা, এর প্রচার করা, পণ্য সম্পর্কিত সব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার এবিলিটি অর্জন করা, এই পন্যের ইন্ডাস্ট্রিটাকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন আইডিয়া চিন্তা করা এবং সবার মাঝে তা ছড়িয়ে দেয়া। এভাবে চলতে পারলেই এক সময় মানুষ সেই পন্য সম্পর্কে জানতে আপনাকেই খুঁজবে, আপনার লেখা খুঁজে পড়বে এবং আপনাকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিতে শুরু করবে।

রাজিব আহমেদ স্যার একটা কথা প্রায়শ বলেন, যেখানে কোনো স্বার্থের ব্যাপার থাকে না, সেখান থেকেই বেশি স্বার্থ আদায় করা যায়। এক্ষেত্রেও স্যার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ আমাদের জন্য।

রিসেন্ট কাবাব ওয়েভের কথাই ঘুরে ফিরে আসছে। স্যারের ডাকেই এই ওয়েভ হয়েছে, ২১হাজারের বেশি কাবাব সেল হয়েছে যা টাকার অঙ্কে ১০লাখ টাকারও বেশি। কিন্তু স্যারের এখান থেকে এক টাকাও মিলেনি, উনার তাহলে স্বার্থ কি? উনার স্বার্থটা বিশাল। কারণ তিনি থট লিডার হিশেবে চিন্তা করেছেন, সব সময় ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি বড় হোক, দেশি পন্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি শক্তিশালী হোক তাই চেয়ে এসেছেন। কাবাব ওয়েভের মাধ্যমে হোমমেইড খাবারের একটা বিশাল কাস্টমার বেইজ তৈরি হয়েছে, অনেক খাবারের উদ্যোক্তা উঠে এসেছেন একটা ওয়েভের মাধ্যমে, এটাই তো তাঁর স্বার্থ, এতেই তিনি আনন্দিত।

এই যে দেখেন থট লিডারশীপ মানে কিন্তু সেলের থেকে একদম দূরে সরে যেতে হবে তা না। আমাদের স্যারও কিন্তু মানুষকে ইনফ্লুয়েন্স করে দেশি পন্যের সেলই বৃদ্ধি করছেন। স্যারের ডাকা প্রত্যেকটা ওয়েভ যেমন জামদানি ওয়েভ, মিরপুর ওয়েভ, সিলেট ওয়েভ, শাল ওয়েভ, থ্রিপিস ওয়েভ, কাবাব ওয়েভ প্রত্যেকটাতেই লাখ লাখ টাকা সেল হয়েছে।

থট লিডার হিশেবে আপনার মূল উদ্দেশ্য তাই সেল না হলেও আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে নিয়মিত নলেজ শেয়ার করা, লেখা এবং কথা বলার মাধ্যমে কিন্তু মানুষ এই প্রোডাক্টের প্রতি আগ্রহীই হবে, ইনফ্লুয়েন্স হবে, এই দেশি পন্যের প্রতি আপনার মাধ্যমে একটা ভালোবাসা তৈরি হবে, যা কিন্তু আল্টিমেটলি সেলই জেনারেট করবে। এই প্রসেসটা হয়তো লেংদি। কিন্তু আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে আপনি থট লিডার হতে চাইলে এই ধৈর্যটা আপনার থাকতেই হবে। এক্ষেত্রে তাই সেল মুখ্য উদ্দেশ্য না হয়ে নিজে জানা এবং অন্যকে জানানো, শেখানো, বোঝানো হবে আপনার মুখ্য উদ্দেশ্য।

থট লিডারশীপ এবং স্টোরি টেলিং এর সম্পর্কটা কিন্তু বেশ গভীর।

থট লিডার তাঁর লেখা, কথা এবং কাজের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কে ঢুকে চিন্তার জগতে গভীর প্রভাব ফেলতে চায়। আর এই কাজটা কিন্তু সবচেয়ে ভালো ভাবে করা যায় স্টোরি টেলিং এর মাধ্যমে। তাই থট লিডার হতে হলে আপনাকে মানুষের মস্তিষ্ক এবং মনে দাগ কাটার মতো স্টোরি তৈরির চিন্তা করতে হবে।

খুব ভালো হবে যদি আপনার গল্পগুলো নিজের একটা ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে রাখতে পারেন। তবে ওয়েবসাইট তৈরি যেহেতু বেশ বাজেটের ব্যাপার, তাই সামর্থ্য না থাকলে প্রথমদিকে ওয়ার্ডপ্রেসে বা ব্লগস্পটে ফ্রি তে একটা ব্লগ খুলে সেখানে কন্টেন্টগুলো রাখতে পারেন। এ ধরণের ব্লগ কীভাবে খুলবেন বা শুরু করবেন তা ডিজিটাল স্কিল গ্রুপে এবং এর ব্লগে খুব সুন্দর ভাবে দেয়া আছে।

সেই ব্লগে আপনি নিয়মিত আপনার প্রোডাক্ট রিলেটেড তথ্য দেন, স্টোরি আকারে বিভিন্ন কিছু তুলে ধরেন, কাস্টমারদের নিয়ে লিখেন। এভাবেই এক সময় দেখবেন আপনি মানুষের মনে জায়গা করে নিতে শুরু করেছেন।

স্টোরি টেলিং আপনাকে এমনিই মানুষের সাথে ইমোশানল একটা কানেকশন তৈরিতে সাহায্য করবে। আর থট লিডারশীপ স্টোরির উদ্দেশ্য হচ্ছে, একটা নির্দিষ্ট পণ্যের বিশেষজ্ঞ হিশেবে মানুষের মনে ঢুকে যাওয়া।

আমাদের জন্য থট লিডার হওয়া কিন্তু খুব কঠিন কিছু না। কারণ আমাদের দেশি পণ্যে অনেক ভ্যারিয়েশন আছে, অনেক কিছু আমাদের জানার এবং জানানোর সুযোগ রয়েছে। এই মাঠটা আমাদের দেশে একদমই ফাঁকা।

দেখেন মুনিরা আপু দেশি আবায়া, হিজাবসহ মডেস্ট পোশাকের সাথে আমাদের পরিচিত করে দিয়েছেন, অনেক কিছু জানিয়েছেন, জানাচ্ছেন, যা আমাদের কাছে তাকে এই ফিল্ডের একজন থট লিডারে পরিণত করছে,

কাকলি আপুর জামদানি নিয়ে থট লিডার হওয়ার কথা আগেই বলেছি,

নিগার আপুও একদম একা খেশ পণ্য নিয়ে চেষ্টা করছেন তাই তিনি এদিকে থট লিডারশীপের দিকেই আগাচ্ছেন,

মিফতাহুল জান্নাত আপু তাঁর শুধুই মিষ্টি গ্রুপের মাধ্যমে দেশের মিষ্টি জাতীয় খাবারকে রিপ্রেজেন্ট করছেন, এগুলোর ব্র্যান্ডিং এ কাজ করছেন। তাই তারও মিষ্টি ইন্ডাস্ট্রির একজন থট লিডার হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এছাড়াও আমাদের দেশের এমন অসংখ্য খাবার, পোশাক এবং পণ্য রয়েছে, যা নিয়ে কাজ করার, আলোচনা করার, জানা এবং জানানোর সুযোগ রয়েছে।

আমাদের উচিত হবে তাই যে কোনো একটা পণ্য নিয়ে থট লিডার হওয়ার চেষ্টা করা। শুধু সেই পণ্য কেন্দ্রিক চিন্তা করা। তাহলে খুব সহজেই আমরা সেই দিকে এক্সপার্ট হতে পারব এবং মানুষকে অনেক কিছু শেখাতে পারব, জানাতে পারব, পাশাপাশি খুব সহজেই সেই পণ্যের সাথে মানুষের মনে মস্তিষ্কে জায়গা করে নিতে পারব।

স্যারের ব্লগটাকে আমরা আমাদের জন্য আদর্শ উদাহরণ হিশেবে নিতে পারি।

কি আছে স্যারের ব্লগে? কিছু ইন্সপাইরেশনাল পোস্ট, ১০ মিনিট রাইটিং পোস্টের লিঙ্ক, প্রেজেন্টেশন টপিক, রিডিং সিলেবাসের লিঙ্ক, কিছু কিশোর ক্লাসিক রিভিউ লিঙ্ক ইত্যাদি। মানুষ তাঁর ব্লগে আসে এবং এগুলো পড়ে উপকৃত হয়। এটাই তাঁর আইডিয়ার উদ্দেশ্য এবং স্বার্থকতা। মানুষের যদি এগুলো কাজে না লাগত, কিছু শিখতে না পারত, অনুপ্রেরণা বা মোটিভেশন না পেত, তাহলে এতো এতো মানুষ অবশ্যই ব্লগে এসে এগুলো পড়ত না, এই গাইডলাইনগুলো ফলো করত না।

আপনাদেরকেও নিজের ব্লগের জন্য এমন কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে যা মানুষ আগ্রহ নিয়ে পড়বে, জানবে, বার বার আসবে নতুন কিছু জানার জন্য। আপনি যে পণ্য নিয়ে কাজ করছেন বা যে পণ্য বিষয়ে থট লিডার হতে চান সেই পণ্য নিয়ে তথ্য দেন, গল্প আকারে সেগুলো তুলে ধরেন, আপনার প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা থেকে যদি মানুষের জন্য কোনো মেসেজ থাকে তাহলে তাও গল্প আকারে লিখতে পারেন।

একজন থট লিডার আসলে বিভিন্ন ভাবে তাঁর আইডিয়াগুলোকে উপাস্থাপন করেন যেন অন্যরা এর সুন্দর দিকগুলো বুঝতে পারে এবং সেই আইডিয়াকে কাজে লাগানোর জন্য নিজে থেকেই তাড়ণা অনুভব করে। আপনাকে তাই এভাবে চিন্তা করতে হবে। অন্যের চিন্তা চেতনাকে পরিচালিত করার মতো গল্প তৈরি করতে হবে।

লেখকঃ 

খাতুনে জান্নাত আশা, রিসার্চার, দেশি পণ্য ই-কমার্স

খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top