You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক রিভিউ: হার্ড টাইমস (চার্লস ডিকেন্স)

কিশোর ক্লাসিক রিভিউ: হার্ড টাইমস (চার্লস ডিকেন্স)

”আমি চিরদিন সত্য আর ন্যায়ের পক্ষে। এই ছেলে মেয়েগুলোকেও সত্য আর ন্যায়ের পথে থাকার শিক্ষা দিন, বাস্তববাদী হতে শেখান। আমি আমার বাচ্চাদের এভাবেই মানুষ করছি। আমি চাই আমার স্কুলের ছেলে-মেয়েরাও একই শিক্ষা পাক। সত্য আর ন্যায়, শুধুই সত্য আর ন্যায়।” 

কোকটাউনের স্কুলকক্ষে মাননীয় সংসদ সদস্য টমাস গ্র‍্যাডগ্রাইন্ডের বলা এই কথাগুলোর মাধ্যমেই শুরু এই গল্পের। গ্রান্ডগ্রাইন্ডের জীবনে সত্য, সংখ্যা আর তথ্য ছাড়া আর কিছুরই কোনো মূল্য নেই। যা কাল্পনিক, বাস্তবে যা কিছুর অস্তিত্ব নেই এবং যা অর্থহীন এ সব কিছুই তার কাছে মূল্যহীন। তাই খেলাধুলা, বিনোদন সহ ইমোশনাল যে কোনো কিছু তাই তার কাছে কখনো পাত্তা পায় না। এমনকি ছেলেমেয়েদেরকে গল্পের বই পড়তে দিতেও নারাজ তিনি। 

গ্র‍্যাডগ্রাইন্ডের এক ছেলে, এক মেয়ে টম এবং লুইযা। লুইযা বড়, টম ছোট। তার শিক্ষা এবং আদর্শে ছেলেমেয়ে দুটিও আবেগহীন কাঠিন্য আর গাম্ভীর্য নিয়ে বড় হতে থাকে। 

গ্র‍্যাডগ্রাইন্ড যে সত্য, ন্যায় আর বাস্তবতার কথা বলছেন, এই কি তবে যথেষ্ট মানুষের জীবনের জন্য? এগুলোই কি মানুষকে সুখী করতে পারে? কোকটাউন শহরের মানুষগুলোর জীবন কি তবে এই শিক্ষায় আলোকিত হতে পেরেছে? পেরেছে কি গ্র‍্যাডগ্রাইন্ডের ছেলেমেয়ে দুটোকে সুন্দর জীবন দিতে? 

এমন অনেক প্রশ্নই মনে জেগেছে চার্লস ডিকেন্সের ‘হার্ড টাইমস’ উপন্যাসটি পড়তে পড়তে। ডিকেন্স তার প্রতিটি লেখার মাধ্যমেই সমাজব্যবস্থার এমন সব বাস্তব সত্য তুলে ধরেছেন, যা মানুষকে ভাবিয়েছে, সমাজের শাসক এবং শোষিত শ্রেণির প্রকৃত ও নিকৃষ্টতম রূপকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন। এই উপন্যাসেও তাই করেছেন তিনি। 

‘হার্ড টাইমস’ উপন্যাসের প্লটটি ১৮৫৪ সালের। তখন ভিক্টোরিয়ান যুগ চলছে এবং ইংল্যান্ডে শিল্পবিল্পবের শুরু হয়েছে। ভিক্টোরিয়ান সমাজব্যবস্থা এবং শিল্পবিপ্লবের নেতিবাচক দিক লেখক এর মাধ্যমে তুলে ধরলেও, তা আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

এবার তাহলে গল্পে ফিরে আসি৷ 

গ্র‍্যাডগ্রাইন্ডের সাথে স্কুলে পরিচয় হয়েছিল সিসিলিয়া জুপ নামের ছোট্ট মেয়েটির সাথে যার বাবা সার্কাসের দলপতি। শহর থেকে শহর ঘুরে ঘুরে এইবার কোকটাউনে এসেছে তাদের সার্কাস দল। গ্র‍্যাডগ্রাইন্ড খুব বিরক্ত বোধ করে যখন দেখে তার আদর্শে গড়া ছেলেমেয়ে দুটিও সার্কাস দেখতে ভীড় জমিয়েছে স্কুলের সব বাচ্চাদের সাথে। তাই সিসিলিয়া জুপের বাবার খুঁজে বের হয় তার আরেক প্রভাবশালী বন্ধু জোসিয়া বাউন্ডারবিকে নিয়ে৷ তাদের ধারণা এই অপ্রয়োজনীয় সার্কাস দলটি কোকটাউনের বাচ্চাদেরকে তাদের সত্য, ন্যায়ের বাস্তব শিক্ষা ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত করছে। 

গ্র‍্যাডগ্রাইন্ড এবং বাউন্ডারবির সাথে প্রথমে দেখা হয়ে যায় সিসি জুপের। বাবা তাকে গায়ে মাখার ঔষধি তেল আনতে পাঠিয়েছিল। সার্কাস দেখাতে গিয়ে গায়ে ব্যথা হলে এই তেল লাগায় তারা আর ব্যথা সেরে যায়। সিসিকে যখন গ্র‍্যাডগ্রাইন্ড বলল যে, তার বাবার খুঁজে এসেছে তারা। সিসি তখন তাদেরকে নিয়ে গেল যেখানে সে তার বাবা আর সার্কাস দলটির সাথে থাকে সেখানে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তার বাবাকে আর খুঁজে পায় না। সিসির বাবার সার্কাস দলের সঙ্গী একজনের সাথে কথা বলে গ্র‍্যাডগ্রাইন্ড বুঝতে পারে যে, সিসিকে রেখে তার বাবা চলে গিয়েছে যেন মেয়ে সার্কাসের সঙ্গী না হয়ে ভালো পরিবেশে বড় হয়। গ্র‍্যাডগ্রাইন্ড তখন সিসিকে পড়ালেখা করিয়ে বড় করার প্রস্তাব দেয় এবং তার বাসায় নিয়ে যায়। সিসি বাবার জন্য আনা সেই তেলের বোতলটিও নিজের সাথে নিয়ে যায় বাবার ফেরার আশাকে সঙ্গী করে। 

গ্র‍্যান্ডগ্রাইন্ডের বাড়িতে সিসি জুপের নতুন জীবন শুরু হয়ে লুইযা আর টমের সাথে, যদিও তাদের একসাথে মেলামেশা করার সুযোগ খুব একটা হয় নি, তবে লুইযার সাথে মাঝে মাঝে বাবার সাথে তার মজার জীবনের কথা বলত। সিসি জুপ মিসেস গ্র‍্যাডগ্রাইন্ডের সেবা শুশ্রূষায়ই ব্যস্ত থাকত সারাক্ষন। সার্কাস দলের সাথে শহর থেকে শহরে ঘুরার মজার জীবন থেকে হঠাৎ করে এই বাস্তব শিক্ষার গম্ভীর পরিবারের জগতে খাপ খাওয়াতে প্রথমদিকে কষ্টই হয় তার৷ তবে সিসির মাঝে যে মানবীয় আর আবেগীয় সত্ত্বাটি ছিল, সেটিই এক সময় এই পরিবারটির কাঠিন্য দূর করে এতে কোমলতার ছোঁয়া দিতে পেরেছিল। 

এভাবেই ছেলেমেয়েগুলো এক সময় বড় হয়ে যায়। লুইযা যখন ১৬ বছরের তরুণী তখন তার বিয়ের প্রস্তাব আসে ৬০ বছর বয়সী বাবার সেই বন্ধু বাউন্ডারবির থেকে। লুইযা যাকে রীতিমতো ঘৃণা করত। কিন্তু সে ছোট থেকেই আবেগশূন্য পরিবেশে বড় হয়েছে, তাই বিয়ের জন্য আবেগ ভালোবাসার সম্পর্ক দরকার আছে তা নিয়ে সে মাথা ঘামায় নি৷ বরং তার একমাত্র ভাই টম বাউন্ডারবির এখানে কাজ করত, ভাই এর প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে লুইযা চিন্তা করেছে, বাউন্ডারবিকে বিয়ে করলে তার ভাই এর জীবন সহজ হবে। তাই সে বুড়ো লোকটিকে বিয়ে করতে দ্বিধা করে নি। 

বাউন্ডারবির সাথে বিয়ের পর লুইযা যেন আরও কঠিন হৃদয়ের হয়ে যায়। তার মাঝে আবেগ বলতে ছিল ভাই টমের প্রতি অসম্ভব ভালোবাসা। টমও বোনের অতিরিক্ত ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে সেটার অপব্যবহার করতে থাকে স্বার্থপরের মতো এবং বোনকে কষ্ট দেয়। 

বাউন্ডারবি ছিল কোকটাউনের বেশ প্রভাবশালী ব্যাক্তি। সে পোশাক কারখানা এবং ব্যাংকের মালিক, অর্থ সম্পদের তাই অভাব নেই। সে খুব গর্ব করে বলে যে, এই অবস্থায় সে অনেক কষ্টের পর আসতে পেরেছে। তার মা তাকে ছোটবেলায় ফেলে চলে যায়। সম্পূর্ণ একা বড় হয়েছে সে এবং কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা একা এই অবস্থান তৈরি করেছে। 

(কিন্তু গল্পের শেষে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। বাউন্ডারবির মায়ের থেকে জানা যায়, তার মা বাবা অনেক কষ্ট করে তাকে পড়াশোনা করিয়েছেন ভালো স্কুলে। এক সময় ভালো একজন লোকের চাকরি পায় সে এবং তার অবস্থান পরিবর্তিত হয়। অবস্থা ভালো হওয়ার পর সে দরিদ্র মাকে দূরে পাঠিয়ে দেয়। শর্ত দেয় যেন, বাউন্ডারবির মা হিশেবে পরিচয় না দেন তিনি। তবে প্রতি মাসে মাকে খরচ পাঠায় সে৷ 

এভাবেই বাউন্ডারবি সমাজের মুখোশধারী প্রভাবশালীদের রিপ্রেজেন্ট করে যারা সব সময় সত্য ন্যায়ের আড়ালে কুৎসিত সত্য রূপকে লুকিয়ে রাখে। ) 

এবার আসি পোশাক শ্রমিক স্টিফেন ব্ল্যাকপোলের গল্পে। 

শিল্পায়নের ছোঁয়াপ্রাপ্ত কোকটাউনের হতদরিদ্র শ্রমিকশ্রেণির অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনের প্রতিচ্ছবি এই স্টিফেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টানা কাপড় বোনে পরিশ্রান্ত হয়ে কুটিরে ফিরে নেশাগ্রস্ত স্ত্রীকে দেখে আরও হতাশায় জর্জরিত হয় সে, অসহায় বোধ করে৷ আরেক নারী পোশাক শ্রমিক র‍্যাচেলকে সে ভালোবাসে। কিন্তু দরিদ্র হওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সুযোগও নেই তার৷ এদের বাস্তবতা অনেক বেশিই কঠিন। র‍্যাচেল ভালো মানুষ, স্টিফেনের নেশাগ্রস্ত অসুস্থ স্ত্রীর সেবাও করে সে। এতে স্টিফেন আরও বেশি ভালোবাসে র‍্যাচেলকে। 

কিন্তু হঠাৎ বাউন্ডারবির পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মাঝে অস্থিরতা তৈরি হয় স্ল্যাকব্রিজ নামের এক লোকের শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার প্ররোচনায়। তবে স্ল্যাকব্রিজ অসৎ লোক হওয়ায় স্টিফেন তার নেতৃত্বে শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেয় না। তারপরও সে নিজের আদর্শে অটল থাকায়, ব্যক্তিত্ব ধরে রাখায় বাউন্ডারবির কাছেও অপদস্ত হয়ে চাকরি হারায়। কারণ দরিদ্রের মতামত বা আদর্শের কোনো মূল্য এই শোষিত সমাজে নেই। 

লুইযা বাউন্ডারবির মায়া হয় স্টিফেনের প্রতি, তাই টমকে নিয়ে স্টিফেনের বাসায় গিয়ে তাকে ১০পাউন্ড দিয়ে সাহায্য করে নতুন চাকরির খুঁজে যাওয়ার জন্য। এদিকে টম এই সুযোগটা নেয়। বাউন্ডারবির ব্যাংকের টাকা টম লুট করে নেয়, আর স্টিফেনকে ফাঁসিয়ে দেয়। লুইযা বুঝতে পারে স্টিফেনের মতো সৎ লোক ব্যাংক ডাকাতি করবে না এবং এও বুঝতে পারে যে, টমই টাকা সরিয়েছে। কারণ টম এ পর্যন্ত বোনের অনেক টাকা জুয়া খেলে নষ্ট করেছে। 

এদিকে বাউন্ডারবির বাসায় হার্টহাউজ নামের নতুন এক অতিথির আগমন ঘটে। হার্টহাউজ ধীরে ধীরে লুইযার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পরে, বুঝতে পারে মেয়েটা অসুখী বাউন্ডারবির স্ত্রী এবং টমের বোন হিশেবে। লুইযাও এক সময় হার্টহাউজকে ভালোবেসে ফেলে। বাবা গ্র‍্যাডগ্রাইন্ডকে গিয়ে জানায় সে তার এই বাস্তবতার কথা, সারাজীবনের আবেগশূন্য এই হৃদয়ে হঠাৎ ভালোবাসা আসার কথা৷ বাবা তার মেয়েকে এতোকাল পর বুঝতে পারে। আর ততোদিনে সিসি জুপের মানবিকতা আর ভালোবাসার ছোঁয়ায় অনেকাংশেই পরিবর্তন হয়েছে গ্র‍্যাডগ্রাইন্ডের এই স্টোনহাউজ। তাই সে এতোকালে বুঝতে পারে তার বাস্তবতা, সত্য আর ন্যায়ের শিক্ষা এবং কাঠিন্য কতটা ভয়ংকর আর কঠিন করে দিয়েছে তার ছেলেমেয়েদের জীবন। 

বাউন্ডারবিও স্ত্রীর প্রেমের কথা জানতে পেরে তাকে পরিত্যাগ করে। 

আর এদিকে টমকে যেন তার ব্যাংক লুটের দায়ে সাজা পেতে না হয়, তাই সিসি জুপ সার্কাস দলের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয় তাকে। সিসির বাবা কখনোই আর ফিরে আসে নি ওর কাছে, ওর বাবার কুকুরের মৃত্যুর মাধ্যমে সার্কাস দলের লোকটি বুঝতে পারে সিসির বাবাও আর জীবিত নেই। কিন্তু সিসি ঠিকই বাবার আদেশে আনা সেই তেলের বোতলটিকে আজো সযতনে আগলে রেখেছে। এটাই আবেগ, এটাই মানবিকতা আর ভালোবাসা, যা সম্পর্কগুলোকে বেঁধে রাখে পরম যত্নে মানুষের অবর্তমানেও। নিঃস্বার্থ মায়া মমতা ভালোবাসাই দুনিয়াকে টিকিয়ে রেখেছে। সবকিছুতে তাই স্বার্থ আর যুক্তি খোঁজা বোকামি। খাঁটি ভালোবাসার কোনো তুলনা হয় না। 

উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রের জটিল জীবন ‘হার্ড টাইমস’ নামের স্বার্থকতা দিয়েছে। তবে সবশেষে খাঁটি ভালোবাসারই জয় হয়েছে সিসি জুপ, র‍্যাচেল, লুইযা আর সার্কাস দলের মাধ্যমে। 

এনালাইসিস

  • উপন্যাসে ভিক্টোরিয়ান শিক্ষা ব্যবস্থার যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, তা বর্তমানের সাথেও মিলে যায় পুরোপুরি। 
  • শিক্ষার্থীদেরকে নিজেদের মতো চিন্তা করতে দেয়া হয় না। তাদের আগ্রহের বিষয় নিয়ে পড়তে না দিয়ে বরং বাস্তবমুখী শিক্ষার নামে একটা নির্দিষ্ট মতাদর্শ তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়, তাদেরকে বাধ্য করা হয় শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জন করতে। এতে তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে না। স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের পড়াগুলো শুধু মুখস্থ করে গিলে পরীক্ষার খাতায় উগড়ে দেয়। এর ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ এবং চিন্তা করারক্ষমতা একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মাঝে আটকে আছে। এর বাইরে গিয়ে ভালো কিছু করার স্বপ্ন তারা দেখতে পারে না, সমাজের ভালো পরিবর্তনে এবং অগ্রগতিতে তারা অংশ নিতে পারে না। 
  • যদি এর উল্টোটা করা হত, প্রতিটি শিক্ষার্থীকে তাদের নিজেদের পছন্দ ও আগ্রহের বিষয়ে পড়ার সুযোগ দেয়া হত, স্বাধীন ভাবে চিন্তা করার সুযোগ দেয়া হত, অনুপ্রাণিত করা হত, তাহলে তারা আনন্দ নিয়ে পড়ত, শিখত। প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় সেরা হত, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্র ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যেত। এটা গবেষণায়ও প্রমাণিত যে, কোনো কিছু মনের আনন্দে পড়লে, সেটা দ্রুত শেখা যায় এবং অনেক দিন মনে থাকে। শুধু বাস্তব তথ্য হলেই হয় না, শেখার সাথে ইমোশনাল সংযোগ স্থাপনও জরুরী। 
  • উপন্যাসটিতে লেখক শিল্পায়ন এবং সমাজের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরেছেন। পোশাক কারখানার তাঁতি স্টিফেন ব্ল্যাকপোল চরিত্রের মাধ্যমে এখানে সমাজের হতদরিদ্র শোষিত শ্রেণির চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। এদেরকে ধনী মালিক ও শাসক শ্রেণি যন্ত্রের সাথেই তুলনা করে, এদের সমস্যাকে সমস্যা বলে মনে করা হয় না। শ্রমিকদের কারো বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ বা মতামতও তাদের ভয়ংকর পরিণতির কারণ হয়, এটিও স্টিফেনের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকরা আজো একিভাবে শোষিত হচ্ছে, ন্যায্য মুজুরি পাচ্ছে না, কাজের উপযোগী স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পাচ্ছে না, পর্যাপ্ত ছুটি পাচ্ছে না। আজীবন ধরে চলে আসা এই ত্রুটিপূর্ণ সিস্টেমের প্রতিনিধিত্ব করেছে স্টিফেন ব্ল্যাকপোল। 
  • অথচ কর্মক্ষেত্রের সব কর্মীদের চিন্তার স্বাধীনতা দেয়া উচিত। এতে প্রত্যেকের আলাদা চিন্তা নতুন সব আইডিয়ার জন্ম দেয়, যা কোম্পানির জন্য আরও ভালো কাজের সুযোগ তৈরি করে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে, কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। 
  • বাস্তব তথ্য এবং আবেগীয় কল্পনা দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনে প্রথমে ছিল অসম্ভব কল্পনা এবং আবেগ। কল্পনাকেই বাস্তবতায় রূপ দেয় গবেষণা। মানুষের বুদ্ধিমত্তা, আবেগ এবং কল্পনাশক্তিই অন্য প্রাণিদের থেকে একে আলাদা করেছে, সৃষ্টির সেরা জীব হিশেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এবং প্রত্যেকটা মানুষই আলাদাভাবে চিন্তা করতে পারে, ভাবতে পারে। একেক জন মানুষ একেক রকম চিন্তার অধিকারী হওয়ায়, প্রত্যেকের সম্মিলিত চিন্তা, ভাবাবেগ এবং মতামত একটা জাতিকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তাই তথ্য এবং আবেগ উভয়কেই সমান মূল্যায়ন করতে হবে, একটি ছাড়া অপরটি মূল্যহীন এবং বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়।
  •  
  • মানুষ টানা শুধু কাজ করে যেতে পারে না, জীবনে কাজের পাশাপাশি আনন্দ বিনোদনেরও দরকার আছে। কাজের মাঝে একটু ব্রেক এবং বিনোদন কাজকে আরও ভালো হতে সাহায্য করে, আনন্দ নিয়ে কাজ করতে সাহায্য করে। ডিকেন্স উপন্যাসে সার্কাস দলের মাধ্যমে এই মেসেজই দিয়েছেন। সার্কাস দল মানুষের আনন্দ বিনোদনের খোরাক যোগাতে এক শহর থেকে অন্য শহরে ঘুরে বেরায়। সমাজে তাদেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে মানুষের আবেগীয় ভাবনার জাগরণের জন্য, কাঠিন্য দূর করে নমনীয় আচরণ জাগ্রত করার জন্য। 
  • সমাজের প্রভাবশালী যারা সর্বদা সত্য আর ন্যায়ের কথা বলে, তারা সত্যিই কতটা ন্যায়বান তা এই উপন্যাসে উঠে এসেছে। নিরাবেগ সত্য ন্যায়ের শিক্ষা কখনো সুশিক্ষা হতে পারে না। তাই টম জুয়ারি হয়েছিল, লুইযাও হঠাৎ ভালোবাসার আবেগে ভেসেছিল, আর বাউন্ডারবির মতো মুখোশধারীরা সুযোগ নিতে পেরেছিল। মানুষ মানবিকতার শিক্ষা পেলে পৃথিবী সুন্দর হত, শাসক আর শোষিত শ্রেণি বলে কিছু থাকত না, ধনী দরিদ্রের জীবনের এতো বৈষম্য আর অসামঞ্জস্যতা থাকত না। 

লেখকঃ

খাতুনে জান্নাত আশা

রিসার্চার, দেশি পণ্য ই-কমার্স

খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top