You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক রিভিউঃ হেইডি (জোহানা স্পাইরি)

কিশোর ক্লাসিক রিভিউঃ হেইডি (জোহানা স্পাইরি)

যখন কোনো কারণে আমার মন বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে, অস্থিরতা কাজ করে, কোনো কিছুতে মনযোগ দিতে পারি না, ঠিক তখনই আমি কিশোর ক্লাসিক নিয়ে বসি। আর পড়তে শুরু করলে একটা গল্প একবারে শেষ না করে উঠা সম্ভব হয় না। গল্পটা শেষ করার পর তবেই মন শান্ত হয়, স্থির হয়। 

নিয়মিত ক্লাসিকগুলো পড়লেও এখন আর সবগুলোর রিভিউ লেখা হয়ে উঠে না। মাঝে মাঝে সময় সুযোগ মিলে গেলে তবেই লিখতে বসি। এই যেমন আজকে লিখতে ইচ্ছে করছে সময়ও মিলে গিয়েছে। 

কিছু ক্লাসিক খুব বেশিই হালকা করে, নির্ভার করে আমাকে। গতকাল তেমনি একটা গল্প পড়ার সুযোগ হয়েছে। সুইস রাইটার জোহানা স্পাইরির “হেইডি” পড়তে পড়তে যেন আমার ছোটবেলায় চলে গিয়েছিলাম কিছু সময়ের জন্য। হেইডির সাথে আমারও আল্পস পর্বতের সেই নিবিড় সান্নিধ্যে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল ভীষণ। আসলে মানুষের জীবনে প্রকৃতির প্রভাব কতটা শক্তিশালী হতে পারে, তা এই গল্পে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা। 

জোহানা স্পাইরির “হেইডি” দুই ভলিউমে প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৮০-৮১ সালে সেই ভিক্টোরিয়ান যুগে। এটি শিশুদের জন্য লেখা একটি ক্লাসিক উপন্যাস, যা সাইকোলজিকালি শিশুদের মনে পজিটিভ প্রভাব ফেলতে সক্ষম। তাই এখন পর্যন্ত এই বেস্ট সেলার ক্লাসিক বইটির কদর সারাবিশ্বেই একই ভাবে বর্তমান। 

সামারি রিভিউ

গল্পটির প্রোটাগনিস্ট হেইডি দুষ্টু-মিষ্টি মায়াবি একটা ছোট্ট মেয়ে। এতিম এই মেয়েটি খালার কাছেই বড় হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ ফ্রাঙ্কফুট শহরে খালার চাকরি হয়ে যাওয়ায় হেইডিকে তিনি রেখে যান তার অ্যাল্পস মামার কাছে। অ্যাল্পস মামা সম্পর্কে হেইডির দাদু হয়। জীবনের সব হারিয়ে তিনি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এক নিঃসঙ্গ বদমেজাজি বুড়ো মানুষ হিশেবেই সবার কাছে পরিচিত। অ্যাল্পস মামা যেমন মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করেন না, মানুষও তেমন তাকে পছন্দ করে না। তবে হেইডি কিন্তু ঠিক বদলে দিতে শুরু করে তার এই সমাজবিচ্যুত বুড়ো দাদুটিকে। 

দাদুর কাছে হেইডির নতুন স্বাধীন এক জীবন শুরু হয়। সারাদিন সে পাহাড়ে ছুটে বেড়ায়। আল্পসের চূড়ায় ছাগল চড়াতে আসে পিটার নামের ছেলেটা। তার সাথে হেইডির খুব ভালো বন্ধুত্বও হয়ে যায়। সারাদিন দু-জনের দারুণ সময় কাটে একসাথে। তবে হেইডি যে শুধু দুষ্টুমিতেই মেতে থাকে তা কিন্তু না। সে যথেষ্ট দায়িত্বশীল একটা বাচ্চা। দাদুকে সব কাজে সে সাহায্য করে। দাদুও খুব খুশি হয় নাতনির কাজের প্রতি আগ্রহ দেখে। 

যখন আল্পসে ভয়ংকর রকম তুষার পরতে শুরু করে, তখন পিটার আর ছাগল চড়াতে আসতে পারে না। হেইডিকেও একদম ঘর বন্দী সময় কাটাতে হয়, যা তার একদম ভালো লাগে না। তাই সে দাদুর কাছে আবদার করে তাকে পাহাড়ের নীচের গ্রামে পিটারদের বাড়িতে নিয়ে যেতে। দাদু হেইডির আবদার ফেলতে পারে না। তাই নাতনিকে কম্বল দিয়ে মুড়িয়ে স্লে তে করে পিটারদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যায়। হেইডির প্রতি দাদুর ভালোবাসা আর দায়িত্বশীলতার গভীর প্রকাশ ছিল এটা।

হেইডির সবচেয়ে বড় গুণ হলো, সে খুব সহজে মানুষের সাথে মিশে যেতে পারে, মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নিতে পারে। সব বাচ্চারা কিন্তু এমন হয় না। পিটারের থেকে ওর মা আর দিদার গল্প শুনে শুনে আগে থেকেই হেইডি তাদেরকে মনে স্থান দিয়েছিল, তেমনি তারাও হেইডির কথা শুনে ছোট মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছিল। তাই বাসায় ঢুকেই যখন পিটারের অন্ধ দিদাকে আন্তরিকভাবে ডেকে উঠে হেইডি, দিদাও পরম মমতায় হেইডিকে কাছে টেনে নেয় নিজের নাতনির মতোই। 

ছোট বাচ্চারা সাধারণত আত্মকেন্দ্রিক হয় বেশি, এটাই স্বাভাবিক যে তারা সারাক্ষন নিজের মতো দুষ্টুমিতে মেতে থাকবে। কিন্তু হেইডি কিছুটা ব্যাতিক্রমীই ছিল। অন্যদের সুবিধা অসুবিধার প্রতি খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল তার। তাই পিটারদের বাসার প্রায় ভেঙ্গে পরা জানালা তার নজর এড়ায় নি। ঠিকই সে তার দাদুর কাছে আবদার করে বসে পিটারদের ঘরটা মেরামত করে দেয়ার জন্য। অসামাজিক দাদু প্রথমে অমত করলেও পরে সবাইকে অবাক করে দিয়ে চুপচাপ ঘরটি মেরামত করে দিয়ে আসে। 

তবে হেইডির দাদু সমাজ এবং মানুষের প্রতি ভীষণ বিরক্ত ছিল। তাই তিনি নাতনিকে স্কুলে দিতে রাজি হতেন না কোনো ভাবেই। তার ধারণা হেইডি স্কুলে গিয়ে খারাপ সঙ্গ পেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। পিটার স্কুলে যেত আর হেইডিকে এসে স্কুলের গল্প শুনাত। 

তারপরও সবকিছু এভাবে ভালোই চলছিল। হেইডি খুব সুন্দর স্বাভাবিক একটা জীবন পেয়েছিল তার দাদুর সাথে ঠিক যেমনটা সে চায়। কিন্তু হঠাৎই ৩ বছর পর আবার একদিন হেইডির সেই খালা এসে হাজির হয়, তাকে ফ্রাঙ্কফুটে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেখানে এক বড়লোক বাড়ির ছোট্ট মেয়ে ক্লারা হাঁটতে পারে না। তাই প্রতিবন্ধী এই মেয়েটির জন্য তার বাবা একজন সঙ্গী খুঁজছিল। হেইডিকে তাই তার খালা ক্লারার সঙ্গী হিশেবে নিতে আসে। খালার ধারণা শহরে হেইডি তাহলে ভালো একটা জীবন পাবে৷ 

কিন্তু হেইডির দাদু ভীষণ রাগ হয়, নাতনিকে কোনো ভাবেই সে শহরে যেতে দিতে রাজি না। শহরের জীবন হেইডির জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না এমনটাই তিনি বিশ্বাস করতেন। তাই হেইডির খালার সাথে দুর্ব্যবহার করে রীতিমতো তাড়িয়েই দিতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু নাছোড়বান্দা খালা হেইডিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাজি করিয়ে নিয়ে যায় এই বলে যে, শহরে গেলে সে নিজের উপার্জন দিয়ে দাদুর জন্য উপহার কিনতে পারবে। শুধুমাত্র এই ব্যাপারটাই হেইডিকে শহরের যেতে প্ররোচিত করে। ছোট্ট মেয়েটি যে নিজের জন্য না ভেবে সব সময় অন্যদের জন্য চিন্তা করে পুরো গল্প জুড়ে এই ব্যাপারটাই খুব মুগ্ধ করার মতো। 

ফ্রাঙ্কফুটে ক্লারাদের বাসায় গিয়েও হেইডি একইভাবে সবাইকে জয় করেছিল খুব অল্প সময়ের মাঝে। তার স্বভাবজাত দুষ্টুমি যদিও ক্লারাদের কঠোর হাউসকীপার রোটেনমিয়ারকে রাগিয়ে দিচ্ছিল বার বার, তবে তা যেন বাসাটিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল, সবার হাসি আনন্দের খোরাক হয়েছিল। ক্লারার সাথে খুব দ্রুতই হেইডির বন্ধুত্ব হয়ে যায়। হেইডি তার পাহাড়ি মুক্ত জীবনের গল্প, পিটার, দাদু, দিদা আর পিটারের মায়ের গল্প শোনায় ক্লারাকে। ক্লারাও হেইডিকে বই পড়ে শোনায়। ক্লারাকে যে হোমটিচার পড়াতে আসে, সে হেইডিকেও পড়তে শেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিদিনই ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়। 

ক্লারাদের বাসায় হেইডি নরম বিছানায় খুব আরামে ঘুমায়, সুস্বাদু সব খাবার খায়। তারপরও তার মন ছুটে যায় সেই আল্পস পর্বতে, পিটার, দাদু আর দিদার কাছে। খুব মন খারাপ হয় তার যখন ক্লারাদের জানালা খুলে দালানকোঠা ছাড়া আর কিছু দেখতে পায় না। প্রকৃতির সান্নিধ্যে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে তার বার বার। 

এরই মাঝে ক্লারার দিদা বেড়াতে আসে তাদের বাসায়। হেইডি আর ক্লারা দিদাকে পেয়ে ভীষণ খুশি হয়। দিদাও হেইডিকে খুব আদর করে, ছোট মেয়েটাকে তিনি বোঝার চেষ্টা করেন এবং বুঝতেও পারেন। তাই হয়তো সবাই যখন হেইডিকে পড়তে শেখাতে ব্যর্থ হচ্ছিল, তখন দিদা ঠিকই এই কাজে সফল হয়েছিল। ক্লারার দিদা হেইডিকে ছবি দেখে দেখে পড়ার একটা বই দিয়েছিল। বই এর ছবিগুলোতে হেইডি ঠিক তার পাহাড়ি জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিল। তাই সেটা হেইডির প্রিয় বই হয়ে উঠেছিল। হেইডি বুঝতে পেরেছিল পড়তে শিখলে, বই এর জগৎকে আপন করে নিলে এই বদ্ধ বাসায় বসেও প্রকৃতির মাঝে হারানো যাবে, বাইরের জগৎটাকে দেখা যাবে। পড়তে শেখার পর থেকে হেইডির আর এতো কষ্ট হত না ক্লারাদের বাসায়। 

কিন্তু ক্লারার দিদা চলে যাওয়ার পর হেইডি আবারও কেমন যেন একা হয়ে পরেছিল। পিটার আর তার দাদু, দিদাকে বেশি মিস করছিল। পাহাড়ি জীবনে আবার ফিরে যেতে তার মন অস্থির হয়ে উঠেছিল। এক সময় এভাবে হেইডি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরে। ক্লারার ডাক্তার হেইডিকে দেখে একটাই পরামর্শ দেয়, ওকে বাঁচাতে হলে ওর গ্রামেই ফিরিয়ে নিতে হবে। ক্লারার বাবা তাই হেইডিকে ওর দাদুর কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। ক্লারার ভীষণ মন খারাপ হয়। কারণ হেইডিকে ছাড়া থাকা তার জন্য এখন খুব কষ্টের হবে বুঝতে পারে। অল্প সময়েই তাদের মাঝে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ক্লারা নিরুপায়, কারণ তার বন্ধু খুব অসুস্থ তাই তাকে যেতে দিতেই হবে। এভাবেই বিচ্ছেদ ঘটে দুই ছোট্ট বন্ধুর। 

হেইডি আল্পসে ফিরে যাওয়ায় ওর দাদু, দিদা ভীষণ খুশি হয়। তারা ভেবেছিল আর বুঝি হেইডিকে তারা দেখতে পাবে না। চিরচেনা প্রকৃতি হেইডিকে দ্রুতই সুস্থ করে তুলে। হেইডি এখন দিদাকে বাইবেলের শ্লোক পড়ে শোনায়, দিদা ভীষণ খুশি হয়। হেইডির মুখে তার দাদু যখন ক্লারাদের বাসার গল্প শুনে, সবাই তাকে কত ভালোবাসত, আদর করতো সেগুলো শুনে তখন দাদুর মনে হয় মানুষ তাহলে এতোটাও খারাপ না যতটা তিনি ভাবেন। দাদু যেন হেইডির মাধ্যমে মানবসমাজকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করে। মানুষের প্রতি তার বিতৃষ্ণ ভাব আস্তে আস্তে কেটে যেতে থাকে এবং এটি তাকে পাহাড় থেকে গ্রামে ফিরে আসায় প্ররোচিত করে। 

ও হ্যাঁ, হেইডি পাহাড়ে ফিরে আসার সময় ক্লারা তাকে উপহার হিশেবে বেশ কিছু টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা সে নিজের জন্য খরচ না করে পিটারের দিদার জন্য নরম রুটি কিনে দেয়। কতোটা সুন্দর মনের এই ছোট্ট মেয়ে হেইডি গল্পের পরতে পরতে তারই পরিচয় পেয়েছি আমি! 

তুষার পরতে শুরু করলে হেইডির দাদু এইবার সত্যিই গ্রামে ফিরে আসে। পিটারদের বাসায় গিয়ে দিদার সাথে কথা বলে, গির্জায় যায়, হেইডিকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। হেইডি ভীষণ খুশি হয় দাদুর এই পরিবর্তনে। এদিকে পিটার হেইডির আগে থেকে স্কুলে যেতে শুরু করলেও এখনো সে পড়তে শিখেনি। তাই হেইডি চিন্তা করে সে পিটারকে পড়তে শেখাবে। ক্লারার দিদা যেভাবে তাকে পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিল, সেও প্রতিদিন পিটারকে সময় দিয়ে পড়ায় আগ্রহী করে তুলে। পিটার সত্যিই হেইডির চেষ্টায় পড়তে শিখে যায় আর তার দিদাকে শ্লোক পড়ে শুনিয়ে চমকে দেয়। 

অপরদিকে ক্লারা হেইডিকে ছাড়া অসহায় আর অসুস্থ হয়ে পরে। ক্লারার ডাক্তার আঙ্কেলও তার একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে খুব বিষন্ন আর একা হয়ে পরে। ক্লারার বাবা ক্লারাকে নিয়ে হেইডিদের বাড়িতে বেড়াতে আসার প্ল্যান করেছিল। কিন্তু ক্লারা বেশি দুর্বল হয়ে পরায় ডাক্তার আঙ্কেলকে হেইডির খোঁজ নিতে পাঠায়। ডাক্তার আঙ্কেলও এখানে আসার পর আল্পসের প্রেমে পরে যায়, তার মনের সব বিষন্নতা দূর হয়ে যায়, হেইডির দাদুর সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে তার। 

এরপর ডাক্তার আঙ্কেল গিয়ে সব জানানোর পর ক্লারার দিদা তাকে নিয়ে আল্পসে বেড়াতে আসে হেইডিদের বাড়ি। আল্পসের প্রকৃতির নির্যাস ক্লারাকেও যেন সুস্থ করে তুলতে চায়। হেইডির সাথে হুইল চেয়ারে করেই যতটা সম্ভব পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করে সে। হেইডির দাদু ক্লারাকে হুইলচেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে, হাঁটার চেষ্টা করতে সাহায্য করতে থাকে। একদিন সত্যিই ক্লারা হুইলচেয়ার ছেড়ে একাকী হাঁটতে শিখে যায়,  প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সবাইকে অবাক করে দেয়। ব্যাপারটা খুব ইমোশনাল ছিল সত্যিই। 

ক্লারা আর তার দিদা যখন চলে যায়, বিদায় বেলায় হেইডিকে উপহার দিতে চায় তারা। আর হেইডি তাদের কাছে একটা জিনিসই আবদার করে তা হলো- সে ক্লারাদের বাসায় যে নরম বিছানায় ঘুমাতো সেই বিছানাটা যেন পিটারের দিদার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়। তার এই আবদার না রাখার কোনো কারণ ছিল না ক্লারাদের। মিষ্টি এই মেয়েটা সবার জন্য যেন আদর্শ আর তার প্রতিটি কাজ আর চাওয়া সবার জন্য সুন্দর শিক্ষা। 

“হেইডি” উপন্যাসের মাধ্যমে লেখক শিশুদের মনে সুন্দর চিন্তার বিকাশ ঘটাতে চেয়েছেন। হেইডি এবং তাকে ঘিরে থাকা চরিত্রগুলোর মাধ্যমে অনেক সুশিক্ষা বার্তা খুঁজে পাওয়া যায়। 

ক্লারার দিদা হেইডিকে যে উপায়ে পড়তে শিখিয়েছেন সেটা খুব সুন্দর একটা মেসেজ দিয়েছে বড়দেরকেও। বাচ্চাদেরকে তাদের মতো করে শেখাতে হয়। পড়াটাকে বোরিং না করে বরং আনন্দ নিয়ে পড়তে শেখাতে হয় ঠিক যেভাবে বাচ্চারা চায়। 

ভালোবাসা আর আন্তরিকতা অনেক কঠিন মানুষকেও নরম করে দিতে পারে। সমাজের মানুষগুলোর মাঝে পারস্পারিক সম্পর্কগুলো সুন্দর হয়, যখন তারা একে অন্যের প্রতি আন্তরিক হয়। অন্য একটা মানুষ আমার সাথে তেমন আচরণ করবে, যেমনটা আমি তাদের সাথে করব। হেইডি তার বদমেজাজি দাদুকেও মানুষের সংস্পর্শে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল তার সারল্য আর আন্তরিকতা দিয়ে।

ছোট থেকে হুইলচেয়ারে বসে  প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেড়ে উঠা ক্লারার আল্পসে এসে হঠাৎ সুস্থ হয়ে যাওয়া যদিও খুব বেশি বাস্তবিক না, তারপরও অসম্ভব কিছুও না এটা। এর মাধ্যমে লেখক বুঝিয়েছেন সুন্দর প্রকৃতি আর পরিবেশের বিশেষ একটা শক্তি রয়েছে যা আমাদেরকে সুস্থ করে তুলতে পারে। এবং শুধু প্রকৃতিই না বরং আন্তরিক মানুষ পাশে থাকলে, সাহস যোগালেও মানুষ যে কোনো প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে পারে। ‘চেষ্টা করো, তুমি পারবে’ এমনটা বোঝানোর জন্য হলেও অন্তত একজন পাশে থাকা দরকার। ক্লারার ক্ষেত্রে এই ভূমিকাটা পালন করেছিল হেইডির দাদু। তিনিই হয়তো প্রথম ক্লারার মনে দাঁড়াতে শেখার ইচ্ছেটা জাগিয়ে তুলেছিল। ক্লারার মতো সবাই হয়তো এই প্রতিবন্ধকতাকে জয় নাও করতে পারে, কিন্তু অন্তত চেষ্টা করা উচিত। বলা তো যায় না, চেষ্টা এক সময় সুফল বয়ে আনতেও পারে। 

লেখকঃ

খাতুনে জান্নাত আশা, রিসার্চার, দেশি পণ্য ই-কমার্স

খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top