You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > ফার্মার বয় (লেখিকা: লরা ইঙ্গলস) সামারি এবং শিক্ষা

ফার্মার বয় (লেখিকা: লরা ইঙ্গলস) সামারি এবং শিক্ষা

লরা ইঙ্গলস ওয়াইল্ডারের “ফার্মার বয়” লেখিকার স্বামী আলমানযোর ছোটবেলার এক বছরের স্মৃতি নিয়ে লেখা হয়েছে। লেখিকা তার আত্মজীবনীমূলক বই “লিটল হাউজ” সিরিজ এর জন্য বিখ্যাত। এই সিরিজেরই ২য় প্রকাশিত বই হলো “ফার্মার বয়”। সেই ১৮শতকে আমেরিকার কৃষক পরিবারগুলোর জীবনযাত্রা কেমন ছিল, তা বেশ স্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয়েছে এই উপন্যাসে। 

সামারি

নিউইয়র্ক স্টেটের উত্তরাঞ্চলের একটি খামার-বাড়িতে পরিবারের সাথে বাস করে ছোট্ট আলমানযো। তার বয়স মাত্র ৮ থেকে ৯ হতে চলেছে। তাই সে ভাই বোনদের সাথে সবেমাত্র স্কুলে যেতে শুরু করেছে, যদিও স্কুল তার খুব একটা পছন্দ নয়। এর থেকে বরং সে খামারি বাবার কাজের সঙ্গী হতেই বেশি ভালোবাসে। কিন্তু শীতকালীন সময়টা মাঠের কাজ সব বন্ধ থাকে বলে, এই সময়ে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠায় খামারি মা-বাবারা। তাই বাধ্য হয়ে আলমানযোকে স্কুলে যেতেই হচ্ছে এখন। 

৪ ভাই বোনের মাঝে আলমানযো সবচেয়ে ছোট, কিন্তু তার হাবভাবে মনে হয় এই বয়সেই যথেষ্ট দায়িত্ব নেয়ার জন্য সে উপযোগী। এখনই সে খামারের অনেক কাজে বাবাকে সাহায্য করতে পারে, সবচেয়ে ভদ্র গরুগুলোর দুধ দোয়াতেও পারে, আর বাবার প্রশংসা পেয়ে খুব খুশি হয়ে যায়। বাবা তার আদর্শ। তার বাবা শহরেও বেশ সম্মানিত এবং স্বাধীন এটা তার খুব ভালো লাগে। বাবার মতোই সে এমন পরিশ্রমী ফার্মার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কারণ বাবার খামারের প্রতিটি কাজই তার ভালো লাগে, মজার মনে হয়। তাই এখন থেকেই কাজগুলোর প্রতি সে খুব যত্নশীল। 

তাদের খামার বাড়িতে কাজের কোনো অভাব নেই। প্রত্যেকেই সমান তালে কাজ করে, সবাই নিজ নিজ কাজে সমান এক্টিভ। বড় ভাই রয়েল আর আলমানযো বাবাকে বাইরের কাজগুলোতে সাহায্য করে, বড় দুই বোন ইলাইযা জেন আর এলিস মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করে। ভীষণ সুশৃঙ্খল তাদের প্রতিটি দিনের প্রতিটি কাজ। 

তাদের জীবনযাত্রার এটাই অন্যতম শিক্ষনীয় এবং আদর্শ দিক। ছেলেমেয়েরা ছোট থেকেই পরিবারের দায়িত্ব নিতে শিখে, ইচ্ছে করেই মা-বাবাকে সব কাজে সাহায্য করে আনন্দের সাথে, পরিবারের প্রতিটি প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতা বোঝার চেষ্টা করে এবং সেই অনুযায়ী নিজ নিজ দায়িত্ব কর্তব্য ঠিক ভাবে পালন করে। আবার কখনো কখনো তারা একে অন্যের জন্য সেক্রিফাইসও করতে পারে। এই ব্যাপারগুলো বর্তমান সমাজ ও পরিবারে খুব একটা দেখা যায় না, তাই এই বইটা এখনকার বাচ্চাদের চিন্তা চেতনায় কিছুটা হলেও পজিটিভ প্রভাব ফেলতে বাধ্য। 

ওয়াইল্ডার পরিবারের প্রতিদিন

ঠিক ভোর ৫টায় দিন শুরু হয় আলমানযো ওয়াইল্ডারের পরিবারের। একই সময়ে সবাই ঘুম থেকে জাগে। উঠেই রয়াল আর আলমানযো তার বাবার সাথে গোলাঘরে চলে যায় দুধ দোয়াতে। এদিকে তার মা মজাদার সব নাস্তা রেডি করতে থাকে আর দুই বোন মাকে সাহায্য করে থালা বাসন ধুয়ে নাস্তার টেবিল সাজানোর কাজে। ইলাইযা জেন, এলিস দুজন বিছানা গুছানো আর ঘর ঝাড়ু দেয়ার কাজও করে। 

সকালের নাস্তা সেরে আলমানযো ভাই বোনদের সাথে স্কুলে চলে যায়। স্কুল থেকে ফিরে আলমানযো স্কুল ড্রেসের উপরই এপ্রন জড়িয়ে বাবার সাথে তার প্রিয় কাজগুলোতে লেগে পরে। গরু, ঘোড়া, মুরগী, ভেড়া, শুকর সবগুলো পশুকে খাবার আর পানি দেয়া, গোলা ঘর থেকে পুরোনো খড় সরিয়ে পশুগুলোর জন্য নতুন খড় বিছিয়ে বিছানা করা ইত্যাদি অনেক কাজে বাবাকে সাহায্য করে আলমানযো যতটা সম্ভব তার এই বয়সে।

আলমানযোর অবশ্য সব কাজের মাঝে সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত আসে যখন কোল্টগুলোকে সে দেখতে পায়, যদিও বাবা তাকে এখনো এদের কাছে যেতে দেন না সামান্য ভুল কোল্টগুলোর আচরণ নষ্ট করে দিতে পারে তাই। ঘোড়াদেরকে পোষ মানানো বেশ কঠিন কাজ, যা আলমানযোর দ্বারা এখনই সম্ভব না। আলমানযো অপেক্ষা করে কবে বাবা তাকে একটা কোল্ট দেবার উপযুক্ত মনে করবে৷ কারণ এদেরকে খুবই পছন্দ করে সে, তাই এদের দিকে তাকিয়ে থেকে আর বেড়ার বাইরে থেকে গাজর খাইয়েই আপাতত সন্তুষ্ট থাকে সে। 

সন্ধ্যার পর মনের আনন্দে এগুলো কাজ করতে করতেই সাপারের টাইম হয়ে যায়। আলমানযো খেতেও খুব পছন্দ করে। তাই মায়ের ভাজা মাংসের সুগন্ধ পেয়ে আর লোভনীয় সব খাবার দেখে টেবিল সাজানোর অপেক্ষা করার তর সয় না যেন তার। সুযোগ পেয়েই নেশাগ্রস্থের মতো খায় আলমানযো। 

খাবার শেষ করে সবাই একসাথে কিছু সময় কাটায়। আলমানযো আর রয়েল তাদের জুতায় চর্বি মাখাতে বসে ভেতরে ঠান্ডা কম ঢুকার জন্য, মা তখন সেলাই করে, বাবা কুঠারে ধার দিতে বসে, এলিস এমব্রয়ডারি করে, ইলাইযা জেন জোরে জোরে নিউইয়র্ক টাইমস এর খবরগুলো পড়ে। রয়েল আবার তাদের স্টোভের চিমনিতে পপকর্ণ সেঁকে, মাখন দিয়ে মাখিয়ে খায় সবাই। 

এরই মধ্যে ঘড়িতে ঢং ঢং শব্দ করে যখন রাত ৯টা বেজে যায়, তখন সাথে সাথে সবাই যার যার কাজ বন্ধ করে ঘুমানোর জন্য বিছানায় চলে যায়। আবার ঠিক ভোর ৫টায় পরবর্তী দিন শুরু করতে উঠে যায়।

অবশ্য আলমানযোর বাবা মাঝরাতে বেশ কয়েকবার উঠে পশুগুলোকে দৌড় করায় ঠান্ডায় জমে না যাওয়ার জন্য। 

শনিবার আলমানযোর সবচেয়ে অপছন্দের দিন, কারণ এটা তাদের গোসলের দিন। মাইনাস ৪০ ডিগ্রী তাপমাত্রার ঠান্ডায় গোসল অপছন্দের কাজ হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছুই করার নেই, গোসল তো করতেই হবে। আলমানযো আর রয়াল তাই বাইরে গিয়ে বাড়ির ছাদ থেকে কুঠার চালিয়ে বালতি ভর্তি বরফ নিয়ে দেয় ভেতরে। চুলায় সেগুলো গরম করে বাথটাবে পানি ঢেলে বদলে বদলে একে একে গোসল করে সবাই। সবার আগে আলমানযোকেই মা গোসল করায় ওর গোসলে বেশি আপত্তি থাকায়। 

রবিবার ম্যালোন শহরে গির্জায় যাওয়ার দিন আলমানযোদের। খুব পরিপাটি হয়ে সকাল সকাল তৈরি হয়ে যায় তারা। তারপর ঘোড়ার স্লে তে চরে শহরে যায় তারা। প্রার্থনা সেরে বাড়ি এসে সেদিন আর কেউ কোনো কাজ করতে পারে না। এটাই তাদের নিয়ম। রবিবার শুধু প্রার্থনা, চুপচাপ বসে থাকা আর বিশ্রাম। আলমানযোর তাই খুব বোরিং কাটে এই দিনটা। তবে সন্ধ্যায় যখন দৈনন্দিন কাজের সময় হয়, তখন সে খুশি হয়ে উঠে, দৌড়ে চলে যায় বাবার সাথে পশুগুলোর কাছে। 

আলমানযো ওয়াইল্ডারদের পরিবারের এই সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা থেকে শিক্ষনীয় আছে অনেক কিছু। বিশেষ করে সময়ানুবর্তিতা, কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং আগ্রহ, দায়িত্ব পালনে অবহেলা না করা, পরিবারের সবাই যার যার কাজ ঠিক ভাবে করা ইত্যাদি অনেক কিছুই এখনকার আধুনিক পরিবারের জন্য শিক্ষা। 

  • মিস্টার এন্ড মিসেস ওয়াইল্ডার তাদের বাচ্চাদের রেখে একদিন তাদের আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যায় এক সপ্তাহের জন্য। বলে যায় যেন, তারা ভালো বাচ্চা হয়ে থাকে আর বড় বোন ইলাইযা জেনের কথা শুনে। মায়ের অবর্তমানে বাড়ি সামলানোর দায়িত্ব ইলাইযা জেনেরই বেশি। মা-বাবা চলে যাওয়ায় আলমানযোদের নিজেরদেরকে স্বাধীন মনে হয়, কারণ যা খুশি তারা করতে পারবে কেউ শাসন করার নেই এখন। কিন্তু বাড়ির সবকিছু ঠিক ঠাক রাখতে হলে সবাইকে মিলে কাজ করতেই হবে। তাই সবাই মিলে ধুয়ে মুছে বাড়ি পরিষ্কার রাখে, পশুদের যত্ন নেয়। তবে মা সাবধান করে যাওয়ার পরও মেহমানদের জন্য রাখা সব সাদা চিনি প্রায় খেয়ে শেষ করে ফেলে তারা। বিভিন্ন কিছু বানিয়ে খায় যখন যা তাদের ইচ্ছে করে। সবমিলিয়ে বেশ মজার সময় কাটায় তারা। 
  • তবে আলমানযোর অতিরিক্ত খবরদারি পছন্দ না, তাই বড় বোন ইলাইযা জেনের প্রতি খুব রাগ হয় তার। ঝগড়া করে অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। মায়ের বহু যত্নে সাজিয়ে রাখা বৈঠকখানার ওয়ালপেপার ছিদ্র করে ফেলে আর ভয়ে ভয়ে থাকে। এদিকে মা আসার আগেই ইলাইযা জেন কাপড় জোরে দিয়ে একদম আগের মতো করে ফেলে যেন আলমানযোকে শাস্তি পেতে না হয়। আলমানযো মা আসার পর যখন ব্যাপারটা বুঝতে পারে তখন আরও অনুতপ্ত হয়, বড় বোনের প্রতি তার শ্রদ্ধা জন্মায়। 

এখান থেকে শিক্ষনীয় অনেক কিছুই আছে। মা-বাবার এভাবে মাঝে মাঝে বাচ্চাদের উপর বিশ্বাস করে দায়িত্ব দেয়া উচিত। এতে মা-বাবার অবর্তমানে বাচ্চারা দায়িত্ব নিতে শিখে, নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শিখে, সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে নিতে শিখে। এই ব্যাপারগুলো বাস্তব লাইফ লেসন হিশেবে কাজ করে তাদের জন্য। 

আলমানযো’র স্কুল

বরফাচ্ছাদিত শীতকাল বলতেই তখন বাচ্চাদের স্কুলটাইম। ফার্মার পরিবারের বাচ্চারা সারাবছর ফার্মের কাজে অনেক ব্যস্ত সময় কাটায়, তাই তারা স্কুলে যেতে পারে না। শীতকালকালীন সময়টা তাই বাচ্চাদের স্কুলে পাঠায় মা-বাবা। 

আলমানযো স্কুলে যেতে শুরু করে যখন তার বয়স ৯বছর ছুঁই ছুঁই করছে। স্কুলে যাওয়ার পথে তার সঙ্গী হয় বড় ভাই রয়েল, বড় দুই বোন ইলাইযা জেন আর এলিস। সে ছোট বলে নিয়মানুযায়ী বড় ৩ভাই বোনের টিফিন বক্সগুলো তাকেই বহন করতে হয়। আলমানযো এতে আপত্তি জানালেও নিয়মের ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই, তাই তার চেয়ে ভারি এই টিফিনের বোঝা তাকে বহন করতেই হয়। 

স্কুলের সব বাচ্চারাই কিন্তু খুব ভদ্র আর ভালো হয় না। কিছু বখাটে বাচ্চা সব স্কুলেই থাকে। আলমানযোর স্কুলেও এমন কিছু বখাটে বাচ্চা ছিল, যারা বাকি সব বাচ্চাদের উত্যক্ত করার পাশাপাশি স্কুলের টিচারকেও মারধর করতে ছাড়ত না। এমনই ভয়ংকর এরা যে, আলমানযো স্কুল শুরু করার আগের শীতে এক টিচারকে মেরে এমন অবস্থা করে বেচারা টিচার মরেই যায়। এজন্য আলমানযো স্কুলে ঢুকেই ওদের দেখে বেশ ভয়ে ভয়ে থাকে আর চিন্তা করে, এইবারের শান্ত ভদ্র টিচারকেও জানি কবে ওরা এমন নাজেহাল করে তুলে। 

আলমানযোদের টিচারকে রাগানোর জন্য এই বখাটে ছেলেগুলো অনেক ভাবেই উত্যক্ত করে, ক্লাসে সারাক্ষণ দুষ্টুমি করে। ওদের প্ল্যান হলো টিচার কিছু বললেই তাকে মারধর করবে। কিন্তু টিচার ধৈর্য ধরে খুব ঠান্ডা মাথায় পড়িয়ে যায় সবাইকে। তবে তাদের অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় সবাই চিন্তিত হয়ে পরে যে, টিচার বেশিদিন এমনটা সহ্য করতে না পেরে যখনই কিছু বলবে ওদের তখনই ওরা ঝাঁপিয়ে পরবে টিচারের উপর। সবাই ধরেই নিয়েছিল আগের টিচারের মতোই অবস্থা করে ছাড়বে এইবারও। 

এদিকে নিয়ম হলো, হোমস্কুল টিচারদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা একেক শিক্ষার্থীর বাড়িতে হয় ১৪দিনের জন্য। যথারীতি টিচার আলমানযোদের বাড়িতেও তাই থাকতে যায় ওদের সাথে। আলমানযো আর রয়েল তাদের বাবাকে জানায় টিচারকে ছেলেগুলো কীভাবে জ্বালাচ্ছে সে কথা। তার বাবা ছেলেদের সাবধান করে দেয় এই ঝামেলায় তারা না জড়াতে। এর পরদিনই ক্লাসে ছেলেগুলো যখন টিচারকে রাগানোর চেষ্টা করে, টিচার তখন তাদের একজনকে ডাক দেয় সামনে আসার জন্য। সেই ছেলেটা তখন বাকিগুলোকেও নিয়ে সামনে আসে টিচারের সাথে ঝামেলা করার জন্য। ক্লাসের সব ছেলেমেয়ে তখন ভয় পেয়ে যায় অসহায় টিচারের কথা ভেবে। কিন্তু দৃশ্যপট বদলে যায় নিমিষেই। টিচার ডেস্কের নীচ থেকে বের করে আনে একটা ব্ল্যাকস্নেক চাবুক আর বখাটগুলোকে একজন একজন করে প্রহার করতে শুরু করে। ছেলেগুলো প্রথমে উলটো একশন নিতে চাইলেও এই চাবুকের কাছে হার মানতেই হয়, আর দৌড়ে  পালিয়ে বাঁচে। খুব খুশি হয় আলমানযোসহ সব বাচ্চারা। আলমানযো বাড়ি ফিরে বাবাকে এই কাহিনী বলে আর এরপর টিচার বাড়ি ফিরলে বুঝতে পারে তার বাবাই টিচারকে এই বুদ্ধি দিয়েছিল। আলমানযোর খুব ভালো লাগে তখন, তার বাবার বুদ্ধিতে টিচার বখাটের উচিত শায়েস্তা করতে পেরেছে বলে। 

আলমানযোর স্কুলে যেতে ভালো লাগে না একদমই, তাই শুধু স্কুল মিস দেয়ার সুযোগ খুঁজে। বাবাকে বলে যে, সে তো বাবার মতো ফার্মার হবে তাহলে তার পড়াশোনার কী দরকার। তখন তার বাবা তাকে বলে ফার্মারদের অনেক হিসাব কষতে হয়, অংক জানতে হয়। ভালো কৃষক হতে হলে ভালো অংক জানতে হবে। তাই স্কুলে গিয়ে মন দিয়ে অংক শিখতে হবে। আলমানযো তাই বাবার উপদেশ মেনে স্কুলে যায় আর অংক শেখায় মন দেয়। 

যে কোনো পেশায়ই ভালো করতে হলে আসলে লেখাপড়ার গুরুত্ব অনেক বেশি। 

বরফ ঘর তৈরি 

সে যুগে খাবার সংরক্ষনের জন্য কোনো ফ্রিজ ছিল না, গরমে ঠান্ডা খাবার বা পানীয় খাওয়ারও তাই এতো সুব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু আলমানযোদের পরিবার ঠিকই এর বিকল্প ব্যবস্থা করে ফেলেছিল। 

শীতকালে লেকের উপরিভাগের পানি জমাট বেঁধে বরফ হয়ে যেত। সেখান থেকে আলমানযোর বাবা আরও দুই লোককে সাথে নিয়ে করাত দিয়ে বরফের চাই কেটে কেটে নিয়ে আসত বাড়িতে। তারপর একটার উপর একটা বরফের খন্ডগুলো সাজিয়ে তৈরি করত বরফের ঘর। 

রয়েল আর আলমানযো প্রতি বরফ খন্ডের মাঝে ৩ ইঞ্চি করে ফাঁকা জায়গা রাখত সেটাকে কাঠের গুড়োর ঠেসে ভরার জন্য। বরফের উপরেও আবার কাঠের গুড়া ঢেলে ৩ইঞ্চি পুরুত্ব তৈরি করত। এই কাঠের গুড়ো দেয়ার কারণে ভেতরের বরফ গলে যেতে পারত না। এভাবে তৈরি করে নেয়া বরফ ঘরের বরফ সারা বছরই থেকে যেত যত গরমই আসুক না কেন। তাই শীত চলে গেলেও তাদের বরফের অভাব হত না। যখনই আইসক্রীম তৈরি করতে বা অন্য কোনো কারণে বরফ লাগত, তখন এই ঘরের দেয়াল থেকে বরফ খুড়ে বের করে কাজ সারত ওরা। ব্যাপারটা কিন্তু দারুণ। বুদ্ধিমান মানুষ সব অবস্থায় সারভাইব করার মতো ব্যবস্থা ঠিকই করে নেয় এভাবে। 

আলমানযোর জন্মদিন

আলমানযোর মনেই ছিল না তার জন্মদিনের কথা। হঠাৎ বাবার উইশ পেয়ে মনে হলো, আজ তার ৯ম জন্মদিন। 

আলমানযো জন্মদিনে একদম তার মনের মতো উপহার পেল মা বাবার থেকে। বাবা যখন তাকে বলল, স্টার এবং ব্রাইট নামের বাছুর দুটো আজকে থেকে তার, এদেরকে নিজ ইচ্ছেমতো ট্রেনিং দিতে পারে তখন আলমানযো একই সাথে অবাক আর ভীষণ খুশি হলো। লেগে গেলো জোয়াল নিয়ে ওদেরকে ট্রেনিং দেয়ার কাজে। সেদিন আর স্কুলে যেতে হলো না তার। 

ছোট্ট আলমানযো এই কাজেও বেশ দক্ষতার পরিচয় দিল। বাছুর দুটোকে গাজরের লোভ দেখিয়ে দেখিয়ে শিখিয়ে ফেলল, গিডাপ বললে সামনে এগিয়ে আসতে হয় আর ওয়াও বললে থেমে যেতে হয়। 

বাছুরগুলোর ট্রেনিং শেষ করেই আলমানযো এইবার স্লেড উপহার পেল। এতে সে আরও বেশি অবাক আর খুশি হলো। বিকেলটা তাই তার দারুণ কাটল বরফের মাঝে স্লেড নিয়ে ঘুরে ফিরে। 

  • আলমানযোর সবচেয়ে বড় গুন হলো প্রবল শেখার আগ্রহ তার। সে তার বাবার প্রতিটি কাজে আগ্রহ বোধ করে, শিখতে চায় মন দিয়ে এবং যাই করার সুযোগ পায় খুব মন দিয়ে করে। কাজের প্রতি আগ্রহ আর ভালোবাসার কারণে যে কোনো কাজই খুব দ্রুত শিখে ফেলতে পারে সে। বাবার সব কাজের সঙ্গী হয় সে, আর শিখে নেয়ার চেষ্টা করে। কারণ সে তার বাবার মতো ফার্মার হতে চায়। ইচ্ছেশক্তির কারণে খুব অল্প বয়সেই আলমানযো অনেক ম্যাচিউরড হয়ে যায়, ফার্মের কাজগুলো খুব ভালো বুঝে যায় এবং সবাইকে অবাক করে দেয় সব কাজেই তার দক্ষতা দেখিয়ে। 
  • যে কোনো কাজে সফল হতে হলে আসলে এমন প্যাশনেট থাকা খুব জরুরী। নিজের স্বপ্ন নিয়ে যে যত বেশি সিরিয়াসভাবে চেষ্টা করে তার সাফল্যের হার তত বেশি। 
  • আলমানযোর বাবার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। কিছু বিষয় মনে দাগ কেটেছে। ২০০ বছরের বেশি সময় আগের মানুষ তিনি, অথচ কতো বিচক্ষণ, কতো আধুনিক তিনি! 

“টাকা হচ্ছে কাজ, কঠিন পরিশ্রম”

আলমানযোর বাবা তাকে আধ ডলার দিয়ে ঠিক এ কথাই বলেছিল। আলমানযোকে জিজ্ঞেসও করেছিল এই আধ ডলার পেতে তাদেরকে ঘরে বাইরে কী পরিমাণ শ্রম দিতে হয়। 

শহুরে ছেলে ফ্রাঙ্কের টিজিং এর কারণে এই প্রথম আলমানযো তার বাবার কাছে টাকা চাইতে গিয়েছিল। বাবা তাকে এই আধ ডলারের মূল্য বুঝিয়ে দিয়ে তারপর তার উপরই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছিল যে, এটা দিয়ে সে যা ইচ্ছে করতে পারে। লেমোনেড খেয়ে আজই সব টাকা শেষ করে ফেলতে পারে অথবা একটা মাদি শুকর কিনতে পারে যা বাচ্চা দিবে আরও ৪-৫টা এবং প্রত্যেক বাচ্চার দাম হবে ৪-৫ ডলার করে। আলমানযো তখন মাদি শুকর কেনার সিদ্ধান্তই নেয়। 

  • আলমানযো শহরের এক গাড়ির ওয়ার্কশপে কাজ করার প্রস্তাব পায় এবং শুধু প্রস্তাবই না এই ওয়ার্কশপ এক সময় তার নিজের হবে এমন অফার মালিকের থেকে পায়। প্রস্তাবটা নিঃসন্দেহে অনেক লোভনীয় ছিল। কিন্তু আলমানযোর বাবা সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার ওর উপরই ছেড়ে দেয় যে, সে কি শহুরে ওয়ার্কশপের মালিক হবে নাকি ফার্মারই হবে? ওর বাবা ওর সামনে দুইটা পেশার বাস্তবতা আর ভালো-মন্দ দিক তুলে ধরেছিলেন খুব সুন্দরভাবে। 

শহুরে জীবনে আরাম আয়েশের সুযোগ অনেক, ভালো খাবার, পোশাক সবই পাবে সে, অনেক টাকাও হবে, কিন্তু এগুলোর সাথে অন্যকে খুশি করার ব্যাপার থাকে, অন্যের উপর নির্ভর করতে হয় বেশি। অনেকটা তোষামোদির মতো। শহরের মানুষ পরাধীন। 

অপরদিকে ফার্মার হলে প্রচুর খাটতে হবে। নির্ভর করতে হবে নিজের উপর, জমির উপর, আবহাওয়ার উপর। কিন্তু তারা শতভাগ স্বাধীন। তারা নিজের খাবার নিজে ফলায়, নিজের পোশাক নিজে তৈরি করে। 

আলমানযো তখন স্বাধীন পেশা ফার্মার হওয়ারই সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ এটাই তার স্বপ্ন ছিল। সে বাবার মতো হতে চাইত। বাবাও খুশি হয়ে তাকে তার প্রিয় কোল্ট স্টারলাইটকে উপহার দেয়। এক সময় আলমানযো হয়ে উঠে সত্যিকারের সফল ফার্মার বয়। 

বাচ্চাদের উপর কোনো কিছু চাপিয়ে না দিয়ে এভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দিলে প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্বপ্ন নিয়ে ভালো করতে পারে। 

আলমানযোদের স্বয়ংসম্পূর্ণ ফার্মার পরিবার 

ওয়াইল্ডার পরিবারে কোনো কিছুরই অভাব নেই, তারা অন্য কারো উপর কোনো কিছুর জন্য নির্ভরশীল নয়। তাদের খাবার, পোশাক সবকিছুই তারা নিজেরা তৈরি করে নেয়। 

তাদের ফার্মে গরু আছে প্রচুর দুধ দেয়। এই দুধ দিয়ে আলমানযোর মা সেরা মাখন বানায়, যা নিউইয়র্ক থেকে লোক এসে কিনে নিয়ে যায়। আলমানযো খুব গর্বিত হয় মা কে নিয়ে যে, তার মায়ের হাতের মজার মাখন কতো শহুরে মানুষ খাবে! এছাড়াও দুধ দিয়ে তারা অনেক মজার মজার খাবার তৈরি করে খায়। 

তাদের উৎপাদিত প্রধান ফসল হলো- আলু, জই, গম, ভুট্টা, গাজর, শিম, মটর, বরবটি, কুমড়ো, শালগম,  শসা, টমেটো, তরমুজ ইত্যাদি। 

আবার ম্যাপল, বরই, স্ট্রবেরি, জাম ইত্যাদি ফলেরও অভাব নেই। বিভিন্ন ফল দিয়ে জেলি তৈরি করে সংরক্ষণ করে। খাবারের অভাব নেই তাদের। 

শুকর, গরু, ভেড়া, ঘোড়া, মুরগী সব ধরনের পশু পাখি ফার্মে থাকায় মাংসের অভাব হয় না তাদের। শীত আসার আগেই পশু জবাই করে লবন মাখিয়ে সংরক্ষন করে রাখে আর পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি করে তাদের জুতা। একজন ভ্রাম্যমাণ জোতার কারিগর আসে আলমানযোদের বাড়িতে প্রতি শীতের আগে। আর ১৪-১৫ দিন থেকে বাড়ির সবার জুতা তৈরি করে দিয়ে যায়। 

তাদের পালিত ভেড়ার লোম দিয়ে মা পোশাক বুনে তাদের জন্য, আবার বাড়তি লোম বিক্রি করে টাকাও আয় করে।  

সত্যিই স্বাধীন এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ এক ফার্মার পরিবার এই ওয়াইল্ডার পরিবার। এই পরিবার থেকে আলমানযোর মতো একজন ফার্মার বয় তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। 

  • সেই সময়টায় মানুষের জীবন খুবই অনিশ্চিত আর অনিরাপদ ছিল। প্রকৃতি নির্ভরতা ছিল খুব বেশি। প্রকৃতির পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে যেত তাদের বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহের সংগ্রাম। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করার উপায় যেন নেই। শীতকালে বরফাচ্ছাদিত থাকায় ফসল ফলাবার কোনো উপায় থাকত না বলে আলমানযোর বাবা বছরের বাকি সময়টা হাড়ভাঙা খাটুনি খাটত ফসলের মাঠে। রয়েল আর আলমানযোও মাঠে সর্বোচ্চ সাহায্য করত বাবাকে সারাদিন। বরফ পরতে শুরু করার আগেই ফসল ঘরে তোলার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম তাদেরকে করতে হত, একের পর এক ফসল বুনে যেত তারা। 

সবশেষে হাসি ফুটত তাদের মুখে যখন কাঙ্ক্ষিত ফলন তলকুঠুরিতে জমা করতে পারত প্রকৃতি বিরূপ হওয়ার আগেই। তবে সব সময় প্রকৃতি এক সময়ে এক ভাবে রূপ বদলায় না, ধারণার করার আগেই হয়ত খারাপ হতে শুরু করে আবহাওয়া। সেই সময়টা কাটে আরও কঠিনভাবে, আর উদ্বিগ্নতা আর দৌড়াদৌড়িতে। আলমানযোদেরও এমন অবস্থায় পরতে হয়েছে, কিন্তু তার বাবার বিচক্ষণতা আর তাদের সবার মিলিত পরিশ্রম এবং চেষ্টায় উতরে গিয়েছে তারা এসব বিপদ থেকে এবং বাঁচাতে পেরেছে ফসল। 

শীতকালে তাদের খাবারের প্রয়োজন মেটানো এবং বসন্তে আবার বীজ বপন করার পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করে, বাড়তি অংশটা তারা বিক্রি করে দিত। 

আলমানযোর বাবা খামারের কোনো পশু বা ফসল বিক্রির বাড়তি টাকা সাথে সাথে শহরে গিয়ে ব্যাংকে জমা করে আসত। কারণ বাড়িতে টাকা রাখা খুবই অনিরাপদ ছিল। সে যুগে তাদেরকে আসলে যেমন হিংস্র নেকড়ে, ভালুক আর পেনথারের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকতে লড়াই করতে হত, তেমনি চোর ডাকাতের ভয়ও ছিল প্রচুর। 

  • ম্যালোন শহরের প্রদর্শনী মেলার ব্যাপারটা খুব ভালো লেগেছে। সেখানে বড়দের পাশাপাশি বাচ্চারাও তাদের প্রতিভা এবং দক্ষতার প্রকাশ ঘটানোর সুযোগ পায়, তাদের কাজের জন্য প্রশংসা পায়। মেলায়ও আলমানযোদের ওয়াইল্ডার পরিবারের জয়জয়কার থাকে। মেলায় আলমানযোর নিজের ফলানো বিশাল এক মিষ্টি কুমড়া প্রথম পুরষ্কার পায়, ওর বড় বোন ইলাইযা জেনের বানানো জ্যালি, আর এলিসের উলের কাজও সেরা হয়।  

ঘূর্ণিঝড় এসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে, গ্রামের অনেক ঘর বাড়ি ধ্বংস করছে। তখন আবার নতুন করে শুরু করতে হয় তাদের জীবন। যারা কৃষক পরিবার তাদের এসব দুর্যোগ মোকাবিলা করতে অনেক কষ্ট করতে হয়, কারণ তাদের কোনো মাসিক আয় বা বেতন নেই। তাদেরকে পুরোপুরি  নির্ভর করতে হয় সেই পশুপালন এবং উৎপাদিত ফসলের উপর। ফসল তোলার পরও দেখা যায় তারা ঠিক মতো দাম পাচ্ছে না। বেগুনের দাম কখনো দেখা যায় এক টাকা কেজিও হচ্ছে, টমেটোর দাম না পেয়ে কৃষকের ঘরেই পঁচে যাচ্ছে। তবে ঢাকার বাজারে এগুলোর দাম কখনোই কমে না। 

  • এভাবে জীবনের এতো অনিশ্চয়তার মধ্যেও তারা হাসিমুখে বাঁচতে চেষ্টা করে। আলমানযোর পরিবারও তাই করে এবং তারা সুখী। এই সুখটা তাদের মনের ভেতর থেকে আসে, কারণ তারা জীবনের সব অনিশ্চয়তা দুঃখ কষ্ট সবকিছুকে মেনে নিয়েছে এবং এর মধ্যে তারা বাস করতে শিখে গেছে। এর ফলে তারা জীবনে একটু একটু করে এগিয়ে যায় এবং জীবনে ভালো করে। আর তারা হয়ত বড়লোক হয় না, কিন্তু জীবনের সাথে মানিয়ে নিয়ে মোটামুটি সুখেই থাকে এবং এই সুখ শহরে যারা থাকে তাদের থেকে কোনো অংশে কম নয়। 
  • এই গল্প থেকে এই ফিলোসফি বা দর্শনটা পেতে পারি যে, জীবনে আমরা সুখী হতে চাইলে যে কোনো অবস্থাতেই সুখী হতে পারি এবং দুঃখ কষ্টের মাঝেও আমরা এগিয়ে যেতে পারি। জীবনে যত সমস্যাই আসুক এর মাঝেই আমরা সুখী হওয়ার চেষ্টা করতে পারি। 

ফার্মার বয় উপন্যাসে জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা হয়েছে। গ্রামে থাকলেও তারা শহরের মেলাতে অংশ নেয়, স্বাধীনতা দিবসে অংশ নেয়, এছাড়া স্কুলেও পড়তে যায় আলমানযো আর তার ভাই বোনেরা। আলমানযোর বাবা-মা শিক্ষাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এটা অনেক বড় ব্যাপার। যা আমাদের মনে রাখা উচিত, তা হচ্ছে উপন্যাসের পটভূমি ১৮৬০ বা ৭০ এর দশকে, তখন আমেরিকাতেও যারা গ্রামে থাকত তারা লেখাপড়াকে এতো গুরুত্বের সঙ্গে নিত না এখনকার মতো। তাই এই উপন্যাসে লেখিকা এই মেসেজ দিতে চেয়েছেন যে, গ্রামের জীবনেও লেখাপড়া সমান গুরুত্বপূর্ণ। 

  • বাংলাদেশেও অনেকে মনে করে যে এতো লেখাপড়া করার কি দরকার! কিন্তু লেখাপড়া হচ্ছে জীবনের মূল ভিত্তি। আলমানযো যেভাবে কাজ করে, পশু লালন পালন, কৃষিকাজে ও ঘরের কাজে সাহায্য করে, ঠিক তেমনি তার বাবা- মা তার লেখাপড়ার দিকেও সমান নজর দেয়। এভাবে সে ধীরে ধীরে জীবনে এগিয়ে যায় এবং উপন্যাসের শেষ চ্যাপ্টারে আমরা দেখতে পাই যে, আলমানযোর একটা অফার আসে একজন তাকে লালনপালন করতে চায়, একজন পাকা গাড়ি ব্যবসায়ী হিশেবে শহরে বড় করতে চায়। আলমানযোর মা এ নিয়ে তীব্র আপত্তি করে, তবে আলমানযোর বাবা এক্ষেত্রে বেশ উদার। আলমানযোর জন্য যা ভালো হবে তাই চান এবং আলমানযোর উপরই এই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেন। 
  • আলমানযোর বাবার এই দিকটা বেশ সুন্দর। ৯ বছরের বাচ্চাকে বলছে, সে যা করতে চায়, কি হতে চায় সেটা তার নিজের সিদ্ধান্ত। এটা আমাদের দেশের বেশির ভাগ বাবা মা ই করতে চায় না। বরং তাদের ইচ্ছা স্বপ্ন বাচ্চাদের উপর চাপিয়ে দেয়। দেখা যায়, ক্লাস নাইনে উঠার সময় বাবা-মা অনেক বাচ্চাদেরকেই সায়েন্সে পড়াতে চায়, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সেই সন্তান হয়ত অংক বা বিজ্ঞানে প্রচন্ড দুর্বল, তাই পরবর্তীতে সায়েন্সে পড়া তার জন্য খুব বেশি কাজে আসে না। আর্টসে পড়েও যে ভালো করা যায় সেটার প্রমাণ সারা পৃথিবীতেই রয়েছে। আমেরিকার ফরচুন ৫০০ কোম্পানির সিইওদের প্রায় ৩০% এর ব্যাকগ্রাউন্ডই হচ্ছে মানবিকে লেখাপড়া করা। তাই যদি পরিশ্রমী হয়, প্যাশনেট হয়, লেখাপড়ায় ভালো করার মানসিকতা থাকে তাহলে সায়েন্স, আর্টস, কমার্স যে কোনো শাখায় পড়েই ভালো করা সম্ভব। 

ফার্মার বয় উপন্যাসে সাধারণ এক কৃষক পরিবারের ৯ বছরের বালক ও তার পরিবারের সাদা মাটা জীবনের কথা তুলে ধরেছেন লেখিকা। মনে দাগ কাটার মত একটি উপন্যাস এবং তার থেকেও বেশি শিক্ষণীয়। খুব কম গল্পই এভাবে পড়তে আনন্দ লাগে একই সাথে শেখার মত অনেক কিছু পাই আমরা। তাই এই বইটি বাংলা বা ইংরেজি অথবা দুই ভাষাতেই পড়ার পরামর্শ রইলো আমাদের পক্ষ থেকে। 

লেখকঃ

রাজিব আহমেদ,

সাবেক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এবং

খাতুনে জান্নাত আশা,

রিসার্চার, দেশি পণ্য ই-কমার্স।

খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top