You are here
Home > ই-কমার্স > দেশি পণ্য ইন্ডাস্ট্রির প্যাকেজিং এ জাপানি ফুরোশিকি

দেশি পণ্য ইন্ডাস্ট্রির প্যাকেজিং এ জাপানি ফুরোশিকি

ফুরোশিকি (Furoshiki)- A sustainable method of wrapping gift

ফুরোশিকি হচ্ছে জাপানিদের একটা গিফট র‍্যাপিং মেথডের নাম, যাতে র‍্যাপিং পেপারের পরিবর্তে স্কয়ার সাইজের কাপড়ের টুকরা ব্যবহার করা হয়। তবে শুধু গিফট র‍্যাপিং এই না, জাপানিদের শপিং এও শপিং ব্যাগ হিশেবে ফুরোশিকি  মেথড ব্যবহার হয়।

এর সাথে আমি কিসের মিল খুঁজে পেয়েছি জানেন?

গ্রামে কৃষকরা যখন সারাদিন মাঠে কাজ করে, তখন দুপুর বেলা বাড়ি থেকে তাদের জন্য খাবার পাঠানো হয় গামছা দিয়ে বা অন্য কোনো কাপড় দিয়ে পুটলি বেঁধে। ফুরুশিকি ব্যাপারটা জানার পর আমার সেই দৃশ্যটাই আসলে চোখে প্রথম এসেছিল। 🥰

যাই হোক, আসল ব্যাপার হলো –

গ্রিন, সাসটেইনেবল বা ইকো ফ্র‍্যান্ডলি যাই বলি না কেনো, এই টার্মগুলোর সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত কয়েকটি শব্দ হলো – রিডিউস, রিইউজ এবং রিসাইকল। জাপানিদের গিফট র‍্যাপিং এর ‘ফুরোশিকি‘ মেথড এই শব্দগুলোর সমন্বয় বলা যায়।

প্রথমত, প্লাস্টিকের র‍্যাপিং পেপারের পরিবর্তে কাপড় ব্যবহার করার কারণে প্লাস্টিকের ব্যবহার রিডিউস হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, যাকে গিফট দেয়া হচ্ছে র‍্যাপিং এর কাপড় এর টুকরা সেও রিইউজ করতে পারবে। কারণ কাপড় সহজে নষ্ট হয় না। তাই বার বার হাত বদলের পরও এটা ব্যবহৃত হতে থাকে।

তৃতীয়ত, ফুরোশিকিতে যে সব কাপড় ব্যবহার করা হয়, যেহেতু টুকরা কাপড়। তাই নিজের ব্যবহৃত পুরনো কোনো কাপড় থেকেও এটি তৈরি করা হয়।

যেমনঃ জাপানিদের ঐতিহ্যবাহী যে পোশাক – কিমানো। সেগুলো বেশ কালারফুল হয়। তাই জাপানিরা পুরনো কিমানো থেকেও ফুরোশিকির জন্য কাপড় বের করে, অথবা ব্যবহৃত স্কার্ফ বা রুমালও এক্ষেত্রে ব্যবহার করে।

ফুরোশিকি নিয়ে প্রথম যেদিন আমি জানতে পারি, খুবই ইন্টারেস্টেড ফিল করি। আর সেদিন থেকেই মাথায় বিভিন্ন আইডিয়া ঘুরপাক খেতে থাকে যে, কতভাবে আমরা এটাকে ব্যবহার করতে পারি আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। কারণ একটা গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করতে হলে অবশ্যই রিসাইকলের দিকে অনেক বেশি মনযোগী হতে হবে আমাদেরকে।

যেমনঃ ফুরোশিকি মেথড আমরা খুব সহজেই ফলো করতে পারি আমাদের দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রির পার্সেল প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে। বিশেষ করে শুকনো খাবার, পিঠা, মিষ্টি, সুগন্ধি চাল ইত্যাদি আইটেমের ক্ষেত্রে ফুরুশিকি ফলো করে প্যাকেজিং করলে আরও বেশি আকর্ষনীয় মনে হবে সেটা ক্রেতাদের কাছে। এর মাধ্যমে সবার মাঝে রিসাইকল এবং রিইউজের একটা অভ্যাস তৈরি হবে।

আমার মনে হয় না এর জন্য বাড়তি খরচ করতে হবে, বরং আমাদের বাসার বিভিন্ন কোনায় কানায় পরে থাকা অনেক কালারফুল অব্যবহৃত শাড়ি, ড্রেসের ফেব্রিককে কাজে লাগানো যাবে এক্ষেত্রে। আর আমরা বাঙালিরা সহজে জিনিস ফেলে দেই না। তাই অসংখ্য অব্যবহৃত জিনিস বাসার জায়গা দখল করে থাকে অযথা। ফুরোশিকি সেগুলোকে কাজে লাগানোর একটা উপায় হতে পারে। আর প্লাস্টিক প্যাকেজিং এর ব্যবহার এভাবে যত কমানো যাবে পরিবেশের জন্য ততই মঙ্গল। 😊

ই-কমার্সের কারণে বর্তমানে প্রতিদিন ২-৩ লাখ বা এর বেশি সংখ্যক পার্সেল ডেলিভারি হয় সারাদেশে। এসব পার্সেলের প্যাকেজিং এ পলিব্যাগের পরিবর্তে রিসাইকল কাপড় বা পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা হলে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিকে আমরা গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি হিশেবে আরও ভালো ভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে পারতাম। অন্তত দেশি পণ্যের ই-কমার্সকে আমরা আরও ইকো-ফ্র‍্যান্ডলি করার জন্য এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তা করতেই পারি।

আসলে ফুরোশিকি প্যাকেজিং আইডিয়া নিয়ে গতকালের পোস্টে সবার আগ্রহ দেখে খুব ভালো লাগল। তাই আজ আবার লিখতে ইচ্ছে হলো এটা নিয়ে।

• ফুরোশিকি প্যাকেজিং কনসেপ্ট কেন্দ্রিক উদ্যোক্তা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি হতে পারে।

যেমন ধরেন, কেউ যদি ফুরোশিকি প্যাকেজিং নিয়ে কাজ করতে চায়। তাহলে প্রথমে সে নিজের বাসায় থাকা অব্যবহৃত সুন্দর কাপড় দিয়েই ইউনিক ফুরোশিকি র‍্যাপিং বা শপিং ব্যাগ তৈরি শুরু করতে পারে এবং প্রচার করতে পারে। এরপর তার আশেপাশের আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবদের থেকে পুরোনো কাপড় সংগ্রহ করতে পারে। অবশ্যই সেটা ফ্রি তে না। যেহেতু বিজনেস পারপাজে ইউজ করবে তাই, স্বল্প হলেও পে করা ভালো হবে এর জন্য। এছাড়া আমাদের দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রি তো আছেই সব ধরণের সাপোর্টের জন্য।

• ফুরোশিকি মেথডে তৈরি ব্যাগ অবশ্যই বেশ ইউনিক আর আকর্ষনীয় হবে। উদ্যোক্তারাও নিজেদের পার্সেল ডেলিভারির কাজে এটাকে লুফে নিবে নিঃসন্দেহে।

অনেকে এক্ষেত্রে পাটের বস্তা ব্যবহারের চিন্তা করছেন, এটাও দারুণ একটা চিন্তা। কারণ বাসায় দৈনন্দিন বাজারের সাথে পাটের বস্তা আসেই, আর পাট অলরেডি সর্বাধিক পরিবেশবান্ধব। এটাকে আবার রিইউজ করতে পারলে ডেফিনিটলি ডাবল লাভ সবদিকে। Antara Zaman আপুকে দেখছি পাটের বস্তা দিয়ে প্যাকেজিং এ খুব ইউনিক আর আকর্ষনীয় ডিজাইন করছেন। ব্যাপারটা খুবই ভালো লেগেছে আমার।

Shamima Nasrin আপুও কমেন্টে ফুরোশিকি প্যাকেজিং এর কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আপুকে ধন্যবাদ সমস্যা আইডেন্টিফাই করার জন্য। যে কোনো নতুন আইডিয়া বাস্তবায়নের আগে এর ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করা জরুরি। তাহলে সেগুলোর সমাধান আগে ভাগেই বের করা যায়।

আপু সমস্যা যা বলেছেন তা হলো- এই সিস্টেমে পার্সেল কুরিয়ার করা অনিরাপদ। কারণ এমনিই কুরিয়ার থেকে অনেক সময় পার্সেল হারিয়ে যাওয়ার কথা শোনা যায়। আর যদি পার্সেল এমন সাধারণ গিট দেয়া কাপড়ের প্যাকেজিং এ হয়। তাহলে সহজেই সেটা খুলে নিতে পারবে কেউ বা সহজেই খুলে পরে যেতে পারে ভেতরের জিনিস। দূরের পার্সেল ডেলিভারির ক্ষেত্রে এটা আসলেই বড় একটা সমস্যা।

তবে সাধারণত বেশি দূরের কুরিয়ারে সুন্দরবনের মতো ট্র‍্যাডিশনাল কুরিয়ার ব্যবহার করলে আমরা প্যাকেজিং এ কয়েকটা ধাপ ফলো করি।

যেমনঃ প্রথম হয়তো একটা প্লাস্টিক প্যাকেটে মোড়াই, তারপর সেটাকে আবার উদ্যোগের শপিং ব্যাগে ঢুকাই। এরপর কুরিয়ারে নেয়ার পর কুরিয়ারের নিজস্ব পলিব্যাগে সেটাকে ঢুকিয়ে তারপর কাস্টমারের কাছে পৌঁছানো হয়।

এক্ষেত্রে আমরা আমাদের ধাপগুলো রিডিউস করতে পারি অন্তত ফুরোশিকির মাধ্যমে। অর্থাৎ আমরা কোনো প্লাস্টিক ব্যাগ বা শপিং ব্যাগ ব্যবহার না করে সরাসরি ফুরোশিকি র‍্যাপিং করলাম। এরপর কুরিয়ার তাদের পলিব্যাগে সেটা ডেলিভারি দিল। এতেও অন্তত প্লাস্টিক ব্যবহার রিডিউস হবে।

এছাড়া আমরা ফুরোশিকি মেথডকে কিছুটা মোডিফাই করে নিতে পারি। উপরে যা বললাম যে, ফুরোশিকি বা রিসাইকলড প্যাকেজিং বেইজড উদ্যোক্তা আমাদের তৈরি হতে পারে। এমন উদ্যোক্তা তৈরি হলে, তারা ফুরোশিকির গিট দেয়া র‍্যাপিং এর আদলে বা আরেকটু নিজেদের মতো পরিবর্তন করে সেলাই এর মাধ্যমে ব্যাগ আকারে তৈরি করতে পারে। এতে পার্সেলের ভেতরে থাকা জিনিস খুলে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। আর পার্সেল কেউ খুলে নিতে চাইলে আপনি যতই ভালো ভাবে সেটাকে প্যাকেজিং করে দেন, সেটাকে খুলে নেয়া অসম্ভব কিছু না।

ওহ আপু আরেকটা সমস্যার কথা বলেছেন যে, কাপড় দিয়ে র‍্যাপিং করা পার্সেল বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে, এই সমস্যার সমাধান কুরিয়ার কোম্পানি করতে পারে। তারা তো অবশ্যই ডেলিভারির জন্য নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করে রোদ-বৃষ্টি যাই হোক। তাই বৃষ্টি থেকে পার্সেলকে প্রোটেক্টেড রাখার দায়িত্বটা তাদেরই নেয়া উচিত বলে মনে হয় আমার।

আর কোনো নতুন আইডিয়াই পারফেক্টলি শুরু করা সম্ভব হয় না। প্র‍্যাক্টিকালি কাজ শুরু  করার পর অভিজ্ঞতার সাথে সাথে সমস্যা সমাধান সবই বেরিয়ে আসে। আমরা প্রথমে তাই এই আইডিয়াকে পাইলটিং করতে পারি ছোট পরিসরে শুরু করে। ধরেন, ঢাকার উদ্যোক্তারা ঢাকার ক্রেতাদের পার্সেলে এই পদ্ধতির ব্যবহার করতে পারেন, অন্যান্য এলাকার উদ্যোক্তারাও তাদের নিজের এলাকার ডেলিভারিগুলো এভাবে দিতে পারেন। এতে অন্তত রিসাইকল করার একটা প্র‍্যাক্টিস শুরু হবে আমাদের মাঝে এবং এর থেকে আরও অনেক ক্রিয়েটিভ আইডিয়াও বেরিয়ে আসবে।

ফুরোশিকি (Furoshiki)- A Zero Waste Packaging Movement in Our Deshi Ponno Industry

গ্রিন বা ইকো-ফ্র‍্যান্ডলি টপিককে ফোকাস করে কিছুদিন ধরে যতগুলো কন্টেন্ট লিখেছি, এর মাঝে এই ফুরোশিকি টেকনিক নিয়েই সবার মাঝে খুব বেশি আগ্রহ দেখতে পেয়েছি। তাই এই টপিকে ফোকাস করেই কয়েকটা পোস্ট লিখব আরও। 

আমাদের ইন্ডাস্ট্রির প্রোডাক্ট প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে একে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, কী ধরণের সমস্যা এদিকে ফেইস করা লাগতে পারে, সম্ভাবনা কেমন রয়েছে সব নিয়েই তাই আমাদেরকে খুব ভালো ভাবে এখন চিন্তা করতে হবে৷

যেহেতু আমাদের মূল উদ্দেশ্য – দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রিকে ইকো-ফ্র‍্যান্ডলি হিশেবে রিপ্রেজেন্ট করা এবং এর মাধ্যমে আরও কীভাবে ইকো-ফ্র‍্যান্ডলি চর্চা বাড়ানো যায়, ছড়িয়ে দেয়া যায় সবার মাঝে সেদিকে চেষ্টা করা। তাই আমরা যতটুকু সম্ভব আমাদের Zero Waste স্ট্রাটেজি এখানে ফলো করব। অর্থাৎ আমাদের রিসোর্স এর অপচয় কমাতে সর্বোচ্চ নজর দিব, রিসাইকল আপসাইকল এর দিকে ফোকাস করব।

প্রোডাক্ট প্যাকেজিং যে কোনো উদ্যোগ বা বিজনেসের অনেক বড় একটা অংশ, তাই Zero waste স্ট্রাটেজির সাথে আমরা প্যাকেজিংকে সংযোগ করার চেষ্টা করব। আর তাই ফুরোশিকি প্যাকেজিং এর জন্য আমাদের মূল উপাদান হবে অব্যবহৃত পুরোনো কাপড়।

সবার মাঝে এখন একটা দ্বিধা এবং কমন প্রশ্ন কাজ করছে যে,

পুরোনো কাপড় দিয়ে প্রোডাক্ট প্যাকেজিং করে দিলে কাস্টমার অসন্তুষ্ট হবেন না?

** না, হবেন না যদি আপনি কাস্টমারকে সঠিক ভাবে এর মেসেজটা পৌঁছে দিতে পারেন।

সাধারণত ফুরোশিকিতে পুরোনো কাপড় ব্যবহারের চর্চা রয়েছে এবং একে রিসাইকলের মাধ্যমে সাসটেইনেবল প্যাকেজিং বা র‍্যাপিং হিশেবেই প্রেজেন্ট করা হচ্ছে সারাবিশ্বে। জাপানের কালচার হলেও এখন এটি সারাবিশ্বেই বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে গ্রিন বা সাসটেইনেবল মুভমেন্টের অংশ হিশেবে।

আজকেও কিছু আর্টিকেলে পেলাম, পুরোনো টি-শার্ট, বেড শীট, ড্রেস, জিন্স ইত্যাদি বিভিন্ন কিছু থেকেই ফুরোশিকি র‍্যাপিং এর কাপড় বের করা হয়ে থাকে। তাই আমরাও এটি তৈরিতে পুরোনো কাপড় ব্যবহারের চিন্তাই করব। এতে আমাদের ট্যাক্সটাইল ওয়েস্ট ফুরোশিকির মাধ্যমে কাজে লাগানো যাবে। আমি আজকেও আমার বাসায় রিসাইকল করার মতো যে সব জিনিস পেলাম, সেগুলোর কোনোটাকেই আমার কাছে আসলে পুরোনো মনে হয় নি। আমি শুধুমাত্র এগুলো ব্যবহারের আগ্রহ হারিয়েছি, জিনিস সব নতুনই আছে। আমার মনে হয় সবার বাসারই সেইম অবস্থা। সুতরাং এ ধরণের জিনিসকে আমরা কাজে লাগালে আকর্ষনীয় ফুরোশিকি প্যাকেজিং ই তৈরি করা সম্ভব হবে।

আর ফুরোশিকি প্যাকেজিং এর সাথে যদি কাস্টমারকে একটা চিরকুট দেয়া যায় ছোট মেসেজ দিয়ে। যেখানে ফুরোশিকির স্পেশালটি, ক্রেতা কীভাবে ইকো-ফ্র‍্যান্ডলি মুভমেন্টের অংশ হচ্ছে এর মাধ্যমে এবং তারা একে কীভাবে রিইউজ করতে পারে ইত্যাদি লিখে দেয়া যায়, তাহলে আমার মনে হয় ক্রেতা বুঝতে পারবে এবং বেশ স্পেশাল ফিল করবে।

* ফুরোশিকি (Furoshiki) প্যাকেজিং * 

ভালো লাগছে ইতিমধ্যেই রিসাইক্লিং প্যাকেজিং আইডিয়া হিশেবে এই নামটা অনেকের মাথায় শক্তপোক্ত ভাবেই গেঁথে গিয়েছে। আমাদের দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রির কয়েকজন উদ্যোক্তা এই টেকনিক ফলো করে পুরনো কাপড় ব্যবহার করে ডেলিভারিও দিতে শুরু করেছেন এবং অনেকে চিন্তা করছেন কীভাবে শুরু করবেন। সবার উৎসাহ আর আগ্রহ দেখে ভীষণ ভালো লাগছে। কারণ এমন কিছু একটা আমরা শুরু করেছি যার মাধ্যমে ই-কমার্সে রিসাইকল, রিইউজের চর্চা বাড়বে এবং পরিবেশ রক্ষায় এটি খুব ভালো ভূমিকা রাখবে। 

এখন আমাদের পরীক্ষামূলক পিরিয়ড চলছে। মানে অল্প পরিসরে আমরা ফুরোশিকি প্যাকেজিং এর পাইলটিং করব। ক্রেতাদের থেকে এই প্যাকেজিং রিলেটেড ফিডব্যাক কালেক্ট করব, সাজেশন চাইব। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করব, আর কীভাবে এটাকে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আরও ভালো ভাবে কাজে লাগানো যায় সেদিকে চিন্তা করব এবং সবকিছু নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করব। 

এটা নিয়ে আরও একটু আলোচনা করা যাক। 

* ফুরোশিকি প্যাকেজিং প্রথমে সবচেয়ে কম রিস্কি ডেলিভারি দিয়ে শুরু করেন। কারণ প্রথমেই যদি আপনি বেশি রিস্ক নিয়ে ডেলিভারি সমস্যা ফেইস করেন, তাহলে শুরুতেই হতাশ হবেন, আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। তাই বেশি রিস্ক যে ডেলিভারিতে মনে হবে আপনার, সেটায় ফুরোশিকি এভোয়েড করেন এখন। 

Maliha Tanjina  আপু, উনার নিজ এলাকায় প্রথম কেক ডেলিভারি করেছেন ফুরোশিকি প্যাকেজিং এ। যেহেতু আপু কাছাকাছি ডেলিভারি দিয়েছেন, তাই রিস্ক ছিল না, কোনো চিন্তা ছিল না পার্সেল নষ্ট হওয়া নিয়ে। আপুর ক্রেতাও নতুন এই প্যাকেজিং দেখে খুব পছন্দ করেছেন। প্রথম পদক্ষেপে তার মানে আমরা সফল হয়েছি। 

* খাবারের উদ্যোক্তারা এই প্যাকেজিং সবচেয়ে ভালো ভাবে কাজে লাগাতে পারবেন বলে মনে হয়েছে আমার।  খাবার যেহেতু কাছাকাছিই বেশি ডেলিভারি দেয়া হয় এবং দূরে শুধু শুকনো খাবার ডেলিভারি করা হয়, তাই দুই দিকেই এই প্যাকেজিং ব্যবহার করা সম্ভব বলে মনে হয়। 

* দূরের ডেলিভারিতেও উদ্যোক্তারা ফুরোশিকি ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে পার্সেলের সেইফটির চিন্তাটা বেশি থাকে। তাই প্রথমে সুন্দরবনের মতো যেসব কুরিয়ার তাদের নিজস্ব পলিব্যাগ দেয় পার্সেলের জন্য, সেই কুরিয়ারগুলো দিয়ে ডেলিভারি দিতে পারেন। যেহেতু কুরিয়ারের পলিব্যাগের ভেতর আপনার পার্সেল থাকবে, তাই ভিজে যাওয়ার বা খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। 

* প্রথমে পরিচিত ক্রেতাদেরকে ফুরোশিকি প্যাকেজিং এ ডেলিভারি দিতে পারেন। মানে যে সব ক্রেতাদের সাথে ইতিমধ্যেই আপনার খুব ভালো বন্ডিং রয়েছে, আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে তাদেরকে প্রথমে এই প্যাকেজিং প্রোভাইড করলে অনেস্ট ফিডব্যাক পাওয়া সহজ হবে।

* পুরনো কাপড় রিসাইকল বা রিইউজ করা করাই আমাদের ফুরোশিকির মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এতো পুরনো কাপড় আপনি কোথায় পাবেন? 

 * নিজের বাসায় এই উদ্দেশ্য নিয়ে কাপড় খুঁজলেই দেখবেন অব্যবহৃত কাপড়ের অভাব হবে না। তবে অবশ্যই এটা আনলিমিটেড হবে না, কিন্তু আপনার ডেলিভারি তো আনলিমিটেড। কোনো ক্রেতাকে এই প্যাকেজিং দিবেন, কাউকে দিবেন না, এটা ক্রেতাদের মনে কনফ্লিক্ট তৈরি করতে পারে। 

  ** এক্ষেত্রে তাই প্রথমে এক্সপেরিমেন্ট পিরিয়ডে আপনি আপনার স্পেশাল ক্রেতাদেরকে এই পদ্ধতিতে ডেলিভারি দেয়ার মাধ্যমে শুরু করতে পারেন। 

ধরেনঃ যারা আপনার অনেক বারের রিপিট ক্রেতা, ৫ শাল বা ৫ থ্রিপিসের ক্রেতা, অনেক বেশি এমাউন্টের প্রোডাক্ট নেয়া ক্রেতা ইত্যাদি ক্যাটাগরি করে নিতে পারেন। এতে আপনার যেমন পাইলটিং করতে সুবিধা হবে, আবার ক্রেতাদের মাঝেও কোনো কনফিউশন কাজ করবে না। 

* আর অবশ্যই প্যাকেজিং এ অন্তত ইকো-ফ্র‍্যান্ডলি প্যাকেজিং লিখে ছোট্ট একটা মেসেজ হলেও ক্রেতাকে দেওয়ার চেষ্টা করবেন এর গুরুত্ব বোঝাতে। 💝

Furoshiki (ফুরোশিকি), Itself is A Gift

জাপানের এই ফুরোশিকি টেকনিকে আমাদের প্রোডাক্ট প্যাকেজিং এর মূল উদ্দেশ্য যদিও পুরনো ফেব্রিকের রিইউজ এবং রিসাইকল। কিন্তু ব্যাপারটা এমন না যে আমরা নোংরা ছেড়া ফেব্রিক এক্ষেত্রে কাজে লাগাব। বরং আমরা এমন ফেব্রিক ব্যবহার করব, যা পুরনো হলেও সৌন্দর্য একবিন্দু লোপ পায় নি। এছাড়াও প্যাকেজিং এর আগে পরে ফেব্রিককে আরও সুন্দর করার জন্য আমরা কিছু ইনোভেশনও আনতে পারি, যা এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তুলবে।

যেমনঃ হ্যান্ডপেইন্টের আপুরা পেইন্ট করেও দেখা যাবে একে আরও স্পেশাল করে তুলতে চাইবেন। ক্রাফটিং এক্সপার্ট হলে হয়ত আপনি ছোট এক টুকরো  ফেব্রিক দিয়ে একটা ফ্লাওয়ার বানিয়ে উপরে বসিয়ে দিবেন। অনেক কিছুই করা সম্ভব। 

এই ব্যাপারগুলো আসলে একটা পুরোনো ফেব্রিককে নতুন মাত্রা দিবে এমন ভাবে যে, কাস্টমার ফিল করবে প্যাকেজিংটাই তার জন্য সেরা উপহার। 

ভালো হবে আপনি যদি ইউটিউবে ফুরোশিকি র‍্যাপিং এর কিছু ভিডিও দেখে নেন। অনেক ধরণের টেকনিক সম্পর্কে আইডিয়া নিতে পারবেন। 

এখন কথা হচ্ছে- পুরোনো কাপড় না হয় জোগাড় করতে খরচ হলো না, কিন্তু একে সুন্দর রূপ দিতে হলে, গিফট এর মতো ফ্ল্যাভার ক্রেতাকে দিতে হলে তো আমাকে কিছু হলেও খরচ করতে হবে। প্যাকেজিং এর জন্য আমার কী তাহলে বাড়তি খরচ করা উচিত হবে?  

• ফুরোশিকি প্যাকেজিং এ আপনি বাড়তি টাকা খরচ করবেন  কী-না এটা বেশ কিছু বিষয়ের উপর নির্ভর করবে।

• আপনার প্রোডাক্ট যদি হাই রেঞ্জের হয়, এক্সক্লুসিভ কিছু হয় যেমনঃ জামদানি। তাহলে আপনি প্যাকেজিং এ একটু বেশি খরচ করতেই পারেন। আমাদের কাকলি আপু যে রকম পাটের ব্যাগ ব্যবহার করে জামদানির পার্সেলে।  

• আবার আপনি যদি শুধু স্পেশাল কাস্টমারদেরকে ডেলিভারি দেয়ার ক্ষেত্রে ফুরোশিকি প্যাকেজিং ব্যবহার করেন৷ তাহলেও আপনি এতে কিছুটা খরচ করতে দ্বিধা করবেন না স্বাভাবিক ভাবেই। 

• আর কাস্টমার খাতির হিশেবে কিন্তু আমরা মাঝে মাঝে গিফটও দিয়ে থাকি, ফুরোশিকি প্যাকেজিংটাই সেই গিফট হতে পারে। এক্ষেত্রেও প্যাকেজিং এ কিছুটা খরচ করতে আপনার কষ্ট হবে না। 

** এখন ধরেন, আপনি ফুরোশিকি প্যাকেজিং করতে চান, আবার এর জন্য কিছুটা খরচও করতে চান। কিন্তু আপনার নিজের পক্ষে এই প্যাকেজিং এর পেছনে ক্রিয়েটিভিটি প্রয়োগ করার মতো সময় নেই। তাহলে কী করবেন? 

• এই সমস্যার সমাধানে আমাদের Fariha Naznin Nizhum  আপুর মতো ডিজাইনার আছে। আপুকে পুরোনো ফেব্রিক পাঠিয়ে দিলে আপু হয়ত সেটা উনার ক্রিয়েটিভিটি প্রয়োগ করে আপসাইকেল করে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। অথবা আপনি আপনার কাছের কোনো টেইলার্সে গিয়েও টেইলরকে দিয়ে নিজের পছন্দ মতো ফেব্রিককে স্কয়ার সাইজ করে কেটে সেলাই করে নিয়ে আসতে পারেন ফুরোশিকি প্যাকেজিং এর জন্য। 

** এখন প্রশ্ন হলো- যদি Md Daloare Hossain  ভাইয়ার মতো আপনার কাছে পর্যাপ্ত পুরনো কাপড়ই না থাকে তখন আপনি কীভাবে ফুরোশিকি প্যাকেজিং করবেন? 

• সহজ সমাধান হলো বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত কারো কাছে পুরনো কাপড়ের আবদার করা। বিনিময়ে কিছু শেরপুরের মন্ডাও অফার করতে পারেন দেলোয়ার ভাই। 😁 

• তবে পরিচিত কেউ কাছে না থাকলে আপনি কাছের কোনো টেইলার্সে গিয়ে টেইলরকে বলতে পারেন, ওদের কাছে যত কাপড়ের টুকরো আছে আপনাকে দিতে। তারপর সেখান থেকে ভালো কিছু পছন্দ মতো বাছাই করে ওদের দিয়ে সেলাই করে প্যাকেজিং এর রূপ দিয়ে নিয়ে চলে আসলেন এবং তা অবশ্যই ফ্রি তে না। 

অথবা কোনো গার্মেন্টস কাছে থাকলে সেখান থেকেও ওয়েস্ট কালেক্ট করতে পারেন, যেগুলো রিসাইকল না করে তারা ফেলে দেয়। 

• এছাড়াও প্রতিটি অঞ্চলেই পুরোনো ফেব্রিকের মার্কেট থাকে। ফুটপাত হোক বা ভ্যানে, আপনি পুরোনো কাপড় সেল করে এমন কিছু লোক এমন পাবেনই নিজ এলাকার মেইন মার্কেটের আশে পাশে। ঢাকার নিউমার্কেট, গাউসিয়া এলাকায় তো প্রচুর পাওয়া যাবে এমন। সেগুলো থেকে বিভিন্ন কালারফুল সুন্দর প্রচুর ফেব্রিক নাম মাত্র মূল্যে কিনতে পারবেন। 

(এছাড়াও আরও উপায় আছে। পরবর্তীতে শেয়ার করা যাবে)

মাথায় রাখবেন সব সময় –

আপনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে পুরনো ফেব্রিকের রিইউজ করা, পাশাপাশি কাস্টমারকেও স্পেশাল ফিল দেওয়া এবং ইকো-ফ্র‍্যান্ডলি প্র‍্যাক্টিসের মেসেজটা পৌঁছে দেয়া। প্রথমে নিজের কাছে এবং আপনার কাছের মানুষদের কাছে যা কিছু পুরনো অব্যবহৃত আছে, সেগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিবেন। এরপর বাড়তি ফেব্রিক আউটসোর্সিং এর চিন্তা। 😊

  • ফুরোশিকি আমাদের দেশি পণ্যের ইন্ডাস্ট্রির UVP (Unique Value Proposition) হতে যাচ্ছে 

ফুরোশিকি জাপানি আইডিয়া হলেও এর মূল কনসেপ্টের সাথে আমরা পরিচিত এবং অভ্যস্ত। আমি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেই একে উপস্থাপন করেছি এ নিয়ে লেখা আমার প্রথম পোস্টেই। 

প্রথমত, ফুরোশিকি প্যাকেজিং আমাদের দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের প্যাকেজিং এর ধারাই বদলে দিচ্ছে। কালারফুল এবং আর্টিস্টিক একটা ভাইব দিচ্ছে বলে আপনারা অটোমেটিক সবার থেকে আলাদা একটা ট্রাইব তৈরি করে ফেলছেন, সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছেন, সবার মনে গেঁথে যাচ্ছেন সহজেই।

দ্বিতীয়ত, এর মাধ্যমে আমরা রিসাইকল, রিইউজ এর একটা প্র‍্যাক্টিসকে ই-কমার্সে প্রচার করছি, যা ইকো-ফ্র‍্যান্ডলি মুভমেন্টের অংশ। 

তৃতীয়ত, কাস্টমারকে ভিন্ন কিছু দিয়ে স্পেশাল ফিল করানো। 

এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণেই ফুরোশিকি প্যাকেজিং আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে ইউনিক করে দিচ্ছে, পাশাপাশি যারা এই মুভমেন্টে অংশ নিচ্ছেন সবার বিজনেসে নতুন ভ্যালু এড করছে।

আমরা আসলে সারাজীবন রিসাইকল, রিইউজে অভ্যস্ত হলেও সেটাকে কনফিডেন্টলি কখনো রিপ্রেজেন্ট করতে পারিনি, আর্টিস্টিক ভাবে তুলে ধরতে পারিনি। পুরনো বা অব্যবহৃত কাপড়কে এতোটা কালারফুল ভাবে উপস্থাপন করা যায় এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে পণ্যের প্যাকেজিং এ ব্যবহার করা যায় এটা আমরা এর আগে কখনো এতোটা গুরুত্ব দিয়ে ভেবেছি বলে মনে হয় না। 

আমি আসলে এক সপ্তাহ ধরে আপনাদের ক্রিয়েটিভিটি যত দেখছি মুগ্ধ হচ্ছি। প্রত্যেকের ফুরোশিকি প্যাকেজিং আলাদা রকম হচ্ছে, নতুনত্ব নিয়ে আসছে, আর্টিস্টিক ভ্যালু এড করছে, সবাই যেন নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন! এটা আমাদের প্রোডাক্ট প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে সব সময় গ্যাপ ছিল। আকর্ষনীয় প্যাকেজিং কে আমরা সবচেয়ে কম গুরুত্ব দিয়ে এসেছি, অথচ এটাই ক্রেতাকে বেশি খুশি করতে পারে। আজকে এটা আরও ভালো ভাবে ফিল করেছি নিজে ফুরোশিকি প্যাকেজিং এ পার্সেল পেয়ে। 

আমার নিউজফিডটাই ক’দিন ধরে ফুরোশিকি প্যাকেজিং এর জন্য আরও বেশি কালারফুল হয়ে গিয়েছে বলে ফিল করছি। সবার নিজেদের সর্বোচ্চ ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগাচ্ছেন, নতুন এই মুভমেন্টের অংশ হওয়ার জন্য। আপনাদের প্রতি আমার অবিরাম ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা। 

আর আপনারা সত্যিও যখন ফিল করতে পারবেন যে, এই ফুরোশিকির প্র‍্যাক্টিসের জন্য আপনি ক্রেতাদের কাছে এবং এই প্লাটফর্মে আলাদাভাবে পরিচিত হচ্ছেন, গুরুত্ব পাচ্ছেন তখন ডেফিনিটলি ফুরোশিকির ম্যাজিক ফিল করতে পারবেন। খুব বেশি সময়ের ব্যাপার না এটা। অলরেডি আমরা এক্সপেরিমেন্টাল রেজাল্ট পেতে শুরু করেছি। 

ফুরোশিকি নিয়ে আসলে প্রথমত আমার আইডিয়া পুরোপুরি রিসাইকল বেইজড ছিল, যা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি হিশেবে পরিচিত করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয়েছিল আমার। আইডিয়াটা শেয়ার করার পর আপনাদের থেকে আলহামদুলিল্লাহ অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে এবং আপনাদের ক্রিয়েটিভ সব ক্রিয়েশন দেখে আমি অভিভূত। 

তাই আমার বিশেষ অনুরোধ হলো- 

আপনারা দয়া করে এক্ষেত্রে কোয়ানটিটিকে প্রাধান্য না দিয়ে পাইলটিং করে কোয়ালিটিকে প্রাধান্য দিবেন বলে আশা করি। প্রথমে স্পেশাল কাস্টমারদেরকেই স্পেশাল প্যাকেজিং এ দেন। তারপর আস্তে ধীরে পরিধি বাড়ান৷ 

মানে হলো যে, যেহেতু আপনারা এই আইডিয়াকে একটা আর্টিস্টিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন, একটা স্ট্যান্ডার্ড সেট করে ফেলেছেন, তাই ফুরোশিকি প্যাকেজিং কে যতটা সুন্দর করে প্রেজেন্ট করা যায় তা করে যান। ১০০ ডেলিভারির টার্গেট যারা নিয়েছেন, সময় নিয়েই এটা করেন। তাড়াহুড়ো করে এর শৈল্পিক ভ্যালুটা যেনো কমে না যায় এদিকটায় একটু দৃষ্টি দিবেন বলে আশা করি। 

আরেকটা ব্যাপার হলো- 

জাপানে ফুরোশিকি র‍্যাপিং শুধু কাপড় দিয়ে করা হয় বলে সেইম তাদের মতো করেই আমাদের করতে হবে তা না। ফুরোশিকি আমরা পুরনো অব্যবহৃত কাপড় বা চটের বস্তা যা দিয়েই বা যেভাবেই বানাই না কেনো, আমাদের মূল ফোকাস হোক কতটা আর্টিস্টিক ওয়েতে সেটাকে উপস্থাপন করা সম্ভব সেদিকে। রিসাইকলেবল জিনিস দিয়েও কতোটা শৈল্পিক আর কালারফুল প্যাকেজিং হতে পারে, তাই তুলে ধরব এবং প্রচার করব আমরা।

* Please Write Down Your Every Furoshiki Packaging Story *

আমাদের ইন্ডাস্ট্রির প্যাকেজিং এ রীতিমতো নববিপ্লবের সূচনা করে দিয়েছে এই ফুরোশিকি। এতো এতো ক্রিয়েটিভিটি এর মাধ্যমে বেরিয়ে আসছে সবার, মাশাল্লাহ! জাপানে এই কালচার পুরনো হলেও, আমাদের দেশের ভিন্ন ভাবে এর নানান রূপ আমরা দেখতে পেলেও, একে এখন একদম অন্যভাবে আমরা সাজাচ্ছি বলা যায়। তাই এর গল্পগুলোও একদমই অন্যরকম। আপনাদের প্রত্যেকের ফুরোশিকি প্যাকেজিং যেমন আলাদা, সবার গল্পগুলোও তেমনি আলাদা। আমি চাই ফুরোশিকি ঘিরে আমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি গল্প উঠে আসুক। 

যেমনঃ জাপানি এই আইডিয়াকে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির প্রেক্ষাপটে প্রেজেন্ট করতে পারা, একে গ্রিন বিজনেসের সাথে রিলেট করতে পারার একটা সুন্দর গল্প আমার আছে। আবার ৬-৭ মাস আগে এটা প্রথমবার স্যারের সাথে শেয়ার করলেও, এতোদিন পর স্যারের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা অর্জন এবং সবার মাঝে একে ছড়িয়ে দেয়ার যে প্রয়াস সেটারও একটা গল্প আছে। আর এখন আপনাদের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই শ’খানেক গল্প তৈরি হয়ে গিয়েছে ফুরোশিকি প্যাকেজিং কে ঘিরে। এই সব গল্পগুলো একসাথে করতে পারলে অনেক বিশাল গল্প তৈরি করা সম্ভব, যা হয়তো এখনো আমরা অনুমান করতে পারছি না। 

আমার আসলে অনেক প্ল্যান এই আইডিয়াকে নিয়ে। যদিও অনেক সময়ের ব্যাপার সেগুলো বাস্তবায়ন করা। কিন্তু এখন থেকে প্ল্যানিং তো করতে হবে। 

বিশেষ করে সবার ফুরোশিকি প্যাকেজিং গল্প এবং ছবি নিয়ে ফটো ই-বুক এবং ব্লগ করা গেলে দারুণ হবে। তারপর ১০০ ফ্রি ডেলিভারি ফুরোশিকি প্যাকেজিং এ দেয়ার টার্গেট যারা নিয়েছেন সেই উদ্যোক্তাদের নিয়ে ভিডিও ইন্টারভিউ, তাদের ক্রেতাদের ভিডিও ফিডব্যাক সংগ্রহ করে একসাথে করা গেলেও দারুণ হবে। এমন অসংখ্য গল্প তৈরির আইডিয়া আসলে প্রতিনিয়ত ঘুরছে মাথায়। আর এটার ক্রেডিট এখন আপনাদের। কারণ আপনাদের এতোটা আগ্রহ উচ্ছাস আর অংশগ্রহণ ছাড়া এসব বাস্তবায়ন সম্ভব না। 

* আপনাদের ফুরোশিকি প্যাকেজিং এর গল্পতে কী থাকতে পারে? 

যেহেতু এটা নতুন মুভমেন্ট, অবশ্যই এর জন্য আপনার কিছু চ্যালেঞ্জ ছিল, সেখান থেকে বের হয়ে আসার বা সমস্যার সমাধানের গল্পও ছিল, আবার ক্রেতাদের কাছে কেমন গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে সেই গল্পও আছে। সব মিলিয়ে তো আসলে আপনাদের প্রতিটি পদক্ষেপেই শুধু গল্প আর গল্প৷ সেগুলোকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের দিকে দৃষ্টি দিলে ভালো হবে। 

ফুরোশিকি প্যাকেজিং করছি আমরা রিসাইকলেবল কাপড়, পাট বা চটের বস্তা ইত্যাদি দিয়ে৷ আবার শুধু রিসাইকল না,  সেটাকে যতটা সম্ভব কালারফুল এবং শৈল্পিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছি যেন ক্রেতাদের মনে এই প্যাকেজিং এর জন্যই আমরা আলাদা জায়গা করে নিতে পারি। 

অনেক আপুদের তাই দেখছি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পুরনো চটের বস্তাও সংগ্রহ করছেন এখন, সেটাকে আবার এমন রূপ দিয়ে ফুরোশিকি তৈরি করছেন যে, দেখে মুগ্ধ হতে হচ্ছে। এই যে পুরনো জিনিস সংগ্রহের জার্নিটা এটাও একটা অসাধারণ গল্প হতে পারে। 

আবার রেহনুমা আপু মণিপুরী শাল দিয়ে এক্সক্লুসিভ ফুরোশিকি তৈরি করছেন, যা পেয়ে মুগ্ধ হবে না এমন ক্রেতা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না!

রিতা আপুকে দেখলাম ফুরোশিকি প্যাকেজিং তৈরি করতে গিয়ে মণিপুরীর পাড় দিয়ে গয়না ডিজাইন করে ফেলছেন। 

আজকে মজা পেয়েছি দেখে যে রেবেকা আপু সাতক্ষীরার মাদুরেরও ফুরোশিকি তৈরি করে ফেলেছেন!!! 

মানে আপনাদের সুপ্ত যত ক্রিয়েটিভিটি, যত ধরণের গুনাগুন ছিল, সবকিছু চমৎকার ভাবে প্রকাশ করার সুযোগ যেন করে দিয়েছে ফুরোশিকি! 

এটা তাই আমাদের জন্য আসলে সামান্য কোনো মুভমেন্ট না, এর বিশালতা আকাশছোঁয়া। ধীরে ধীরে সেগুলো আমরা উপলব্ধি করতে পারব ইনশাআল্লাহ। ততদিন পর্যন্ত নিজেদের গল্পগুলোকে প্রতিদিন ধরে রাখার চেষ্টা করেন, আমাদের সাথে শেয়ার করেন এটাই আমার একান্ত চাওয়া এবং অনুরোধ সবার প্রতি।

খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

One thought on “দেশি পণ্য ইন্ডাস্ট্রির প্যাকেজিং এ জাপানি ফুরোশিকি

  1. চমৎকার লিখেছেন আপু বরাবরের মতই। এই প্যাকেজিং এ হোম মেইড মিষ্টি ডেলিভারী করছি কাস্টমার ফিড ব্যাক খুব ভালো নতুন এই প্যাকেজিং নিয়ে সবাই আগ্রহী। এমনকি এই প্যাকেজিং এর জন্যেও অনেকে অর্ডার করছেন। এইভাবে সবার মাঝে ফুরশিকি ছড়িয়ে পড়ুক আমাদের দেশের জন্যে এটা খুব পরিবেশ বান্ধব হবে ইনশাআল্লাহ। এখানে আমার প্যাকেজিং রয়েছে শুকরিয়া আপু এমন কিছু আমাদের সামনে নিয়ে আসার জন্যে❤️

Leave a Reply

Top