ব্লকচেইন প্রযুক্তি(Blockchain Technology) কিভাবে কাজ করে? Blog প্রযুক্তি by খাতুনে জান্নাত আশা - August 14, 20211 Spread the lovemoreব্লকচেইন প্রযুক্তি(Blockchain Technology) কিভাবে কাজ করে? প্রথমে জেনে নেই, ** ব্লকচেইন মাইনিং(Blockchain Mining) কি? মাইনার(Miner) কারা? এক কথায়, ব্লকচেইনে কোনো একটা ট্রান্সেকশন বা তথ্য সংযুক্তির জন্য যে কনফার্মেশন প্রসেসটা কাজ করে, ভ্যারিফাই করে এবং তথ্যগুলোকে একটা ইউনিক হ্যাশ ফাংশনের মাধ্যমে লক করতে সাহায্য করে, সেটাই হচ্ছে মাইনিং। অর্থাৎ মাইনিং এর মাধ্যমেই কম্পিউটারে পাজেল টাইপের গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে একটা ইউনিক হ্যাশ লক বের করে, যা দিয়ে ব্লককে সীল করে দেয়া যায়, যার ফলে সেই ব্লকে থাকা তথ্য কেউ দেখতে পায় না। হ্যাশ ফাংশন অনেকটা বারকোড এর মতো, স্ক্যান করার আগে কেউ বলতে পারেনা এর ভেতর কি কি তথ্য রাখা আছে। এই মাইনিং প্রসেসের মাধ্যমেই বিটকয়েনও উৎপন্ন হয়। একে মাইনিং বলা হয় কারণ এটা মাটির নীচ থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের মতোই কঠিন কাজ। কাজটা করে কিন্তু মাইনারদের শক্তিশালী হার্ডওয়্যার আর সফটওয়্যার। আর এই মাইনিং এর কাজে প্রচুর পরিমাণ ইলেক্ট্রিসিটি খরচ হয়। অনেকের মনে এখন প্রশ্ন আসতে পারে যে, শুনেছি ব্লকচেইন একটা ডিসেন্ট্রালাইজড প্রসেস অর্থাৎ কারো সাহায্য ছাড়াই এখানে লেনদেন করা যায়, এখানে কোনো বস নেই, এর সাথে সংযুক্ত সবাই সমান, তবে এই মাইনার কারা? এদের ক্ষমতা কতটুকু? মাইনার আর সাধারণ সদস্যদের মধ্যে কোনো ক্ষমতার পার্থক্য নেই, তাদের পার্থক্য এটাই যে তারা মাইনিং এর মতো একটা কঠিন কাজ তারা করতে চেয়েছে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা তাদের কাছে আছে। ** মাইনার হতে হলে বাড়তি কি প্রয়োজন হয়? প্রথমে মাইনিং শুধু CPU হার্ডওয়্যার যুক্ত সাধারণ কম্পিউটারের মাধ্যমে করা হলেও, এখন এর জন্য একের পর এক সব শক্তিশালী হার্ডওয়্যার ইনভেন্ট করা হচ্ছে। কারণ যত শক্তিশালী হার্ডওয়্যার সফটওয়্যার এই প্রসেসে ব্যবহার হবে তত দ্রুত মাইনিং করা যাবে। এখন বিশ্বে এই মাইনিং এর জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন হার্ডওয়্যার কেনার প্রতিযোগিতা চলছে। অনেক মাইনাররা ব্যবহার করে গেইমিং জন্য ব্যবহৃত উচ্চ গ্রাফিকাল ক্ষমতাসম্পন্ন GPU(Graphics Processing Unit)। এটা সিপিইউ এর চেয়ে দ্রুত গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। এটাকে বিটকয়েন মাইনিং এর জন্য ২০১১ সাল থেকে মাইনার রা ব্যবহার করে আসছে। GPU এর পরে আরও আপডেটেড হার্ডওয়্যার এসেছে, যা GPU এর চেয়ে ৩-১০০ গুন বেশি দ্রুত হ্যাশিং ফাংশনের সমাধান করতে পারে, এর নাম হলো FPGA. আর বর্তমানে বিটকয়েন মাইনিং এর জন্যই তৈরী সবচেয়ে আপডেটেড & জনপ্রিয় হার্ডওয়্যার হচ্ছে ASIC(Application Specific Integrated Circuit) মাইনার। এটা অনেক দ্রুত ক্যালকুলেট করতে পারে। ** মাইনিং পুল(Mining Pool) কি? মাইনিং পুল হলো গ্রুপ অফ মাইনার, মানে কয়েকজন মিলে গ্রুপ করেও মাইনিং করা যায়, একটা হ্যাশ ফাংশনের জন্য যে গাণিতিক ধাঁধার সমাধান করতে হয় তা কয়েকজন মিলে ভাগ করেও সলভ করে। এতে দ্রুত হ্যাশ ফাংশনের সমাধান করা যায়। মাইনিং কোম্পানিগুলো এভাবে মাইনিং পুল তৈরী করে কাজ করে। ** মাইনারদের লাভ কি? মাইনিং করে আপনি কতটা লাভবান হবেন, এটা টোটালি নির্ভর করে আপনার কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সফটওয়্যারের পাওয়ারের উপর, অর্থাৎ আপনার কম্পিউটার বা মাইনিং মেশিন সেকেন্ডে কতটা হ্যাশিং ফাংশন ক্যালকুলেট করতে পারে তার উপর নির্ভর করবে আপনার ইউনিক হ্যাশ পাবার সম্ভাবনা এবং কতটা লাভবান আপনি হতে পারবেন তার সম্ভাবনা। যদি আপনার মাইনার মেশিন অন্য কারো আগেই কোনো ইউনিক হ্যাশ বের করতে পারে একটা ব্লক কে লক করার জন্য, তবে তার জন্য সে রিওয়ার্ড পাবে। সেই রিওয়ার্ড হিসেবে তার ওয়ালেটে বিটকয়েন জমা হবে। এর পরিমান এখন প্রত্যেকটা ব্লক সীল করার জন্য ৬.২৫ বিটকয়েন। তবে সেই বিটকয়েন কিন্তু অন্য কারো ওয়ালেট থেকে চার্জ কেটে নিয়ে মাইনারদের দেয়া হয় না। মাইনারদের মধ্যে সব সময় প্রতিযোগিতা চলে যে, কে কার আগে মাইনিং করে হ্যাশ ফাংশন সলভ করে রিওয়ার্ড পেতে পারে। তাই এখন শক্তিশালী কম্পিউটার হার্ডওয়্যার বা মাইনার মেশিন কেনা বাড়ছে। ** প্রুফ অফ ওয়ার্ক কি? এই যে মাইনিং এর মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করে ইউনিক হ্যাশ ফাংশন বের করে ব্লক ভ্যারিফাই করার যে সম্পূর্ণ প্রসেস, এটাই প্রুফ অফ ওয়ার্ক। ধরেন, সালাউদ্দীন ভাই, সায়েম ভাই, নাসির ভাই, জাহিদ ভাই, তুহিন ভাই উনারা একটা ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের মাঝে কানেক্টেড। উনারা কিন্তু কেউ কারো নাম পরিচয় কিছু জানে না, শুধু তাদের চেনে একটা সিরিয়াল নাম্বার দ্বারা। এখন তাদের মধ্যে মনে করেন, সায়েম ভাই নাসির ভাই কে কোনো তথ্য পাঠাবে। সায়েম ভাই এই লেনদেনের অনুমতি চাইলে সেটা ব্লকচেইনে কানেক্টেড সবার কম্পিউটারে পৌঁছে যাবে যে, ওমুক তমুকের কাছে তথ্য পাঠাতে চায়। চেইনে থাকা সবাই তখন দেখবে যে এই লেনদেনের সব ঠিক আছে কিনা, একে ব্লকে যুক্ত করা যায় কিনা। তবে প্রশ্ন থাকে, সবাই ওই মুহূর্তে অনলাইনে না ও থাকতে, তবে কি করে ভ্যালিডিটি প্রুফ করবে? কারণ আবেদনের ১০ মিনিটের মাঝে ওই ট্রান্সেকশন করতে ব্যর্থ হলে তা বাতিল বলে গন্য হবে। এর উত্তর হলো ৫১ পার্সেন্ট মানুষ তখন অনলাইনে থাকলেই হবে। আর এই নতুন ব্লক চেইনে এড করার জন্য এর একটা ইউনিক লক লাগবে, যা দ্বারা এই ব্লক কে সীল করে দেয়া হবে যেন, চেইনের বাইরের কেউ এই লেনদেনের ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে। এই ইউনিক লক কেই বলে হ্যাশ। একটা ইউনিক হ্যাশ খুঁজে বের করা বেশ কঠিন একটা ব্যাপার। উপরে উল্লেখিত পাঁচজন ভাই এর মাঝে ধরেন – এই হ্যাশ খুঁজে বের করার মতো মাইনিং মেশিন বা হার্ডওয়্যারযুক্ত কম্পিউটার আছে শুধুমাত্র জাহিদ ভাই আর সালাউদ্দিন ভাই এর। তাদেরকে তাহলে বলা হবে মাইনার। আর তারা যত দ্রুত সম্ভব হ্যাশ খুঁজে বের করার প্রতিযোগিতায় নেমে যাবে। কারণ যে আগে বের করতে পারবে তাকে ব্লকচেইন সিস্টেম থেকে রিওয়ার্ড দেয়া হবে। আর দুই জনের মধ্যে তার জেতার সম্ভাবনাই বেশি যার মাইনিং মেশিন যত শক্তিশালী। এছাড়া ভাগ্যবান হলে কম শক্তিশালী মেশিনও ইউনিক হ্যাশ বের করে ফেলতে পারে। যখনই হ্যাশ পেয়ে যাবে কেউ একজন, তখন আবার সবার কাছে ভ্যালিডিটির আবেদন করব। যেন এই হ্যাশযুক্ত ব্লকটাকে রিসিভারের কাছে পাঠিয়ে সীল করে দিতে পারে কিনা। আবার সবার কম্পিউটার সেটাকে চেক করে অনুমতি দেয়ার পরই একটা নতুন ব্লক চেইনে এড হয়ে যাবে। আর সেটা চেইনে থাকা সবার কম্পিউটারেই স্টোর হয়ে থাকবে। আর সেই স্টোর হওয়া তথ্য কখনো ডিলিট করে দেয়া সম্ভব হয় না। যেহেতু শত শত কম্পিউটারে সেটা যুক্ত থাকে, তাই ব্লকচেইনে থাকা তথ্য হ্যাক করা খুব সহজ কাজ নয়। ** ব্লকচেইন নিয়ে হয়ত আর ২-১ টা পোস্ট করেই এটা নিয়ে লেখা শেষ করব৷ পরবর্তী পোস্ট থাকবে আমাদের দেশের ই-গভর্নেন্স সিস্টেম নিয়ে যেখানে ব্লকচেইন ব্যবহার করার কাজ চলছে৷ প্রযুক্তি নিয়ে ঠিক ততটুকুই আমরা জানব যতটুকু না জানলেই নয়। Like this:Like Loading... Related Spread the lovemoremore