You are here
Home > ই-কমার্স > মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ির প্রচারণায় ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি)

মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ির প্রচারণায় ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি)

Spread the love

মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ির প্রচারণায় ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি)
 

মানিকগঞ্জের তাঁতশিল্প এবং তাঁতের শাড়ি অনেক পুরোনো ঐতিহ্য হলেও, একে আমরা সম্প্রতি একদমই নতুনভাবে জেনেছি বলা যায়। বহুবছর ধরে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় কয়েক হাজার তাঁতি দিন-রাত কাপড় বুনে গেলেও সেগুলো মানিকগঞ্জের তৈরি বলে আমাদের জানার কোন উপায় ছিল না। কারণ তাঁতিদের পর্যাপ্ত তাঁত থাকলেও এবং উন্নতমানের কাপড় তারা বুনে থাকলেও নিজস্ব কোন বাজার তাদের এলাকায় ছিল না। মানিকগঞ্জের তাঁতিরা তাদের তৈরি শাড়ি, থ্রিপিস, গামছা, ওড়না, লুঙ্গী ইত্যাদি সব পোশাক টাঙ্গাইলের করটিয়া হাঁটে বিক্রি করতেন, টাঙ্গাইলের মহাজনরা তাদের থেকে কিনে নিত। তাই আমরা এতোকাল মানিকগঞ্জের তাঁতে তৈরি সব শাড়িগুলোকে টাঙ্গাইলের শাড়ি বলেই জানতাম। এমনকি ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি) ডিজিটাল পল্লী প্রজেক্টে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (বিপিসি) এবং ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সাথে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনলাইনে প্রচারণা কাজ শুরুর আগে পর্যন্তও মানিকগঞ্জের শাড়ি বলে আমরা কিছুই জানতাম না। এক এলাকার সমৃদ্ধ একটি শিল্প তাদের নিজস্ব পরিচয়ে পরিচিত হতে পারেনি এত বছর, এটা আমাদের জন্য বিশাল ব্যর্থতা বলা যায়।

যে কোন জেলার নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতি সেই জেলার সমৃদ্ধিতে অনেক বেশি অবদান রাখে। মানিকগঞ্জের তাঁতশিল্প তাদের নামে পরিচিত হলে, শুধু তাদের তাঁত এবং তাঁতিরাই না, পুরো এই জেলাই নিঃস্বন্দেহে অনেক বেশি এগিয়ে যেত। কারণ এই তাঁতশিল্প, তাঁতের পোশাক বা শাড়ির জন্যই বিভিন্ন জেলা থেকে বহু মানুষ মানিকগঞ্জ যেত। আর অধিক মানুষের যাতায়াতের কারণে এবং তাদের বাড়তি চাহিদা পূরণে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিত। তখন মানিকগঞ্জ জেলার তাঁত শুধু না তাদের পর্যটনসহ অন্যান্য শিল্পও অনেক সমৃদ্ধ হত। যা হত, যা এতদিন হয় নি তা নিয়ে আসলে কথা বলে আর খুব একটা লাভ নেই, বরং মাত্র ২-৩ মাসের মাঝে মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ির কতটা পরিচিতি বেড়েছে, কি কি পজিটিভ পরিবর্তন আমরা দেখতে পেয়েছি এবং সামনে আরও দেখব তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

সবচেয়ে লাভ যা হয়েছে তা হল, খুব অল্প সময়ের মাঝেই মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ির এই নতুন পরিচিতি ও ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে ই-কমার্স প্লাটফর্মের শক্তি এবং গুরুত্ব আরও ভালো ভাবে আমরা বুঝতে পেরেছি। ডিজিটাল পল্লী প্রজেক্ট মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় একটি পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান বিজনেস প্রমোশনাল কাউন্সিল (বিপিসি) এবং ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর যৌথ উদ্যোগে। এরপর তাদের সাথে ইডিসি যোগ দেয় অনলাইন বা ইন্টারনেট তথা ই-কমার্সকে কাজে লাগিয়ে এই প্রজেক্টের প্রমোশনাল এক্টিভিটি পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে।

ইতিমধ্যেই ইডিসি মানিকগঞ্জের শাড়ির প্রচারে ৪টি অফলাইন ইভেন্ট এবং ৪টি অনলাইন ইভেন্ট করেছে। ইভেন্টগুলোতে দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা এবং ক্রেতারা স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ নিয়েছে, মানিকগঞ্জের শাড়িগুলো দেখেছে, জেনেছে, কিনেছে এবং অনেকেই কিনতে আগ্রহী হয়েছে। এছাড়াও ডিজিটাল কমার্স মেলাকেও সফল করতে ইডিসি এক্টিভলি কাজ করেছে। মেলায় দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের ২০টি স্টল ছিল, যেসব উদ্যোক্তাদের কেউই মানিকগঞ্জের শাড়ি নিয়ে বিজনেস করে না বা করবে না, শুধুমাত্র এই শাড়িগুলোর প্রচারের উদ্দেশ্যেই তারা মেলায় মানিকগঞ্জের শাড়ি সেল করেছে। এটা আসলে একটা বিশাল পরিবর্তনের সূচনা। এর আগে এমনটা কিন্তু দেখা যায় নি কোথাও যে, এতগুলো উদ্যোক্তা একসাথে হয়ে নিজেদের প্রোডাক্টের বাইরে অন্য কোন প্রোডাক্টকে এভাবে প্রচার করছে! এই নতুন পরিবর্তন কিন্তু আমাদের জন্য শিক্ষা এবং উদাহরণ তৈরি করে দিয়েছে মানিকগঞ্জের শাড়ির প্রচার করে। এখন এই প্রজেক্ট এবং এর পুরো কার্যক্রমকে আমরা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের পণ্যগুলোর পরিচিতির ক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে পারব একইভাবে।

মানিকগঞ্জের শাড়ির প্রচার করতে গিয়ে আমরা দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির শক্তি আর সুফলও বেশ ভালো মতো টের পেয়েছি। ২০১৯ সালে শেষের দিকে ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজিব আহমেদ প্রথম দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি নামে আলাদা একটা সেক্টরের কথা বলেন এবং বিভিন্ন আইডিয়ার বাস্তবায়ন করে এই ইন্ডাস্ট্রিকে শূন্য থেকে অনেক সমৃদ্ধ করে তুলেছেন মাত্র ২বছরের মাঝেই। এই ইন্ডাস্ট্রি আমাদের দেশে উৎপাদিত অঞ্চলভিত্তিক পণ্যের প্রচারে কতটা ব্যাপক পরিসরে অবদান রাখতে পারে তা এই মানিকগঞ্জের শাড়ির প্রচার করতে গিয়ে বেশি ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছি। এর ধারাবাহিকতায়ই দেশি পণ্যের ছোট বড় কয়েক শত গ্রুপকে একসাথে আমরা পেয়েছি, যারা মানিকগঞ্জের শাড়ির প্রচারণায় অংশ নিয়েছে, ইডিসিকে সাপোর্ট করেছে। গ্রুপগুলোতে প্রতিদিন মানিকগঞ্জের শাড়ি নিয়ে অসংখ্য পোস্ট আসার পাশাপাশি মানিকগঞ্জ জেলার অন্যান্য শিল্প সংস্কৃতি, পর্যটন, বিশেষ খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি অসংখ্য বিষয় নিয়েও শত শত পোস্ট আসছে। তাই শাড়ির পাশাপাশি পুরো মানিকগঞ্জ জেলারই ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে হয়ে গেছে।

আমাদের দেশি পণ্যগুলো আসলে সবদিকেই সেরা, শুধু প্রচারের অভাবেই এগুলো পিছিয়ে আছে, মানুষের কাছে এগুলোর বিশেষত্ব আমরা পৌঁছাতে পারছি না। মানিকগঞ্জের শাড়ি পুরনো হলেও, জানার অভাবেই এটি আমাদের লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। এর প্রচারটাই তাই সবার আগে দরকার ছিল। প্রথম শুনে বেশ আশ্চর্যই লেগেছিল যে, মানিকগঞ্জের তাঁতগুলোতে ২৪ রকমের বা ডিজাইনের শাড়ি উৎপন্ন হয়, অথচ আমরা জানতামই না এই অঞ্চলে তাঁত রয়েছে। আর প্রথমবার ইডিসির কার্যক্রমের মাধ্যমে যখন শুনে গুগলে মানিকগঞ্জের তাঁত নিয়ে সার্চ করলাম, তখন একের পর এক শুধু নেগেটিভ নিউজ সামনে আসতে লাগল যে, এই এলাকার তাঁত শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে, বিলীন হয়ে যাচ্ছে, তাঁতিরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে ইত্যাদি। তখন অবাকই লাগছিল, হতাশা কাজ করছিল ভেবে যে, মানিকগঞ্জে তাঁত আছে তাই জানতাম না, আর প্রথমবার জানলাম এতো নেগেটিভ নিউজের মাধ্যমে!

আর মানিকগঞ্জের শাড়ি নিয়ে সার্চ করে তো পজিটিভ নেগেটিভ কোন ধরণের আর্টিকেলই পেলাম না। ইন্টারনেট, প্রযুক্তি আর তথ্যের যুগে আমাদের দেশি পণ্যের এই কন্টেন্টের গ্যাপটা আসলে মারাত্মক হতাশাজনক। এই গ্যাপটাই আমরা এইবার পূরণ করতে যাচ্ছি অন্তত এই মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ির প্রচারণার মাধ্যমে। ডিজিটাল পল্লীর এই প্রজেক্টের অধীনে ইডিসি তাদের প্রমোশনাল এক্টিভিটির মাধ্যমে মাত্র ১৪-১৫ দিনের মাঝে দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিকে কাজে লাগিয়ে মানিকগঞ্জের ১হাজার পিস শাড়ি বিক্রি করে ফেলেছে। সবাই বেশ উৎসাহের সাথে এই শাড়িগুলোর ক্রেতা হয়েছে, কেউ নিজের জন্যই বিভিন্ন ডিজাইনের কয়েক পিস শাড়ি কিনেছে, আবার কেউ কেউ প্রিয়জনদের উপহার দিয়েছে। একেকজন এমন হয়েছে এভাবে ১০-১৫টা মানিকগঞ্জের শাড়িও কিনে ফেলেছে। সবাই এতটা আনন্দ নিয়ে শাড়িগুলো কিনেছে, কারণ মানিকগঞ্জের শাড়িগুলো কোয়ালিটির দিকে যেমন সেরা মনে হয়েছে সবার কাছে, অসংখ্য ডিজাইন ভ্যারিয়েশনও রয়েছে, তেমনি প্রাইসও বেশ রিজনেবল। মানিকগঞ্জের শাড়ির কয়েকশত রিভিউ ইতিমধ্যেই দেশি পণ্যের বিভিন্ন গ্রুপ মিলিয়ে চলে এসেছে। সবাই ভীষন খুশি এই শাড়িগুলো নিয়ে। অনেক উদ্যোক্তা এখন আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, মানিকগঞ্জের শাড়িকে নিজের উদ্যোগে যুক্ত করার জন্য। তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনাময় একটা সোর্সিং এর ব্যবস্থা হয়েছে। এটা দারুণ ব্যাপার।

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, আমরা মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ি বিক্রি এবং প্রচার করতে গিয়ে সবচেয়ে ভালো যা পেয়েছি তা হল, সম্মিলিতভাবে কাজ করার সুফল। আমাদের দেশে সমবায় কাজের বেশ অভাব রয়েছে। কিন্তু মানিকগঞ্জের শাড়ির প্রচারে সবাই যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, সবদিকে সাপোর্ট করেছেন, তা আমাদের খুবই আশাবাদী করেছে। দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোক্তা এবং ক্রেতার একটা বিশাল অংশের অংশগ্রহণের ফলেই কিন্তু এতো দ্রুত এই প্রজেক্টের সাফল্য আমরা দেখতে পেয়েছি, মাত্র মাসখানেক সময়ের মাঝেই হাজারের বেশি শাড়ি আমরা বিক্রি করে ফেলতে পেরেছি। মানিকগঞ্জের শাড়ি একটা নতুন ওয়েভের মত সবার মাঝে ছড়িয়ে গিয়েছে, প্রচুর পোস্ট আর সুন্দর সব ছবি এসেছে, যা মানুষকে অনেক বেশি আগ্রহী করে তুলেছে। এই ওয়েভ এবং এই প্রজেক্টের সাফল্য শুধু মানিকগঞ্জের জন্যই না, বরং দেশের সব অঞ্চলের শাড়ির প্রমোশনের ক্ষেত্রেই সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এর মাধ্যমে যে কাস্টমার বেইজ নতুন করে তৈরি হয়েছে, তারা সব ধরণের দেশি শাড়িই সামনে একইভাবে কিনতে আগ্রহী হবে, কারণ তারা দেশি শাড়ি সম্পর্কে বেশ ভালো আইডিয়া এইবার পেয়ে গেছে। আর এটি বিশেষ করে অনেক সম্ভাবনাময় নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সোর্সিং এর বিশাল দুয়ার খুলে দিয়ে অনেকাংশেই সহজ করে দিয়েছে উদ্যোগের শুরুর জার্নিকে।

সব মিলিয়ে ডিজিটাল পল্লীর প্রথম প্রজেক্ট হিসেবে মানিকগঞ্জের তাঁতশিল্প বেশ ভালো ভাবেই সাফল্যের দেখা পেয়েছে বলা যায়। এটি একইভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অজানা সম্ভারকেও আমাদের সামনে তুলে ধরবে, পরিচিত করবে বলেই আমরা আশাবাদী এবং ইডিসিও সব সময় সর্বোচ্চ সাপোর্ট এতে দিয়ে যাবে।

ছবিঃ মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের থেকে ইডিসি টিমের ক্রেস্ট প্রাপ্তির মুহুর্ত

Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: