You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক – “এমিল ও গোয়েন্দা বাহিনী”

কিশোর ক্লাসিক – “এমিল ও গোয়েন্দা বাহিনী”

এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী
Spread the love

“এমিল ও গোয়েন্দা বাহিনী”

এরিখ কাস্তনার

 

এমিল গাঁয়ের ছেলে , স্কুল ছুটি তাই যাবে জার্মানের বার্লিনে ওর খালার বাড়িতে বেড়াতে।

ওর বাবা নেই, মা-ই সব। যেহেতু বাবা নেই, সংসার আর এমিলের পড়াশোনার খরচ ওর মা কে অনেক কষ্ট করে যোগাতে হয়।

বাসারই একটা রুমে ছোট্ট পার্লার যেখানে শুধু মেয়েদের চুলের পরিচর্চা করে ওর মা মিসেস টিশবাইন, এই করেই সামান্য যা টাকা পায় ওতেই সব খরচ চালাতে হয়।

এমিল কিন্তু খুব ভালো ছেলে, মা কে খুব বেশি ভালোবাসে সে। মায়ের জন্য ভেতর থেকে একটা দায়িত্ব্যবোধ সে সব সময় ফিল করে। তাই সে কখনো স্কুল পালায় না, পড়ায় ফাঁকি দেয় না, কারণ এসব করা মানে ওর মাকে ঠকানো, কষ্ট দেয়া, এটা কিছুতেই সে করতে পারেনা। এমন সব কাজ সে ঘৃণা করে যা ওর মা কে কষ্ট দিতে পারে। সে বাড়তি কোনো বাইরের খাবার খায় না, সিনেমা দেখতে যায় না, এসব এভোয়েড করে চলতে তার কষ্ট হয় ঠিক ,কিন্তু যখন স্কুলের রেজাল্টে সে প্রথম স্থান অধিকার করে তখন যেন ওর সকল কষ্ট সুধে আসলে দূর হয়ে যায়। মা খুব খুশি হোন রেজাল্ট শুনে, এমিলের কাছে মনে হয় এটাই মায়ের সব কষ্টের কিছুটা প্রতিদান দেয়া।

 

এবার ফিরে আসি এমিলের বার্লিন জার্নিতে।

 

এমিল ট্রেনে করে বার্লিন যাবে।

 

মিসেস টিশবাইন খামে করে ওকে কিছ টাকা দিল এমিলের নানুর জন্য, টাকাগুলো খুব সাবধানে রাখতে বলল। এমিল ওর শ্যুটের বুক পকেটে খাম টা রাখল আর সতর্কতার সাথে চেক করছিল বার বার খামটা ঠিক হায়গায় আছে কিনা দেখার জন্য। ও ছোট মানুষ এতো টাকা সাথে নিয়ে যাচ্ছে বলেই তার খুব চিন্তা হচ্ছিল।

 

ট্রেইনের সব যাত্রীদেরকে সে খুব সতর্কতার সাথে খেয়াল করছিল যে, চুরি করার মতো কাউকে সন্দেহজনক মনে হয় কিনা। কয়েকজনের সাথে ওর আলাপচারিতাও হয়, ভালোই মনে হইয়েছে ওর সবাইকে। আস্তে আস্তে বিভিন্ন স্টেশনে লোক নেমে যেতে লাগল ,আর ট্রেনের কামরা খালি হয়ে গেল এক সময়।

 

শুধু রইল এমিল আর মিস্টার গুন্ডুআইস নামের একজন লোক। লোকটা ওর সামনে বসেই ঘুমাতে লাগল। এমিল অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে আর সজাগ রাখতে পারল না, ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে লাগল। চমকে ঘুম ভেঙে দেখল সে ট্রেনের মেঝেতে পরে ঘুমাচ্ছে, ওই লোকটা কে দেখতে পেল না। দ্রুত টাকা চেক করে দেখল নেই!!

 

এমিলের টাকা চুরি গেছে, কে চুরি করেছে তাও সে বুঝতে পারছে, কিন্তু কিছু করতে পারছে না।

 

ট্রেন কাঙ্ক্ষিত স্টেশনে থামলে এমিল নামল এবং সেই লোকটিকেও অন্য একটা কামরা থেকে নামতে দেখল। সে লোকটার পিছু নিল, ছুটে চলল ওর পেছন পেছন নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে। লোকটা একটা ক্যাফেতে বসে খেতে লাগল আর এমিল রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওকে দেখতে লাগল।

ওইদিকে এমিলের নানু আর খালাত বোন ওর জন্য অপেক্ষা করছে ফুলের দোকানে, ওকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু এমিল তো চুরের পিছে গোয়েন্দাগিরি করছে এতো আর তারা জানেনা, তবে এমিলকে না আসতে দেখে খুব দুশ্চিন্তায় পরে গেল।

 

এদিকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই দেখা হয়ে এমিলের সাথে এলাকার এক ছেলের বন্ধুত্ব হয়ে গেল, ও যে চোর তাড়া করছে এটা শুনেই ছেলেটা নিজে থেকেই ওকে সাহায্য করতে চাইল। কারন সে এটাতে বেশ এক্সাইট্মেন্ট খুঁজে পেলো, ওরা চোর ধরবে!!

ছেলেটা ওর আরও বন্ধুদের ডেকে আনল। এই বাচ্চাগুলা একসাথে জড়ো হয়ে যেভাবে চোরটাকে ধরার নিখুঁত প্ল্যান করল এতে অবাক না হয়ে পারা যায় না!!

 

ওদের মাঝে সবচেয়ে বুদ্ধিমান একজন লিড নিলো, ওর নেতৃত্বেই সবাই দলে দলে ভাগ হয়ে চোরের উপর নজর রাখতে লাগল। একজনকে বাসায় পাঠিয়ে দিল যেন সব সময় ফোনের কাছে থাকে , যে কোনো বিপদে পরলে তাহলে ওকে ফোনে জানানো হবে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। ওর ফোন নাম্বারও কাগজে লিখে সবাই আলাদা আলাদা ভাগ করে নিল। ওদের সবার কাছে যে কয় টাকা আছে সব একসাথে করা হলো, সেই টাকা কে তিনটা আলাদা টিম কে ভাগ করে দেয়া হলো প্রয়োজনে খরচ করার জন্য। ওরা কেউ কাউ নিজেদের বাসা থেকে খাবার যোগাড় করে আনল।

 

এমিল আবার এক ছেলেকে দিয়ে ওর খালার বাসায় খবর পাঠালো যে, সে ঠিক আছে ,বার্লিন এসেছে। জরুরী একটা আটকা পরে আছে, চিন্তা যেন না করে। টাকা চুরির কথা শুনলেই সবাই দুশ্চিন্তা করবে বলে সেটা এড়িয়ে গেল।

চোরটা এক সময় ক্যাফে থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি করল। ওরাও আরেকটা ট্যাক্সি করে চোরকে ফলো করে ছুটলো। চোরের ট্যাক্সি গিয়ে থামল এক হোটেলের সামনে। ওরাও থামল। চোরটা সেই হোটেলে থাকার জন্য রুম বুকড করল। বাচ্চা গোয়েন্দাদের একজন লিফট্ম্যানের পোশাক পরে ছদ্মবেশ নিয়ে চোরের সব খবরাখবর সংগ্রহ করে ফেলল। চোর ব্যাটা সকালে চলে যাবে।

 

এখন তারা একে কিভাবে পাকড়াও করবে তাই ভাবছে।

 

ওদের চোর ধরার সংবাদ এলাকার অন্য বাচ্চাদের কানে পৌছায় সবাই হোটেলের সামনে জড়ো হলো, ১০০ বাচ্চা তো হবেই। সকালে চোর ব্যাটা হোটেল থেকে বেরুতেই বাচ্চারা ওকে ঘিরে ধরল। সে যেদিকে যায়, বাচ্চারাও সেদিকে যায়। এতে সে ঘাবড়ে গেলো ভীষন। বাঁচার জন্য গিয়ে ঢুকল একটা ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে। গিয়ে ওর চুরিকৃত টাকাগুলোকে ভাঙিয়ে নিতে চাইল।

বাচ্চারাও সাথে ব্যাংকে গেল। ওকে টাকা বের করতে দেখেই গোয়েন্দাদের নেতা ক্যাশিয়ার কে বলল এগুলো চুরি করা টাকা, আমার বন্ধুর থেকে চুরি করেছে। চোর নানান ছলছাতুড়ি করে পালাতে চাইল, ও চুরি করেনি, ট্রেইনেই চরেনি দুই দিনের মাঝে, ওর নামও গুডোইন্স না, সব মিথ্যা বলে বাচ্চাদের ভুল প্রমান করতে চাইল।

কিন্তু এমিল প্রমান করল যে ,সত্যিই এই টাকাগুলো ওর। বাচ্চা গোয়েন্দারা অবশেষে চোরকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দিল এবং পরে বের হলো যে, এই চোরই কয়েকদিন আগে ব্যাংক ডাকাতি করেছে।

 

এমিলরা রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলো, ব্যাংক ডাকাত কে ধরার জন্য ব্যাংক পুরস্কার ঘোষনা করেছিল সেগুলো এমিলকে দিয়ে দেয়ায় এমিল বিশাল অংকের টাকা পেয়ে ধনীই হয়ে গেলো বলা যায়। পেপারে তাকে নিয়ে নিউজ ছাপানো হলো ছবি সহ। এমিলের মাও খবর পেয়ে বার্লিন এলো, সব বাচ্চারা মিলে পার্টি করল। এমিল তার পুরষ্কার প্রাপ্তির টাকা দিয়ে মা কে উপহার কিনে দেয়ার ইচ্ছা পোষন করল, আর বাকি টাকা কি করবে সেটা মায়ের সিদ্ধান্তের উপরই ছেড়ে দিল।

 

এমিল পেয়ে গেলো তার ভালোমানুষীর পুরষ্কার।

 

লেখক এমিল চরিত্রের যে বর্ননা গল্পটিতে এঁকেছেন এটা সত্যিই অনেক কিছু শেখায় আমাদের। এমিলের মতো ভদ্র, বিচক্ষন, মাতৃভক্ত, দায়িত্বশীল চরিত্র শুধু বাচ্চাদের না আমাদের প্রত্যেকের জন্যই উদাহরণ। একটা অচেনা জায়গায় এসে এমিল বিপদে পরে ধৈর্য না হারিয়ে, ঘাবড়ে না গিয়ে, সেটাকে সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছে, এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।

 

গল্পটা ভীষন ভালো লাগল পড়ে। নিজেকে এই বাচ্চা গোয়েন্দাদলেরই একজন মনে হচ্ছিল।


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: