You are here
Home > আরিফা মডেল > সরিষাবাড়িতে বিশ্বের প্রথম পাট পাতার পানীয় ‘চা’ কারখানা

সরিষাবাড়িতে বিশ্বের প্রথম পাট পাতার পানীয় ‘চা’ কারখানা

Spread the love

খাতুনে জান্নাত আশা, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি, টেকজুম টিভি//

পাটপাতার চা!

বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর জেলার সরিষাবাড়িতে বেশ উন্নত জাতের পাট উৎপন্ন হয়। পাটের আবাদ এখানে বেশী হওয়ার ফলে এখানে বেশকিছু কোম্পানী পাট কল গড়ে তুলে। একসময় ইংরেজগণ সরাসরি এখানকার পাট নৌ পথে রপ্তানী করত। পাট শিল্পের সাথে জড়িত হয়ে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হত।

পাটশিল্প সমৃদ্ধ সরিষাবাড়ীতে ২২টি পাটের কুঠি ছিল।

প্রায় ২২,০০০ বাইশ হাজার শ্রমিক পাটের কুঠিগুলোতে কর্মরত ছিল। বাংলাদেশের পাট ব্যবসায়ী কেন্দ্র হিসেবে নারায়নগঞ্জের পরই সরিষাবাড়ীর স্থান ছিল। আজ তা বিলুপ্তির পথে।

ধীরে ধীরে অধিকাংশ পাটকল বন্ধ হয়ে যায়। পৌরসভা এলাকায় থাকা কয়েকটা পাট কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবার। মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে সাবেক এই পাটশিল্প নগর। তবে এই পরিস্থিতি বদলাবার সময় এসেছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ঝালুপাড়ায় বিশ্বের প্রথম পাটের পাতা থেকে তৈরি জৈব পানীয় (চা) এর জন্য কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু করেছে।

২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মির্জা আজম এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেছিলেন, এক সময় সোনালী আঁশ খ্যাত পাট ছিল এ দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। পাটের সেই সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

পাটকে নানাভাবে ব্যবহার করে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় পাট ও চা শিল্পে যোগ হচ্ছে পাট পাতার চা। এতে পাট ও চা শিল্প সমৃদ্ধ হবে।

বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে সোনালী আঁশের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে। বিজেএমসি সুত্র জানায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভার ঝালুপাড়ায় বিজেএমসির নিজস্ব জমিতে এক কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কারখানা নির্মাণ কাজ চলছে।

শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত সরিষাবাড়ীতে দেশের বৃহৎ যমুনা সার কারখানা অবস্থিত।

বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় এবার বিশ্বের প্রথম পাট পাতার চা তৈরির কারখানা এই উপজেলাতেই হচ্ছে। এতে এ এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থানসহ উপজেলাবাসীর জীবন-মান পরিবর্তন হবে।

পাটপাতার অর্গানিক চা!

পাটপাতার অর্গানিক চা কি? কিভাবে?

পাটপাতা শুকিয়ে গুড়ো করে এই অর্গানিক চা তৈরী করা হয়, যার স্বাদ গ্রীন টি’র মতোই। এই চা এর সাথে চিনি বা মধু মিশিয়েও খাওয়া যাবে, তবে দুধ চা খাওয়া যাবে না।

আর ভেষজ গুণ সমৃদ্ধ পাটের চায়ে আছে খনিজ এবং নানান ধরণের ভিটামিনের সমাহার। আরও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ওমেগা-৩–সহ অনেক উপাদান, যা মানবদেহের জন্য ভীষণ উপকারী। ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগ ঠেকাতে উপকারী এই পানীয়।

পাটের এই চায়ের ধরনেও রয়েছে অনেক বৈচিত্র্য। পাঁচটি আলাদা স্বাদে ‘জুট-টি’ বাজারজাত করেছে সেই জার্মান কোম্পানী “ইন্টারট্রোপ”। এই চায়ের উদ্ভাবক বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)-এর জুট লিভস ড্রিংক প্রজেক্টের উপদেষ্টা এইচ এম ইসমাইল খান।

পাট মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের সহযোগিতায় ও উদ্যোগে ‘ইন্টারট্রোপ’নামক কোম্পানী জার্মানিতে এই চা বাজারজাত করছে। মানিকগঞ্জের লেমুবাড়িতে নির্দিষ্ট পরিমান জমিতে পাট মন্ত্রণালয়ের তত্তাবধানে চাষ করা হয়েছে এই অর্গানিক পাট চা।

তবে একটা ব্যাপার হল- অর্গানিক পাটপাতার চা বানাতে হলে কিন্তু একবারে বীজ রোপণের আগে থেকেই জমিকে অর্গানিক উপায়ে প্রস্তুত করতে হবে।

অর্থাৎ কোনো প্রকার রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি সেই জমিতে যেন আশে পাশের কোনো ফসলের ক্ষেত যেগুলোতে রাসায়নিক সার বা কীটনাশক মেশানো হয়, সেগুলো থেকেও বৃষ্টির পানি বাহিত হতে না পারে সেইভাবেই প্রস্তুত রাখতে হবে।

তবেই একে পুরোপুরি অর্গানিক বলা যাবে। পাট পাতার থেকে এই অর্গানিক পানীয় উৎপন্ন করে তাকে বাজারজাত করতে হলে, একটা পুরো পাট উৎপাদিত অঞ্চল কে তাই “অর্গানিক জোন” ঘোষনা করে সেভাবে পাট উৎপাদন করতে হবে। তবেই পুরোপুরি অর্গানিক পাট পাতার পানীয় উৎপাদন সম্ভব হবে।’

দেশের বাজারে আসার আগেই পাটপাতার “চা” এর জার্মানি ভ্রমন ইতিহাস জার্মানিভিত্তিক একটি স্টার্টআপ হল ‘ইন্টারট্রোপ’, যা জার্মানিপ্রবাসী বাংলাদেশি উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান দুজন জার্মানের সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেছেন।

রংপুরের ছেলে মিজানুর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, যিনি জার্মানির হোহেনহেইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করেছিলেন। চাইলেই কিন্তু তিনি মোটা বেতনের চাকরি করতে পারতেন।

কিন্তু উনার মাঝে নিজে কিছু একটা করার ইচ্ছেটা ছিল প্রবল। এক সন্ধ্যায় তিনি আরেক সহপ্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান বোরনারের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন, তারপর তাদের সাথে দেখা হয় জুলিয়ান কোফলারের। তিনজন গল্প করতে করতেই সিদ্ধান্ত নেন নিজেদের মতো করে কিছু করবেন।

রাতারাতি বিখ্যাত হওয়ার মতো কোনো উচ্চাশা ছিল না তাদের, কিন্তু স্বপ্ন ছিল ভিন্ন কিছু করার, যাতে আর্থিক সচ্ছলতা ছাড়াও সমাজ কল্যাণমূলক কিছুও থাকে।

সেই ভাবনা থেকেই এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর নিজস্ব পণ্য ইউরোপের বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করেন তারা এই ‘ইন্টারট্রোপ’।

একজন বাংলাদেশি হিসেবে পাটের কথাই প্রথমে মাথায় আসে মিজানুরের। পাটের ব্যাগ ও অন্যান্য পাটজাত পণ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় তাদের উদ্যোগ।

২০১৫ সালে উনি পার্টনার জুলিয়ানকে নিয়ে একবার বাংলাদেশে আসেন। সে সময় পাটজাত পণ্যের খোঁজে গাজীপুর আসেন তারা। তাদের দুপুরের খাবারের মেন্যু ছিল অতি সাধারণ বাঙালি খাবার—ডাল, ভাত আর পাটশাক। পাটপাতা সবজি হিসেবে খাওয়া যায় দেখে বেশ অভিভূত হন বন্ধু জুলিয়ান।

এরপর প্রস্তাবটা দেন জুলিয়ানই যে, জার্মানরা হয়তো সবজি হিসেবে পাটপাতা খাবে না, তবে অন্য কোনো উপায়ে খাওয়া গেলে মন্দ হবে না।

ঠিক সে বারই ঢাকায় পাট উৎসবে তাদের সাথে দেখা হয়ে যায় অর্গানিক পাটপাতা চা এর উদ্ভাবক ইসমাইল হোসেন খানের সঙ্গে। উনার সঙ্গে পাটপাতার চা নিয়ে আলোচনা হয়, তিনি তখন বাংলাদেশে পাটপাতার চা বাজারজাতকরণে কাজ করছেন।

সেই থেকে শুরু। এর তিন মাস পর ইসমাইল খান ইন্টারট্রোপের অনুরোধে ১৬ কেজি নমুনা চা–পাতা পাঠান জার্মানিতে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে যাত্রা শুরু করে ‘জুট-টি’

জার্মানির বাজারে এ রকম একটি পণ্যের যাত্রা সহজ ছিল , তা বলাই বাহুল্য। ইউরোপের বাজারে নতুন কোনো খাদ্যপণ্য চালু করতে খরচ হয় কিনা ২০ হাজার ইউরো।

সৌভাগ্যবশত, তারা জানতে পারে যে, ১৯৯৬ সালের আগে গ্রিসে পাটপাতার ব্যবহার হয়েছে। সেই রেফারেন্স ব্যবহার করেই জার্মান কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় করিয়ে নেন তাদের এই পাটপাতার চায়ের।

ইন্টারট্রোপ প্রাথমিকভাবে পাটপাতার চা ওষুধের দোকানগুলোয় বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছিল, এখন অবশ্য অন্য শপগুলোতেও এই চা সাপ্লাই করছে তারা। ভেষজ চায়ের বেশ কদর থাকায় জার্মানির বাজারে এটা খুব দ্রুতই আরও জনপ্রিয় হচ্ছে।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে এই প্রকল্পের অপার সম্ভাবনা বয়ে আনবে নিঃসন্দেহে। শুধু সরকারিভাবে চা রপ্তানি নয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে, নতুন অনেক উদ্যোক্তা তৈরী হবে।

একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে পারে নানা ধরনের ছোট ও বড় প্রতিষ্ঠান। যেমন: উৎপাদন, প্যাকেজিং, পরিবহনসহ অনেক কিছু। আর এসব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে অর্গানিক পাট উৎপাদন, গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য আরও সরকারি সহায়তা অবশ্যই প্রয়োজন আর প্রয়োজন স্টার্টআপে আগ্রহী মানুষ।

সত্যি বলতে “জুট-টি”-এর মতো এমন ইনোবেটিভ একটা প্রোডাক্টের প্যাকেটে “মেইড ইন বাংলাদেশ” লেখা দেখছে বিশ্ববাসী, এটা তো ভীষণ গর্বের ব্যাপার আমাদের জন্য।

আমাদের দেশে আসলে সোনা ফলে, কিন্তু আমরা সেগুলো দেখতে পাই না বলেই আগাতে পারছি না। গবেষনার অভাব, জানার আগ্রহের অভাব আর অভাব নতুন কিছু করার মতো ইচ্ছাশক্তির। তাই দেখাদেখি একি ধরণের পণ্য নিয়ে কাজে নামছি সবাই।

ইনোভেটিভ ওয়েতে কিছু করার কথা ভাবলেই কিন্তু এই সাধারন রিসোর্সগুলো ব্যবহার করে অসাধারন সব পণ্য তৈরী করতে পারি আমরা, ব্যাপক পরিসরে যার বৈশ্বিক চাহিদা তৈরী সম্ভব।

একদিকে সোনালি আঁশ, অন্যদিকে রুপালি কাঠি-দুয়ে মিলে সম্ভাবনাময় শিল্প পাট। প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে শুধু মাত্র পাটের ব্যাগের চাহিদাই রয়েছে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন।

পাটকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে বর্তমান সময়োপযোগী পাটপণ্য উৎপাদন করার ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা পেলে প্রাচ্যের দ্বিতীয় ডান্ডি খ্যাত ‘সরিষাবাড়ি’ অতীতের মতো আবারও এই শিল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: