The Greatest Game Ever Played (মুভি রিভিউ)- মোটিভেশনাল Movie Review মোটিভেশনাল by খাতুনে জান্নাত আশা - October 14, 2021October 14, 20210 Spread the lovemoreThe Greatest Game Ever Played (Movie Review) এটি একটি গলফ স্পোর্টস মুভি, যা ২০০৫ সালে নির্মিত হয়েছিল। এই মুভির প্লট নেয়া হয়েছে ১৯১৩ সালের একটি সত্য ঘটনা থেকে, যার নায়ক আমেরিকার দরিদ্র পরিবারের অপেশাদার গলফ খেলোয়াড় ফ্রান্সিস উইমেট যে কিনা সেই সময়কার সেরা ব্রিটিশ খেলোয়াড় হ্যারি ভারডনকে পরাজিত করে ইউএস ওপেন জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। মোটেই সেই জয় খুব সহজে আসে নি ফ্রান্সিসের জন্য, ঠিক কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল সেটা তাই মুভির রিভিউ পড়তে পড়তে জানব আমরা। “গলফ ভদ্রলোকের খেলা” এমনই একটা মিথ প্রচলিত ছিল ইংল্যান্ড আমেরিকায়। আর এই ভদ্রলোক বলতে শুধু সমাজের উচ্চবিত্ত লোকদেরকেই বোঝাত, নিম্ন বা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকদেরকে গলফ খেলার উপযোগী ভাবা হত না। সেই সমাজব্যবস্থায়ই ফ্রান্সিস উইমেট জন্মেছিল নিম্নবিত্ত এক অভিবাসী পরিবারে আর গলফ খেলার প্রতি এক তীব্র ভালোবাসা নিয়ে বেড়ে উঠেছিল। ফ্রান্সিসের বাড়ি ছিল গলফ কোর্টের পাশেই। তার ছোটবেলার সকাল শুরু হত জানালা দিয়ে গলফ খেলা দেখে। সেখান থেকেই এই খেলার প্রতি ফ্রান্সিসের আগ্রহের শুরু, একা একাই খেলার চেষ্টা করত সে। কিন্তু তাদের মত ওয়ার্কিং ক্লাস লোকদের জন্য গলফ খেলা না, এটাই সবাই তাকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিত। গলফের প্রতি ভালোবাসা এভাবে ফ্রান্সিসের না কমে বরং দিন দিন বেড়ে চলছিল। সৃষ্টিকর্তাই হয়ত তার সাথে এই খেলাকে একাত্ত্ব করে দিয়েছিলেন, তাই গলফ খেলতে পারার প্রতিভা তার মাঝে লক্ষ্যনীয় ছিল, যা তার মায়ের চোখে ঠিকই ধরা পরেছিল। ফ্রান্সিসের বাবা সব সময় তাকে খেলার চেয়ে কাজ করতে উৎসাহিত করত বেশি, কারণ সে নিজেও গলফ নিয়ে চেষ্টা করেছিল এবং বুঝেছিল এই সমাজ তাদেরকে এই খেলায় প্রতিষ্ঠিত হতে দিবে না কখনোই। কিন্তু ফ্রান্সিস সব সময় তার মায়ের সাপোর্ট পেয়েছিল। ছোট্ট ফ্রান্সেস উপার্জনের জন্য শহরের সবচেয়ে বিত্তশালী লোক ওয়ালিসের ক্যাডির কাজ করা শুরু করে। ক্যাডি হল গলফারের এসিস্ট্যান্ট, যারা খেলার সব সরঞ্জামাদি বহন করা সহ সবকিছুতে সাপোর্ট দেয়ার কাজ করে থাকে। ক্যাডি হিসেবে কাজ করার সময় সে মাঠে একটা গলফ বল পায়, যাতে হ্যারি ভারডনের নাম লেখা থাকে। বলটা সে খুব যত্ন করে রাখে, সে একটা গলফ ক্লাবও পেয়ে যায় একজনের থেকে। তাই দিয়ে গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে পরলে রুমের ভেতরেই প্র্যাক্টিস করতে শুরু করে। ফ্রান্সিসের আইডল ছিল বিখ্যাত গলফার হ্যারি ভারডন, কারণ হ্যারিও ফ্রান্সিসের মত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিল আর স্ট্রাগল করেই এই খেলায় টিকে থেকেছে, সেরা জায়গা দখল করেছে। তাই হ্যারিকেই সে তার আদর্শ হিসেবে জানত। হঠাৎ শুনতে পেল শহরে গলফ এক্সিবিশন হবে, যেখানে হ্যারি ভারডন আসবে। ফ্রান্সিস এটা শুনে সেখানে যেতে চাইলে তার বাবা নিষেধ করে, কিন্তু ওর মা নিয়ে যায় ওকে। সেখানে হ্যারি ডেমো গলফ খেলা দেখাচ্ছিল আর চারদিকে বহুলোক ভীড় করে দেখছিল। হ্যারি ভীড় থেকে একজন ভ্লান্টিয়ারকে আসতে বলায়, মাঠে ফ্রান্সিস গিয়ে হাজির হয়। হ্যারি তখন ফ্রান্সিসকে গলফ বল আর ক্লাব দিয়ে শট করতে বলে। কিন্তু ফ্রান্সিস তখন গলফ খেলা দেখলেও, প্র্যাক্টিস করলেও কোনো নিয়ম জানত না। তাই ভুল শট খেলেছিল। তাই দেখে চারপাশের মানুষ বিদ্রুপাত্মক অট্টহাসি হাসছিল। খুব অপ্রস্তুত ফিল করছিল ফ্রান্সিস, কিন্তু হ্যারি তাকে তখন গলফ ক্লাব সঠিক উপায়ে ধরার এবং শট খেলার কৌশল শিখিয়ে দেয়। আর এতেই পরবর্তী শট একদম পারফেক্ট খেলে ফ্রান্সিস। এটা দেখে তখন সব মানুষ আবারও করতালি আর হাসির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানায়। *** এই দৃশ্যপট আমাকে ভাবিয়েছে। মানুষ তো এমনই, আমাদের দুর্বলতা অসহায়ত্বেও হাসে, আবার সাফল্যেও অভিবাদন জানায়। তাই এটা আমাদের চয়েস, আমরা মানুষের কোন হাসির কারণ হতে চাই, নিজেকে কিভাবে প্রমাণ করতে চাই, কোন জায়গায় দেখতে চাই। মানুষের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে নিজের কাজে ফোকাস করে গেলে বিদ্রুপাত্বক হাসির কারণ হয়ে অন্তত অসহায়ত্ব ফিল করতে হবে না। যারা হয়ত এখন আমার দুর্বলতা নিয়ে হাসছে, তারাই আমার সাফল্যে ফুল নিয়ে বরণ করতে আসবে, এটাই বাস্তবতা। যাই হোক, ফিরে আসি ফ্রান্সিসের গল্পে। হ্যারির থেকে সেই শিখে আসা কৌশল আর মানুষের করতালির মাধ্যমে উৎসাহ দেয়া ফ্রান্সিসকে খুব অনুপ্রাণিত করেছিল। সে নিয়মিত গলফ প্র্যাক্টিস করতে থাকে। এটা দেখে তার বাবা কোনোভাবেই খুশি হতে পারে না। কিন্তু ফ্রান্সিস এভাবেই গলফকে ভালোবেসে প্র্যাক্টিস করতে করতেই বড় হতে থাকে, এক সময় বেশ এক্সপার্ট হয়ে যায় আর গলফের স্কুল চ্যাম্পিয়নশীপে জিতে যায়। এরপর তাকে মানুষ ভালো একজন গলফ প্লেয়ার হিসেবে চিনতে শুরু করে আর খেলার অফারও পেয়ে যায়। কিন্তু ফ্রান্সিস ক্যাডি ছিল, আর ক্যাডিদের গলফ প্লেয়ার হিসেবে খেলায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। তারপরও ফ্রান্সিস খেলার পারমিশন পেয়ে যায়, সেটা ছিল একটা প্রাথমিক বাছাই পর্ব। নিয়ম ছিল ১৮ বার বলকে গর্তে ফেলতে হবে, আর ফ্রান্সিস ৮১টা শট মেরে ১৮ বার বল গর্তে ফেলে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দেখায়, যা সবাইকে মুগ্ধ করে। সেখান থেকেই ফ্রান্সিস ন্যাশনালল এমেচার চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের অফার পেয়ে যায়। কিন্তু সে ক্যাডি হওয়ায় প্রথমে গলফ অথরিটি অনুমতি দিতে চায় না, আর ৫০ ডলার এন্ট্রান্স ফি দিতে হবে বলা হয়, যা তখন ফ্রান্সিসের জন্য ম্যানেজ করা কঠিন ছিল। ফ্রান্সিস তখন তার বাবার কাছে ৫০ ডলারের জন্য যায়। তার বাবা ডলার দেয় ঠিকই, কিন্তু সাথে কঠিন শর্ত জুড়ে দেয় যে, কোয়ালিফাই করতে না পারলে গলফ কে সারাজীবনের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। কোয়ালিফাইড রাউন্ড অনেক কঠিন হয়, তাই বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। আগের রাতে ফ্রান্সিস হ্যারি ভার্ডনের লেখা একটা বই পড়ে পরদিন খেলায় অংশ নেয়। প্রথমদিকে খুব ভালো করতে থাকলেও শেষদিকে তার বাবা খেলা দেখতে আসায় বাবার দিকে চোখ পরতেই নার্ভাস হয়ে পরে আর হেরে যায়। বাবাকে দেয়া ওয়াদামত গলফ ছেড়ে দেয় সে আর একটা শপে কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু একদিন ইউএসের গলফ প্রেসিডেন্ট তাকে অফার করতে আসে ইউএস এম্যাচিউর টুণার্মেন্টে অংশগ্রহণের জন্য। ফ্রান্সিস বাবার কথা ভেবে প্রথমে না করে দিলেও পর দিন কান্ট্রি ক্লাবে সে গলফ সরঞ্জাম ডেলিভারি দিতে গিয়ে তার আইডল হ্যারি ভার্ডন কে দেখতে পেয়ে মত বদলায়, খেলতে রাজি হয়, আরও ভালোভাবে ট্রেনিং নিতে থাকে। এর মাঝে কিন্তু ফ্রান্সিসকে প্রতি পদে পদে অনেক অপমানিত হতে হয় বিভিন্নভাবে। ওর বাবা ওকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে, তারপরও সে হাল ছাড়ে না, খেলায় অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। ফ্রান্সিসের ক্যাডিকে পর্যন্ত বেশি দাম দিয়ে কিনে নেয় প্রভাবশালীরা। ফ্রান্সিস এরপর তার পরিচিত একজনকে ক্যাডি হিসেবে সিলেক্ট করলেও খেলার দিন কোনো এক সমস্যার কারণে ওই ছেলেটা আসতে পারে না। তখন ১০ বছর বয়সের এক ছোট ছেলে ইডি তার ক্যাডি হওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করে, ফ্রান্সিস প্রথমে ওকে ক্যাডি হিসেবে না নিতে চাইলেও ওর আগ্রহের কাছে হার মানে এবং গ্রহণ করে। ছোট হলেও ইডি অসাধারণ এক সাপোর্টার হয়ে উঠে ফ্রান্সিসের জন্য, ওকে খেলার ব্যাপারে প্রতিনিয়ত মোটিভেট করতে থাকে, স্কুল ফাঁকি দিয়ে ফ্রান্সিসের সব খেলায় জয়েন করে ক্যাডির দায়িত্ব পালন করতে থাকে। ইউএসের ওপেন এম্যাচিউর চ্যাম্পিয়নশীপে ফ্রান্সিসের প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে সেরা তিন প্লেয়ার হ্যারি ভারডন, টেড রে, এবং নর্থক্লিফ। সবার আগে নর্থক্লিফ বাদ পরে যায়, বাকি ৩জনের মাঝে তীব্র প্রতিযোগীতা হতে থাকে, একি স্কোর করতে থাকে তারা। তবে এক সময় টেডও বাদ পরে যায়, থেকে যায় হ্যারি ভার্ডন আর ফ্রান্সিস উইমেট। তারাও সমান সমান স্কোর করে যেতে থাকে, কেউ কাউকে হারাবার নয়! তবে উত্তেজনাকর এই খেলার অবসান হয় এক সময়। হ্যারি ভারডন আর ফ্রান্সিসের ব্যাকগ্রাউন্ড এক হওয়ায় হ্যারি যেন ফ্রান্সিসের মাঝে নিজেকেই দেখতে পায়, তার চ্যালেঞ্জগুলোর সাথে এই ছেলেটারও মিল খুঁজে পায়। হ্যারির মন তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাপিয়ে ফ্রান্সিসকে সুযোগ দিতে চায় নিজেকে প্রমাণ করার, সমাজকে বুঝিয়ে দিতে চায় গলফ শুধু বিত্তশালীদের জন্যই নয়, এখানে যে কেউ সেরা হতে পারে নিজের স্কিলের জোরে। শেষ শটে হ্যারির বলটা ঠিক গর্তের কিনারায় গিয়ে থেমে যায় আর ফ্রান্সিস চ্যাম্পিয়নশীপ জিতে যায়। হ্যারি খুশি মনে ফ্রান্সিসকে অভিনন্দন জানায়। I think that’s the way Harry proved that they are the real gentleman who qualified themselves as the Golfer. হ্যারির একটা উক্তি আমার খুব ভালো লেগেছে- “I came here to win a trophy. And on the face of it Ted Ray or I should carry it off. Not for you, not for England, but for sheer bloody pride at being the best, that’s why we do this. And if Mr. Ouimet wins tomorrow, it’s because he’s the best, because of who he is. Not who his father was, not how much money he’s got, because of who he bloody is!” মুভি এই চ্যাম্পিয়নশীপ দিয়ে শেষ হলেও ফ্রান্সিসের সাফল্যের যাত্রা এখান থেকে শুরু ছিল। এরপর সে আরও অনেকবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, বাবার স্বপ্নপূরণে সফল ব্যবসায়ীও হয়েছে আর তার সাথে সাপোর্ট দেয়া সেই ছোট্ট ক্যাডি ইডিকে আজীবন বন্ধু হিসেবে পাশে পেয়েছে। ** স্বপ্ন তো এমনভাবেই দেখতে হয়, যার শেষ না দেখা পর্যন্ত যত বাঁধাই আসুক না কেনো পিছু হটার চিন্তাও করা যায় না। ফ্রান্সিস উইমেটের স্বপ্নের গভীরতাটা ঠিক এমনই ছিল। সমাজকে চ্যালেঞ্জ করে পথ চলাটা আমার মতে সবচেয়ে কঠিন কাজ। এটা সম্ভব হয় নিজের আকাঙ্ক্ষার তীব্রতার উপরে। আমি খুব ফিল করতে পারি এটা নিজের ক্ষেত্রে, কারণ অনেক ক্ষেত্রেই প্রচলিত প্রথা ভেঙেই নিজের প্যাশনেট সব কাজ করে যাচ্ছি। কে কি ভাবছে আমাকে নিয়ে বা কি ভাববে এসব না ভেবে একান্তই আমি কি চাই, আমি ভেতরে কিরূপে শান্তি আসে ঠিক তাই করে যাচ্ছি। ব্যক্তিগত সেটিসফেকশনের থেকে বড় সাফল্য কিছু হতে পারে না। ** আর ভালোলাগার কোনো প্রিয় কাজের ক্ষেত্রে অর্থের চিন্তা মাথায় আসে না। ভালোবেসে কোনো কিছু শুরু করলে অর্থের ভূমিকা জীবনে তখন গৌন মনে হয়। ফ্রান্সিস প্রফেশনাল গলফার ছিল না, এই খেলা থেকে তার কোন উপার্জন হত না, তারপরও সে সবকিছু সেক্রিফাইস করে খেলে গিয়েছে। ঘর ছেড়েছে, চাকরি ছেড়েছে নিজের স্বপ্ন আর ভালো লাগাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আর আমি এক বছরের বেশি সময় ধরে বিজনেসে সময় দেয়া ছেড়ে স্টাডি আর লেখালেখিতে ফোকাস করেছি আমার স্বপ্ন ছুঁতে। হ্যাঁ, মিল তো পেয়েছি অনেক ফ্রান্সিসের সাথে আমার। আর আমাদের স্যারকে তো সবাই দেখছেনই, স্যার সব সময় সমাজে নতুন থিউরি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে চলেছেন গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। আমার চোখে তো স্যার সেরাদের সেরা একজন, শুধু দেশেই না তিনি উনার ফিল্ডে বিশ্বসেরাদের একজন। ** জীবনে উত্থান পতন তো আসবেই, এই তো জীবন! কিন্তু নিজের প্যাশন ধরে রাখলে, সব বাঁধাকে হাসিমুখে সামলে স্বপ্ন বাঁচিয়ে কাজে ফোকাস করে গেলে সেই ডেডিকেশনের পুরষ্কার সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই দেন জীবনের কোনো না কোনো অধ্যায়ে। তাই স্বপ্নটাকে যাস্ট শক্ত করে আঁকড়ে ধরে কাজ করে যেতে হবে আমাদেরকে, এক সময় জয় আসবেই, ইনশাআল্লাহ্। আর তখন জয়মাল্য দিয়ে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য মানুষের অভাব হবে না। Like this:Like Loading... Related Spread the lovemoremore