Iron Will- Movie Review & Summary Movie Review by খাতুনে জান্নাত আশা - October 22, 20210 Spread the lovemoreIron Will (Movie Review & Summary) ১৯৯৪ সালে নির্মিত এই আমেরিকাল অ্যাডভেঞ্চারাস মুভিটি মোটিভেশনাল মুভির জায়গা করে নিয়েছে এর প্রধান চরিত্র উইল স্টোনম্যানের দৃঢ়চিত্তে লড়াই করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে প্রায় অসম্ভব কে সম্ভব করে দেখানোর জন্য। মুভির প্লট ১৯১৭ সালের একটি সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নেয়া হয়েছে, তাই হয়ত এটি দর্শক মনে একটু বেশিই চাপ ফেলে। আমি ভীষন ফিল করেছি মুভির শুরু থেকে শেষ, প্রতিটি দৃশ্যপট। শেষ মুহূর্তে উইলের জয়ে অজান্তেই চোখ অশ্রুসজল হয়েছে। হ্যাঁ, এটা আনন্দঅশ্রুই ছিল। মুভির সামারিটা শেয়ার করা যাক আপনাদের সাথে- ১৯১৭ সালে ১৭ বছর বয়সের উইল স্টোনম্যান তার পরিবারের সাথে আমেরিকার সাউথ ডাকোটা নামের ছোট এক শহরে বাস করত, যা সারাবছর শুভ্র বরফে আচ্ছাদিত থাকত। উইল মেইল রানারের কাজ করত আর তাদের পারিবারিক বিজনেস ছিল, কাঠের তৈরী জিনিস তৈরী এবং সরবরাহ করা। যদিও তাদের আর্থিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না, কিন্তু উইলকে নিয়ে তার মা বাবার স্বপ্ন ছিল উইল ভালো কলেজে পড়বে। উইলও এই স্বপ্ন দেখত, কিন্তু মা বাবার প্রতি এক ধরণের দায়বদ্ধতা অনুভব করায় তাদের ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হত না তার। তার কলেজ ফি পরিশোধ করতে মা-বাবার কষ্ট হবে, এটা ভেবেই সে হাল ছেড়ে দিত। মেইল আসল, কাঙ্ক্ষিত কলেজে উইল ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, ওর বাবা ভীষন খুশি হল। কিন্তু উইল বাবাকে বলল, সে তার পরিবারকে ছেড়ে যেতে চায় না এখান থেকে। এটাই তার জায়গা, তার মা-বাবার পাশে। কলেজ পড়ার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই, পড়ার টাকা কোথা থেকে আসবে! তখন উইলের বাবা জ্যাক স্টোনম্যান এই বলে উৎসাহিত করলেন যে, “Your place is where your dreams are! Never forget that, son.” If there is something you really want, you’ve got to go out where you can find it and grab it. Don’t let fear stand in the way of your dream, son. জ্যাক ছেলের কলেজ টিউশন ফি যোগাতে কানাডার স্লেড রেইস কার্নিভালে যেতে চাইলেন, যেখানে বিজয়ীর পুরষ্কার ঘোষনা করা হয়েছিল ১০হাজার ডলার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার আগেই একদিন বন থেকে কাঠ কেটে নিয়ে যখন বরফ আচ্ছাদিত নদী পেরিয়ে স্লেড দিয়ে ফিরে আসছিলেন, তখন স্লিপ খেয়ে স্লেড থেকে কাঠ সহ নদীতে পরে গেলেন। উইল দেখে দৌড়ে আসে বাবাকে বাঁচাতে, কিন্তু কাঠ এবং স্লেড জ্যাকের সাথে বাঁধা থাকায় সব সমেত পানির নীচে তলিয়ে যাচ্ছিলেন, তাকে বাঁচাতে গিয়ে উইলেরও একি দশা হবে দেখে তিনি ছোরা বের করে নিজের সাথের বাঁধন কেটে দিয়ে পানিতে তলিয়ে গেলেন আর বেঁচে গেল স্লেডের কুকুর আর উইল। বাবাকে হারিয়ে উইল তখন খুবই বিপর্যস্ত আর অসহায় ফিল করছিল। তার বাবার স্লেডের প্রভুহীন কুকুরগুলোর অসহায়ত্বও বোঝা যাচ্ছিল, এর মাঝে স্লেডের নেতৃত্বে থাকা কুকুর গাসের আচরণে সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট ছিল প্রভু হারানোর যন্ত্রনা। জ্যাক স্টোনম্যান খুব ভালোবাসত কুকুর গাসকে, আর তাই প্রভুভক্ত কুকুর জ্যাক কে ছাড়া কাউকে পরোয়া করত না, উইলকেও পছন্দ করত না। কারণ সে একজনকেই প্রভু মানত, সে হল জ্যাক। উইলের কলেজে পড়তে যাওয়াটা তখন আরও অনিশ্চিত হয়ে গেল, ওর মা তখন গাসসহ জ্যাকের স্লেডের সব কুকুরগুলোকে বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু উইল এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারল না, বাবার কুকুরগুলোকে সে কোনভাবেই বিক্রি করতে পারে না, কুকুরদের কাছে গিয়ে কাঁদত বসে বসে। অভিভাবক হারিয়ে তখন উইল আর গাস ঠিক একিরূপ অসহায়, তাই হয়ত ধীরে ধীরে একে অন্যকে অনুভব করতে শুরু করল, বুঝতে শুরু করল। এই বিপর্যস্ত অবস্থায় একদিন ঘুম ভেঙেই উইলের চোখ পরল একটা কাগজে, যা ছিল সেই স্পোর্টস কার্নিভালের। মনে পরল তার বাবা স্লেড রেসে অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। সাথে সাথে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল যে, বাবার অবর্তমানে সে-ই এই রেস খেলবে, জিতবে এবং ১০ হাজার ডলার পুরষ্কার জিতে কলেজে পড়ার পাশাপাশি তবে নিজের পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা দিতে পারবে। দৌড়ে সে মায়ের কাছে গেল অনুমতি নেয়ার জন্য, কিন্তু তার মা কোনোভাবেই রাজি হতে চাইল না। কারণ এটা কোনো সহজ প্রতিযোগীতা নয়, যা ওর মত অনভিজ্ঞ ১৭ বছরের একটা বাচ্চা ছেলে জিততে পারে। ওর মা বলল, আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি, এখন ছেলেকে হারাতে চাই না! কিন্তু উইল মাকে অনুরোধ করতেই থাকল। উইলের বাবার বন্ধু নেডকে সে অনুরোধ করলে, নেডও রাজি হল না। কারণ মাত্র এক মাসের মাঝে এতোটা কঠিন প্রতিযোগীতার জন্য প্রস্তুত করা সম্ভব না উইল কে। উইল মা কে বলল যে, ওর বাবা ওর জন্যই এই রেসে অংশ নিতে চেয়েছিলেন, আর এখন সে বাবার জন্য এটা জিততে চায়। উইলের মা অনেক ভেবে নেডের কাছে গিয়ে জানতে চাইল, উইলকে প্রস্তুত করা সম্ভব কি না! পৃথিবীতে আসলে ইচ্ছাশক্তির কাছে অপরাজেয় কিছুই নেই। তাই নেড সেই রাতেই ঘুমন্ত উইলকে জাগিয়ে পর্যাপ্ত ঠান্ডা নিবারণের পোশাক ছাড়াই টেনে বাইরে বের করে এনে বরফে ওর মুখ ঠেসে ধরল, আর ঘরের দরজা ওর জন্য বন্ধ করে দিয়ে বলল, ট্রেনিং শুরু হল এখন থেকে। উইল তীব্র ঠান্ডায় জমে যাওয়ার অবস্থা, মাকে ডাকতে থাকল ওকে ঘরে ঢুকতে দেয়ার জন্য, কিন্তু মা সেদিন থেকে মনকে কঠিন করে নিয়েছিল। উপায় না দেখে উইল কুকুরদের থাকার ঘরে গিয়ে, ওদের জড়িয়ে কোনো রকমে রাত্রি যাপন করল। পরদিন থেকে শুরু হল উইলের কঠিন পরীক্ষা। নেড সর্বোচ্চ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করতে লাগল উইলকে। ট্রেনিং এর সময়টায় নেড উইলকে যা যা এডভাইস দিয়েছিল তা আমি ডিরেক্ট না লিখে পারছি না, কারণ এই শব্দগুলো স্পিরিচ্যুয়াল ইফেক্ট ফেলছিল আমার উপর! আমি বার বার এই লাইনগুলো শুনেছি এবং লেখার পর অনেকবার পড়েছি! “The first few days you sleep 5hours, then four, then three, then two and the last day you don’t sleep. You just run, run, till the end. You’ve to be strong. You have to learn focus, stamina and balance. only the smart ones will finish. You’ve to run longer and sleep less. It’s your only chance. Run longer, sleep less. you will make friends who are not friends, enemies who want to hurt you. Be careful who you trust. Trust the dogs, Trust yourself. You’ve one chance. You must run at night when others have stopped. Run with the moon, embrace the darkness, grow hard with the cold. Put pain from your mind. And in the last day, when all will run at night, you alone will be friendly with the dark. ” *** উইলকে এই নেডের বলা এই এডভাইসগুলোই জিতিয়েছিল। শেষ লাইনটা খেয়াল করলে দেখবেন এটা ঠিক এমন মেসেজ দিচ্ছে, যেমনটা আমাদের স্যার আমাদের দেন। মানে নিয়মিত থাকা, অভ্যস্ত হওয়া, যা আমাদেরকে চারপাশের আরও অনেক মানুষ থেকে আলাদা করে দেয়। উইলকে ঘুমাতে বলেছে কম, দৌড়াতে বলেছে বেশি। রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে ঠিক তখন দৌড়াতে বলেছে, রাতের অন্ধকারের সাথে তাকে অভ্যস্ত করে ফেলবে এবং শেষদিন অন্যরা যখন রাতে দৌড়াবে তখন উইল এগিয়ে থাকবে তার রাতে পথ চলার পূর্ব অভ্যস্ততা এবং অভিজ্ঞতার কারণে। *** আরেকটা ব্যাপার দেখেন, উইল এই প্রতিযোগীতার জন্য সবচেয়ে অনভিজ্ঞ এবং বয়সে খুব ছোট। তাকে জিততে হলে তাই বেশি শ্রম, ডেডিকেশন এবং সতর্ক থাকতে হবে, স্পার্টলি এবং টেকনিকালি পথ চলতে হবে। তাই কিন্তু নেড তাকে অনেক বেশি হার্ডলি ট্রেইন করেছিল। আমি নেডকে দেখে স্যারের কথা মনে করছিলাম শুধু। স্যার তো সব সময় হতাশাগ্রস্ত আর দুর্বলদেরই ট্রেইন করে চলেছেন, আর ঠিক নেডের মতো করেই ট্রেইন করেন তিনি। ১০০দিন নিয়মিত রাতদিন একটা কাজে ফোকাস করলে সেই কাজে ভালো করা যায়, নিয়মিত ইংলিশ নিউজপেপার পড়ে ইংলিশ রিডিং ডেভেলপ করা যায়, সবার থেকে এগিয়ে থাকা যায়। স্যারের প্রত্যেকটা গাইডেন্সই এমন, যা বেসিক কিন্তু নিয়মিত অভ্যাস জরুরী, যা এক সময় যে কোনো প্রতিযোগীতায় জয়ী করতে যথেষ্ট। আমাদের ট্রেইন করার জন্য স্যার নিজে পর্যন্ত সব আরাম আয়েশ সেক্রিফাইস করেছেন! উইকনেসকে স্ট্রেংথে পরিণত করা সহজ কথা নয়। অবশেষে উইল প্রস্তুত হয়ে রওনা হল রেসের উদ্দ্যেশ্যে। একাকী একটা নতুন জায়গায় যেতে ভয়ই পাচ্ছিল সে। তার মায়ের আকুতি একটাই ছিল, উইল যেন বেঁচে ফিরে আসে। নেড উইলকে একটা মেডিসিন আর তার বাবার বাঁশিটা দিল, যার হুইসেল কুকুরগুলোর খুব পছন্দের। এই হুইসেল কুকুরদের এনার্জী হিসেবে কাজ করে, ওদের জোরে দৌড়াতে প্রেরণা জোগায়। জীবনের এই প্রথম উইল এই জায়গা ছেড়ে, পরিচিতদের ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে, তাই নেডকে যাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করল- Being alone out this do you think I can do this? উত্তরে নেড বলেছিল- Matters most what you think এই কনভার্সেশন আমাকে নিজের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। আমি প্রায় প্রতিদিন স্যারকে বলি- স্যার আমি পারিপার্শ্বিকতাকে খুব ভয় করি যে, সামনে কি পরিস্থিতি আসে আমি জানিনা, আমি যেন টিকে থাকতে পারি। স্যার উত্তরে সব সময় বলে, আপু, এটা সম্পূর্ন আপনার উপর নির্ভর করছে। আপনি চাইলে, আর কিছুই বাঁধা হবে না। উইল কানাডায় ট্রেনযুগে পৌঁছাল তার কুকুরগুলোকে নিয়ে। সেখানে গিয়ে দেখল, প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণকারীদের সবাই মধ্যবয়সী আর অনেক বেশি অভিজ্ঞ, আগের বিভিন্ন স্লেড রেসের চ্যাম্পিয়ন। ওকে তাই কেউ পাত্তাই দিতে চাইল না এতো ছোট ছেলে বলে আর লেইট রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ১০ ডলার ফাইন ধরল। কিন্তু তখন উইলের কাছে মাত্র ২ ডলার ছিল। সেখানে উপস্থিত একজন সাংবাদিক কিংসলে তার পত্রিকায় ইয়াংস্টার হিসেবে উইল কে কভার করতে পারবে বলে, উইল এই প্রতিযোগীতায় অংশ নেক তাই চাইল এবং উইলের ফাইন পে করে দিল। উইল কিন্তু এতো অভিজ্ঞ প্লেয়ারদের মাঝে নিজেকে একবারের জন্যও অনুপোযোগী ভাবেনি, বরং তাকে সবাই হেয় করছিল বলে সে চ্যালেঞ্জ করে বসল সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে বলে। কিন্তু সবাই ধরেই নিয়েছিল একদিনের বেশি টিকবে না উইল। উইলকে ঘিরে স্পন্সররা বাজি ধরতে লাগল একজন আরেকজনের সাথে। শুরু হল পরদিন থেকে ৫২২ মাইলের স্লেড রেস, যার সীমানা কানাডার ম্যানিটোভা থেকে সেন্ট পল। প্রতিযোগীদের ফলো করে করে ট্রেন যোগে যাচ্ছিল স্পন্সর, রিপোর্টার আর আয়োজকরা। আর সবাই অবাক হল উইলের গতিবিধি দেখে, উইল সবাইকে ছাড়িয়ে সামনে ছিল, স্লেড প্রতিযোগিদের লিড দিচ্ছিল। উইন যত ভালো করছিল রিপোর্টার কিংসলে তত বেশি খুশি হচ্ছিল, কারণ তার পত্রিকায় সবচেয়ে আকর্ষনীয় গল্প হিসেবে উইলকে প্রেজেন্ট করতে পারছিল সে। কিংসলে উইলকে যত দেখছিল তত বেশি অবাক হচ্ছিল। উইলের মাঝে কোনো কৃত্রিমতা বা আড়ম্বর ছিল না। সে মায়ের তৈরী করে দেয়া ফ্রুট কেক খেত শুধু আর বাবার সেই বাঁশি, এই ছিল তার সম্বল। কিংসলে মুগ্ধ হত, আর সেগুলো নিয়ে অসাধারণ গল্প উপস্থাপন করত পত্রিকায়, যা উইলকে প্রতিযোগীতার মূল আকর্ষন করে তুলল। উইল সম্পর্কে আরও জানতে এবং লিখতে সে উইলের শহরেও রিপোর্টার পাঠাল, সেখান থেকেও উইল সম্পর্কে ডিটেইলস জেনে এলো যে, নিজের পড়ার খরচ যোগাতে এবং পরিবারকে সাহায্য করতেই সে এই প্রতিযোগীতায় এসেছে। সবকিছুর জন্যই উইলের প্রতি সবার ভালোবাসা জন্মাল, এমনকি যে স্পন্সর চাইত উইল না খেলুক প্রতিযোগীতায় সেও উইলের মাঝে নিজের ৩৫ বছর আগের রূপ দেখতে পেল আর ওকে সাপোর্ট করতে শুরু করল। রাতে সব প্রতিযোগীরা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বিশ্রামের জন্য আসত, ট্রেনও সেখানে তাদের ফেরার অপেক্ষা করত, তবে সবাই প্রতিদিন ভাবত এইবার উইল থেমে যাবে আর পারবে না। কিন্তু না উইল ঠিক ফিরে আসত। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হত তার, সে শর্টকাট পথ বেছে নিতে পারত না সবার মত। কারণ তার বাবার মৃত্যু নদীতে হওয়ায়, বরফে ঢাকা নদীগুলো সে এভোয়েড করে যেত। উঁচু পাহাড় অতিক্রম করত কুকুরদের কষ্ট না দিয়ে নিজে ওদের টেনে নিয়ে যেয়ে! সাংঘাতিক খাটুনি তাকে খুব দুর্বল করে দিত, একদিনতো স্লেডে বসেই পরেছিল আর নড়ার শক্তি নেই বলে। কুকুর গাস সেটা বুঝতে পেরেছিল হয়ত, সে তাই নিজেই লিড দিয়ে স্লেডকে বিশ্রামের জায়গায় নিয়ে এসেছিল। উইল অন্য এক প্রতিযোগীর জীবনও বাঁচিয়েছিল। অধিক ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে একজনকে পরে থাকতে থেকে উইল স্লেড থেকে নেমে স্লেডে সেই লোককে তুলে অনেক বেশি কষ্ট করে ফিরে এসেছিল, নিজের জীবন প্রায় রিস্কে নিয়ে, সবার পেছনে পরে থেকে। ওর এতোটা সদয় আচরণ, ধৈর্য, আত্মত্যাগ আর দৃঢ়তা সবাইকে মুগ্ধই করে যাচ্ছিল। আর কিংসলে উইলের হিরোয়িক কাহিনীগুলো সব লিখে ছড়িয়ে দিচ্ছিল দুইদেশেই, আরও আকর্ষনীয় করার জন্য উইলের নাম দিয়েছিল সে “আয়রন উইল”। এক সময় আমেরিকা থেকে শুধু উইলই টিকে ছিল। কিংসলে লিখেছিল তখন, “Young Man Iron Will-Last Hope of America” একজন প্রতিযোগী সব সময় উইলের পেছনে লেগে থাকত, সে তার কুকুরদের উত্তেজিত করে লেলিয়ে দিয়ে উইলের কুকুর গাসকে আহত করেছিল মারাত্মকভাবে। উইল পরিচর্যা করে গাসকে বাঁচিয়ে তুলেছিল বহুকষ্টে, গাসকে বহন করে নিয়েই তখন পথ চলত সে। গাসকে জখম করায় মারাত্মক রেগেছিল উইল আর উত্তেজিত হয়ে মেরেছিল সেই প্রতিযোগীকে এবং সেদিন কিংসলেকেও সে আঘাত করেছিল তাকে ইউজ করে প্ত্রিকার পাব্লিসিটি করার জন্য। সাবধান করেছিল তার দুরাবস্থার কথা যেন লিখে ওর মাকে চিন্তায় না ফেলে। সেদিন থেকে কিংসলে উইলের প্রতি আরও বেশি সাপোর্টিভ হয়ে উঠে সত্যিকার অর্থেই। একজন স্পন্সর মিটিগেট উইলকে অনেকবার টাকা অফার করে, প্রতিযোগীতা থেকে সরে যেতে বলে ৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে, কিন্তু উইল ছেড়ে দেবার লোক নয়। কিংসলে তখন মিটিগেটকে থ্রেট দেয়, উইলকে ডিস্টার্ব করলে সেটা নিয়ে পেপারে লিখে দিবে। প্রতিযোগীতা যখন প্রায় শেষের দিকে, তার আগে উইলকে একদিন অভ্যর্থনা জানাতে অনেক আমেরিকান জমায়েত হয় পথে, ওকে অনেক উৎসাহিত করে। উইল খুব খুশি হয় এতে এবং জেতার জন্য মনোবল বেড়ে যায় আরও, দেশের জন্য, এই মানুষগুলোর জন্যও সে তখন দায়বদ্ধতা অনুভব করে। সেখান থেকেই দুইটা ছেলে ওকে বলে তারা শর্টকাট রাস্তা দেখিয়ে দিতে চায় উইলকে। কিন্তু উইল ওদের সাথে গিয়ে দেখে সেটা একটা বরফ ঢাকা নদী। তাই বাবার কথা মনে পরে যাওয়ায় উইল কোনভাবেই সেই পথে যেতে রাজি হয় না। অল্টারনেটিভ যে রাস্তা সেটা একটা রেল্ব্রীজ। কিন্তু উইল সেটা দিয়েই যাবে বলে। বাচ্চারা ওকে বোঝাতে না পেরে ওর সাথেই চলতে থাকে। হঠাত করে দেখে ট্রেন আসছে, তারা প্রাণপণে দৌড়াতে শুরু করে। স্লেড ভেঙ্গে টুকরো হয়ে যায়, ছেলেগুলো আর কুকুরগুলো ব্রীজ থেকে পরে বেঁচে যায়। তবে অসুস্থ গাস আর উইল ব্রীজে আটকা পরে, কোন রকমে সাইডে চেপে প্রান বাঁচায়। এরপর অনেক কষ্টে সবকিছু নিয়ে সে ফিরে আসে বিশ্রামাগারে। ওর অবস্থা তখন খুব শূচনীয়, শারীরীক মানসিক উভয়দিকেই। কিংসলে ওর পরিচর্যার জন্য নিয়ে যায়, স্লেডও বানানো হয় নতুন করে। উইল খুবই অসুস্থ থাকে, তাকে ঘুমাতে বলে কিংসলে। উইল বলে তাকে ২ ঘন্টা পর জাগিয়ে দিতে, যেখানে তার মুভ করার মত শরীরের অবস্থা ছিল না। কিন্তু সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, এই রেস সে শেষ করবেই, যাই ঘটুক শেষ পর্যন্ত। মৃত্যু না আসা পর্যন্ত থামতে রাজি না সে কোনভাবেই। কিংসলেও ওর দৃঢ়তার কাছে হার মানে, ওকে ডেকে দেয় দুঘন্টা পরই, বহুকষ্টেই স্লেডে উঠে যাত্রা শুরু করে গভীর রাতেই। তখন কেউ একজন গিয়ে সব প্রতিযোগীদের জাগিয়ে তুলে যে, উইল যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। সেটাই শেষদিন। তাই সবাই তৈরি হয়ে তখনই প্রাণপণে ছুটতে থাকে এবং একে একে উইলকে পেছনে ফেলে যেতে থাকে। যে লোকটা সব সময় উইলের পেছনে লাগত, সে উইলের কাছে পৌঁছে যায়। তারা দুজনই তখন সবচেয়ে পিছিয়ে। লোকটা বলে তার একটা শর্টকাট পথ জানা আছে, উইল নিজেকে পুরুষ মানুষ ভাবলে সেই পথই বেছে নিবে, এটাই জেতার একমাত্র উপায়। সেই পথ থাকে নদীর উপর দিয়ে এবং বেশ বিপজ্জনক, তাই সবাই এভোয়েড করেছে। উইল এইবার থামে, ভাবে কি করবে। নদীকে ঘিরে যে তার ভয়, সেই ভয় তাকে আগাতে দিচ্ছে না, আবার জিততে হবে তাকে সেটা ভেবে সে এই পথ পাড়ী দিতে চাচ্ছে। উইল তখন নেডের দেয়া শেষ উপদেশগুলো স্মরণ করে, When you come to face the thing you fear, let the creator guide you. Trust your dog, trust yourself. এই শব্দগুলো তখন তাকে এই দুর্গম পথ পাড়ি দিতে উৎসাহিত করে। আর কুকুর গাসও তখন নিজে থেকে লিড দেয়ার জন্য উঠে দাঁড়ায়, আর উইল চলতে শুরু করে স্লেড নিয়ে। তার সাথের লোকটা তখন কুকুরদেরকে জোরে চলার জন্য অবিরাম প্রহার করে চলছিল, এক সময় কুকুরগুলো ক্ষীপ্র হয়ে উঠে তার উপর এবং উলটো আক্রমণ চালায়। উইল তখন কুকুরদের ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দেয় এবং বেঁচে যায় লোকটা। আর উইল এগিয়ে যায় তার লক্ষ্যের দিকে। লাস্ট সীমানায় পৌঁছে যাওয়ার আগ মুহূর্তে আর ব্যালেন্স রাখতে না পেরে কাত হয়ে পরে যায় উইল, কুকুরগুলোও বসে পরে। এদিকে উইলের জন্য তার পরিবারের সবাই অপেক্ষমাণ আর দর্শকরাও সবাই উইলের জয় দেখতে চায়। সবাই তখন কষ্ট পাচ্ছিল উইলের পরে যাওয়া দেখে, চাচ্ছিল উইল আবার উঠে দাঁড়াক। উইল চেষ্টা করছিল পারছিল না। এদিকে নেড তখন উইলের বাবার সেই বাঁশির সুরে শিস বাজাতে শুরু করে, আস্তে আস্তে সেখানে উপস্থিত সকলে সেই শিস বাজাতে শুরু করে, পুরো সেন্ট পল তখন পবিত্র সেই সুরে মোহিত, গাস তখন প্রভুর সেই সুর শুনে আর বসে থাকতে পারে না, অস্থির হয়ে যায় সব কুকুরদের তুলে স্লেড নিয়ে ছোটার জন্য। গাসের ঝাপাঝাপিতেই তখন সব কুকুর সচল হয়, উইলও অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায়। অন্য প্রতিযোগীরাও সেই মুহূর্তে পৌঁছে যায়, কিন্তু উইলই সবার আগে কাঙ্ক্ষিত মাইলস্টোনে পৌঁছে যায়। হার না মানার মানসিকতা এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরেই জয় হয় নিষ্ঠুর প্রকৃতি আর জীবনের সাথে যুদ্ধ করে যাওয়া দৃঢ়চিত্তের আদর্শ এক তরুণের। উইলের জয় আমাকে কাঁদিয়েছিল, অনুভব করতে পারছিলাম ওর সেই চাওয়ার শক্তিটা এবং এতো আত্মত্যাগের পর জয়ের আনন্দটা। মানুষ চাইলে কি না পারে! আমার মনে হচ্ছিল শুধু, হ্যাঁ, আমিও পারব তবে। উইল হতে হবে “আয়রন উইল” এর মতো, যাকে কোনো বাঁধাই আটকে রাখতে পারবে না, মৃত্যু ছাড়া পিছুহটার চিন্তাও করা যাবে না! (এই মুভির একটা অংশও আমি লেখা থেকে বাদ দিতে পারছিলাম না, কি করে যেন ২৬০০ শব্দ লিখে ফেলেছি!! তারপরও সব দৃশ্যপট লেখায় ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব। অনুভব করতে হলে মাস্ট দেখতে হবে। ) Like this:Like Loading... Related Spread the lovemoremore