শিক্ষার্থীদের হতাশা দূর করতে পারে ই-কমার্স ক্লাব (E-commerce Club) ই-কমার্স শিক্ষা by খাতুনে জান্নাত আশা - September 15, 2021September 15, 20214 Spread the lovemore শিক্ষার্থীদের হতাশা দূর করতে পারে ই-কমার্স ক্লাব (E-commerce Club) বিশ্ববিদ্যালয় বা সমপর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-কমার্স ক্লাব (E-commerce Club) গড়ে তোলা জরুরী। কারণ ই-কমার্স ক্লাব শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ারের পথ তৈরী করে দিতে দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে, দূর করতে পারে শিক্ষার্থীদের গভীর হতাশা। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যাওয়ার পরই মূলত শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্যারিয়ারের চিন্তা উদয় হয়। কোন ক্যারিয়ার বেছে নিবে তা ভাবতে ভাবতেই গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হয়ে যায়, তারপর শুরু হয় বেকারত্বের বোঝা কাঁধে চেপে হতাশাপূর্ণ জীবন। আবার কিছু শিক্ষার্থীদের হতাশার শুরুটা হয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশের আগে থেকেই। যেমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল। নিজের শিক্ষাজীবনের উদাহরণ দিতে একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাই – মেডিকেল কোচিং করে চান্স না পেয়ে, একদমই স্বপ্নহীন অবস্থায় গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে, ভর্তি হই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির বিবিএ ডিপার্ট্মেন্টে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তখন মনে হত মূল্যহীন। কি করছি , কি করব এসব ভেবে কোনো কূল কিনারা করতে পারতাম না। মনে হত জীবন হয়ত এখনেই থেমে গিয়েছে, ভালো কিছু করার আর সুযোগ পেলাম না হয়ত আর। এমন চিন্তা আসাটাই স্বাভাবিক, কারণ আমার চারপাশের মানুষগুলোর থেকে সব সময় এমন হতাশার বানীই শুনতাম আমি। কোথায় ভর্তি হয়েছি জিজ্ঞেস করলে যখন বলতাম, ওমুক ভার্সিটির বিবিএ তে ভর্তি হয়েছি। তখনই উত্তর শুনতে হত, “সায়েন্স থেকে কেনো বিবিএ তে গেলে! এর ভবিষ্যৎ কি? আর তাও ভালো রেঙ্কিং এর ভার্সিটিতে কেনো ভর্তি হওনি? এই ভার্সিটির নামই তো শুনিনি আগে!” সব মিলিয়ে বেশ কঠিনরূপে নেগেটিভিটি ভেতরে ঢুকে যাওয়ায় পড়াশোনার দিকেও একদম মন দিতে পারতাম না। ফলস্বরূপ, প্রথম কয়েক সেমিস্টারের সিজিপিএ একদম ভালো হল না। আর যখন থেকে বুঝতে শুরু করলাম, স্টাডিতে মনোযোগী হলাম। ততক্ষণে দেরী হয়ে গিয়েছিল, সিজিপিএ আর আশানুরূপ হল না শেষের দিকে খুব ভালো রেজাল্ট করার পরও। সেই সাথে আমার ইউনিভার্সিটির টিচার হওয়ার স্বপ্নটাও ফিকে হয়ে গেল! তবে এর ভেতরে পুরো ভার্সিটি লাইফে আরও অনেক কিছু করতে চেয়েছি, শুরু করেছি এবং থেমে গিয়েছি। আসলে শিক্ষার্থী হিসেবে খারাপ ছিলাম না খুব। মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন সবারই তাই এক্সপেকটেশন অনেক বেশি ছিল আমাকে ঘিরে। কিন্তু একদমই সেই সব আশা ভরসার ছিটেফোঁটাও পূরণ করতে পারিনি আমি। তাই খুব অপরাধী লাগত নিজেকে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি, বাবার থেকে লাখ লাখ টাকা নিতে হচ্ছে ভেবে নিজেকে খুবই নগণ্য একজন মনে হত সব সময়। শুধু ভাবতাম, ইস! যদি উপার্জন করার সুযোগ পেতাম! টিউশন খুঁজতাম, কিন্তু পেতাম না। অনেক খুঁজে একটা টিউশন পেয়েছিলাম, আর কয়েক মাস পড়িয়েছিলাম। আইটি সেক্টরের প্রতি আকর্ষন ছিল। ভাবলাম তবে ফ্রিলান্সিং করার সুযোগ করতে পারি কিনা দেখি। এই ভেবে নিজে নিজেই প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডিজাইনিং, HTML, CSS ইত্যাদি বিভিন্ন কিছু শেখার চেষ্টা করতাম। সম্পূর্ণ শেখা শেষ করতে পারিনি কোনোটাই, পর্যাপ্ত মোটিভেশনের অভাবে। নিজের হাত খরচের টাকা জমিয়ে, কিছু বুঝে না বুঝেই প্ল্যানিং ছাড়া হুট করে একবার রুমমেটদের নিয়ে অনলাইন বিজনেসও শুরু করে দিয়েছিলাম। সেটাও যেমন এলোমেলো ভাবে শুরু করেছিলাম, তেমনি ভাবে গুটিয়ে নিতে হয়েছিল। অযথা জমানো টাকাগুলোও নষ্ট করেছিলাম আর কি। আরও অনেক ভাবেই নিজের জীবনের পরিবর্তন করতে চেয়েছি, হতাশা দূর করে নিজের একটা ভ্যালু তৈরী করতে চেয়েছি, কিন্তু আরও বেশি হতাশা সেই সবের বিনিময়ে পেয়েছি। আসলে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, আমার মত এমন অবস্থায় দিন যাপন করে কম হলেও ৯০% বা তার বেশি শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর জীবনের মানে খুঁজতে যেয়ে খেই হারিয়ে ফেলে, পথ খুঁজে পায় না হাজার চেষ্টা করেও। কারণ সঠিক পথটা দেখানোর মত অগ্রগামী কেউ হতাশাগ্রস্তদের জন্য থাকে না। আর আমাদের সমাজ ব্যবস্থার কথা তো না বললেই নয়। কিছু নির্দিষ্ট পেশাকেই এই সমাজ সম্মানের স্থানে বসিয়েছে, আর বাদ বাকিরা সমাজের চোখে লুজার ছাড়া কিছু নয়। এই পরিস্থিতি থেকে সমাজব্যবস্থাকে বের করে আনতে, হতাশাগ্রস্ত তরুণ প্রজন্মকে জীবনের সঠিক পথটা খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে ই-কমার্স ক্লাব(E-commerce Club)। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ই-কমার্স ক্লাব (E-commerce Club) সংঘটিত হলে আমার মতো এমন সব শিক্ষার্থীরা জীবনের নতুন মানে খুঁজে পেত, হারিয়ে ফেলা নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেত, অনাবিষ্কৃত আমিকে নতুনরূপে আবিষ্কার করতে পারত। ই-কমার্স ক্লাব(E-commerce Club) কিভাবে আমার মতো শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে পারে? অনেক ভাবেই পারে। কারণ ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রী একটা বিশাল প্লাটফর্ম। এখানে জায়গা হবে না এমন কোনো মানুষ নেই। আপনি কোন বিষয়ে পরছেন, কোন ভার্সিটিতে পরছেন এসব কোনো কিছুই এখানে প্রয়োজন পরবে না। আপনি একজন মানুষ, আপানার মাঝে কিছু না কিছু স্বকীয়তা আছে, বিশেষ গুন আছে, যা আপনি বিকশিত করতে পারবেন এই ই-কমার্স ক্লাবের মাধ্যমে। ই-কমার্স ক্লাব(E-commerce Club) প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীকে তাদের নিজ নিজ দক্ষতা আর ভালো লাগাকে এর মাধ্যমে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিবে। শিক্ষার্থীরা ক্লাবের বিভিন্ন এক্টিভিটিতে সম্পৃক্ত থেকে নিজেদের ক্রিয়েটিভিটিকে কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরী করে নিতে পারবে। যেমন, কেউ কেউ হয়ত ভালো লিখতে পারে বা লিখতে ভালোবাসে, ই-কমার্স ক্লাব তাদেরকে ভালো কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য গাইড করতে পারে। তারা টিমওয়াইজ নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারে নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে। ক্লাবের নিজস্ব নিউজলেটার বা ব্লগ ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারে, যেখানে লিখতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা নিয়মিত নিজের ভালো লাগার বিষয়, নিজ অঞ্চলের বিখ্যাত পণ্য, ইতিহাস ঐতিহ্য, বিভিন্ন দেশীয় পণ্য, বা অন্যান্য যে কোনো বিষয় নিয়ে লিখতে পারবে। এতে কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে তারা দক্ষ হবে, একি সাথে অঞ্চলভিত্তিক ই-কমার্স তথ্য সমৃদ্ধ হবে। আর পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা তাদের এই কন্টেন্ট লেখার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নিজেরা বিজনেসেও ভালো করতে পারবে, আবার কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে ভালো কোনো কোম্পানিতে জবও করতে পারবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব ফিল করছি ক’দিন ধরেই যে, আমার ইউনিভার্সিটির সময়টায় আমি ই-কমার্স ক্লাবের মতো কিছু পেলে কতটা হেল্পফুল হত আমার জন্য। নিজেকে হয়ত আরও অনেক ধাপ এগিয়ে রাখতে পারতাম। যে জিনিসগুলো এখন চর্চা করে শিখছি গ্র্যাজুয়েশনের পর, তা সেই শিক্ষাজীবনেই শিখতে পারতাম এবং ক্যারিয়ার লাইফে ডেফিনিটলি অনেকটা এগিয়ে থাকতাম। ই-কমার্স ক্লাব (E-commerce Club) শিক্ষার্থীদের বুঝতে সাহায্য করবে- You’ve thousands of opportunities to prove yourself, so don’t be disappointed. Like this:Like Loading... Related Spread the lovemoremore
ই-কমার্স ক্লাবের ফলে তারা বাস্তব অভিজ্ঞতার মুখমুখি হবে। তাই নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি করলে ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারবে। চাকরি, ব্যবসা, ফ্রিলান্সিং বা কনসালটেন্সি করেও আয় করতে পারবে। Reply
জ্বি ভাইয়া একদম তাই। অনেক সুযোগ তৈরি হত শিক্ষার্থীদের জন্য। ই-কমার্স ক্লাবের মাধ্যমে যার যতটুকু এবিলিটি আছে, সেটুকুই কাজে লাগিয়ে অনেক ভালো কিছু করতে পারত তারা। Reply
জি আপু ঠিক বলেছেন।দারুণ উপস্থাপনার মাঝে বেশ ভালো কিছু জানতে পারলাম। আমারো ইউনিভার্সিটি লাইফের কথা মনে পড়ে গেলো। আমরা সবাই যদি যার যার ইউনিভার্সিটিতে সন্ধান পেতাম এমন ই-কমার্স ক্লাবের তাহলে এতোটা পিছিয়ে হয়তোবা কখনো থাকতে হতো না। Reply
জ্বি আপু, সত্যিই তাই। ই-কমার্স ক্লাবের মতো কিছু পেলে জীবনটা অনেক বদলে যেত হয়ত আরও আগেই। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু 😊❤️❤️ Reply