কিশোর ক্লাসিক রিভিউ(জেন আয়ার) বুক সামারি & রিভিউ by খাতুনে জান্নাত আশা - July 25, 2021August 2, 20210 Spread the lovemore “জেন আয়ার” শার্লট ব্রনটি ছোট্ট জেন আয়ার মা-বাবাকে হারিয়ে মামীর কাছে আশ্রয় পেল ঠিক, কিন্তু শান্তি পেল না। প্রতি মুহুর্তে নীরবে অত্যাচার, নির্যাতন, কটু কথা সইতে সইতে এক সময় অসুস্থ হয়ে পরল সে। মামী অকে আর সহ্যই করতে পারছিল না যেন, তাই পাঠিয়ে দিল বহুদূরের এতীমদের এক স্কুলে। জেন প্রথমে এই বাড়ি ছাড়তে পারছে বলে বেশ খুশিই হল, কিন্তু সেখানে গিয়ে জীবনের আরেক কঠিন তম অধ্যায় শুরু করতে হলো তাকে। লাউড স্কুলের শিক্ষার্থীদের খুব কড়া নিয়মের মধ্যে থাকতে হত, ঠিক মতো খাবার দেয়া হত না, বাচ্চাদের একসাথে মিলেমিশে খেলাধুলা করার মাঝেও নিষেধাজ্ঞা আরূপ করা হত, তার উপর সামান্য ব্যাপারেই দেয়া হত শাস্তি। এর মাঝেও জেন সেখানে তার একজন বন্ধু খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু বিধিবাম, সেই বন্ধুটিও হঠাৎ ভীষণ অসুস্থতায় মৃত্যুবরন করল। লাউড স্কুলে আরেকজন ছিল জেনকে খুব ভালোবাসত মিস টেম্পল, জেন ওকে তাই ওর মায়ের মতোই ভাবত। হঠাৎ করেই লাউডে টাইফাস জ্বরের আক্রমণ হলো, আর অনেক শিক্ষার্থী মৃত্যুবরণ করল, কিন্তু বেঁচে গেল জেন আয়ার। লাউডের উপর বাইরে থেকে চাপ আসল, এতো শিক্ষার্থী এভাবে মারা যাওয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হলো ওরা, ধনী ব্যক্তিরা অনুদান পাঠাল এখানকার খাবার দাবার, আর অন্যান্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের জন্য। লাউডের অবস্থা আগের থেকে কিছু ভালো হল তখন। সেই ছোট্ট জেন আয়ার তরুনী হলো, শিক্ষার্থী জীবন শেষ করে লাউডের টিচার হিসেবে দায়িত্ব পালন করল অনেকদিন। জেনের অন্যতম প্রিয়জন মিস টেম্পলও বিয়ে করে লাউড ছেড়ে চলে গেলেন। তাই সে এখানে থাকার জন্য আর আকর্ষন অনুভব করল না। নতুন চাকরির আবেদন করল, আর ছোট্ট এক মেয়ের গভর্নেন্সের চাকরি জুটে গেল ওর থর্নফিল্ড হলে। থর্নফিল্ড হলের মালিক মিস্টার রক্সটন এখানে বাস করেন না, বাড়ির সব দায়িত্ব পালন করেন মিসেস ফায়ারফক্স। উনিই রক্সটনের পালিত কন্যা মিস এডেলের দেখাশোনা করেন। মিস এডেলকেই এখন থেকে জেন পড়াবে। জেন আয়ার থাকতে শুরু করল সেই বিশাল বাড়িতে, ছাত্রীকে নিয়েই ব্যস্ত সময় কেটে যায় তার। মিস এডেলও জেনকে টিচার হিসেবে পেয়ে খুশি। সবই ঠিকঠাক চলতে লাগল, শুধু জেন মাঝে মাঝে এই বাড়ির কোনো এক বদ্ধ ঘর থেকে হাসির আওয়াজ শুনতে পেয়ে ভীত হত। হঠাৎ একদিন রাতে আগমন ঘটল বাড়ির কর্তা রক্সটনের, মিস জেনের সাথে উনার দেখা হওয়ার ব্যাপারটা বেশ মজার। রাতের আঁধারে নির্জন রাস্তায় এক মেয়ে হাঁটছে, অপর পাশ থেকে ঘোড়া ছুটিয়ে আসছে মাথায় হ্যাট পরা এক অচেনা যুবক, আর মেয়েটাকে ক্রস করে সামনে যেয়েই ঘোড়া শুদ্ধ গিয়ে পরল রাস্তার বাইরে। হাহাহা… অতপর মেয়েটির কাঁধে ভর করে তাকে আবার ঘোড়ায় গিয়ে চরতে হল। কেউ কারো পরিচয়ও জানতে পারল না, সেই মেয়েটা জেন, সেই ঘটনার পরদিন বাড়ির ভেতরে তাদের আবার দেখা হওয়ায় পরিচিত হল এই সেই বাড়ির কর্তা রক্সটন। প্রেমটা কিন্তু ওদের সেই প্রথম দেখাতেই হয়েছিল, কিন্তু দুজনেই এর মাঝে কত নাটকই না করে গেল, আর কত ঘটনাই তাদের ঘিরে ঘটল!! এর মাঝে আবার এতো বছর পর জেনের মামী অসুস্থ বলে খবর পাঠানো হল। ছোট্ট জেনকে লাউডে পাঠানোর পর এতো বছর কেটেছে, এই প্রথম ওবাড়ি থেকে ওর খোঁজ করা হল। জেন তারপরও গেল সে বাড়ি। মামী ওকে অসুস্থ শরীর নিয়েও অনেক বাজে কথা শুনিয়ে তবেই মরল, মহিলা যে জেনকে অত্যাচার করে, ওর ক্ষতি চেয়ে নিজে কখনো সুখী হতে পারেনি এটা স্পষ্ট ছিল৷ যাই হোক, মামীর শেষকৃত্য শেষে আবার ফিরে এলো থর্নফিল্ডে। যেদিন জেন ফিরে এলো ঠিক সেদিনই ওকে বিয়ের প্রস্তাব দিল রক্সটন, জেনও ওকে কতটা ভালোবাসে বুঝিয়ে দিল, যদিও সেটা রক্সটন আগেই বুঝতে পেরেছিল। যেদিন বিয়ে করবে সেদিন ঘটল বিপত্তি!! একজন উকিল গীর্জায় বিয়ের আসরে এসে অভিযোগ করলেন যে, রক্সটনের আগের স্ত্রী রয়েছে, বেঁচে আছে, এবং থর্নফিল্ডেই আছে!! এক স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় আরেক বিয়ে করা আইনত নিষিদ্ধ। সবাই অবাক হলো – বিয়ে স্থগিত হলো, বাড়ির বদ্ধ ঘরে রক্সটনের পাগল স্ত্রীর অস্তিত্ব পাওয়া গেল। রক্সটনের আসলে দোষ নেই কোনো, ওর বাবা টাকার লোভ করে ধনী ব্যক্তির এক পাগল মেয়েকে ছেলের বউ করে এনেছিলেন!! জেন ভীষণ দুঃখ পেয়ে সে রাতের আঁধারেই থর্নফিল্ড থেকে বেরিয়ে গেল একদম খালি হাতে। সাথে টাকা পয়সা না থাকায় দীর্ঘ সময় না খেয়ে থেকে, একটানা হেঁটে জ্ঞান হারিয়ে পরে গেল এক বাড়ির সামনে। ওই বাড়িতেই তার নতুন আশ্রয় হলো, সে বাড়ি কর্তা কর্তী নতুন একটা স্কুল করে সেটার দায়িত্ব দিয়ে দিলেন জেন কে। আবার জেন সেখানে ভালো ভাবেই থিতু হলো, তবে রক্সটনকে ঠিক মনে পরত তার। একদিন সে জানতে পারল ওর চাচা মৃত্যুর পূর্বে ওর নামে ২০ হাজার পাউন্ড লিখে দিয়ে গেছেন, এই খবর দাতা ছিল তার ফুপাত ভাই যাকে সে এতোদিন চিনতে পারে নি। জেন তখন বিশাল ধনী, কিন্তু তার এই সম্পদ সে ওর ফুপাত ভাই বোনদের মাঝেও সম বন্টন করে দিয়ে দিল। ওর সেই ফুপাত ভাই জেন কে বিয়ে করতে চাইল, আর সেদিনই জেন বুঝল রক্সটন ছাড়া সে কিছু ভাবতে পারে না, আবার তাই ছুটল থর্নফিল্ডের উদ্দ্যেশ্যে রক্সটনের খুঁজে। গিয়ে দেখল এক ধবংসস্তুপে পরিণত হয়েছে সেটা। এলাকায় খোঁজ করে জানল যে, রক্সটনের পাগল স্ত্রী বাড়িতে আগুন ধরিয়ে নিজে আত্মহত্যা করেছে আর রক্সটনও সেই ঘটনায় ওর একটা হাত হারিয়েছে, দুইটা চোখও নষ্ট হয়ে গেছে। জেন সব শুনে পাগলের মতো ছুটল যেখানে রক্সটন কে পাবে সেখানে। ওর কাছে যেয়ে ওকে দেখে খুবই অসহায় বোধ করল জেন, কিন্তু এতোদিন পর আবার ফিরে পেয়ে ভালোবাসায় সিক্ত হলো দুজন। এইবার তাদের বিয়ে কেউ আর আটকাতে পারল না। রক্সটন ধীরে ধীরে এক চোখের দৃষ্টি ফিরে পেল, ওদের ঘর আলো করে ফুটফুটে এক বাবু এলো। অতৃপ্ত দুই আত্মা মিলিত হয়ে অবশেষে সুখের দেখা পেল। জেন চরিত্রটা আমাকে খুব আকর্ষন করেছে, ওকে আমার একজন স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্ববান এক নারী চরিত্র মনে হয়েছে, যে ভাঙবে তবু মচকাবে না। আর অবশ্যই উদার মনের মানুষ, যে ভালোবাসার মানুষটার পঙ্গুত্বকেই আপন করে নিয়েছে। এর জন্য ওর প্রতি আমার শ্রদ্ধা কাজ করছে৷ মেয়েটাকে সুখী হতে দেখে খুব ভালো লাগল আমার। কষ্ট সব মানুষের জীবনেই আসে কম বেশি, তবে দিন শেষে সুখী হতে পারাটাই বিশাল ব্যাপার। আর এই সুখী হওয়ার জন্য কিন্তু অনেক কিছুর দরকার হয় না৷ ভালোবাসা!! হ্যাঁ অবশ্যই!! শক্ত একটা ভালোবাসায় জড়ানো সম্পর্ক অবশ্যই দরকার হয় সুখী হওয়ার জন্য। Like this:Like Loading... Related Spread the lovemoremore