You are here
Home > আরিফা মডেল > ই-কমার্স বদলে দিতে পারে হালুয়াঘাটের তাঁতশিল্পকে

ই-কমার্স বদলে দিতে পারে হালুয়াঘাটের তাঁতশিল্পকে

হালুয়াঘাটের তাঁত
Spread the love

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের তাঁতশিল্প

তাঁত আছে, তাঁতি আছে কিন্তু প্রচারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে হালুয়াঘাটের তাঁতশিল্প। ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ সমৃদ্ধ তাঁতশিল্প রয়েছে, এটা খুব কম মানুষই জানেন। কারণ এই এলাকার তাঁতশিল্প নিয়ে পর্যাপ্ত মিডিয়া প্রচার এবং তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। তাই প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই অঞ্চলের ঐতিহ্য বহনকারী তাঁত এবং তাঁতিরা।

কিছুদিন আগে টেকজুম টিভিতে লেখা একটা নিউজের মাধ্যমে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলায় তাঁতশিল্প রয়েছে, তবে তাঁতগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রচারের অভাবে এবং চাহিদা কমে যাওয়ায়। সেই নিউজের ভিত্তিতে ২০ মে, ২০২১ তারিখে সরেজমিনে ভিজিট করে দেখতে পাওয়া যায় তাঁতি এবং তাঁতশিল্পের প্রকৃত চিত্র।

সীমান্তবর্তী উপজেলা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট। এই এলাকার তাঁতিদের গল্পটা বেশ পুরোনো। স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই এই উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম পরিচিত হয়ে উঠেছিল হ্যান্ডলুম তাঁতিদের আবাস হিসেবে।

পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় কয়েকশ তাঁত ছিল, যেগুলো তাঁতে বোনা হত আদিবাসী এবং সাধারণ মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের পোশাক। এই তাঁতগুলোকে কেন্দ্র করেই জীবন জীবীকা নির্বাহ করত কয়েক হাজার মানুষ। এসব তাঁতে প্রধানত গারো সম্প্রদায়ের বিভিন্ন পোশাকসহ সাধারণ মানুষদের জন্যও শাড়ি, লুঙ্গী, গামছাসহ বোনা হত বিভিন্ন ধরণের শীতবস্ত্র।

কয়েকজন তাঁতিদের সাথে কথা বলে জানা যায় এই অঞ্চলে তাদের আগমন ইতিহাস। স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৮ সালের শেষের দিকের কথা। জামালপুরের পিয়ারপুর থেকে তিনটি তাঁতি পরিবার এসে নতুন আবাস গড়েছিল হালুয়াঘাট উপজেলার ঘোষবেড় গ্রামে। সেই তিন পরিবারের তিন কর্তা এবং তাঁতি ইমান আলী, হোসেন আলী আর আমসর আলীর হাত ধরেই এই এলাকার তাঁতশিল্পের সূচনা হয়েছিল। বর্তমানে তারা বেঁচে না থাকলেও তাদের ছেলেদের হাত ধরে এখনো সীমিত পরিসরে বেঁচে আছে এ অঞ্চলের তাঁতশিল্প।

যখন তারা এ অঞ্চলে প্রথম এসেছিল, তখন দেশে তাঁতশিল্পের সুদিন ছিল। তাদের তৈরী তাঁতপণ্যের বেশ চাহিদা থাকায় বাবাদের পাশাপাশি ছেলেরাও ধীরে ধীরে বুনন কাজে সঙ্গী হয়ে যায়। ছেলেদের দেখে তাদের বন্ধুরাও বুনন কাজে আগ্রহী হয়ে শিখতে শুরু করে। এভাবেই এক সময় তিনটি মাত্র তাঁত পরিবার থেকে গড়ে উঠেছিল প্রায় শতাধিক পরিবারের বিশাল তাঁতপল্লী।

ভালোই চলছিল তাদের তাঁতশিল্প। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক এসে পাইকারী বা খুচরো ভাবে কিনে নিত তাদের তৈরী বিভিন্ন তাঁতপন্য। সারাদিন রাত হ্যান্ডলুম তাঁতযন্ত্রের খটখট শব্দ শোনা যেত এই ঘোষবেড় গ্রামে।

তাঁত সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, “২০০০ সালে বিদেশি এনজিও সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন তাদের সাথে কাজ করতে শুরু করে। ওয়ার্ল্ড ভিশনের লক্ষ্য ছিল তাঁতিদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা। তাঁতিদেরকে তাঁত সমবায় সমিতির অফিস করে দেয়া, বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেয়া, উৎপাদিত তাঁতপণ্য কিনে নেয়া সহ বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগীতা করেছিল ওয়ার্ল্ড ভিশন।

২০১৬ সালে এ সংস্থা এই এলাকার তাঁতিদের বোনা শীতের শাল নিয়ে রোহিঙ্গাদের ত্রান সহায়তা দিয়েছিল। তবে সেটাই ছিল এই ঘোষবেড় গ্রামের তাঁতি দের সাথে তাদের সর্বশেষ প্রজেক্ট। ২০১৬ সালে ওয়ার্ল্ড ভিশন এখানকার প্রজেক্ট শেষ করে চলে যাওয়ার পর থেকে হঠাৎ করেই চাহিদা কমে যেতে শুরু করে তাদের উৎপাদিত পণ্যের, পণ্য উৎপাদন বিপণন নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত ফান্ডিং না থাকায় একের পর এক বন্ধ হতে থাকে বিভিন্ন তাঁত।

আর তাঁতি রা বুনন কাজ ছেড়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য বেছে নিতে থাকে বিভিন্ন পেশা এবং কাজ। কেউ কৃষি কাজ করছে, কেউ বা হাঁস মুরগী আর গবাদি পশু পালন করে কোনো রকমে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে।“

অবহেলিত তাঁত ঘর আর তাঁত যন্ত্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত পরে থেকে এখন জং ধরে গিয়েছে, মাকড়সার জাল বিস্তার করেছে। আর স্বল্প কিছু তাঁতে শুধু বোনা হচ্ছে এখন গারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের পোশাক দকশাড়ি, দকমান্দা, এছাড়াও শীতের শাল, গামছা, লুঙ্গী, কম্বল, বিছানার চাদর ইত্যাদি।

তবে তাঁতিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যন্ত এই গ্রামাঞ্চলে তাদের নিয়ে কাজ করার মতো কেউ কদাচিৎ আসেন। ৪-৫ বছর আগে পর্যন্তও তাঁতপণ্য বোনে বেশ ভালো ভাবেই চলত তাদের সংসার, কিন্তু বর্তমানে তারা অর্ডার পান না বলেই বাধ্য হয়ে অন্য কাজের সন্ধান করতে হচ্ছে। আর জন্মসূত্রেই তারা তাঁতি হওয়ায় হঠাৎ করে অন্য পেশায় যাওয়াটাও তাদের জন্য বেশ কঠিন বলেই সহজ কোনো জীবীকা নির্বাহের উপায় খুঁজে নিয়ে তারা কোনো রকমে বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহ করে চলেছে।

হালুয়াঘাটের উত্তর মনিকুড়া গ্রামের তাঁতি মোহাম্মদ মোস্তাকিম আমাদের জানান, তিনি এখন যে তাঁতে কাজ করছেন এই তাঁতের মালিক ছিলেন তার বাবা শাহাদাত হোসেন। শাহাদাত হোসেন জন্মসূত্রে সিরাজগঞ্জের। আনুমানিক ২৫ বছর আগে উওর মনিকুড়া নিজের জীবিকা নির্বাহ করার জন্য নিজের বাড়ির উঠানেই তাঁতের কাজ শুরু করেন। কিন্তু শাহাদাত হোসেন ২ বছর আগে মারা গেলে সেই তাঁতের দায়িত্ব নেয় তার ছেলে মোস্তাকিম। তাদের তাঁত ঘরে চলমান ৪টা হ্যান্ডলুম তাঁত রয়েছে।

বর্তমানে ই-কমার্সের বদৌলতে তাঁতের পণ্যের চাহিদা বাড়লেও ই-কমার্সের ছোঁয়া এখনো লাগেনি হালুয়াঘাটের এই তাঁতপল্লীতে। মোস্তাকিম জানান, এখন কারিগরের অভাব ও সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা ঠিক মতো কাপড় বুনতে পারছে না।একটা পোশাক বুনন করার পর সেই পোশাকের খরচের তুলনায় বিক্রি হয় কম টাকায়। চাহিদা তাই তেমন নেই বলে জানালেন তিনি।

তারা সাধারণত স্থানীয় বাজারগুলোতে নিজেদের তৈরি করা পোশাকগুলো বিক্রি করে, মাঝে মাঝে সেগুলো দূর্গাপূর নিয়েও বিক্রি করে থাকে। তবে ই-কমার্স তো নয়ই বরং আশেপাশের শহরগুলোতেও তারা তাঁতে তৈরি পন্যগুলো পৌঁছে দিতে পারছেন না বিপণন আর বাজারজাতকরণে তাদের খুব একটা আইডিয়া না থাকায়।

প্রচারের অভাবে এই তাঁতগুলো উঠে দাঁড়াতে পারছে না। তাদের এই তাঁতে গামছা, শীতের চাদর, ওরনা ও আদিবাসীদের পোশাক তৈরি করেন। তাঁত পণ্যের চাহিদা কম থাকায় তারা অনেকগুলো তাঁত বিক্রি করে দিয়েছে, অনেকগুলোতে মরিচা পরে আছে, আবার অকেজো কিছু তাঁত পরে আছে। আর্থিক সংকট, চাহিদা কম ও কারিগরের অভাব সব মিলিয়ে বলা যায় বর্তমানে বেশ সূচনীয় অবস্থায় আছে এই তাঁতশিল্প এবং এর কারিগররা।

মোহাম্মদ মোস্তাকিম আমাদের আরো জানায় সরকারি বেসরকারি পর্যায় থেকে যদি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং বেশী বেশী প্রচার করা হয় তাহলে তাদের হারিয়ে যাওয়া এই তাঁতপল্লীর সেই পুরোনো রূপ আবারো ফিরে আসবে। ফিরে আসবে তাদের গ্রাম জুরে সেই দিনভর তাঁতের সেই খটখট শব্দ।

ঘোষবেড় গ্রামের আফতাব উদ্দীনের স্ত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায় প্রায় ৪৫ বছর যাবত স্বামী স্ত্রী দু’জনেই তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত। তবে তাদের তাঁত এখন প্রায় অচল অবস্থায় আছে।

একসময় খুব সচল ছিলো তাদের তাঁত,কারিগরও ছিলো কয়েকজন। আফতাব উদ্দীনের স্ত্রীর সাথে কথা বলতে গেলে তার কন্ঠে ঝরে পরে তীব্র হতাশার বানী। বিগত কয়েকবছর যাবত তাদের তাঁত পণ্যের চাহিদা কম,আর্থিক সংকটে তাদের পরিবারের স্বাভাবিক খরচ পর্যন্ত তারা মিটাতে পারছে না। ফলে তাঁতের কাজ কমিয়ে দিয়ে অন্য পেশায় মনোযোগ দেওয়া শুরু করেছেন, কোনো রকমে চলছে সংসার। বর্তমানে তারা টুকটাক অর্ডার পেলে কাজ করেন।

তিনি বলেন, বংশগত ভাবেই তারা তাঁতের সাথে জড়িত, এই কাজই তারা ভালো জানেন। শুধু মাত্র মূলধনের অভাবে অচলাবস্থায় ফেলে রাখতে হয়েছে তাদের তাঁতগুলোকে। আর্থিক সহায়তা পেলে ও তাদের পণ্যের চাহিদা যদি আবার বেড়ে যায় তাহলে তাদের তাঁতপণ্যের কাজে আবারো মনোযোগ দিতে পারবেন এবং নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

আর এও বলেন বিভিন্ন সময় অনেকে এসে তাদের এই দুর্দশা দেখে যায়, সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে যায়, কিন্তু কেউ আর তাদের সাহায্য করে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলতে এগিয়ে আসে না। তারা তাদের তাঁতগুলোতে অর্ডার পেলে শীলের শাল,আদিবাসীদের পোশাক,ওরনা ও গামছা তৈরি করেন দেন।

আমাদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, উদ্যোক্তারা যদি চায় তাহলে অর্ডার করে তাদের কাছ থেকে পণ্য তৈরি করে নিতে পারবেন।এতে তাদের তাঁতের পণ্যের চাহিদা বাড়বে ও তাদের তাঁত আবার আগের রুপে ফিরে আসবে।

তাঁতিদের থেকে পাওয়া অনেক অভিযোগ থেকে প্রধান যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে তা হল, তাদের বিপণন ব্যবস্থা এবং বাজারজাত করার মতো সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত নয়, প্রয়োজনীয় মূলধন নেই বলে নিজ উদ্যোগে কাজ করে যেতে পারছেন না।

একটা তাঁতে একসাথে এক থেকে দেড়শ তাঁত পণ্য বোনা হয়ে থাকে, তাদের উৎপাদন ব্যাপক পরিসরেই করতে হয়। সেই অনুযায়ী যদি চাহিদা বাড়ে তাহলে তাদের উৎপাদন করতে কোনো অসুবিধা হবে না।

তবে সমস্যা এটাই যে চাহিদা বাড়ছে না পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবে। মিডিয়ায় প্রচার যত বেশি হবে এই এলাকার পাশাপাশি এর বাইরের ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারাও জানতে পারবে এই তাঁতশিল্প সম্পর্কে এবং এখান থেকে সোর্সিং করতে আগ্রহী হবে। এভাবেই হালুয়াঘাটের তাঁতশিল্প ময়মনসিংহ অঞ্চলের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে।

সুতার দাম বেড়েছে, বেড়েছে কারিগরদের মুজুরী, সবমিলিয়ে হ্যান্ডলুম তাঁতে বোনা এসব পণ্য উৎপাদনে অনেক বেশি খরচ হয়ে যায়। কিন্তু ভ্যালু এড করে সেটা বিক্রি করতে গেলে মানুষ কিনতে চায় না বেশি দামের কারণে। যেখানে বিদেশী পন্য বা পাওয়ারলুমে উৎপন্ন পণ্য কম দামে পেয়ে যাচ্ছে গ্রাহকরা, সেখানে বেশি দামে হ্যান্ডলুম পণ্য কেন কিনবে এমনটাই ছিল তাঁতি দের অভিমত।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিত্য নতুন আধুনিক ডিজাইন প্রতিনিয়ত আসছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী তাঁতিরা নতুন ডিজাইনগুলো তৈরী করে দিতে পারছেন না উপযুক্ত সাপোর্টের অভাবে। ই-কমার্স উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীরা যদি তাদেরকে ডিজাইনের সাপোর্ট তাদের দেয়, তবে তারা সেই অনুযায়ী বুনন করে দিতে পারবে যে কোনো আকর্ষনীয় ডিজাইনের তাঁতের পোশাক। আর তবেই টিকে থাকতে পারবেন তারা বলে ভাবেন তাঁতি শফিকুল ইসলাম।

হালুয়াঘাটের তাঁত শিল্পকে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে তুলে আনতে হলে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।এই তাঁতপল্লীকে ই-কমার্সের আওতায় নিয়ে আসলে হলে সবার আগে উদ্যোক্তাদের এসব তাঁতিদের নিয়ে কাজ করতে হবে। তাঁতগুলো আবার আগের মতো সচল হয়ে গেলে ময়মনসিংহ সহ সারাদেশের উদ্যোক্তাদের এখান থেকে পণ্য সোর্সিং সহজ হবে। বিশেষ করে ময়মনসিংহের উদ্যোক্তারা পণ্য সোর্সিং এ সুবিধা করতে পারবে এবং এসব পণ্য ই-কমার্সের মাধ্যমে বিদেশে ছড়িয়ে দিতে পারবে।

ফলে হালুয়াঘাটের তাঁতের তৈরি পণ্যের চাহিদা বাড়বে,এতে যেমন উদ্যোক্তাদের পণ্য সোর্সিং এ সুবিধা হবে তেমনি তাঁতপল্লী গুলো সচল হয়ে ওঠবে। হালুয়াঘাটকে তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে সারাদেশে পরিচিত করতে সবচেয়ে জরুরী হল বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে এর প্রচারণা। মিডিয়ার মাধ্যমে সবচেয়ে দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো সহ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন সম্ভব হবে। তাই এই অঞ্চলের তাঁতশিল্প আর তাঁতিদের নিয়ে অনলাইন অফলাইন মিডিয়াগুলোতে প্রামান্য চিত্র তৈরী হলে সবাই সহজে এর সম্পর্কে অবগত হবে এবং তাঁতিদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হবে।

হালুয়াঘাটের তাঁতশিল্পকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া জরুরী। এই এলাকার প্রায় সব তাঁতিরাই হত দরিদ্র, নিরক্ষর হওয়ায় নিজেদের উন্নতিতে নিজেরা খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারে না। তারা জানে না, তাদের শৈল্পিক এই গুনের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হলে কি করতে হবে, কোথায় যেতে হবে। তাই তারা চায় তাদের এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেয়া হোক।

তাঁতিদের এই দৈনদশার কথা প্রশাসনিক পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে তাদের নিয়ে বেশি বেশি মিডিয়া প্রচারের কোনো বিকল্প হতে পারে না। একে বাঁচিয়ে রাখতে অচিরেই সরকারি বেসরকারী ভাবে বিভিন্ন প্রজেক্ট প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যার ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া এই অঞ্চলের তাঁতশিল্পেও লাগবে আশা করা যায় এবং ডিজিটালাইজড পদ্ধতিতেই তারা কাঁচামাল সংগ্রহ, উৎপাদন এবং বাজারজাত করে যেন তাঁতশিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে পারে সেইভাবে চেষ্টা করতে হবে।

এছাড়াও তাঁতিদের জন্য ফান্ডিং এর ব্যবস্থা করা এবং উৎপাদিত পণ্যগুলো সঠিক উপায়ে বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করা হলে তাঁতিরা আবার কাজে ফিরে আসতে আগ্রহী হবে।

আমাদের দেশের ঐতিহ্যগুলোর সমৃদ্ধির পেছনে প্রধান অন্তরায় হল তথ্যের অপ্রতুলতা। বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোনো তথ্য যেমন খুব সহজে জানা যায়, তেমনি জানানোও যায়। যে কোনো তথ্য সবচেয়ে দ্রুত সবচেয়ে বেশি লোকের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিয়েছে ইন্টারনেট।

তবে দুঃখজনক ব্যাপার হল বাংলাদেশের ঐতিহ্য সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব কম তথ্য ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়। কারণ এগুলো নিয়ে ভালো মানের কন্টেন্ট গুগলে নেই। আর তাই হালুয়াঘাটের তাঁতশিল্প সম্পর্কে খুব কম মানুষই অবগত রয়েছে। এরজন্যই এই শিল্প নিয়ে পর্যাপ্ত কন্টেন্ট লিখে ইণ্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে, মানুষকে জানাতে হবে এই এলাকার তাঁত শিল্প কতটা সমৃদ্ধ।

একটা শিল্পকে কেন্দ্র করে বদলে যেতে পারে একটা এলাকার প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রা, সেই সাথে সমৃদ্ধ হতে পারে দেশের অর্থনীতি। হালুয়াঘাটের হারিয়ে যেতে বসা তাঁতশিল্পকে আবার পুরোদমে সচল করতে পারলে কয়েক শত তাঁতি পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা যাবে। তাঁতশিল্পকে কেন্দ্র করে বাড়বে এলাকার লোক সমাগম, সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ী আর উদ্যোক্তারা ভীড় জমাবে পণ্য সোর্সিং করার জন্য। এভাবেই তাতশিল্পকে ঘিরে ধীরে ধীরে জমজমাট হয়ে উঠবে পুরো এলাকা, দেশে উৎপাদিত পণ্যের বিনিময় বৃদ্ধি হবে, সেই সাথে বাড়তে থাকবে জাতীয় জিডিপি।

ময়মনসিংহ জেলার উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীরা জানেই না এই এলাকার তাঁতশিল্পের কথা। তাই অন্যান্য জেলা থেকে পণ্যের সোর্সিং করতে গিয়ে দূরত্বের কারণে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। উদ্যোক্তারা চাইলেই কিন্তু নিজ এলাকার এই তাঁতগুলোকে কাজে লাগিয়ে পণ্য সোর্সিং করতে পারে খুব সহজেই। তাহলে নিজেদেরও যেমন ঝামেলা কমে যাবে, তেমনি বন্ধ তাঁতগুলো আবার সচল হবে, আর নিজের জেলাকেও তাঁতশিল্পের এলাকা বলে সারাদেশে পরিচিত করা যাবে।

লেখকঃ খাতুনে জান্নাত আশা এবং আরিফা খাতুন


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: