You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > রব রয় (কিশোর ক্লাসিক) সামারি রিভিউ-স্যার ওয়াল্টার স্কট

রব রয় (কিশোর ক্লাসিক) সামারি রিভিউ-স্যার ওয়াল্টার স্কট

রব রয় (কিশোর ক্লাসিক)
Spread the love

রব রয় (কিশোর ক্লাসিক)

স্যার ওয়াল্টার স্কট

ক’দিন আগে আমি “রব রয়” নামে একটা মুভি রিভিউ দিয়েছিলাম এবং সেখানে একই নামের কিশোর ক্লাসিক আছে বলে উল্লেখ করেছিলাম। সেই কিশোর ক্লাসিকটা নিয়েই আজ লিখছি, মুভির থেকে এই গল্পটিই অধিক জনপ্রিয়। গতবছর পড়েছিলাম এটি, কাহিনী তাই চোখে অস্পষ্ট ছিল বলে, আবারও পড়ে নিলাম। এইবার আরও বেশি ভালো লাগল, আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারলাম একে।
“রব রয়” কিশোর ক্লাসিকটি ১৮১৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ঐতিহাসিক প্লট নিয়ে। এর মূল গল্পটি ডালপালা মেলেছে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতা, ইংল্যান্ডের রাজা জর্জ এবং স্কটল্যান্ডের রাজা জেমসের সিংহাসন আরোহন এবং দ্বিপাক্ষিক সমর্থকদের মধ্যকার বিরোধকে কেন্দ্র করে। তবে এই ইতিহাস রাজনীতি ছাপিয়েও এই গল্পে রহস্য, প্রেম, অর্থনীতি, ব্যবসা এবং মানবিক মূল্যবোধেরও সমন্বয় ঘটেছে, যা একে পরিপূর্ণতা দিয়েছে।

গল্পটির নাম দেখে মনে হচ্ছে এর মূল চরিত্র “রব রয়(রবার্ট ম্যাকগ্রেগর)”, তাই না?

তবে পড়তে পড়তে হয়ত মনে হবে- না, এর মূল নায়ক ফ্রাঙ্ক ওয়াল্ডিস্টোন। তবে আল্টিমেটলি আমার কাছে আসলে রব রয়কেই মূল চরিত্র মনে হয়েছে এই গল্পের, কারণ প্রত্যেকটা চরিত্রের সাথে তার সংযোগ ছিল, সব ধরণের ক্রাইসিস মোমেন্টে সে হাজির হয়েছিল সবার মাঝে, গল্পের নায়ক নায়িকা তাঁর মাধ্যমেই এক হতে পেরেছিল এবং গল্পের মূল মেসেজটাও লেখক হয়ত তাকে ঘিরেই দিয়েছেন বলে আমার মনে হল। অর্থাৎ চরিত্রগুলোর প্রয়োজনে সে না, বরং তাঁর মহানুভবতা, নির্ভিকতা, সাহসিকতা, উদারতা ইত্যাদি সকল মানবিক গুনগুলোর পরিচয় ফুটিয়ে তোলার প্রয়োজনেই অন্যান্য চরিত্রগুলো সৃষ্টি করেছেন লেখক।

অনেক কথাই বলে ফেললাম, এইবার গল্পটি সম্পর্কে ধারণা দেয়া যাক।

আচ্ছা, ক্যারিয়ার ডিসিশন নিয়ে তো প্রায় প্রত্যেকটা পরিবারেই মা-বাবা, সন্তানের মাঝে দ্বন্দ্ব হয়েই থাকে। দেখা যায় মা-বাবা চায় ছেলে/মেয়ে বিসিএস ক্যাডার হবে, কিন্তু ছেলে/মেয়ে চায় ব্যবসায়ী বা রিসার্চার হবে। এটা খুব কমন একটা বিষয় আমাদের সমাজে। তবে ১৮১৭ সালে লেখা সেই গল্পেও লেখক এমনি এক বাবা ছেলের ক্যারিয়ার কনফ্লিক্ট দিয়েই শুরু করেছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে কার সিদ্ধান্তকে প্রায়োরিটি দেয়া উচিত আসলে, এই গল্পের প্রেক্ষাপট থেকে বোঝার চেষ্টা করা যাক।
গল্পের নায়ক ফ্রাঙ্ক অসওয়াল্ডিস্টনের বাবা লন্ডনের বিশাল ব্যবসায়ী। তিনি একমাত্র ছেলে ফ্রাঙ্ককে তাঁর উপযুক্ত একজন উত্তরসূরি হিসেবে দেখতে চান, যে বাবার ব্যবসার সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিবে এবং সবকিছুর দেখাশোনা করবে। কিন্তু এদিকে ফ্রাঙ্কের কবিমন শুধু কবিতার ছন্দে আবদ্ধ থাকতে চায়, ব্যবসার কিছুই শেখার ইচ্ছে তাঁর জাগে না। বাবা ছেলেকে ব্যবসার দিকে মনোযোগী করতে ফ্রান্সে পাঠান ব্যবসার কাজে। ফ্রান্সের ব্যবসার ধরণ, নিয়ম কানুন, বাজার ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান নেয়ার জন্যই তাকে পাঠানো হয়েছিল ফ্রান্সে।
কিন্তু ফ্রাঙ্ক সেখানে গিয়ে ব্যবসা আরও বেশি ভুলে যায়। বাবার দেয়া দায়িত্বের পরোয়া করার সময় কোথায় তাঁর, যেখানে সে ফ্রান্সের বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ সাহিত্য আর কবিতা চর্চার সন্ধান পেয়ে গেছে!
ফ্রান্স থেকে ফিরে এসে ফ্রাঙ্ক বাবার সামনে দাঁড়াতেই লজ্জাবোধ করে, কারণ তাঁর ব্যাগ ব্যবসায়িক কাগজপত্রের বদলে ফ্রেঞ্চ কবিতার পাণ্ডুলিপিতে ঠাঁসা থাকে!
এমন ছেলেকে নিয়ে অসওয়াল্ডীস্টন তখন মহাবিপদে। ব্যবসা তো এতো সহজ নয়, এরজন্য দরকার ধৈর্য, সততা, আর ব্যবসায়িক বুদ্ধির প্রয়োগে একদম গোড়া থেকে ব্যবসা সম্পর্কে জানা। কিন্তু ফ্রাঙ্ক তো কবিতায় মগ্ন, ব্যবসায়িক লেনদেন করতে যেয়ে কবিতা লিখতে না পারলে পাগল হয়ে যাবে এই অবস্থা!

বাবা ছেলের কবিতার নেশা কোনোক্রমেই যখন ছাড়াতে পারলেন না, তখন নিলেন এক কঠিন সিদ্ধান্ত।

বাবার ব্যবসা দেখতে না পারলে, বাবার সম্পদও ভোগ করা চলবে না তাঁর। ফ্রাঙ্ক সম্পদের আশা ছেড়ে কবিতাই বেছে নিল আর তখন বাবার কাছে এক বছর সময় চাইল, সফল কবি হয়ে নিজের একটা উপার্জনের ব্যবস্থা করার জন্য। ফ্রাঙ্কের বাবা সুযোগ দিলেন ছেলেকে, এক বছর তিনি খুব স্বল্প পরিমাণ একটা টাকা দিবেন বলে প্রতিশ্রতি দিলেন ফ্রাঙ্ক কে তাঁর চলার খরচ হিসেবে। আর ফ্রাঙ্ককে পাঠিয়ে দিলেন তাদের পূর্বপুরুষদের জমিদারিতে, যেখানে ফ্রাঙ্কের চাচা হিল্ডিব্র্যান্ড আছেন তাঁর ছেলেদের নিয়ে। ফ্রাঙ্কের বাবা চান হিল্ডিব্র্যান্ডের এক ছেলে ফ্রাঙ্কের পরিবর্তে লন্ডনে এসে তাঁর ব্যবসার দেখাশোনা করবে।

ফ্রাঙ্কের বাবার অবস্থাটা ভাবছি আমি, উনার সম্পর্কে আপনাদের একটু ধারণা দেই এখানে।

তিনি একজন জমিদারের ছেলে হওয়া স্বত্ত্বেও তাকে খুব অল্প বয়সে বাবার ত্যাজ্যপুত্র হয়ে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। অতপর একাকী জীবনে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, আর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আজ সে লন্ডনের সেরা ব্যবসায়ী হতে পেরেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, তাঁর একমাত্র ছেলের ঔদাসীন্যের কারণে তাঁর এই বিশাল ব্যবসা আর প্রতিপত্তি অভিভাবকহীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জীবনের কঠিন লড়াই এ জিতে যাওয়া একজন বাবা হিসেবে ছেলের কাছে এভাবে হেরে যাওয়া তার জন্য কতটা হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি এটা অনুভব করা যায়।
যাই হো ফ্রাঙ্ক রওনা হয় বাপ-দাদার সেই পৈতৃক জমিদারি নর্দাম্বারল্যান্ডে, যেখানে এই প্রথম যাওয়া তাঁর। যেহেতু সে বাড়ি থেকে একরকম বিতাড়িতই বলা যায়, তাই সাথে টাকা পয়সাও খুব একটা নেই আড়ম্বরের সাথে পথ পাড়ি দেয়ার। তাই একটা ঘোড়ায় চরে পাড়ি দিতে থাকল দীর্ঘ সেই পথ আর মাঝে মধ্যে বিশ্রাম নিতে, রাত কাটাতে খুব সস্তা সরাইখানাগুলোতেই থামতে হত তাকে, আর খেতেও হত খুব সস্তা খাবার।
যে পথ দিয়ে ফ্রাঙ্ক চলছিল, এদিকে ডাকাতের বড্ড উৎপাত আছে বলে শোনা যায়। বেশ সাবধানেই তাই পথ চলতে হচ্ছিল তাকে। কিন্তু এক লোককে দেখে ফ্রাঙ্কের সন্দেহ হতে লাগল। মরিস নামের বেটে লোকটা একটা বাক্স নিয়ে পথ চলছে ফ্রাঙ্কের সাথে সাথে কিছুটা দূরত্ব রেখে। ফ্রাঙ্ক যেখানে থামে সেও থামে, ফ্রাঙ্ক যেখান থেকে যাত্রা শুরু করে সেও করে! ফ্রাঙ্ক ভীষন বিরক্ত ছিল লোকটার উপর, কারণ জিজ্ঞেস করেও ওর থেকে কোনো কথা আদায় করা যায় নি, সে কে, কোথায় যাচ্ছে, বাক্সটার ভেতরেই বা কি? ফ্রাঙ্কের সাথে স্বেচ্ছায় পথ চলছে, অথচ হাবভাবে বোঝাচ্ছে সে ফ্রাঙ্কের প্রতিই সন্দেহপ্রবন।
এভাবেই ফ্রাঙ্ক বিরক্তি নিয়ে একটা সরাইখানায় থামলে, সেখানে প্রথমবার দেখা হয় ক্যাম্পবেল নামের এক লোকের সাথে। সরাইখানার মালিক এই লোকের কথা খুব প্রশংসা করছিল যে, ক্যাম্পবেল একাই ৮-১০ জন ডাকাতের সাথে লড়াই করে কাবু করে দিয়েছিল। ফ্রাঙ্ক এগুলোকে নিছক চাপাবাজিই ভাবল, আর ক্যাম্পবেল নিজেই নিজের বীরত্ব আর বাহাদুরির গল্প হেসে উড়িয়ে দিলেন আর একে সরাই এর সবাই তাঁর বিনয় ধরে নিল। ক্যাম্পবেল মরিস আর ফ্রাঙ্ক দুজনের সাথেই কথা বলেছিলেন, তারা কোথায় যাচ্ছে জানতে চেয়েছিলেন আর মরিস যে ভালো লোক নয় এতে ক্যাম্পবেলও নিঃসন্দেহ ছিলেন।
যাই হোক, সেই সরাই থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না ফ্রাঙ্কের গন্তব্য। আবার সে রওনা হল সেখান থেকে, মরিসও চলতে লাগল পেছন পেছন। এক সময় তাদের গন্তব্যের পথ আলাদা হয়ে গেল, মরিস এতোদিন একসাথে পথ চলার পর সামান্য সৌজন্যমূলক বিদায়ও নিল না। ফ্রাঙ্ক তাকে বিদায় জানিয়ে অসওয়াল্ডিস্টনের পথ ধরলে মানুষকে জিজ্ঞেস করে করে। পাহাড় সবুজঘেরা নিবিড় প্রকৃতির অরন্যের মধুবর্তী এই পথটুকু ফ্রাঙ্কের কবিমনে দারুণ অনুভূতি সৃষ্টি করল। এভাবে একাকী নিমগ্ন প্রকৃতিপ্রেমী ফ্রাঙ্ক চলতে চলতে কখন যে অসওয়াল্ডিস্টনের কাছাকাছি পৌঁছে গেল বুঝতেই পারল না। আর হঠাত সেই অরণ্যে দেখা হয়ে গেল অপরূপা ডায়ানার সাথে! কথা বলে জানতে পারল, ডায়ানা অসওয়াল্ডিস্টনেই থাকে, ওদের আত্মীয় সে। তাই দুজন একসাথে পথ চলতে চলতেই বুঝতে পারল তাদের মনের গন্তব্যও ঠিক যেন একি দিকে ধাবমান। দুজনই সাহিত্য, কবিতা ভালোবাসে খুব। ডায়ানা ফ্রাঙ্কের কবি পরিচয়ের কথা জানতে পেরে তাকে ফ্রেঞ্চ কবিতা আবৃত্তি করে শুনাতে বলল, সেগুলোর মর্মার্থ বুঝিয়ে দেয়া সহ।
ফ্রাঙ্ক আর ডায়ানা অসওয়াল্ডিস্টনে সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে গেল। আর ফ্রাঙ্ক প্রথম সাক্ষাতেই বুঝতে পারল তাঁর চাচাত ভাইদের সাথে মিলবে না তাঁর, কারণ দুই মেরুর মানুষ তারা। ৫ ভাই এর মাঝে ৪জনই নেশায় আসক্ত আর হাসি ঠাট্টায় মেতে থাকে সারাক্ষন। আর আরেকজন রাশলি, যাকে ফ্রাঙ্কের বাবা তাঁর ব্যবসা পরিচালনার জন্য লন্ডন যেতে চলেছে। রাশলি শিক্ষিত হলেও, খুব গুরুগম্ভীর টাইপের আর ফ্রাঙ্কের সাথে বন্ধুত্ব করার মত ইচ্ছে যে তাঁর নেই সেটাই বুঝিয়েছিল সে। ডায়ানাকে রাশলির কথা জিজ্ঞেস করলে, ডায়ানা এড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু ফ্রাঙ্ক রাশলি কেমন মানুষ বুঝতে চাইত, কারণ তাঁর উপর নির্ভর করছে তাঁর বাবার ব্যবসার ভবিষ্যৎ।
চাচাত ভাইদের সাথে বনিবনা না হলেও ফ্রাঙ্কের সময় কাটাতে অসুবিধা হয় না অসওয়াল্ডিস্টনে ডায়ানা আছে বলেই। দুজনে সারাক্ষন একসাথে কেটে যায় কখনো লাইব্রেরিতে কবিতা পড়ে, আবার কখনো বাড়ির পেছনের নির্জন বাগানে হেঁটে কথা বলতে বলতে। বেশ কেটে যাচ্ছিল এই কপোত-কপোতি দুজনার। তবে জীবন যে সহজ নয় এটা প্রমাণ করতেই মনে হয় উটকো ঝামেলা এসে একের পর এক আঘাত হানতে শুরু করল তাদের জীবনে।
প্রথম ধাক্কাটা আসল একদিন সন্ধ্যায় যখন বাইরে হাঁটছিল ডায়ানা আর ফ্রাঙ্ক। হঠাত স্থানীয় জর্জের কেরানী একজন কনস্টেবলকে সাথে করে নিয়ে এসে বলল, ফ্রান্সিস অসওয়াল্ডিস্টোনের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে মরিস নামের লোকের বাক্স ডাকাতির অভিযোগে। তাই এখনই ফ্রাঙ্ককে জর্জের বাড়ি গিয়ে হাজির হতে হবে। ডায়ানা আর ফ্রাঙ্ক দুজনই অবাক হল, ডাকাতির সময়ে ফ্রান্স অসওইয়াল্ডিস্টনে ছিল বলে ডায়ানাও জানাল। কিন্তু শয়তান কেরানী জবসন তো সহজে ছেড়ে দেয়ার লোক নয়, তাই ফ্রাঙ্ককে যেতেই হল লোক দুটোর সাথে, ডায়ানাও সঙ্গী হয়ে সাথে গেল।
সবাই গেল বিচারক ইঙ্গলউডের বাড়িতে। বিচারক ছিলেন খুব সৎ লোক, ডায়ানাকেও খুব ভালোবাসতেন মেয়ের মতোই। আর ফ্রাঙ্কের বাবার সাথে তিনি একই স্কুলে পড়তেন। তাদের সম্পর্কে বিচারক সবই জানেন, আর তাই ফ্রাঙ্ককে কোন প্রমাণ ছাড়াই জবসন গ্রেফতার করে এনেছে জেনে খুবই বিরক্তি আর রাগ প্রকাশ করলেন। মরিসের অভিযোগপত্রটি আবার পড়ে দেখলেন, আরও জেনে অবাক হলেন ফ্রাঙ্কের চাচাত ভাই রাশলিও এই অভিযোগ সত্য বলে মত দিয়েছে, তাই জবসন ফ্রাঙ্ককে ধরে আনার সাহস করেছে। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিচারক বুঝতে পারছিলেন ফ্রাঙ্ক দোষী নয়, কিন্তু তাকে জামিন দেয়ার মত কোন ফাঁক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ঠিক এমন অবস্থায় হঠাত যেন উদয় হল একটা কন্ঠস্বর! ফ্রাঙ্ক দেখে চিনল, এই সেই সরাইখানায় দেখা হওয়া ক্যাম্পবেল।
ক্যাম্পবেল এসে বলল, ডাকাতিটা আসলে ফ্রাঙ্ক না , সে নিজে করেছে। নিরপরাধ একটা লোক তাঁর জন্য শাস্তি পাবে এটা সে সহ্য করতে পারবে না বলেই স্বীকারোক্তি দিতে এসেছে। এটা বলেই সে দ্রুত উধাও হয়ে গেল আবারও। বিচারক ইঙ্গলউডের তখন কিংকর্তব্যবিমূড় অবস্থা। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না, তবে ফ্রাঙ্ককে জামিন দেয়ার একটা পথ পেয়েছে, তাতে সে খুশি হয়েছে, ক্যাম্পবেল নিয়ে চিন্তিত হল। আর ফ্রাঙ্ক বাইরে বেরিয়ে গেলে, ডায়ানাকে ডেকে সাবধান করল যে, ডায়ানা, অসওয়াল্ডিস্টন পরিবার আর এই ক্যাম্পবেলও ক্যাথলিক, কোথাও তো এর যোগসূত্র আছে, ডায়ানা হয়ত ক্যাম্পবেলকে চিনে এমনটাই বিচারক সন্দেহ করেছিল। দেশ এখন অস্থির অবস্থায় আছে, তাই ডায়ানা এসব কারণে কোন বিপদে পড়ুক তা চান না বিচারক, এজন্যই সতর্ক করলেন।
এরপর থেকে ডায়ানা আর ফ্রাঙ্ক যখন বুঝতে পারল তারা একে অপরকে ভালোবাসে, তখন ফ্রাঙ্ক বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার কথা ভাবল। আর ডায়ানা ভাবল তাদের প্রেমের যে পরিণতি বিয়ে পর্যন্ত যেতে পারে না, সেটাই ফ্রাঙ্ককে বলবে সে। ডায়ানা তাঁর জীবনের সব দুঃখগাথা শেয়ার করল আর বলল, তাদের বিয়ে সম্ভব নয়। কারণ ডায়ানারা ক্যাথলিক আর রাজা জেমসের ভক্ত। ওর বাবা ভার্ননের বিশাল জমিদারি তাই সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে। কিছু সম্পদ ওর ফুপা হিল্ডিব্র্যান্ডকে বেনামে দিয়ে রেখেছিল ডায়ানার কথা ভেবে, তবে শর্ত ছিল অসওয়াল্ডিস্টন ভাইদের কাউকে বিয়ে করতে হবে না হয় এই সম্পদ ডায়ানা দাবি করতে পারবে না। এখন যেহেতু অসওয়াল্ডিস্টন ভাইদের কাউকে ডায়ানার পছন্দ না, তাই ওর বাবা ভার্নন চান ডায়ানা মঠে সন্ন্যাসীর জীবন বেছে নিবে। ফ্রাঙ্ক খুব দুঃখ পায় জেনে, কিন্তু কিছু করার থাকে না। আগের মত স্বাভাবিক দেখা করা, কথা বলা আর হয় না তাদের।
এদিকে ফ্রাঙ্ক হঠাত ভেবে অস্থির হয়ে উঠে যে, লন্ডন থেকে কেনো তাঁর নামে কোনো চিঠি আসে না, এতোদিন ধরে এসেছে সে এখানে, চিঠি পাঠিয়েছেও কিন্তু রিপ্লাইও আসেনি কোনো। ওর সন্দেহ হওয়ায় নিজেই গিয়ে অনেক দূরের পোস্টঅফিসে উপস্থিত হয় আর একটা চিঠি পেল। তাঁর বাবার ম্যানেজার আওয়ান চিঠির সাথে কিছু টাকাও পাঠিয়েছে। তবে ওর কোনো চিঠি যে লন্ডনে পৌঁছে নি এটা ফ্রাঙ্ক আওয়ানের চিঠি পড়েই বুঝতে পারল। বুঝল ওর চিঠিগুলো ওবাড়ি থেকেই রাশলি হয়ত সরিয়ে ফেলেছে বাবার সাথে ফ্রাঙ্কের সম্পর্ক আরও খারাপ করার জন্য। এসবের পাশাপাশি ডায়ানাকে না পাওয়ার বেদনা, সবমিলিয়ে খুব খারাপ যাচ্ছিল ফ্রাঙ্কের সময়।
এরমাঝে হঠাত লন্ডন থেকে চিঠি এলো, ডায়ানা এসে দিয়ে গেল ফ্রাঙ্ককে। আর এই চিঠি বয়ে আনল বিশাল দুঃসংবাদ!
আওয়ান লিখেছে চিঠিটা। রাশলি নাকি তাদের কোম্পানির এক লক্ষ পাউন্ডের হুন্ডি নিয়ে উধাও, এদিকে অসওয়াল্ডিস্টনও লন্ডনে নেই, ব্যবসার কাজে বাইরে আছেন ফিরতে অনেক সময় লাগবে। ততদিনে হুন্ডি না পেলে কোম্পানি দেওলিয়া ঘোষিত হবে। যে করেই হোক তাই রাশলিকে খুঁজে বের করতে হবে, আওয়ান ওকে খুঁজতে গ্লাসগোতে যাচ্ছে, ফ্রাঙ্ককেও সেখানে যেতে বলেছে। দুজন মিলে খুজলে সহজে পাওয়া যেতে পারে তাই।

ফ্রাঙ্ক এই চিঠি পেয়ে খুব অসহায় বোধ করছিল, বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছিল। কারণ তাঁর অবহেলার কারণেই বাবার কোম্পানিতে রাশলিকে নিতে হল আর এই সর্বনাশ হল!

ফ্রাঙ্ক ডায়ানাকে খুলে বলল সব ঘটনা, হুন্ডি ১০ দিনের মাঝে খুঁজে না পেলে বাবার কোম্পানিকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না। ডায়ানা চিন্তিত হল, আর দ্রুত একটা কাগজে কিছু একটা লিখে ফ্রাঙ্কের হাতে দিয়ে বলল, যদি রাশলিকে খুঁজে না পাও, হুন্ডি উদ্ধার করতে না পারো, তাহলে এই খামের উপর যার নাম লিখা আছে তাকে চিঠিটা দিবে, সে তোমাকে সাহায্য করতে পারবে। নয়দিন চলে যাওয়ার পরও যদি হুন্ডি উদ্ধার করা না যায় তবেই খামটা খুলো, আর পেলে নাম ঠিকানা না দেখে চিঠিটা ছিড়ে ফেলে দিও।
ফ্রাঙ্ক শুনে অবাক হল যে, সেই লোককে কোথায় পাবে প্রয়োজনের সময়, আর কেই বা সেই লোক! ডায়ানা বলল, সেই লোক ফ্রাঙ্কের কাছাকাছিই থাকবে, ডায়ানা বলে দিবে ওর খেয়াল রাখার জন্য।
মনে অনেক প্রশ্ন আসলেও ফ্রাঙ্ক আর কিছু ওকে জিজ্ঞেস করল না লোকটা সম্পর্কে, সে তখন আসলে মানসিকভাবেই খুব বিধ্বস্ত। ডায়ানা আর ফ্রাঙ্ক বিদায় নিল, ডায়ানা বলল, এই হয়ত তাদের শেষ দেখা!
গ্লাসগোতে যাওয়ার পথ ফ্রাঙ্ক এর অচেনা , তাই অসওয়াল্ডিস্টোনের মালি অ্যান্ড্রিউ কে ওর সাথে যেতে বলল দ্রুত সেখানে পৌঁছানোর সংক্ষিপ্ত রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, অবশ্যই টাকার বিনিময়ে। খুব ভোরে রওনা হল ফ্রাঙ্ক অ্যান্ড্রিউকে নিয়ে।
আওয়ান চিঠিতে বলে দিয়েছিল, গ্লাসগো তে কোথায় যেতে হবে ফ্রাঙ্ক কে। সেখানে তাদের কোম্পানির দুজন দূত রয়েছেন, একজন ম্যাকভাইটি, আরেকজন জার্ভি। আওয়ান বর্ণ্নায় ম্যাকভাইটির মতো ভালো মানুষই হয় না, যে কিনা সব সময় তাদের কোম্পানিকে সব ব্যাপারে ছাড় দিয়ে এসেছে, কখনো কিছু নিয়ে প্রশ্ন তুলেনি। অপরদিকে জার্ভি সব সময় সব ব্যাপারে অতিরিক্ত হিসাব করেছে, কোনো হিসাবের এদিক সেদিক হতে দেয় নি, সামান্য কোনো ভুলেরও জবাব্দিহি চেয়েছে, পাওনাদাওনা কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিয়েছে, নিজের স্বার্থ ছাড়া এ লোক কিচ্ছু বুঝেনা এই ধরণের। তাই জার্ভির থেকে সাহায্য পাওয়ার আশা নেই, আওয়ান বলেছে ম্যাকভাইটির কাছে থাকবে, ফ্রাঙ্ককেও সেখানেই যেতে বলেছে।
ফ্রাঙ্ক যথারীতি নির্দেশ মতো ম্যাকভাইটির বাড়ীতেই পৌছাল, কিন্তু বাড়ির দারোয়ান অনেকটা তাচ্ছিল্যের ভাষায় বলল, ম্যাকভাইটি বাড়ী নেই, গির্জায় গিয়েছে, আওয়ানও সাথেই আছে। ফ্রাঙ্কের সন্দেহ হল, গির্জায় পৌঁছে প্রচুর ভীড় দেখতে পেল। ম্যাকভাইটিকে দেখতে পেলেও তাঁর কাছে যাওয়া সম্ভব ছিল না। ভীড়ে দাঁড়িয়ে ছিল সময়, হঠাত তাঁর পেছনে একজন লোক এসে দাঁড়াল আর বলল, সে একজন বন্ধু, সব সময় খেয়াল রাখছে তাঁর প্রতি। ফ্রাঙ্ক বড় ধরণের বিপদে পরতে যাচ্ছে। ফ্রাঙ্ককে ঠিক ১২টায় ক্লাইড নদীর ব্রীজে দেখা করতে বলে চলে গেল সে।

ফ্রাঙ্ক বুঝতে পারল, আওয়ান বিপদে পরেছে, আর ম্যাকভাইটিই সেটার কারণ। নিরুপায় হয়ে ফ্রাঙ্ক তাই রাত ১২টায় ক্লাইড নদীর ব্রীজে যেয়ে উপস্থিত হল, অচেনা লোকটির থেকে সাহায্য পাবার আশায়, যদিও ভয় আর অবিশ্বাসও ছিল মনে, কিন্তু আর কোনো উপায় ছিল না।

লোকটা কথামত এল ব্রীজের উপর, ওকে নিয়ে অলিগলি পেরিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল। ফ্রাঙ্ক আরও সন্দেহ করতে লাগল বুঝে, লোকটি বলল, আওয়ান বিপদে আছে, তাঁর সাথে শেষ দেখা করাতে নিয়ে যাচ্ছে সে। কথায় কথায় ফ্রাঙ্ক জানতে পারল লোকটা ফেরারি আসামি, যাকে পুলিশ ধরতে পারলেই ফাঁসিতে লটকে দিবে। ফ্রাঙ্ক এসব দেখে শুনে শুধু আশ্চর্যই হয়ে যাচ্ছে। এতো কিসের উদারতা লোকটার, কেন এতো সাহায্য করছে তাকে নিজের জীবনের রিস্ক নিয়ে!
ফ্রাঙ্ক মারাত্মক বিস্মিত হল, এরপর লোকটা জেলখানায় ওকে নিয়ে ঢুকতে দেখে। একটা ফেরারি আসামী মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত জেনেও ওকে এভাবে সাহায্য করছে দেখে কোনভাবেই হিসাব মেলাতে পারল না। দেখল কারারক্ষীও লোকটাকে রাজার সম্মান দিচ্ছে। ফ্রাঙ্ক বুঝল, আওয়ান জেলখানায় বন্দি। ওরা আওয়ানের কক্ষে গিয়ে জানতে পারল, ম্যাকভাইটিকে বিশ্বাস করে সে কোম্পানির সব দুরাবস্থার কথা জানিয়েছিল আর সাথে সাথে ম্যাকভাইটি ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বন্দি করে করেছে জেলখানায়। আওয়ান যদিও জানে সাহায্যের আশা নেই, তারপরও আরেক এজেন্ট জার্ভিকে সে চিঠি দিয়েছে এই অবস্থার কথা জানিয়ে। এই সংকৎ থেকে শীঘ্রই মুক্তি না মিললে সব যাবে তাদের।
হঠাত সেখানে কথা বলে উঠায় ফ্রাঙ্ক এইবার তাঁর সাথে আসা অচেনা আগন্তুকের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখতে পেল, সে আর কেউ নয়- সেই ক্যাম্পবেল! ডায়ানাই ক্যাম্পবেলকেই বলেছিল ফ্রাঙ্কের খেয়াল রাখার জন্য।
সেই মুহুর্তে সেখানে এলো জেলার মেজিস্ট্রেট, কারারক্ষী ভয় পেয়ে গেল কারণ এখানে ফেরারি আসামি ঢুকে বসে আছেন, যার বের হওয়ার আর উপার থাকবে না দেখতে পেলে। ম্যাজিস্ট্রেট আওয়ানের কক্ষে এসে ঢুকল, ক্যাম্পবেল ওকে দেখে স্বাভাবিকভাবেই বসে থাকল, কারণ লোকটি তাঁর চেনা এবং ফ্রাংকদের কোম্পানির এজেন্ট সেই জার্ভি। জার্ভির প্রত্যকটা কথা আর আচরণে তখন আওয়ান আর ফ্রাঙ্ক অবাক হল, কারণ যার কাছ থেকে এক বিন্দু সাহায্যের আশা করে নি তারা, সেই জার্ভিই তাদেরকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে এসেছে।
জার্ভি আর ক্যাম্পবেলের সম্পর্কটাও যে বেশ ভালো, সেটাও বোঝা গেল। জার্ভি আওয়ানের জামিনের ব্যবস্থা করবে দ্রুত সেই আশ্বাস দিল, আর পরদিন সবাইকে তাঁর বাড়িতে খাওয়ার জন্য দাওয়াত করল, খেতে খেতে করণীয় ঠিক করবে বলে।
গভীর রাতে ফ্রাঙ্ক যখন হেঁটে চলছিল, তখন রাশলির মতো কাউকে দেখতে পেয়েই সে দ্রুত অনুসরণ করতে লাগল আর দেখল ওর সাথে আরও দুজন যুক্ত হয়েছে, একজন বিশ্বাসঘাতক ম্যাকভাইটি, অপরজন সেই মরিস যার বাক্স ডাকাতির অভিযোগ এসেছিল ফ্রাঙ্কের উপর। ফ্রাঙ্কের কাছে তাদের ষড়যন্ত্র তখন স্পষ্টভাবে ধরা দিল।
যখন রাশলির কাছ থেকে অন্য দুজন বিদায় নিল, ঠিক তখনই ফ্রাঙ্ক গিয়ে রাশলিকে ধরল, শুরু হল দুই ভাই এর তলোয়াড় যুদ্ধ। রাশলি বলল, হুন্ডি তাঁর কাছে নেই এখন। হঠাত সেখানে আবারও ক্যাম্পবেল উপস্থিত হল, দুই ভাই এর যুদ্ধ বন্ধ করল, বিদায় নিল রাশলি। তখন ফ্রাঙ্ক নিরুপায় হয়ে, তাঁর হাতে থাকা শেষ সম্বল ডায়ানার দেয়া সেই চিঠিটার দিকে দৃষ্টি দিল। আর খামের উপর ক্যাম্পবেলের নাম দেখে আরও অবাক হল। সাথে সাথে সে চিঠিটা ক্যাম্পবেলকে দিল, আর সেটা পড়ে ক্যাম্পবেল বিরক্ত হল যে, কেনো ডায়ানা আগেই বলল না একথা যে, হুন্ডিটা ফ্রাঙ্ককে ফিরিয়ে দিতে হবে যে কোনো উপায়ে।
আসলে রাজা জেমসের অনুসারিরা মানে ক্যাথলিকরা তাদের বিদ্রোহের প্রস্তুতি স্বরূপ যে ফান্ড সংগ্রহ করছে, তাঁর অংশ হিসেবেই এই হুন্ডি নেয়া হয়েছে, যা কেবল ক্যাম্পবেলই ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে পারে, কিন্তু ততক্ষণেও অনেক দেরি হয়ে গেছে, ফান্ড নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু ক্যাম্পবেল কথা দিল ফ্রাঙ্ককে, সে যে করেই হোক এটা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করবে যেহেতু ডায়ানা অনুরোধ করেছে। ফ্রাঙ্ককে বলল জার্ভিকে নিয়ে হাইল্যান্ডের পাহাড়ি এলাকায় ক্যাম্পবেলের বাড়িতে দাওয়াত গ্রহণ করার জন্য। সেখানেই সে হুন্ডি ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। 
পরদিন আওয়ান জেল থেকে ছাড়া পেলে ফ্রাঙ্ক আর জার্ভি হাইল্যান্ডের পথে রওনা হয়। সেদিন পরিস্থিতি খুব খারাপ থাকে। রাজা জর্জের সেনারা পাহাড়ি অঞ্চলের আশেপাশে ঘাঁটি গড়ে ক্যাম্পবেলকে ধরার জন্য। তারা যখন এক সরাইখানায় খাওয়ার জন্য ঢুকে সেখান থেকেই একজন সেনা তাদের সন্দেহ করে আর পরিস্থিতির চাপে পরে তাদের সেনাদের সাথে বন্দি হিসেবে যেতে হয় ক্যাম্পবেলের বাড়ির উদ্দেশ্যে, দুর্গম সেই পাহাড়ি এলাকায়।
সেটা এমনই দুর্গম এলাকা যে, একসাথে সবাই যাওয়া সম্ভব হয় না আর তাই ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ায় অবশেষে এই বাহিনীদের সবাই বন্দি হয় ক্যাম্পবেলের স্ত্রীর হাতে। কিন্তু তখন ক্যাম্পবেলের ছেলেরা ফিরে আসায় জানা যায় ক্যাম্পবেল ডিউক অব আর্গাইলের ক্যাম্পে বন্দি হয়েছে একজনের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে! ক্যাম্পবেলের স্ত্রী তখন আরও ক্ষুব্ধ হয়ে যায়, ফ্রাঙ্ককে পাঠায় সেখানে জানানোর জন্য যে, ক্যাম্পবেলের কিছু হলে একটা সেনাও পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ফিরে যেতে পারবে না। পাহাড়ি এলাকায় তাদের শক্তির কাছে এসব সেনা পুলিশ কিছুই না!
ফ্রাঙ্ক গিয়ে জানাল, শুনে তারা বন্দিকে নিয়ে পাহাড়ি এলাকার বাইরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করল ভয় পেয়ে, কিন্তু ক্যাম্পবেলকে ছেড়ে দিল না। যে সেনা ক্যাম্পবেলকে বাঁধা অবস্থায় ঘোড়াটা নিয়ে যাচ্ছি, সে ক্যাম্পবেলের পরিচিত এবং ওর কাছে ঋনী ছিল। আর তাই নদী পার হবার সময় ক্যাম্পবেলের বাঁধন খুলে ওকে পালাতে সাহায্য করল, অন্য সেনারাও বেশির ভাগ পাহাড়ি এলাকার হওয়ায় সবাই ক্যাম্পবেলকে ভালবাসত, তাই সবাই চাইল পালিয়ে যাক বহুদূর। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করল সবাই মিলে। এই সুযোগে ফ্রাঙ্কও তাদের থেকে দূরে সরে গিয়ে অন্য পথ ধরল, কারণ তাঁর এখনো হুন্ডি উদ্ধার করা বাকি।
নদীর তীর ধরে পথ চলতে চলতে চাঁদনী রাতের সৌন্দর্যে মুগ্ধ কবি একটু থেমে নদীতিরে বসেই গান ধরল মৃদু স্বরে। আর তখন এলো দুই আগন্তুক। ফ্রাঙ্ক প্রথমে চিনতে না পারলেও কথা বলায় ডায়ানাকে চিনল, ওর হাতে ডায়ানা একটা পুটলি ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল অচেনা আরেক আগন্তুকের সাথে, আবারও বলল, ফ্রাঙ্ক এটাই হয়ত আমাদের শেষ দেখা!

ফ্রাঙ্ক বুঝে উঠতে পারল না ডায়ানা এতো রাতে এখানে কি করে এলো, কার সাথেই বা এলো। ভাবছিল সে, আর তখনই ক্যাম্পবেল এসে বলল, হুন্ডি পেয়ে গেছে ফ্রাঙ্ক, ডায়ানা ওকে হুন্ডিটাই দিয়ে গেল।

রক্ষা পেল অবশেষে ফ্রাঙ্কের বাবার কোম্পানি, ওর বাবা দেশে ফিরে এসে ছেলের দায়ত্ববোধ, সাহসিকতায় মুগ্ধ হল। ফ্রাঙ্কও ভুল বুঝতে পেরে বাবার কোম্পানির দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিল, পাশাপাশি তাঁর কবিতা লেখাও চলল।
দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হল, যুদ্ধ শুরু হল নির্বাসিত রাজা জেমস আর জর্জের সমর্থকদের মাঝে। ফ্রাঙ্কের চাচা হিল্ডিব্র্যান্ড তাঁর ছেলেদের নিয়ে যুদ্ধে যোগ দিলেন রাজা জেমসের হয়ে, একে একে সব ছেলেই মারা পরল তাঁর শুধু রাশলি বাদে। কারণ বিশ্বাসঘাতক রাশলি দল বদলে আগেই রাজা জর্জের দলে যোগ দিয়েছে। তাঁর বাবা হিল্ডিব্র্যাড ছেলের জন্য লজ্জিত ছিল, তাই অসওয়াল্ডিস্টন নিজের ছেলেকে না দিয়ে ফ্রাঙ্কের নামে লিখে দিয়েছিল। আল্টিমেটলি ফ্রাঙ্কই এটার মালিক হওয়ার কথা ছিল, তাঁর বাবাকে আগে ত্যাজ্যপুত্র না করলে। নিজের অধিকার ভিন্ন উপায়ে হলেও ফিরে পেল। পেল স্যার ফ্রান্সিস অসওয়াল্ডিস্টন উপাধি। আসলে কারো প্রাপ্য কেউ নিতে পারে না হয়ত, কোনো না কোনো উপায়ে ফিরে আসে সেটা।
ফ্রাঙ্ক অসওয়াল্ডিস্টনে গেল বহুদিন পর, তখন পুরো বাড়ি ধূলো ময়লায় নিমজ্জিত। সোজা লাইব্রেরিতে চলে গেল সে, সেটা বেশ পরিষ্কার মনে হল, তাঁর মনে হল এখানে কেউ না কেউ থাকে। ডায়ানাকে ভীষন মিস করছিল ফ্রাঙ্ক, অনেক স্মৃতি মনে পরছিল। হঠাত দেখল তাঁর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে ডায়ানা আর তাঁর বাবা ফ্রেড্ররিখ ভার্নন, হুন্ডি ফিরিয়ে দেয়ার সময়ও ডায়ানার সাথে ওর বাবাই ছিল সে রাতে। ডায়ানা জানাল, বাবা আর সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কোনো ভাবেই জাহাজে উঠে এদেশ ছেড়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ফ্রাঙ্কের সাথে কেউ কথা বলছে শুনতে পেয়ে একজন শয়তান রাশলিকে যেয়ে খবর দেয়, রাশলি তখন সেই জবসনকে নিয়ে আটক করতে আসে রাজদ্রোহী ডায়ানা আর তাঁর বাবাকে। সেখানেও ক্যাম্পবেল এসে হাজির হয়ে যায় তাদেরকে বাঁচানোর জন্য। রাশলির মৃত্যু হয় সেদিনই আর ডায়ানা তাঁর বাবাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এরপর কেটে যায় আরও দু’বছর। ফ্রাঙ্ক তখন সবদিক থেকেই সফল একজন মানুষ, কিন্তু তারপরও তাঁর যেন শূন্য মনে হয় সবকিছু ডায়ানার কথা ভেবে। ফ্রাঙ্ক অসওয়াল্ডিস্টনে যায় মাঝে মাঝে, তখন আরও শূন্যতা ভর করে ভেতরে। হঠাত সে একটা চিঠি পায়, যা ডায়ানার বাবা তাকে পাঠিয়েছিল। চিঠিটা অনেক দেরি করে তাঁর হাতে পৌঁছে এর বাহক অসুস্থ হয়ে যাওয়ায়। অসুস্থ অবস্থায় ডায়ানার বাবা এই চিঠি লিখেছিল। সেই চিঠিতে উল্লেখ্য ছিল সন্ন্যাসী হিসেবে ডায়ানার মঠে যোগদানের কথা, কিন্তু পাদ্রী ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে বলেছিলেন। আর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বিয়ের ক্ষেত্রে ক্যাথলিক বা প্রোট্যাস্টেট ধর্মের পার্থক্য তাদের জন্য কোনো বাঁধা হবে না। এর মাঝে ফ্রাঙ্কের জন্য ইঙ্গিত ছিল ডায়ানাকে বিয়ে করার। এতো দেরিতে চিঠি পৌঁছায় ভীষন হতাশ হল ফ্রাঙ্ক, কি করবে ভেবে পেল না সে, দেয়ালে মাথা ঠুকতে ইচ্ছে হল তাঁর।

সেই অবস্থায় এসে হাজির হল সেখানে ক্যামবেল, বললেন একি চিঠি নাকি ডায়ানার বাবা ক্যাম্পবেলকেও পাঠিয়েছিল আর ক্যাম্পবেল দ্রুত ফ্রান্সে পৌঁছে ডায়ানাকে নিয়ে এসেছিল। ফ্রাঙ্ক তখন তাঁর মাথায় স্পর্শ পেল এক কোমল হাতের, যে কিনা তাঁর চুলে বিলি কাটছে পরম ভালোবাসায়, সে আর কেউ নয়- তারই ডায়ানা।

ক্যাম্পবেলের সাহায্যেই শেষটা সুখকর হল এই গল্পের নায়ক নায়িকার, পূর্ণতা পেল এই রহস্য রোমাঞ্চ ভরা প্রেম।

কিন্তু ক্যাম্পবেল! কে সে! এই সেই রবার্ট ম্যাকগ্রেগর, যাকে সবাই “রব রয়” বলে ডাকে।

আসলে এটার সামারি কেনো জানি আমি শর্ট করতে ব্যর্থ হলাম। সারাদিন চলে গেল লিখতে লিখতে। পুরো গল্পটা জুড়ে আসলে অনেক অনেক শিক্ষা রয়ে গেছে, যা ভালো ভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলেও আরও হাজার শব্দ হয়ে যাবে হয়ত। কিন্তু আজ আর বেশি লিখতে পারছি না। খুব সংক্ষেপে বলছি।
** গল্পের শুরুতেই বিজনেস সম্পর্কিত বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু মেসেজ আছে, যেমনঃ বিজনেসে মার্কেট এনালাইসিসের গুরুত্ব বুঝতে পারা যায় ফ্রাঙ্কের বাবা ওকে ফ্রান্সে পাঠায় সেখানের বিজনেস আর মার্কেট কন্ডিশন বোঝার জন্য।
বিজনেসে নলেজের গুরুত্বও বোঝা যায়, তাই ফ্রাঙ্ককে তাঁর বাবা বিজনেস সম্পর্কে আগে স্টাডি করতে বলে, কিন্তু বিজনেস নিয়ে ফ্রাঙ্কের নলেজ জিরো হওয়ার কারণেই ওকে এর দায়িত্ব না দিয়ে বাড়ি থেকেই তাড়িয়ে দেয় তাঁর বাবা।
** রব রয় চরিত্রটা আসলে পরোপকারিতা শিক্ষা দেয় সব সময়, সে নামে দস্যু হলেও সত্যিকার অর্থেই ন্যায়ের জন্য লড়াই করে সে। নিজে আইন তৈরী করে নেয় নিজের এলাকায়, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না কখনো যত বিপদই আসুক না কেনো। আর ন্যায়ের শক্তির কাছে অন্যায় সব সময় হেরে যায়। আরেকটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হল, রব রয় এতোটা শক্তিশালী কারণ পাহাড়ি এলাকায় তাঁর নেতৃত্বে এমন এক শক্তি তৈরী হয়েছে, যাদের কাছে এর বাইরের সবাই পরাজিত হতে বাধ্য, সেদিক থেকে রব রয় একজন আদর্শ লিডার। এটা রবিনহুডের সাথে মিলে যায়।
** বিজনেসের সিক্রেট কারো সাথে শেয়ার করতে নেই, এটাই প্রমাণিত হয়েছে ম্যাকভাইটির বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে।
** জার্ভিকে দেখে শিখেছি, বিজনেসের হিসাবের ক্ষেত্রে কোন ছাড় নেই, তবে যাদের সাথে বিজনেস তাদের বিপদ মানে নিজের বিপদ, তাই যতটুকু সম্ভব সাহায্যে এগিয়ে যেতে হবে।
** ভালো পথে থাকলে বাঁধা আসলেও এক সময় সুদিন ফিরে আসে।
আরও অনেক শিক্ষা রয়ে গেছে, কিন্তু আমি এখানেই শেষ করছি। আশা করছি সবাই গল্পটা পড়ে আপনাদের মতামত এবং শিক্ষা শেয়ার করবেন।

Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: