মুভি রিভিউ (Movie Review)- “Glory Road” Movie Review মোটিভেশনাল by খাতুনে জান্নাত আশা - September 28, 2021September 28, 20211 Spread the lovemoreMovie Review- “Glory Road” বাংলায় একে বলতে পারেন “গৌরবান্বিত পথ”। যদিও এটা একটা মুভি, তবে পুরোটাই সত্য ঘটনা অবলম্বনে। মুভিটি ২০০৬ সালে নির্মিত হয়েছিল, ১৯৬৬ সালে ইতিহাস সৃষ্টি করা, বর্ণবাদকে জয় করা এক বাস্কেটবল টিম এবং এর কোচের গল্প নিয়ে। এই মুভিটা আমার জন্য টনিকের মতো ছিল। গত রাতেই দেখেছি। মুভির চরিত্রগুলোর মাঝে নিজেকে ফিল করেছি। তাদের সাথে হেসেছি, কেঁদেছি এবং শেষবেলার জয়ের আনন্দ উপভোগ করেছি। “Glory Road” মুভির গল্পটাকে সামারাইজ করা যাক কিছুটা- এটা যে সময়কার গল্প, তখন আমেরিকায় বর্ণবাদ ছিল চরম অবস্থায়। আফ্রিকান-আমেরিকান কালো মানুষরা খুব বেশিই অবহেলিত ছিল সমাজে। পুরো মুভিটায় এটা বেশ স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। এই গল্পের মূল নায়ক বলা যায় কোচ “Don Haskins” কে, যিনি একজন বাস্কেটবল কোচ। Texas Western College এর ছেলেদের বাস্কেটবল কোচ হিসেবে জয়েন করতে ডাক পরে তার। আর ফ্যামিলি নিয়ে বেশ অনাড়ম্বর এক পরিবেশে যাত্রা শুরু হয় তার নতুন কোচ হিসেবে। তাকে বলা হয় চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগীতার জন্য কলেজে টিম তৈরী করতে। কিন্তু স্বল্প বাজেটের কারণে ভালো খেলোয়াড়দের নিয়ে টিম করার সুযোগ ছিল না কোচের। তিনি তখন শহর থেকে খুঁজে খুঁজে স্কিল্ড প্লেয়ারদের বের করে আনার মিশনে নামলেন আর স্বল্প বাজেটে আফ্রিকান-আমেরিকান কালো ৭জন দক্ষ বাস্কেটবল প্লেয়ারকে স্কলারশিপের সুযোগ করে দিয়ে তার টিমের জন্য বাছাই করলেন। আসলে এই ৭জন প্লেয়ারদেরকে একদম স্ট্রীট প্লেয়ার বলা যায়, বাস্কেটবল খেলার ক্ষেত্রে যাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষন নেই, কিন্তু তাদের প্রত্যেকে এই খেলাটাকে খুব বেশি ভালোবাসে। কোচ “Don Haskins” চেয়েছিলেন দক্ষ প্লেয়ার, তাই তিনি গায়ের রং এর কথা ভাবার দরকারই মনে করেন নি। আর তাই ৭জন কালো প্লেয়ার এবং ৫জন সাদা প্লেয়ার নিয়ে শুরু হয় তার “মাইনার” নামক বাস্কেটবল টিমের যাত্রা। কোনো কিছুতে কালো মানুষদের ম্যাজরিটি তো তখন সমাজ মানতেই পারত না। সেজন্য কোচ প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কেউ খুশি ছিল না কোচের এই টিম সিলেকশনে। কোচ এই ভিন্ন পথ বেছে নেয়ায় ব্যাপারটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। এই টিমে মাইনর ছিল হোয়াইট প্লেয়ার, তারা তখন কালোদের সাথে এডজাস্ট করতে পারছিল না। শুধু ঝগড়া বেঁধে যেত । এছাড়া প্লেয়ারদের কেউই প্রফেশনাল ছিল না, যাস্ট বাস্কেটবল খেলতে ভালোবাসত তাদের নিজেদের নিয়মে। একটা বিশৃঙ্খল টিমই বলা যায় একে, যে টিমের উপর কারো আস্থা না থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু কোচ তার চেষ্টা শুরু করলেন নিজের নিয়মে, এদেরকেই তিনি চ্যাম্পিয়নশীপের উপযোগী করে তোলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যেন! তিনি বিশ্বাস করতেন, তিনি সঠিকভাবে গাইড করলে এবং খেলোয়াড়রা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করলে এই টিমের দ্বারাই চ্যাম্পিয়নশীপ জেতা সম্ভব। টিমের ট্রেনিং এর প্রথম দিনেই টিম মেম্বারদের কিছু ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন কোচ। যেমন- এতোদিন তারা যেভাবেই খেলেছে, এখন থেকে তাদেরকে কোচের নিয়মে খেলতে হবে, কোচ যেভাবে বলবে সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। কোনো ধরনের আনন্দ উল্লাস করে রাতে সময় নষ্ট করা যাবে না। তাদের স্বপ্ন আর ভালোবাসার জায়গা হবে শুধুই বাস্কেটবল। কিন্তু কোচের কথা পাত্তা না দিয়ে ঠিকই প্লেয়াররা রাত হলে নাইট পার্টিতে চলে যায়, একজন একটা মেয়ের প্রেমেও পরে যায়, হই হুল্লোড় আর উল্লাসে মেতে থাকে রাত হলেই। দিনে তখন প্র্যাক্টিসের সময় আর এনার্জী থাকে না কারো। কোচ এটা বুঝতে পেরে শাস্তি দেন ওদের, টিম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। কোচের কড়া শাসন আর কেয়ারিং এ আস্তে আস্তে তারা বুঝতে শুরু করে যে, তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে নিজেদের তৈরী করার জন্য। সেই ভাবেই তারা সিরিয়াসলি প্র্যাক্টিস করতে থাকে। তবে টিমে সাদা কালো প্লেয়ারদের মাঝে সব সময় একটা দূরত্ব থেকেই যায়। কিন্তু তারা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে একটা সময় সবাই মিলে শক্তিশালী একটা টিমে পরিণত হওয়ার জন্য। এর মাঝেও আরও প্রতিবন্ধকতা আসে তাদের। একজন নিগ্রো প্লেয়ারের হার্টের প্রব্লেম ছিল, আরেকজন ছিল দুর্বল প্রকৃতির। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে তারা বাস্কেটবল ভালবাসত। তাই টুর্নামেন্টে খেলার এই সুযোগটাকে সিরিইয়াসলি নিল তারা। হার্টের সমস্যা থাকার কারণে কোচ ওই প্লেয়ারকে খেলতে দিতে না চাইলে, ওর মা এসে রিকুয়েস্ট করে যে, ওর ছেলে বাস্কেটবল ভালোবাসে। তাই যাই হোক না কেন তাকে যেন খেলতে দেয়া হয়, কারণ এটাই ওর স্বপ্ন। এভাবেই এক সময় তাদের টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে যায়, আর কয়েকটা টুর্নামেন্ট জিতেও যায় তারা। কিন্তু সব জায়গায় তারা হেয় হয় বার বার কালো প্লেয়ারদের টিম হওয়ার কারণে। টিমে সাদা প্লেয়ার থাকলেও ম্যাজরিটি বেশি কালোদের। বার বার মানুষের কাছে বিভিন্নভাবে অপমানিত হতে হতে এক টিম হয়ে যেন তারা খেলতে পারে না। মাঠেই এক টিম সাদা কালো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে খেলতে শুরু করে। আর হেরে যায় তারা খেলা শেষে আবারও টিমের মাঝে অনেক তর্ক বিতর্ক হওয়ার পর তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে একসাথে টিম হয়ে খেলার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এরপরও তাদের উপর মানুষের অত্যাচার চলতেই থাকে। ন্যাশনাল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য মাঠে প্রবেশের সময় দর্শক সারি থেকে কালো প্লেয়ারদের লক্ষ্য করে অনেক ডিম ছুড়ে মারা হয়। তাদের হোটেল রুমের বিছানাপ্ত্র সব এলোমেলো করে, রং ছিটিয়ে একদম বাজে অবস্থা করে রাখা হয়, হোটেল রুমে থাকতেই পারে না তারা। এসব মোকাবিলা করে একেবারেই মনোবল ভেঙে যায় ওদের। ওই সময়টায় তারা অনুভব করে জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মুখোমুখি তারা। এমন পরিস্থিতিতে অন্তত আর পরেনি, কারণ তারা ছিল এতো অগোচরে অবহেলিত রূপে, সমাজের সামনে নিজেদের আত্মপ্রকাশ এভাবে এই প্রথম। আর সেটার পরিণতিও তাই ভয়াবহ। একেবারেই বিধ্বস্ত অবস্থা তখন টিমের সবার। কোচ তখন তাদের এই বলে ইন্সপায়ার করে যে, এই অত্যাচারের জবাব তাদেরকে চ্যাম্পিয়নশীপ জিতেই দিতে হবে। তাদের ভেতরের উত্তপ্ত আগুনটা খেলায় প্রকাশ হোক, তাই চেয়েছিলেন কোচ। কাঙ্ক্ষিত সেই ফাইনাল খেলাও চলে আসে। আর এই “মাইনার” টিমের বিপক্ষ দলে খেলে সবচেয়ে শক্তিশালী টিম , যারা কয়েকবারের চ্যাম্পিয়ন এবং তাদের সবাই হোয়াইট প্লেয়ার। স্বাভাবিক ভাবেই স্ট্যাডিয়াম জুড়ে বিপক্ষদলের সাপোর্টারই বেশি থাকে। তাছাড়া সেখানে সবকিছুতেই সাদাদের রাজত্ব। সেখানে বেশ অসহায়ই বলা যায় তাদের। কোচ ভাবতে থাকে কি করে তার টিম কে ইন্সপায়ার করা যায়, মনোবল বাড়িয়ে দেয়া যায় , যা তাদের জিততে সাহায্য করতে পারে। কোচ Don Haskins স্ট্যাডিয়ামে একাকি বসে অনেক ভেবে ফাইনালের আগের রাতে তার টিমকে স্ট্যাডিয়ামে নিয়ে আসে কল করে। কোচ ওদের ভেতর থেকে সত্যিকারের স্পিরিট টা বের করে আনতে চায়। এমন বলে যে- তারা চ্যাম্পিয়ন টিম না, তারা আগামীকালের খেলায় হারবে। তবে তারা জিততে পারে, যদি নিজেদের ভেতরের প্রকৃত ট্যালেন্টটাকে বের করে আনতে পারে। কোচ তখন বলে যে, উনি চান কালো ৭জন মাঠে খেলবে ফাইনালে আর সাদা প্লেয়াররা সাপোর্ট দিবে তাদের। এই খেলাটা যাস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ না, এটা কালোদের জন্য একটা যুদ্ধের মত, নিজেদের প্রমাণের একটা অন্যতম সুযোগ। এমনটাই বোঝায় কোচ তার কথা দ্বারা। সাদা প্লেয়াররাও কালোদের তখন সাপোর্ট করবে বলে ভ্রাতৃত্ব প্রকাশ করে, সাহস দেয়। খেলা শুরু হয়, বিরতির ফাঁকেও কোচ তাদের বিভিন্ন ভাবে ইন্সপায়ার করে যেতে থাকে। এমন বোঝায় যে, বিপক্ষ দলই সেরা টিম, তাই ট্রফি কোনওভাবেই তাদের নিতে দিবেনা, তবে সেই ট্রফি কালোদেরকে ছিনিয়ে নিতে হবে নিজেদের সেরা খেলা দ্বারা যোগ্যতা প্রমানের জন্য। আর সবশেষে সত্যি সত্যিই এই কালো প্লেয়ারগুলো ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলে, জিতে যায়। ট্রফি জিতে না শুধু সব মানুষের মনও জিতে নেয় তাদের খেলা দ্বারা। তারা আসলে জিতে যায়, কারণ সাদারা যাস্ট খেলেছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য। কিন্তু তারা জেতার মাধ্যমে প্রমান করতে চেয়েছে যে, গায়ের রং এর পার্থক্য কিছুই না, যদি তাদের সুযোগ দেয়া হয় তবে তারা যে কোনো কিছু জয় করতে পারে। টিমের এই সাফল্যের ইতিহাস তৈরীর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল কোচ Don Haskins এর। কোনোভাবেই তার আত্মত্যাগ, টেকনিক, কেয়ার আর উৎসাহ ছাড়া প্লেয়াররা নিজেদের মনোবল ধরে রাখতে পারত না, নিজেদের সেরাটা দিতে পারত না আর জিততে পারত না। যতবার প্লেয়ার রা ভেঙে পরেছে, তত বার কোচ তাদের টেনে তুলে দাঁড় করিয়েছে আবারও নতুন উদ্যমে। একজন ভালো কোচ, লিডার বা গাইডের ভূমিকা কত বড় হতে পারে তার দলকে জেতানোর জন্য, এই কাহিনীটাই তার উদাহরণ। ** এখন আমাদের সাথে এই মুভির সাদৃশ্যটা বলছি- আমাদের শ্রদ্ধেয় @Razib Ahmed স্যারের কথাই বার বার মনে পরছিল মুভিটা দেখার সময়। কারণ কোচ Don Haskins এর মাঝে আমি স্যারকে দেখছিলাম আর নিজেকে সেই টিমের একজন অংশীদার ভাবছিলাম। স্রোতের বিপরীতে চলা কিন্তু যে কোনো দেশ বা সমাজব্যাবস্থায়ই চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু পরিবর্তন আনতে হলে এই চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে, যেমনটা কালোদের সাপোর্ট দিতে নিয়েছিলেন কোচ Don Haskins আর আমাদের দেশের নারী এবং হতাশাগ্রস্ত তরুণদের জন্য কাজ করছেন আমাদের স্যার। আরেকটা ব্যাপার আমি ভেবেছি মুভিটা দেখার সময় যে, আপনি যখন ক্লাসের টপারদের নিয়ে কোনো টিম করবেন সেই টিমের সাফল্য যতটা সহজ হবে, ক্লাসে ব্যাকবেঞ্চারদের নিয়ে টিম করলে কিন্তু সাফল্য ততটা সহজ হবে না। ব্যাকবেঞ্চারদের সফল করতে হলে এমন একজন লিডার বা কোচ দরকার হবে যার গাইডেন্স তাদের ভেতর থেকে সেরাটা বের করে আনতে সক্ষম হবে। কারণ মেধা সব মানুষের সমান। হতাশাগ্রস্তদের দলে মানুষ নাম লেখায় হয়ত সুযোগের অভাবে ,অবহেলিত হয়ে অথবা অন্য কোন কারণে। যে কারণেই হোক মানুষ তার মেধাকে কাজে লাগিয়ে, নিজের সেরাটা দিয়ে যে কোনো কিছু জয় করতে পারে যদি স্ট্রং কোনো লিডার তাদের গাইড করতে এগিয়ে আসে। আমরা আসলে সব ব্যাকবেঞ্চার আর হতাশাগ্রস্তদের দল, আর নারীরা তো সব সময় অবহেলিত দলের। আর তাই আমাদের নিয়ে কাজ করতে চেয়েছেন Razib Ahmed স্যার, আমাদের থেকে সেরাটা বের করে আনার জন্যই স্যার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বহু বছর ধরে। তিনি কিন্তু বিশ্বাস করেন আমাদের দ্বারা সম্ভব যে কোনো কাজে সফল হওয়া। শুধু দরকার নিয়মিত লেগে থাকা, চেষ্টা করে যাওয়া, নিজের সেরাটা ইনভেস্ট করে সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জন করা। আর স্যার এরজন্য সব গাইডলাইন আমাদের জন্য রেডি করে রেখেছেন। আমরা বার বার ভেঙে পরি বিভিন্ন কারণে, আর স্যার উনার ইন্সপাইরেশনাল কথা লেখা দিয়ে আমাদের শক্তি যুগিয়ে যান। এভাবেই স্যার লেগে থেকে ই-ক্যাব প্রতিষ্ঠা করেছেন, দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি দাঁড় করিয়েছেন এবং তৈরি করেছেন অনেক সাকসেস স্টোরি আর রোল মডেল। সবশেষে বলতে চাই, জিততে হলে আমাদের সেরাটা দিয়েই জিততে হবে। কেউ এসে জিতিয়ে দিয়ে যাবে না। আর স্ট্রং লিডার দ্বারা পরিচালিত এবং সম্মিলিতভাবে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে যাওয়া পরিপূর্ণ একটা টিমের চেয়ে বড় শক্তি কিছু হতে পারে না। এমন একটা টিমের দ্বারা এ কোনো কিছুতে সাফল্য সম্ভব এবং এই স্পিরিটটা ভেতরে থাকতে হবে। Like this:Like Loading... Related Spread the lovemoremore