You are here
Home > Movie Review > মুভি রিভিউ – Million Dollar Baby (মিলিয়ন ডলার বেবি)

মুভি রিভিউ – Million Dollar Baby (মিলিয়ন ডলার বেবি)

মিলিয়ন ডলার বেবি(Million Dollar Baby)
Spread the love

Million Dollar Baby (মিলিয়ন ডলার বেবি)

২০০৪ সালে অস্কারপ্রাপ্ত একটা বক্সিং স্পোর্টস মুভি এই Million Dollar Baby (মিলিয়ন ডলার বেবি), যার মূল চরিত্র একজন নারী বক্সার ম্যাগী, ট্রেইনার ফ্রাঙ্কি ডান আর ট্রেইনারের এসিস্ট্যান্ট এবং সবচেয়ে কাছের বন্ধু স্ক্র‍্যাপ আইরন।

সাধারণত স্পোর্টস মুভিগুলোর শেষ হয় কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলো বিজয়োল্লাসের মধ্য দিয়ে, কিন্তু এই মুভির গল্পটা সম্পূর্ণই ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরী হয়েছে। স্পেশালি শেষ অর্ধাংশ মুভিটা নিয়ে পুরো চিন্তাভাবনাই বদলে দিয়েছিল। শুরুর দিকে সবকিছু বেশ পজিটিভ ভাইব দিয়ে যাচ্ছিল, তাই শেষটা নিজের মত করে কিছুটা ভেবে নিয়েছিলাম। আর তাই শেষাংসের টুইস্ট মারাত্মক আঘাত করেছিল আমার মনের উপর। তাই আমার কাছে এটা স্পোর্টস মুভি মনে না হয়ে, সাইকোলজিকাল গেইম টাইপের কিছু একটা মনে হয়েছে।

যাই হোক, সামারাইজ করে আপনাদের গল্প সম্পর্কে আইডিয়া দেয়ার চেষ্টা করি। আর পাশাপাশি অবশ্যই আমার উপলব্ধিগুলো ব্যাখ্যা করে যাব।

** ট্রেইনার ফ্র্যাঙ্কি

প্রথমে ট্রেইনার ফ্র‍্যাঙ্কি ডানকে আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।

ফ্র‍্যাঙ্কি ডান নিজে একজন বক্সার ছিলেন। জীবনের সবটুকু সময় বক্সিং এর সাথেই কাটিয়ে দিয়েছেন। আগে নিজে রিং এ খেললেও, তার অন্যতম স্বপ্ন ছিল ট্রেইনিং এর মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার উপযোগী ফাইটার তৈরী করা, যে চ্যাম্পিয়নশীপ জিতবে।

তিনি দক্ষ একজন বক্সিং ট্রেইনার হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং “হিট পিট জিম” নামের বক্সিং ক্লাবের পরিচালক ছিলেন। এই জিমেই প্রশিক্ষন দিয়ে বক্সার তৈরী করতেন তিনি।

“বিগ উইলি” নামের একজন আফ্রিকান-আমেরিকান ফাইটারকে তিনি তখন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশীপের উপযোগী করে গড়ে তুলছিলেন। কিন্তু বিগ উইলি চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার উপযোগী হয়ে যাওয়ার পরও ফ্রাঙ্কি ডান তার প্রস্তুতি যথেষ্ট হয় নি ভেবে খেলার সুযোগ দেন নি। আর ঠিক এই কারণে বিগ উইলি তাকে ছেড়ে সফল ম্যানেজার ম্যাকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় চ্যাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহণের জন্য এবং ফ্র‍্যাঙ্কির শেখানো সব টেকনিক ব্যবহার করেই জিতে যায়।

ফ্র‍্যাঙ্কি ডানের আর চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার উপযোগী কোনো বক্সার থাকে না।

এই মানুষটা ভীষণ একা। মুভির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লোকটার প্রতি ভীষণ মায়া আর সহানুভূতি অনুভব করছিলাম। মানুষটা সাহিত্যপ্রেমী, সব অবস্থায় বই পড়তে ভালোবাসত, স্পেশালি কবিতা। হয়ত বই ভাঁজে দুঃখ লুকাবার চেষ্টা বৃথা চেষ্টা ছিল তার।

ফ্র‍্যাঙ্কির পরিবার বলতে যা বুঝেছি, ওর একটা মেয়ে আছে, যার সাথে ওর সম্পর্ক ভালো নেই। এই সম্পর্কটা পুরো মুভি জুড়ে বেশ দ্বিধা সৃষ্টি করেছে। ফ্র‍্যাঙ্কি মেয়েকে মিস করত, চিঠি লিখত, কিন্তু চিঠির ঠিকানা দিত তার নিজের বাড়ির। মানে মেয়ের কাছে কোনো চিঠি পৌঁছাতই না, সব তার কাছেই ফিরে আসত! খুব অদ্ভুত ব্যাপারটা!

** স্ক্র্যাপ আয়রন

স্ক্র‍্যাপ আয়রন ছিলেন ফ্র‍্যাঙ্কির জীম এসিস্ট্যান্ট এবং অনেকটা বন্ধুর মতো। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক তাদের, আর তাই স্ক্র‍্যাপের কাছে ফ্র‍্যাঙ্কির জীবনের গল্পটা বেশ স্পষ্ট। আর বক্সিং করতে গিয়ে স্ক্র‍্যাপ তার একটা চোখ হারিয়েছিল, এটার জন্য ফ্র‍্যাঙ্কি নিজেকে আংশিকভাবে দায়ী করত, আর এই দায়ের বোঝা সারাজীবন বহন করছিল।

স্ক্র‍্যাপ সব অবস্থায় ফ্র‍্যাঙ্কির পাশে ছিল সব সময়, সবকিছু দেখত বুঝত, কখনো ভালো মন্দ উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করত, আবার চুপচাপ শুধু দেখেও যেত।

** ম্যাগী ফিটজগ্যারাল্ড

(ওর পরিচয়ের পাশাপাশি হয়ত এইবার পুরো গল্পটাই বলা হয়ে যাবে।)

মুভির নায়িকা এই ম্যাগী ৩১ বছরের এক তরুণী, যার স্বপ্ন একজন নারী বক্সার হওয়া। ম্যাগী এই বিশ্বাস নিয়ে ফ্র‍্যাঙ্কির কাছে আসে যে, ফ্র‍্যাঙ্কি তাকে ট্রেইন করলে সে চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে।

কিন্তু ফ্র‍্যাঙ্কি তাকে ফিরিয়ে দেয় এই বলে যে, সে কোনো মেয়েকে ট্রেইন করে না।

কিন্তু ম্যাগি তো সহজে হাল ছেড়ে দেয়ার মেয়ে নয়। কারণ জীবনযুদ্ধে প্রায় হেরে যাওয়া একটা মেয়ে সে, যার শেষ স্বপ্ন বলা যায় এটা। তাই সে ফ্র‍্যাঙ্কির জীমে এসে ৬মাসের এডভান্স দিয়ে ভর্তি হয়ে যায়, যা ফ্র‍্যাঙ্কি জানে না।

স্ক্র‍্যাপের কাছ থেকে শোনার পর ম্যাগিকে ফ্র‍্যাঙ্কি বিদায় করে দিতে বলে, কিন্তু ৬মাসের এডভান্স দেয়া বলে বিদায় করতে পারে না। কিন্তু সে ম্যাগিকে ট্রেইনও করে না।

ম্যাগি তারপরও প্রতিদিন নিয়মিত প্র‍্যাক্টিস করতে আসে, ঘন্টার পর ঘন্টা সে এলোমেলো ভাবে প্র‍্যাক্টিস করে যায়। এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত তার প্র‍্যাক্টিস চলতেই থাকে এভাবে। তারপরও ফ্র‍্যাঙ্কি তাকে এভোয়েড করে যেতে থাকে, কিন্তু স্ক্র‍্যাপ ওকে হেল্প করে। ফ্র‍্যাঙ্কিকেও সাজেস্ট করে, এই মেয়েকে নিয়ে সে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশীপের স্বপ্ন দেখতে পারে। ফ্র‍্যাঙ্কি তারপরও পাত্তা দিতে চায় না, নিজের নীতিতেই অবিচল থাকে যে, সে কোনো মেয়েকে ট্রেইন করবে না। তাছাড়া ম্যাগির বয়স ৩১ বছর! এতো বেশি বয়সে কেউ বক্সার হতে পারে এটা ভাবাই যায় না।

ম্যাগি আসলে খুবই দরিদ্র একটা মেয়ে। বাবা নেই, তার পরিবার বিভিন্ন কারণে বিপর্যস্ত। সেই তাই পরিবারকে পরিচালনার জন্য কাজ করে একটা খাবারের দোকানে ওয়েট্রেস হিসেবে। আর মানুষ খেয়ে যাওয়ার পর প্লেটে যে অবশিষ্ট মাংসের টুকরা পরে থাকে, ম্যাগি তাই লুকিয়ে নিয়ে খেয়ে কোনো রকমে চলার শক্তি পায়।

এই মেয়ের স্ট্রাগল, একাগ্রতা নিয়ে প্রতিদিন প্র‍্যাক্টিস করা আর ভালো মানুষী, বিনয়ী আচরণ দেখে এক সময় ফ্র‍্যাঙ্কি ম্যাগিকে ট্রেইনি হিসেবে গ্রহন না করে পারে না!!

শুরু হয় ম্যাগি এবং ফ্র‍্যাঙ্কি উভয়ের স্বপ্নপূরণের লড়াই।

এখন একটু আমার অনুভূতি বলে নেই-

আমি আসলে ম্যাগিকে দেখে নিজের কথাই ভাবছিলাম। আর ফ্র‍্যাঙ্কি ডানকে মনে হচ্ছিল আমার কাছে আমার মেন্টর Razib Ahmed স্যারের মত একজন।

ম্যাগিকে যেমন ফ্র‍্যাঙ্কি প্রথম ট্রেইন করতে রাজি হয় নি, কিন্তু ম্যাগি লেগে ছিল এই ভেবে যে, একদিন তাকে ট্রেইনি হিসেবে ফ্র‍্যাঙ্কি গ্রহন করবেই। ফ্র‍্যাঙ্কি নিজে থেকেই অনেকবার বলেছে, অন্য ট্রেইনারের কাছে যেতে, যারা মেয়েদের ট্রেইনিং দেয়। কিন্তু ম্যাগি হাল ছাড়ে নি, ফ্র‍্যাঙ্কি ছাড়া আর কারো ট্রেইনিং এর উপরই তার বিশ্বাস ছিল না। তাই সে ফ্র‍্যাঙ্কিকেই ট্রেইনার হিসেবে অনেকটা জিতে নিয়েছিল নিজের একাগ্রতা দিয়ে।

আমার ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই হয়েছে। আমি ৮মে, ২০২০ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত  টানা ১৭ মাস লেগে ছিলাম স্যারের বিশ্বাসযোগ্য এবং  আদর্শ ছাত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য। স্যারের সব গাইডলাইন নীরবে ফলো করে গিয়েছি। বিশ্বাস ছিল, একদিন স্যার আমার এই ডেডিকেশনের মূল্যায়ন করবেন, আমাকে নিয়ে গর্বিত হবেন।

আলহামদুলিল্লাহ, আমিও ঠিক একই কারণেই স্যারকে পেয়েছি।  খুব ফিল করতে পারছিলাম তাই ম্যাগিকে।

আরও পড়ুন: মুভি রিভিউ- Glory Road

ফিরে আসি আবারও ম্যাগি আর ফ্র্যাঙ্কির গল্পে

ফ্র্যাঙ্কি ম্যাগিকে ট্রেইন আপ করা শুরু করে। প্রথম যে শিক্ষাটা তাকে দেয় সেটা হল- Always Protect Yourself. অর্থাৎ সব সময় নিজেকে রক্ষা কর।

বক্সিং খেলার মূলমন্ত্র তার এটাই, নিজেকে রক্ষা করতে হবে, বড় ধরণের কোনো আঘাত পাওয়া যাবে না।

কঠোর ট্রেইনিং এর মাধ্যমে ম্যাগিকে তৈরী করতে থাকে ফ্র্যাঙ্ক।  এক সময় সে ফাইট করার উপযোগী হয়ে উঠে। ফ্র্যাঙ্ক ম্যাগিকে তখন অন্য একটা ম্যানেজারের আন্ডারে দিয়ে দেয়। ম্যাগি খুব অসহায় ফিল করে তখন। কিন্তু সেই ম্যানেজারের বক্সার হিসেবেই খেলায় অংশ নেয়। কিন্তু ম্যানেজার লোকটা ইচ্ছা করে ম্যাগির সাথে তার অন্যান্য সেরা সব ফাইটার দের দেয়, ওদেরকে জেতানোর জন্য। ফ্র্যাঙ্ক এটা দেখে সহ্য করতে না পেরে আবার ম্যাগিকে তার ফাইটার হিসেবে গ্রহণ করে এবং শুরু হয় কঠোর প্র্যাক্টিস।

এরপর একে একে  টানা ১২টা ফাইটে ম্যাগি জিতে যায়। সবচেয়ে বেস্ট ফাইটারদেরকে ফ্র্যাঙ্ক টাকা দিয়ে নিয়ে আসে ম্যাগীর সাথে খেলার জন্য, তাকে আরও দক্ষ করে তোলার জন্য। একবার ম্যাগির থেকেও শক্তিশালী একজন বক্সারকে নিয়ে আসে ফাইট করার জন্য, অনেকটা রিস্কই নিয়েছিল। কারণ তাদের স্বপ্ন চ্যাম্পিয়নশীপ। আর সেই ফাইটেই ম্যাগির নাকে মারাত্মক জখম হয়, তাকে ফাইট সেখানেই স্টপ  করে দিতে বলা হয়। কিন্তু ম্যাগি রাজি হয় না, সে ফ্র্যাঙ্কিকে অনুরোধ করে যে কোনো ভাবে নাকের  ব্লিডিং বন্ধ করে দিতে। ফ্র্যাঙ্ক কোনো রকমে চেষ্টা করে অল্প সময়ের জন্য ব্লিডিং বন্ধ করতে সক্ষম হয়। ম্যাগিকে বলা হয় সে মাত্র ২০ সেকেন্ড সময় পাবে ফাইট শেষ করার জন্য। আর ম্যাগি ঠিক তার আগেই ফাইট শেষ করে জয়লাভ করে।

এমন হয় যে, এক সময় তার সাথে ফাইট করার মত বক্সার আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন ফ্র্যাঙ্ক তাকে ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে চ্যাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহণের জন্য। ফ্র্যাঙ্ক ম্যাগিকে একটা ফাইটার কোট উপহার দেয়, যেখানে লেখা থাকে “মো কুশলে”। মো কুশলে নামেই সে পরিচিত ছিল বক্সিং জগতে। এই নামটি তাকে ফ্র্যাঙ্কি দিয়েছিল। এটি একটি আইরিশ শব্দ, যার অর্থ ফ্রাঙ্কি ম্যাগিকে বলে না, ম্যাগি অর্থ জানতে চাইলে বলে চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ের পরই এর অর্থ বলবে।

এদিকে ম্যাগি তখন আর দরিদ্র থাকে না। বক্সার হিসেবে তার বেশ ভালো অংকের টাকা উপার্জন হয়। কিন্তু ফ্র্যাঙ্কি বললেও সে এই টাকা  নিজের জন্য একদমই খরচ করে না। বরং ম্যাগি তার মায়ের জন্য একটা বাড়ি কিনে। কিন্তু তার মা এতে খুশি না হয়ে বরং বিরক্তি প্রকাশ করে, তাদেরকে আরও টাকা কেন পাঠায় না এই বলে অভিযোগ করে আর বলে ম্যাগির জন্য তারা মানুষের কাছে লজ্জিত হচ্ছে। এইসবই ফ্র্যাঙ্কি দেখে, ম্যাগিকে নতুনভাবে উপলব্ধি করে। বুঝতে পারে ফ্র্যাঙ্কি, এই মেয়েটাও ঠিক তার মত একা।

ম্যাগি চ্যাম্পিয়নশীপ খেলতে ইংল্যান্ড যায়। চ্যাম্পিয়নশীপে এক টপ ফাইটারের সাথে তাকে খেলার সুযোগ দেয়া হয়। সেই ফাইটার খুব ডার্টি ফাইটার হিসেবে পরিচিত ছিল। অপজিটদের সব সময় নিয়মের বাইরে গিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করত আর সেটার জন্য পানিশমেন্ট পেত। ম্যাগির সাথে খেলার দিনও একি কাজ করে সে। প্রথম রাউন্ডে ম্যাগিকে নিয়মের বাইরে গিয়ে মারাত্মক আঘাত করে, রেফারি সতর্ক করে তাকে, পেনাল্টি দিবে বলা হয়।

দ্বিতীয় রাউন্ডে গিয়ে ম্যাগি জয়ী হলেও, তৃতীয় রাউন্ডে আবার ম্যাগিকে সে মারাত্মকভাবে আঘাত করে এবং ম্যাগি রিং এ উলটো করে রাখা বসার একটা টোলের উপর কাত হয়ে পরে যায়। সেই সাথে স্ট্রেচে করে রিং ছাড়তে হয় তাকে, পাশাপাশি সব স্বপ্নও শেষ হয়ে যায়। পুরোপুরি প্যারালাইজড হয়ে যায় ম্যাগি।

ফ্র্যাঙ্কি পুরো ইংল্যান্ডের সব হাসপাতালে ফোন দিয়ে খোঁজ নেয় কেউ ম্যাগিকে ভালো করে তুলতে পারবে কিনা। কিন্তু এটা কারো দ্বারাই সম্ভব হয় না। ফ্রাঙ্কি তার এসিস্ট্যান্ট সেই স্ক্র্যাপকে দায়ী করে ম্যাগীর এই অবস্থার জন্য, কারণ স্ক্র্যাপ তাকে অনুরোধ করেছিল ম্যাগিকে ট্রেইন করার জন্য।

ম্যাগির এমন অবস্থা হতে থাকে ধীরে ধীরে যে, তাকে বিছানা থেকে হুইলচেয়ারে টেনে নিয়ে বসাতেই অনেক সময় দরকার হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন ধরতে শুরু করে। পা কেটে ফেলতে হয়। খুব কষ্ট পেতে থাকে ম্যাগি, ফ্রাঙ্কি আর স্ক্র্যাপ সবাই। অথচ এদিকে ম্যাগির ফ্যামিলি এই অবস্থায় আসে ওর কাছে, বক্সিং করে অর্জিত সম্পদের ভাগ নেয়ার জন্য। ম্যাগি মরে যাওয়ার পর যেন তারা সেগুলো অন্তত ব্যবহার করতে পারে!!! এমন করুন অবস্থা যাস্ট সহ্য করা যাচ্ছিল না, কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাচ্ছিল না!!!

এদিকে ম্যাগি ধীরে ধীরে তার আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগতে থাকে। ৩১ বছর বয়সে বক্সার হয়ে মাত্র ১৮ মাসে চ্যাম্পিয়নশীপ খেলার যে যোগ্যতা সে অর্জন করেছে, মো কুশলে হিসেবে যে ভালোবাসা মানুষের থেকে সে পেয়েছে, সেই সব অর্জন স্তিমিত হয়ে যাওয়ার  আগেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চায় সে। আর এজন্য সে ফ্র্যাঙ্কির কাছে হেল্প চায়, তাকে আত্মহত্যায় সাহায্য করতে বলে। ফ্র্যাঙ্কি প্রথমে রাজি হয় না।

ম্যাগি তখন  নিজেই দাঁত দিয়ে জিহ্বা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করে, কিন্তু নার্স খোঁজ পেয়ে যাওয়ায় বাঁচাতে সক্ষম হয়। অতিরিক্ত ব্লিডিং হয় এতে। দুই বার সে এই চেষ্টা করে।

ওর এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ফ্র্যাঙ্কি গির্জায় গিয়ে ফাদারের কাছে জানতে চায় কি করবে। ফাদার তাকে সাবধান করে আত্মহত্যার মত জঘন্য অপরাধের সাথে সে যেন কোনো ভাবেই জড়িত না হয়। তাহলে হ্যাভেন বা হ্যাল কোনটায়ই তার জায়গা হবে না, সে সব হারাবে।

তারপরও ম্যাগির কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে এক রাতে ফ্র্যাঙ্কি হাসপাতালে যায় লুকিয়ে। ম্যাগিকে গিয়ে বলে ওকে সে সাহায্য করতে এসেছে, মুক্তি দিতে এসেছে। তখন সে ম্যাগিকে তার মো কুশলে নামের অর্থ বলে।

“মো কুশলে” অর্থ আমার মেয়ে, আমার রক্ত।

ম্যাগি এটা শুনে খুশি হয়ে।

তখন ফ্র্যাঙ্কি ওর অক্সিজেন পাইপ খুলে দেয় আর অভারডোজ ঔষধ ইঞ্জেক্ট করে দেয়। চিরনিদ্রায় চলে যায় রিয়েল লাইফ ফাইটার ম্যাগি  ফিটজগ্যারাল্ড। আর ফ্র্যাঙ্কি কোথায় যেন উধাও হয়ে যায়, কেউ খুঁজে পায় না তাকে আর। আর এই ঘটনার সাক্ষীও আড়াল থেকে হয় স্ক্র্যাপ।

ম্যাগি আর ফ্র্যাঙ্কি ছিল এই গল্পে একে অন্যের পরিপূরক। ফ্র্যাঙ্কি তার মেয়েকে ভালবাসত, মিস করত কিন্তু যোগাযোগের সুযোগ ছিল না। আর ম্যাগি তার বাবাকে খুব বেশি ভালবাসত, কিন্তু তার বাবাও বেঁচে ছিল না। সব সময় বাবার কথা বলত সে ফ্র্যাঙ্কির কাছে। একে অন্যের শূন্যস্থানটা তাই তারা পূরণ করতে পেরেছিল, আর হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের মানুষ। কিন্তু শেষটা তাদের জন্য সেই করুণ ভাবেই হল।

** শেষকথা **

মুভিটা শেষ করে এতোটাই বিষন্ন হয়ে পরেছিলাম যে, এর মাঝে পজিটিভ কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তবে অবশ্যই সব নেগেটিভ থেকেই পজিটিভ একটা মেসেজ আমরা খুঁজে নিতে পারি। এই মুভি থেকেও তাই পজিটিভ মেসেজটা খুঁজে নিতে হবে।

প্রথমত, ম্যাগিকে ফ্যাঙ্কি প্রথমেই যে মূলমন্ত্রটা শিখিয়েছিল – “Protect Yourself”, সেটাকেই ম্যাগি সিরিয়াসলি নেয় নি। তাই  চ্যাম্পিয়নশীপে প্রতিপক্ষ ফাইটার এমন বাজে ভাবে আঘাত করার সুযোগ নিতে পেরেছে ওর অসতর্কতার জন্য। অবশ্যই আমাদের উচিত মেন্টরের প্রত্যেকটা কথাকে গুরুত্ব দিয়ে মনে রাখা, যত সাধারণ উপদেশই হোক না কেন সিরিয়াসলি নেয়া উচিত।

দ্বিতীয়ত, ম্যাগি অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল নিজের প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তির জোরে। মুভিটা না দেখে বোঝা সম্ভব নয় ও ঠিক কতটা চেষ্টা করেছে বক্সার হিসেবে নিজেকে তৈরী করতে, স্বপ্ন পূরণ করতে। সে প্রমাণ করেছে, মানুষ চাইলে সবই সম্ভব। তাই সে ৩১ বছর বয়সেও বক্সার হতে পেরেছিল, সফলও হয়েছিল, মাত্র ১৮ মাসে চ্যাম্পিয়নশীপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। ম্যাগি তার জায়গা থেকে সফল ছিল তার একাগ্র চেষ্টা আর ডেডিকেশনের কারণে।

আমার মনে একটা লাইন খুব দাগ কেটেছে এই মুভির-

It’s a Magic of Risking Everything for a Dream that Nobody Sees but You.

 


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: