
জিডিপি বিবেচনায়, দক্ষিণ কোরিয়া এশিয়ার ৪র্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং সারাবিশ্বে তাদের অর্থনীতির অবস্থান ১০ম। কোরীয় যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের পর দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিশেবে সারাবিশ্বের কাছেই দক্ষিণ কোরিয়া এক বিস্ময়কর নাম এবং আদর্শ।
কীভাবে তারা এতো দ্রুত সমৃদ্ধি লাভ করেছে? উৎসটা কী ছিল?
হ্যাঁ, দক্ষিণ কোরিয়া এক্ষেত্রে একটা ইউনিক স্ট্র্যাটেজি অনুসরণ করেছে, যাকে বলা হয় ‘সফট পাওয়ার‘। সফট পাওয়ারের মূলভিত্তি হলো, কোরিয়ান সংস্কৃতি, যাকে তারা নিজেদের শক্তিতে পরিণত করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা ডেডিকেটেড ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে সংস্কৃতি রপ্তানীতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হওয়ার জন্য।
কোরিয়ান কালচারকে সফট পাওয়ার হিশেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার মেসেজটি প্রথম দিয়েছিলেন কোরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা এবং অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট Kim Gu. তার উক্তিটা ( ১মার্চ, ১৯৪৮) এমন ছিল যে,
“… আমি চাই আমাদের দেশ বিশ্বে সবচেয়ে সুন্দর হোক। এর দ্বারা আমি বোঝাচ্ছি না এটি সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হোক। কারণ আমি অন্য জাতির দ্বারা আক্রমণের দুঃখ অনুভব করেছি, আমি তাই চাই না আমার দেশ অন্যদের আক্রমণ করুক। এটাই যথেষ্ট যে আমাদের সম্পদ আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে; এটা যথেষ্ট যে, আমাদের শক্তি বাইরের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। শুধুমাত্র একটা জিনিসই আমি সীমাহীন ভাবে চাই, তা হলো একটি অভিজাত সংস্কৃতির শক্তি। এর কারণ, সংস্কৃতির শক্তি আমাদেরকে সুখী করে এবং অন্যদেরকেও আনন্দিত করে।… ”
কী অসাধারণ উক্তি, তাই না! 😊
বলা যায়, কোরিয়ার স্বাধীনতার পেছনের নায়কের এই উক্তির মাধ্যমেই আসলে শুরু হয়েছিল তাদের সেই সফট পাওয়ার মুভমেন্ট এবং যার ফলাফল হচ্ছে, Hallyu বা কোরিয়ান ওয়েভ। দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রধান হাতিয়ার এটাই, আর কোনো রহস্য নেই।
এই আর্টিকেলে কোরিয়ান ওয়েভ নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে।
Hallyu বা কোরিয়ান ওয়েভ কী?
সারাবিশ্বে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির দ্রুত ছড়িয়ে পরা এবং জনপ্রিয়তা অর্জনের যে ঘটনা এটাকেই বলা হয় Hallyu (হ্যালিউ) বা কোরিয়ান ওয়েভ।
কোরিয়ান ড্রামা (কে-ড্রামা), কোরিয়ান মিউজিক (কে-পপ), কোরিয়ান মুভি, গেমস, ফ্যাশন, খাবার, কোরিয়ান বিউটি কসমেটিক্স বা রূপচর্চার উপকরণ, পর্যটন ইত্যাদি সবই এই Hallyu বা কোরিয়ান ওয়েভের মাধ্যমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পরেছে।
প্রথমে এই ওয়েভ চাইনিজ মিডিয়ার মাধ্যমে শুরু হলেও পরবর্তীতে এটি ধীরে ধীরে কোরিয়ার প্রতিবেশি দেশ যেমন জাপান, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং ইউরোপেও বিস্তৃতি লাভ করে। বর্তমানে কোরিয়ান ওয়েভের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনোদন এবং সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক মিডিয়া জগৎ দখল করে ফেলেছে। হলিউড, ডিজনিল্যান্ডের মতো বিখ্যাত ওয়েস্টার্ন মিডিয়াকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে এটি জনপ্রিয়তার দিক থেকে।
বিশেষ করে BTS নামক কে-পপ বয় ব্যান্ডের জনপ্রিয়তা সারাবিশ্বে আকাশচুম্বি। ভক্স মিডিয়া (২০১৮) অনুসারে, বিটিএস সবচেয়ে জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড হিশেবে বিশ্বব্যাপি কোরিয়ান ওয়েভকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। টাইমস ম্যাগাজিন (২০১৮) অনুসারে, ২০১২ সালে PSY এর ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ এর জনপ্রিয়তার মাধ্যমে কোরিয়ান সংস্কৃতির যে ক্রেজ তৈরি করেছিল বিটিএস সেই রেকর্ডও ভেঙে নতুন কোরিয়ান ওয়েভের সূচনা করেছে।
কোরিয়ান ওয়েভ এবং সংস্কৃতিকে আসলে বিভিন্ন দেশের মানুষ বিভিন্ন ভাবে গ্রহণ করেছে। কোরিয়ান ড্রামাগুলো যেন এমন ভাবেই তৈরি করা হয়, যা সবদেশের মানুষ এবং তাদের ভালো লাগার সাথে ম্যাচ করে যায় কোনো না কোনো দিক থেকে।
এক গবেষণায় জানা গেছে,
আমেরিকানদের কাছে কোরিয়ান ড্রামাগুলো রিলাক্সিং এবং চিয়ারফুল, ইউরোপিয়ানদের কাছে কেড্রামা প্লট বেশ সাধারণ এবং রোমান্টিক মনে হয়, এশিয়ানরা কেড্রামা প্লটের সাথে নিজেদের চাওয়া-পাওয়া এবং লাইফস্টাইলের মিল খুঁজে পায়, তাই তারা নিজেদের ক্ষেত্রে সেই ট্রেন্ডগুলো অনুসরণ করতে চায়। গবেষণায় আরও পাওয়া যে, মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে কে-ড্রামার জনপ্রিয়তার কারণ হলো- মুসলিমরা এই ড্রামাগুলো দেখতে নিরাপদ বোধ করে প্রকাশ্য সেক্সুয়ালিটি এগুলোতে না থাকায়।
প্রতিটি কন্টিনেন্ট তথা দেশেরই ইতিহাস সংস্কৃতির পার্থক্য কিন্তু বিশাল। তাই কোরিয়ান ড্রামা মিউজিককে এতোটা বিশালতা দেয়ার ব্যাপারটা কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রি সব বাঁধাকে তুচ্ছ করে আজ আন্তর্জাতিক ভাবেই প্রতিষ্ঠিত এবং স্বীকৃত। তারা সফল হয়েছে প্রতিটি দেশের মানুষের চাহিদার সাথে মিলিয়ে এমন কন্টেন্ট তৈরি করতে, যা তাদের সংস্কৃতিকেও মানুষের মাথায় গেঁথে দিচ্ছে।
কোরিয়ান ড্রামাগুলো আর্টিস্টদের গ্ল্যামার, ভিজুয়াল, অভিনয়, ইউনিক স্টোরি, পারিবারিক বন্ডিং, সামাজিক চ্যালেঞ্জ, জীবনের উত্থান পতন, এ্যাকশন, হাস্যরস, রহস্য, রোমাঞ্চ, রোমান্স ইত্যাদি সবকিছুর এতো অসাধারণ সমন্বয়, যা যে কাউকে টানবে। প্রতিটি ড্রামায় কোরিয়ার সুন্দর প্রকৃতি আর পর্যটন এলাকাকে দারুণভাবে ফোকাস করা হয়, যা ভিউয়ারদেরকে কোরিয়ান পর্যটনের প্রতিও আকৃষ্ট করে। এছাড়াও তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, খাবার সবকিছুই ড্রামার মাধ্যমে ভিউয়ারদের মনে জায়গা করে নিয়েছে তাদের উপস্থাপনার কারণে। আরেকটা কারণে তরুণ প্রজন্ম কোরিয়ান ড্রামার প্রতি এতো আসক্ত, তা হলো ড্রামাগুলোর স্টোরি এবং ক্যারেক্টার তরুণদেরকে অনুপ্রাণিত করে, নতুন জীবনবোধ জাগ্রত করে।
Hallyu বা কোরিয়ান ওয়েভের ধারাবাহিক ইতিহাসঃ
কোরিয়ান ওয়েভের এই ধারাবাহিক অগ্রযাত্রাকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়- Hallyu 1.0, Hallyu 2.0 এবং Hallyu 3.0।
Hallyu 1.0
Hallyu এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বিনোদনের নতুন এক নতুন জগৎ সৃষ্টি করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি। প্রথমে রেডিও টেলিভিশনের যুগ থেকে এর যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে স্মার্টফোনের মাধ্যমে মিউজিক, ড্রামা, ড্যান্স, গেইমিং ইত্যাদিকে ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের বিনোদনের টেস্ট বদলে দিয়েছে এবং নতুন এক সংস্কৃতির ধারা প্রবাহিত এবং বিকশিত করেছে৷
৯০ এর দশকে Hallyu শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিল চাইনীজ মিডিয়া। ১৯৯২ সালে চীনের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনীতিক সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে তখন চীনে দক্ষিণ কোরিয়ার বিনোদন সংস্কৃতি তথা কোরিয়ান ড্রামার প্রচার শুরু হয় এবং দ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে। ১৯৯৭ সালে চীনের সিসিটিভিতে কোরিয়ান ড্রামা “What is love all about” প্রচার হলে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। চীনে এই ড্রামার অডিয়েন্স রেইট ছিল তখন ৪.২% অর্থাৎ ১৫০ মিলিয়ন চাইনিজ ভিউয়ারস ড্রামাটি দেখত। তখন থেকেই চীনের মিডিয়া জগতে Hallyu এর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। কোরিয়ান ড্রামা এবং পপ কালচারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বৃদ্ধির কারণে চীনের মিডিয়াই সেই সময় প্রথম এই শব্দের ব্যবহার করে যা কোরিয়ান ওয়েভ নামে সারাবিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে।
১৯৯৭ সালের শুরুর দিকে “সিউল মিউজিক রুম” নামের একটি রেডিও প্রোগ্রাম বেইজিং থেকে ব্রডকাস্ট করা হয়, যার মাধ্যমে কে-পপ মিউজিক এবং ড্যান্স চীনে পরিচিতি লাভ করে এবং তা চাইনিজ টিনেজারদের মাঝে অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেইজিং ওয়ার্কার্স জিমনেশিয়ামে একটি কনসার্টের আয়োজন করেছিল SM Entertainment এজেন্সির বয় ব্যান্ড H.O.T., যা চীনে কোরিয়ান সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছিল। এই কনসার্টের জনপ্রিয়তাকে ব্যাখ্যা করতে কোরিয়ান নিউজ মিডিয়া প্রথম এই Hallyu বা কোরিয়ান ওয়েভ টার্মটির ব্যবহার করেছিল।
পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের শুরুর দিক থেকে কোরিয়ানরা বিশ্বে কোরিয়ান সংস্কৃতির এই প্রভাব এবং জনপ্রিয়তাকে বর্ণনা করতে এই শব্দের ব্যবহার শুরু করে৷ নব্বই দশকের শেষ দিকে আরও কিছু কোরিয়ান ড্রামা চীনসহ কোরিয়ার প্রতিবেশি দেশগুলোতে এবং এশিয়ার কিছু দেশেও জনপ্রিয় হতে থাকে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। ১৯৯৫ সালে তাদের টেলিভিশন প্রোগ্রাম রপ্তানি ছিল ৫.৫ মিলিয়ন, যা ২৭.৪ গুন বৃদ্ধি পায় এবং ২০০৭ সালে তা ১৫০.৯ মিলিয়নে পৌঁছে অবিশ্বাস্য রেকর্ড তৈরি করে।
কোরিয়ান মুভি জগতে প্রথম সাফল্য ছিল ১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া প্রথম স্থানীয় বিগ বাজেটের একশন মুভি ‘সিরি‘। এটি এতোটাই ব্যবসা সফল হয়েছিল যে ১১ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করে কোরিয়ায় হলিউডের ব্লকবাস্টার মুভি টাইটানিকের আয়কেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক এবং স্যাটেলাইট ব্রডকাস্টিং মিডিয়ার মাধ্যমে চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম সহ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে কোরিয়ান মিউজিক, ড্রামা, মুভির চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০১৬ সালের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০০০ সালের শুরুর দিকে ‘Winter Sonata‘ এবং ‘Jewel in the Palace‘ নামের কে-ড্রামা দুটি শুধু পশ্চিম এশিয়াই না বরং দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায়ও ভাইরাল হয়ে যায়। এর মাধ্যমেই তখন কোরিয়ান ফিল্ম, মিউজিক তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।
২০০২ সালে ‘Winter Sonata’ কে-ড্রামার ডিভিডি জাপানেই বিক্রি হয়েছিল ৩.৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের। জাপানে কোরিয়ান ওয়েভ এর মাধ্যমেই প্রবেশ করেছিল বলা যায়। ২০০৪ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমি এই ড্রামার প্রধান পুরুষ চরিত্রের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন যে, “জাপানে তিনি আমার চেয়ে বেশি জনপ্রিয়।”
Hallyu 2.0
২০০০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে কে-পপ এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে আকর্ষনীয় ড্যান্স এবং মিউজিকের জন্য। এই সময়টায় কোরিয়ান পপ মিউজিককে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিল ইন্টারনেট। বিশেষ করে ইউটিউব এবং সোসাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো কে-পপকে ভাইরাল করতে সাহায্য করে। তবে তখন কে-পপ ইন্ডাস্ট্রির গ্রোথটা স্লো ছিল, কোরিয়ান ওয়েভ এবং গ্লোভাল মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে এখনের মতো এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এটি তখন রাখতে পারে নি। স্লো গ্রোথ সত্ত্বেও, ২০১০ সালে কে-পপ ইন্ডাস্ট্রি ৮০.৯ মিলিয়ন ডলার পরিমাণ মিউজিক রপ্তানি করেছিল। আর কোরিয়ান ড্রামার জনপ্রিয়তা এই সময়ও ধারাবাহিক ভাবেই বাড়ছিল এশিয়ার দেশগুলোতে।
Hallyu 2.0 তে এসে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল আধুনিক কোরিয়ান প্রযুক্তি এবং তাদের উচ্চগতির ইন্টারনেট। একের পর এক নতুন স্মার্টফোন এবং স্মার্ট ডিভাইস তারা বাজারে এনেছে, SNS বা সোসাল নেটওয়ার্কিং সাইট চালু করেছে এবং অনলাইন গেমিং এর বিকাশ ঘটিয়েছে, যা Hallyu 2.0 এর বিবর্তনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০১২ সালে তৈরি এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোরিয়া ২০০০ সালে ১০২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের গেইম রপ্তানি করেছে, যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১০ সালে তারা রপ্তানি করেছে ১.৬ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ গেইম।
Hallyu 3.0
২০১০ এর দশকের শুরু থেকে Hallyu 3.0 এর যুগ শুরু হয়। এই যুগে সারাবিশ্বের সমগ্র মানুষকে ফোকাস করে কে-পপ, কে-কালচার এবং কে-স্টাইলিং এর সমন্বয়ে কোরিয়ান সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে যেন বিশ্বব্যাপী আরও একে বিস্তৃত করা যায়। জানা যায় যে, Hallyu Culture নামে একটি গ্লোবাল প্রমোশনাল টাস্কফোর্স ২০১২ সালের জানুয়ারিতে তারা গঠন করেছিল, যা কোরিয়ান কালচারের সাথে কে-পপ কে সমন্বয় করে কে-কালচার নামে বিশ্বে রিপ্রেজেন্ট করবে।
এরপরই ২০১২ সালে কোরিয়ান সুপারস্টার PSY এর প্রথম মিউজিক ভিডিও ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ ইউটিউবে পাবলিশের পরই রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। মিউজিক ভিডিও’র হাস্যকর ড্যান্স স্টেপ এবং আর্টিস্টদের ভিজুয়াল সব মিলিয়ে নতুন ধারার একটি মিউজিক সারাবিশ্বে বেশ সাড়া ফেলে, ইউটিউবের প্রথম বিলিয়ন ভিউ এর ভিডিও হিশেবে জায়গা করে নেয় এবং একের পর এক রেকর্ড ভেঙে বিলবোর্ডের টপ ২ পজিশন দখল করে।
কোরিয়ান মিউজিকে অসাধারণ বীট, আকর্ষনীয় সাউন্ড মিক্সিং কোয়ালিটি, ইন্সট্রুমেন্টের ব্যবহার সবকিছুরই অসাধারণ সমন্বয় করা হয়, যা মস্তিষ্কে ঢুকে যাওয়ার মতো। কোরিয়ান মিউজিকের সাউন্ড কোয়ালিটিকে তাই আমেরিকান এবং ওয়েস্টার্ন পপ মিউজিকের সাথে একই লেভেলের বলে তুলনা করা হয়। ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোরিয়ান পপ মিউজিক ভিডিও ২০১১ সালে ইউটিউবে ২.৩ বিলিয়ন বার দেখা হয়েছিল, ২০১০ সালের ছিল ৮০০ মিলিয়ন ভিউ। খুব দ্রুতই যে কোরিয়ান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির এই ওয়েভ বিকশিত হয়েছে এবং Hallyu 3.0 কে স্বার্থক করেছে তা পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে।
এর আগে কোরিয়ান ওয়েভ সত্যিকার অর্থে এশিয়ার দেশগুলোর মাঝেই ভালো মতো পৌঁছেছিল। এরপর নেটফ্লিক্সের মতো স্ট্রিমিং সাইটগুলোর মাধ্যমে এটি পশ্চিমা বিশ্বের বিনোদন জগতে ভালো ভাবে প্রবেশের সুযোগ পায়। ২০১৭ সালে কোরিয়ান পরিচালক বং জুন হো নেটফ্লিক্সের অর্থায়নে ‘ওকজা‘ মুভিটি তৈরি করে। একই পরিচালক তৈরি করেছিল ডার্ক কমেডি থ্রিলার মুভি ‘প্যারাসাইট‘, যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং অস্কার সহ একের পর এক এওয়ার্ড জিততে থাকে। ২০২০ সালে প্যারাসাইট সেরা ছবি এবং সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র হিশেবে দুটি একাডেমি এওয়ার্ড জিতে ইতিহাস গড়ে। প্যারাসাইটের মাধ্যমে বিশ্ব অসাধারণ কোরিয়ান কন্টেন্টের বিশেষত্ব বুঝতে পারে এবং এর ধারাবাহিকতায় কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকের সময় অডিয়েন্স কোরিয়ান কন্টেন্টের প্রতি আরও বেশি ঝুঁকে পরে। এরপর যে কোরিয়ান ড্রামা নেটফ্লিক্সের মাধ্যমে সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তা হলো- স্কুইড গেইম। এই ড্রামা নতুন আরেক ধারার কোরিয়ান ওয়েভের শুরু করেছে বলা যায়।
কোরিয়ান ওয়েভের এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিগুলো আন্তর্জাতিক বিনোদন বাজারে কোরিয়ান ট্যালেন্টেড আর্টিস্টদের ডিমান্ড বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুন এবং হলিউডও কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রির সাথে কোলাবরেট করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বিদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতারা এখন কোরিয়ায় প্রযোজনা সংস্থা তৈরিতে ঝুঁকছেন এবং কোরিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্যোগী হচ্ছেন৷
কোরিয়ান ওয়েভের বৈশিষ্ট্যঃ
কোরিয়ান ওয়েভ এতো দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো, এর উন্মুক্ততা উদারতা। ব্যাপারটা এমন যে, তারা নিজেদের সংস্কৃতিকে প্রতিনিয়ত আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে, আপডেট করেছে, কিন্তু মূলভিত্তি থেকে সরে যায় নি। যেহেতু তারা ওয়েস্টার্ন কালচারকেও টপকে যেতে চেয়েছে, তাই তাদের সংস্কৃতিকে সেই ওয়েতেই তৈরি করেছে। তারা আধুনিক সংস্কৃতির পাশাপাশি তাদের হিস্টোরিকাল মিউজিক, ড্রামাগুলোকেও এমন ভাবে রিপ্রেজেন্ট করে পুরনো ঐতিহ্য এবং জায়গাগুলো প্রেজেন্ট করার মাধ্যমে, যা অডিয়েন্সকে আরও বেশি আকর্ষন করে, মুগ্ধ করে।
মৌলিকতা কোরিয়ান ওয়েভের আরেকটি চালিকাশক্তি। অন্যান্য দেশের মতো কোরিয়ান সংস্কৃতিও অন্য সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে বিভিন্ন ভাবে, তারপরও তারা তাদের নিজস্বতা ধরে রেখেছে সৃজনশীলতা এবং নতুনত্ব দিয়ে।
কোরিয়ানরা কালচারাল হাইব্রিডাইজেশনেও বিশ্বাস করে। তারা বিদেশি সংস্কৃতির সাথে নিজেদের সংস্কৃতিকে মিলিয়ে ইউনিক একটা সংস্কৃতির জোয়ার তৈরি করে। এমন যে, আপনি বলতে পারবেন না তারা নিজেদের সংস্কৃতি থেকে সরে এসেছে, আবার এটাও বলতে পারবেন না তারা যথেষ্ট আধুনিক হতে পারে নি। এটিই কোরিয়ান সংস্কৃতি এবং তাদের এই ওয়েভকে বিশ্বের প্রতিটি দেশের মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
Hallyu বা কোরিয়ান ওয়েভে কে-পপ এবং কে-ড্রামার অবদানই বেশি। ইউটিউব, নেটফ্লিক্স এবং বিভিন্ন স্ট্রিমিং সাইটগুলো কোরিয়ান সংস্কৃতিকে অডিয়েন্সের হাতের মুঠোয় পৌঁছে দিয়েছে এবং এগুলো মানুষের অবসরে বিনোদনের জন্য সেরা উৎস হয়ে উঠেছে। কোরিয়ান ড্রামাগুলো মিনি-সিরিজ ধরণের। প্রথমদিকে ড্রামাগুলোর লেংথ বড় অর্থাৎ ১০০ বা তার বেশি এপিসোডের হলেও ধীরে ধীরে এপিসোড সংখ্যা বর্তমানে কমিয়ে আনা হয়েছে এবং স্টোরি লাইন আরও উন্নত করা হয়েছে। বর্তমানে বেশির ভাগ সিরিজগুলোই ১৬-২০ এপিসোডের হয়ে থাকে, প্রতিটি এপিসোড ৩০মিনিট থেকে ১ঘন্টা সময়ের হয়। সপ্তাহে দুই দিন একেকটা ড্রামা সিরিজ প্লে হয়ে থাকে। বিনোদনের জন্য এটুকু সময় কে-ড্রামা সিরিজের জন্য দেয়া সম্ভব হয় অডিয়েন্স যত ব্যস্তই থাকুক না কেনো। তাই বর্তমানের এই ব্যস্ত পৃথিবীতে বিনোদনের নিত্য সঙ্গী এমন সব কে-ড্রামা সিরিজ।
কে-পপ ব্যান্ডগুলো ওয়ার্ল্ড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে এক নতুন ধারার সূচনা করেছে। সময়ের সাথে সাথে বিলবোর্ডের টপ চার্টে তালিকাভুক্ত হয়েছে অসংখ্য কে-পপ মিউজিক এবং বিশ্ব মিডিয়ার নজর কেড়েছে। কে-পপ মিউজিকের নবযুগ শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে সাই (PSY) এর সেই বিখ্যাত ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এই গানটি লেখা হয়েছিল কোরিয়ার গ্যাংনাম শহরের লাইফস্টাইল অবলম্বনে এবং এর সাথে ইউনিক ও আকর্ষনীয় ড্যান্স স্টেপের সমন্বয় অডিয়েন্সকে আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বিগ ব্যাং, গার্লস জেনারেশন, সুপার জুনিয়র, এক্সো এর মতো কে-পপ ব্যান্ডগুলো বিশ্ব মাতাতে হাজির হয়। সম্প্রতি ব্ল্যাকপিঙ্ক এবং বিটিএস এর জনপ্রিয়তা সারাবিশ্বেই আকাশছোঁয়া। এমনকি বিটিএস ওয়েস্টার্ন মিউজিকের জনপ্রিয়তাকেও অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। কোরিয়ান এই আইডলদের খ্যাতি এখন ওয়েস্টার্ন যে কোনো শিল্পীদের থেকেও বেশি।
কে-পপ এর এতো জনপ্রিয়তার কারণ হলো- তাদের অসম্ভব আকর্ষনীয় মিউজিক, পারফেক্ট লুকিং আইডল, আর্টিস্টদের ভোকাল, র্যাপ, মাইন্ডব্লোয়িং ড্যান্স মুভ, মেইকআপ এবং পোশাক… সবকিছুতেই পারফেকশন।
কে-পপ এবং কে-ড্রামা ছাড়াও কোরিয়ান ওয়েভের অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছে কোরিয়ান কম্পিউটার গেইম, অনলাইন গেইম, ফ্যাশন স্টেটমেন্ট, কোরিয়ান মুভি, কোরিয়ান খাবার, পর্যটন, প্রোডাক্ট, ভাষা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি সবই। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে কোরিয়ান ওয়েভে ভূমিকা রাখা জনপ্রিয় মুভিগুলোর মধ্যে অন্যতম My Sassy Girl(2001), A Millionaire’s First Love(2006), Train to Busan(2016) ইত্যাদি। এরপর তো ২০২০ সালে অস্কারপ্রাপ্ত Parasite মুভির মাধ্যমে কোরিয়ান ওয়েভ নতুন মাত্রা পেয়েছে আবারও।
কোরিয়ান ওয়েভে কোরিয়ান গভর্নমেন্টের অবদানঃ
ধারণা করা হয়, যে ফ্যাক্টরটি কোরিয়ান ওয়েভের জন্য প্রথম পথ তৈরি করে দিয়েছিল তা হলো- ১৯৯০ দশকের শুরুর দিকে কোরিয়ানদের জন্য বিদেশ ভ্রমণের উপর কোরিয়ান সরকারের নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত। এটি তখন অনেক কোরিয়ানদেরকে পশ্চিমা বিশ্ব তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোতে বিচরণের সুযোগ করে দিয়েছিল। কোরিয়ানদের অনেকেই সেই দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছিল, অনেকে স্বনামধন্য কোম্পানিতে ক্যারিয়ারও শুরু করেছিল। এই কোরিয়ানরাই ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে কোরিয়ায় ফিরে এসেছিল নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, সৃজনশীল বিজনেস আইডিয়া এবং উদ্ভাবনী এক জগতের সন্ধান নিয়ে। তাদের হাত ধরেই কোরিয়ান প্রযুক্তি, শিক্ষা, বিজনেস, শিল্প এবং বিনোদন জগতে নব বিপ্লব এসেছিল।
এশিয়া ঠিক এই সময়টায়( ১৯৯৭-১৯৯৮) এশিয়ান ফাইনান্সিয়াল ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, যার প্রভাব দক্ষিণ কোরিয়ার উপরও পরেছিল। ক্রাইসিস মোকাবিলায় ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে কোরিয়া IMF থেকে ৯৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল। এশিয়ান ফাইনান্সিয়াল ক্রাইসিসের কয়েক বছর আগেও কোরিয়া ছিল বেশ দরিদ্র একটি রাষ্ট্র এবং তারা দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করতে করতে একে মোকাবিলা করতে শিখে গিয়েছিল। তাই তারা IMF থেকে নেয়া এই ঋণ দ্রুত ফেরত দেওয়ার উপযুক্ত অর্থনীতি তৈরিতে সব ধরণের ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছিল। ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যে ঋন তারা নেয় তার মাত্র ১৯.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করতে পেরেছিল এবং নির্ধারিত সময়ের ৩ বছর আগেই মানে ২০০১ সালে পুরো ঋন পরিশোধ করে দিয়েছিল।
তবে এই ক্রাইসিস কোরিয়ান বানিজ্যে ভালোই প্রভাব ফেলেছিল, বৈশ্বিক ইমেজ নষ্ট হয়েছিল। কারণ বিদেশি ইনভেস্টররা ভাবছিলেন কোরিয়ার অর্থনীতি অবস্থা এখনো ভালো না। তাই কোরিয়া অনেক ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট হারিয়েছিল তখন, পর্যটকও কমে গিয়েছিল। এর সমাধান করতে এবং বিদেশি ইনভেস্টরদেরকে আবার আকৃষ্ট করতে তখন কোরিয়ার রাষ্ট্রপতি কিম দে-জুন এবং তাদের গ্লোবাল পিআর এজেন্সির প্রধান এডেলম্যান মিলে একটি বই লিখেন – “কোরিয়াঃ অন কোর্স – এন্ড ওপেন ফর বিজনেস“।
এই অর্থনৈতিক সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল স্যামসাং এর মতো কোরিয়ান জায়ান্ট কোম্পানি বা গ্রুপ অব কোম্পানিগুলো, যাদেরকে কোরিয়ায় বলা হয় Chaebols. কোরিয়ান অর্থনীতি তাদের উপরই নির্ভরশীল ছিল বলা যায়। কারণ একদম মাইক্রো চিপ থেকে শিপ তৈরি পর্যন্ত প্রতিটি সেক্টরই তাদের অধীনে ছিল। হঠাৎ এই ক্রাইসিসের কারণে এই কোম্পানিগুলো বিশাল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের বিভিন্ন বিজনেস ডিপার্টমেন্ট বন্ধ করে দিতে হয়। বিজনেসের প্রসারতা কমিয়ে তখন তাদের কোর প্রোডাক্ট সার্ভিসগুলোকে ফোকাস করে তারা তখন নতুন বিজনেস মডেল তৈরি করে। এটা আবার উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছিল এবং বিভিন্ন সেক্টরে নতুন করে ক্ষুদ্র বিজনেস ফার্ম তৈরি করছিল তারা।
কোরিয়ান সরকার তখন বুঝতে পেরেছিল, একচেটিয়া ভাবে Chaebols দের উপর নির্ভর করা তাদের উচিত না। কারণ এগুলো ফেইল করলে দেশের অর্থনীতি ধ্বসে পরবে।
প্রেসিডেন্ট কিম দে-জুন তখন তাই ভবিষ্যৎ কোরিয়ার অগ্রগতির জন্য ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং পপুলার কালচার এই দুইটা সেক্টরকে বিশেষভাবে ফোকাস করার কথা ভাবলেন। কারণ প্রচলিত প্রাচীন ধারা থেকে বেরিয়ে দেশে নতুন সেক্টর তৈরি এবং শিল্পায়নে প্রযুক্তি ভূমিকা রাখতে পারবে এবং তাদের পপুলার কালচার বিলিয়ন ডলারের প্রধান রপ্তানি পণ্য হবে, যা কোরিয়াকে বিশ্বে নতুন ভাবে ব্র্যান্ডিং করবে।
কোরিয়ার প্রধান Chaebol কোম্পানি স্যামসাংও এই ক্রাইসিসের পর ইন্টারন্যাশনালি বিজনেসকে প্রসার করার জন্য নতুন স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল। এটিও কোরিয়ান ওয়েভের অগ্রগতিতে ভূমিকা রেখেছে।
কোরিয়ান চলচ্চিত্রের সেন্সর বোর্ডের উপরও বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ছিল বিভিন্ন বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে চলচ্চিত্র যেন না তৈরি করা হয়। এটি অনেক প্রতিভাবান পরিচালকের স্বাধীন বিকাশে বাঁধা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে এই নিষেধাজ্ঞা সরকার উঠিয়ে নেওয়ায় স্বাধীন ভাবে তারা বিনোদন জগতে সৃজনশীল সাহসী কাজগুলো দেখাতে পেরেছিল, যা এই ইন্ডাস্ট্রি কে সমৃদ্ধ করেছে।
কোরিয়ান সরকার বিশাল বাজেট ব্যয় করেছে তাদের হাইটেক ইন্টারনেট ইনফ্রাস্ট্রাকচারের উন্নতির জন্য, নাগরিকদের উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের সাথে যত বেশি সম্ভব কানেক্ট থাকতে পারার সুবিধা দেয়ার জন্য। সরকার দেশের স্টার্টআপগুলোতেও বাজেটের একটা অংশ ইনভেস্ট করেছে। কোরিয়ার ভেঞ্চার ক্যাপিটালের এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় হয় তাদের এন্টারটেইনমেন্ট খাতে।
কোরিয়ান ওয়েভে সরকারের ব্যয়কৃত বাজেটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল, দেশের বিভিন্ন কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিগুলোতে ৩০০ কালচারাল ডিপার্টমেন্ট ওপেন করা। এই ডিপার্টমেন্টগুলো অনেক মেধাবী আর্টিস্ট তৈরি করেছে, যারা কোরিয়ান ওয়েভের অগ্রগতিতে অবদান রেখেছে।
কোরিয়ান ওয়েভে ইউটিউবের ভূমিকাঃ
বিশ্বজুড়ে কোরিয়ান ওয়েভের এতো দ্রুত বিস্তৃতির পেছনে ইউটিউব এবং এর ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্টের ভূমিকা অনন্য। ইউটিউবের কোরিয়ান মিউজিক পার্টনারশিপ প্রধান বলেন, “ইউটিউবের গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম ছাড়া কে-পপের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করা হয়তো অসম্ভব ছিল।”
ইউটিউবের সাথে কে-পপের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে কোরিয়ান ‘Big Three‘ এন্টারটেইনমেন্ট এজেন্সি SM entertainment, YG entertainment এবং JYP entertainment এর ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট সাইটের পার্টনারশিপ চুক্তির মধ্য দিয়ে। তাদের এই পার্টনারশিপের সাফল্য দেখা দিয়েছিল ২০১১ সালে, যখন ইউটিউব ম্যাট্রিক্স প্রকাশ করেছিল যে এশিয়ার বাইরে ইউটিউবে কে-পপ এর সর্বোচ্চ ভিউ হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
এজেন্সি এবং ইউটিউবের পার্টনারশিপ অডিয়েন্সকে স্বাধীনতা দিয়েছিল কে-পপ মিউজিক নিয়ে কন্টেন্ট তৈরির জন্য। এটি বেশ কাজে দিয়েছিল। কারণ এতে অডিয়েন্সরা বিভিন্ন কে-পপ মিউজিকের ড্যান্স কভার ভিডিও তৈরি করে আপলোড করেছে, কে-পপ রিএকশন ভিডিও করেছে, মিউজিকগুলোর রিমেক করেছে। এভাবে প্রচুর ইউজার জেনারেটেড কন্টেন্ট চ্যানেল ইউটিউবে কে-পপ মিউজিককে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়ায় এটি দ্রুত আরও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। অডিয়েন্সরাই এখানে প্রমোশনের দায়িত্ব পালন করেছে।
কোরিয়ান ওয়েভের অনুপ্রেরণা এবং আমাদের দেশি পণ্য ওয়েভঃ
২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে ফেইসবুকে ছোট আকারে দেশি পণ্য ওয়েভের ডাক দেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সাবেক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজিব আহমেদ। এটি প্রথমদিকে কয়েকটি গ্রুপে সীমাবদ্ধ ছিল এবং ধীরে ধীরে তা এখন তিন বছর পর এসে দেশি পণ্য নিয়ে ৫০০-১০০০ ফেইসবুক গ্রুপ হয়ে গেছে। গ্রুপগুলোতে প্রতিদিন প্রচুর পোস্ট বিভিন্ন দেশি পণ্য নিয়ে এখন আসছে। সঠিকভাবে পোস্ট সংখ্যা বলা না গেলেও ৫-১০ হাজার পোস্ট আসে বলে রাজিব আহমেদ মনে করেন।
দেশি পণ্যের ওয়েভের ব্যাপারে রাজিব আহমেদ কোরিয়ান ওয়েভ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে তিনি ডিজিটাল স্কিলস গ্রুপে একবার উল্লেখ করেছেন। এ নিয়ে তিনি একটি হোমওয়ার্ক দিয়েছিলেন এবং একটি অনলাইন ওয়ার্কশপও করেছিলেন ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপ থেকে। ওয়ার্কশপে কোরিয়ান ওয়েভ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল এবং অনেকে গ্রুপে তা নিয়ে পোস্ট লিখেছিলেন। এছাড়াও জনপ্রিয় কে-পপ ব্যান্ড বিটিএস নিয়েও রাজিব আহমেদ ২০২০ সালের শেষের দিকে একটি হোমওয়ার্ক দিয়েছিলেন। তখনও বিটিএস নিয়ে গ্রুপে ১০০ এর বেশি পোস্ট এসেছিল।
কোরিয়ান ওয়েভ ছিল কোরিয়ান সংস্কৃতিকে তুলে ধরার সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা। আর দেশি পণ্য ওয়েভ হচ্ছে বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা। এই দুটি বিষয়ের হয়তো সরাসরি কোনো মিল নেই, আবার বেশ ভালো মিলও রয়েছে। কোরিয়ান ওয়েভের মূল উদ্দেশ্য ছিল কোরিয়ান সংস্কৃতিকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া এবং এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির চিন্তাও ছিল। যা এই আর্টিকেলে আগেই বলা হয়েছে যে, ১৯৯৭ সালে এশিয়ার অর্থনৈতিক ক্রাইসিস কোরিয়ান ওয়েভের বিস্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশে দেশি পণ্যের ব্যবহার এবং প্রচার নিয়ে খুব বেশি উদ্যোগ এখন পর্যন্ত অনলাইনে চোখে পরে নি। তাই এদিকে আমাদের সংঘবদ্ধ ভাবে চেষ্টা করতে হবে।
সরকারি বেসরকারি প্রচেষ্টা এক্ষেত্রে অনেক বেশি দরকার। আমাদের দেশি পণ্যের প্রচারের ক্ষেত্রে কোরিয়ান ওয়েভ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। আমাদের দেশের গান, সিনেমা, টেলিভিশন প্রোগ্রাম, নাটক সবদিকেই দেশি পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো উচিত। এটি শুধু কিছু উপদেশ বাক্য দিয়ে শেষ করলে হবে না। আমাদের মিউজিক ভিডিও, নাটক, সিনেমা এগুলোতে কীভাবে দেশি পণ্যকে আরও শৈল্পিক ভাবে উপস্থাপন করা যায়, ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
দেশি পণ্যকে কেন্দ্র করে গানের থিম বা টপিক কীভাবে হতে পারে, দেশি পণ্যের ঐতিহ্য এবং ইতিহাসকে কীভাবে মুভির গল্পে রূপ দেয়া যায় সেদিকেও ভাবতে হবে। মিউজিক ভিডিও গুলোতে জামদানি শাড়ি আর্টিস্ট শুধু পরবে তাই নয়, সেই সাথে জামদানি বা বেনারসি শাড়ি কোনো আর্টিস্ট বা নায়িকা তাদের বিয়েতে পরবে সেরকম কল্পনাকেও তুলে আনা সম্ভব। আমাদের এভাবে চিন্তা করতে হবে এবং যত বেশি আমরা এভাবে ভাবতে পারব, যত বেশি কাজে লাগাতে পারব তত বেশি দেশি পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রচারও অনেক গুণ বেড়ে যাবে।
আমাদের দেশি পণ্য ওয়েভের জন্য ফেইসবুককে আমরা খুব ভালো ভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি বলা যায়। আমাদের ফেইসবুকের কন্টেন্টগুলো এখনো টেক্সট এবং ছবিভিত্তিক। সেই তুলনায় ভিডিওর ব্যবহার একেবারেই নেই বললে চলে। বর্তমানে সবার হাতেই স্মার্টফোন রয়েছে এবং স্মার্টফোন দিয়ে ভিডিও করা সম্ভব। আর ভিডিও আপলোড করার জন্য ফেইসবুক, ইউটিউব দুই-ই রয়েছে। টিকটিক, ইন্সটাগ্রাম রিলসও বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয় ১৫ সেকেন্ডের ভিডিওগুলো আপলোড করার জন্য। তাই ভিডিও বানাতে বা আপলোড করতে পারে না কেউ এমন না। কিন্তু এগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চেষ্টা এবং প্রচার এ দুইদিকেই ঘাটতি রয়েছে। মানুষ এখন ভিডিও প্লাটফর্মগুলোতে শুধু ফানি ওয়েতেই ব্যবহার করে, কিন্তু এগুলোকে দেশি পণ্যের প্রচারের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা সম্ভব এই উপলব্ধিটা আসতে হবে আমাদের। এই মুহুর্তে তাই ভিডিওর দিকে আমাদের বেশি নজর দিতে হবে এবং এজন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার।
কোরিয়ান ওয়েভে আমরা যা দেখেছি তা হচ্ছে, সরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত বাজেট ছিল এবং বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি তে কালচারাল ডিপার্টমেন্টও তারা তৈরি করেছিল। বাংলাদেশে এটি রাতারাতি হয়ে যাবে এমনটা আশা করা যায় না। আমাদের যা সামর্থ্য রয়েছে বিশেষ করে দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের এটাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেদিকে চিন্তা করতে হবে। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে তা হচ্ছে যে, শুধু নিজের বিক্রি বাড়বে বা নিজের লাভ হবে এভাবে চিন্তা করলে আসলে দেশি পণ্যের ওয়েভ কখনোই সফল হবে না। যেটা দরকার সেটা হচ্ছে অনেকে মিলে দেশি পণ্যের প্রচার নিশ্চিত করতে পারা। যেমন এখন ময়মনসিংহ ওয়েভ হচ্ছে, যেখানে ময়মনসিংহের উদ্যোক্তাদের কথা আমরা জানতে পারছি, তাদের কাজের সাথে পরিচিত হতে পারছি। তাদের সবাই যে ময়মনসিংহের পণ্য বিক্রি করছে তা নয়, বরং তারা ময়মনসিংহ ভিত্তিক উদ্যোক্তা এবং তারা সেখানে বসে বিভিন্ন দেশি পণ্য বিক্রি করছে। তাই ময়মনসিংহের যদি ১০ জন একসাথে হয়ে তাদের পণ্যগুলো নিয়ে কিছু ভিডিও তৈরি করে তাহলে তা অনেক বেশি কাজে দিবে। ভিডিও তৈরি করে তারপর তা তারা ১০ জন মিলে প্রচার করতে পারে। ময়মনসিংহের জেলা ভিত্তিক পণ্য হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, দেশি পণ্য হলেই হবে।
কোরিয়ান ওয়েভ যখন শুরু হয় তখন দক্ষিণ কোরিয়া মোটামুটি উন্নত দেশ এবং তাদের সরকারের বাজেট ছিল বিলিয়ন ডলার খরচ করার মতো। তাই তারা ৩০০ কালচারাল ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। বাংলাদেশে আমাদের পক্ষে এমনটা বর্তমানে স্বাভাবিকভাবেই সম্ভব নয়। তবে যা করা যেতে পারে তা হলো জেলাভিত্তিক উদ্যোগ সরকার নিতে পারে। প্রতিটি জেলায় একটি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে সেখানে দেশি পণ্যের প্রচার, গবেষণা, ব্যবহার, মেলার আয়োজন, মোটকথা সারা বছর ধরেই কোনো না কোনো ইভেন্ট করার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পারে।
আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও এদিকে এগিয়ে আসতে পারে। দেশি পণ্যের ই-কমার্স এর সাথে ক্যারিয়ারের একটি প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। যারা বিবিএ পড়ছে তারাই শুধু নয়, যে যেই সাব্জেক্টেই পড়ুক না কেনো ই-কমার্সে তাদের প্রত্যেকেরই ক্যারিয়ার হতে পারে। তাই ই-কমার্সে প্রতিটি ইউনিভার্সিটি যদি একটি করে দেশি পণ্যকেও আপন করে নেয় তাহলে এর সুফল তাদের শিক্ষার্থীরাই পাবে৷ শুধু যে তাঁতের শাড়িকেই গ্রহণ করতে হবে তাই নয়, আমাদের অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী দেশি পণ্য রয়েছে। দেশি যে কোনো পণ্যকেই জনপ্রিয় করার ব্যাপারে তারা ভূমিকা রাখতে পারে। আর এভাবে ১০০টি ইউনিভার্সিটি একসাথে এগিয়ে আসলে সারা বছর ধরে দেশি পণ্য নিয়ে যে ওয়েভ হবে তা সোসাল মিডিয়ার কল্যানে হাজার না আসলে লক্ষও না, অন্তত কোটি লোকের নজর কাড়বে। আর যত বেশি বিক্রি বাড়বে তত বেশি কর্মসংস্থান তৈরিতে তা ভূমিকা রাখবে।
কোরিয়ান ওয়েভে প্রথম মূলকথাটাই ছিল ভালো কন্টেন্ট অর্থাৎ ভালো মিউজিক, ভালো টিভি সিরিজ, ভালো মুভি, ভালো কম্পিউটার গেইম ইত্যাদি তৈরি করে সেগুলো প্রচার করা এবং সারাবিশ্বে তা ছড়িয়ে দেয়া। ঠিক একই কাজ আমরা আমাদের দেশি পণ্যের ক্ষেত্রেও করতে পারি। দেশি পণ্যে বিভিন্ন নতুন ইনোভেশন আনা যায়। বাংলাদেশ ভারতের বাইরে শাড়ি খুব একটা জনপ্রিয় নয়। কিন্তু আমাদের তাঁতে তৈরি কাপড় দিয়ে বাইরের দেশের উপযোগী বিভিন্ন পোশাকই তৈরি করা যেতে পারে। এগুলো পরিবেশবান্ধব। তাই আমরা তাঁতের কাপড় দিয়ে ওয়েস্টার্ন পোশাক তৈরি করে যদি এগুলো পরিবেশবান্ধব, শরীরের জন্য আরামদায়ক ইত্যাদি মেসেজগুলোতে ফোকাস করি তাহলে খুব বেশি নজর কাড়বে এগুলো। এ ধরনের ইনোভেশনকে আমরা যদি বিভিন্ন মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে প্রচারের চেষ্টা করি, তাহলে দ্রুত প্রচার সম্ভব হবে। আর কোরিয়ার একটা বড় দুর্বলতা ছিল, তাদের জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশই ইংরেজিতে অদক্ষ ছিল এবং এখন পর্যন্ত তারা ইংরেজিতে যথেষ্ট কাঁচা। সেই তুলনায় বাংলাদেশের একটা বাড়তি সুবিধা রয়েছে ক্লাস ওয়ান থেকে এইসএসসি পর্যন্ত ইংরেজি পড়তে হয়, ইউনিভার্সিটিতেও ইংরেজি বই পড়ানো হয়, এছাড়াও এদেশে প্রচুর ইংলিশ মিডিয়াম, ইংলিশ ভার্সন স্কুল রয়েছে, তাই ইংরেজি পারা লোকদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। তাদেরকে যদি কালচার এবং দেশি পণ্যের সাথে কোনো ভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তাহলে এটার সুফলও আমরা পাব।
কোরিয়ান ওয়েভের সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টির ভূমিকা রয়েছে তা হচ্ছে তাদের জাতীয়তাবোধ এবং সেই জাতীয়তার চেতনা সরকার থেকে এসেছে। আমাদের বাঙালি জাতিও কিন্তু জাতীয়তাবোধের চেতনা থেকেই স্বাধীন হয়েছে, গর্ব করার মতো সমৃদ্ধ বাংলা ভাষা এবং এর পেছনে সমৃদ্ধ ইতিহাস আমাদের রয়েছে। তাই আশা করি আমাদের সেই জাতীয়তাবোধের পরিচয় আমরা আবারও আমাদের দেশীয় পণ্যের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে প্রমাণ করতে পারব এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে দেশি পণ্যের প্রচার প্রসারে অংশ নিব। এর সুফল কিন্তু প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে আমাদের উপরই পরবে।
Additional Links about Korean Wave:
- https://businessmirror.com.ph/2021/12/27/lessons-from-the-korean-wave/
- https://www.asiafundmanagers.com/us/kpop-and-economic-impact-on-south-korea/
- https://www.90daykorean.com/hallyu/
- https://www.iium.edu.my/media/62026/HALLYU%20WAVE%20AS%20A%20MAJOR%20MOTIVATION%20TO%20LEARN%20-%20DAYANA%20NAJWA%20BINTI%20SAMSUDIN%20-%202020.pdf
- https://www.kompasiana.com/hongcitra7276/5f8acdb08ede4854142aa652/the-korean-wave-how-we-can-learn-from-it
- https://www.nytimes.com/2021/11/11/learning/lesson-plans/lesson-of-the-day-from-bts-to-squid-game-how-south-korea-became-a-cultural-juggernaut.html
- https://en.wikipedia.org/wiki/Korean_wave#Background
- https://www.theguardian.com/culture/2022/sep/17/hallyu-south-korean-wave-fashion-art-film-television-music
- https://www.korea.net/AboutKorea/Culture-and-the-Arts/Hallyu
- https://martinroll.com/resources/articles/asia/korean-wave-hallyu-the-rise-of-koreas-cultural-economy-pop-culture/
- https://www.jstor.org/stable/10.5406/j.ctt18j8wkv
- https://www.dailysabah.com/arts/k-wave-how-south-korean-pop-culture-took-over-the-world/news
- https://so05.tci-thaijo.org/index.php/srj/article/view/242682
লেখকঃ
খাতুনে জান্নাত আশা, রিসার্চার, দেশি পণ্য ই-কমার্স
এবং
রাজিব আহমেদ, সাবেক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)