You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক- সুইস ফ্যামিলি রবিনসন (Swiss Family Robinson)

কিশোর ক্লাসিক- সুইস ফ্যামিলি রবিনসন (Swiss Family Robinson)

সুইস ফ্যামিল রবিনসন
Spread the love

“সুইস ফ্যামিলি রবিনসন”

জোহান ওয়েস

 

গল্পটি পড়ে আমার এই রবিনসন পরিবারটিকে খুব ভালো লেগেছিল।

৬ সদস্য বিশিষ্ট পরিবার- রবিনসন, তার স্ত্রী এলিজাবেথ, আর তাদের ৪ ছেলে।

 

পরিবারটি জাহাজে করে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছিল। দুর্ভাগ্যবশত হঠাৎ তীব্র ঝড়ের কবলে পরে জাহাজটি প্রায় লন্ডবন্ড অবস্থায় গিয়ে পাহাড়ের এক ছোট্ট ডিবিতে ধাক্কা খায়৷ ভয় পেয়ে জাহাজের নাবিক সহ অন্যান্য যাত্রীরা এই পরিবারটিকে ফেলে রেখে নৌকায় করেই পাড়ি জমায় উত্তাল সমুদ্রে।

 

এই দৃশ্য দেখে প্রথমে কিছুটা আতঙ্কিত হলেও দ্রুত নিজেকে সামলে নেয় রবিনসন। সে ভেবে খুশি হয় যে জাহাজটা যেভাবে আটকে আছে, এতে তারা অনেকটাই নিরাপদ এখন, ঝড়ের তান্ডব আস্তে আস্তে কমে গেলেই, সকালে সে তার পরিবার নিয়ে তীরের দিকে যেতে পারবে, দূরত্ব খুব বেশি নয়। এটা ভেবেই রবিনসন খুশি হয়ে গেলো আর ভাবল আগে কিছু খাওয়া দরকার।

স্ত্রী এলিজাবেথ খাবারের ব্যবস্থা করে ফেললে সবাই পেট পুড়ে খেল, ছোট ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়লে বড় ছেলে আর রবিনসন ভাবতে লাগল কি করা যায়। জাহাজ ডুবে গেলেও কিভাবে রক্ষা পেতে পারে তারা সেটা ভেবে সমুদ্রে ভেসে থাকার জন্য বাতাস ভরে পিঁপেও বানিয়ে ফেলল।

 

পরদিন সকাল বেলা শান্ত সাগর, ঝড়ের কোনো অস্তিত্বই বোঝা যাচ্ছিল না, তারা বেশ খুশি মনেই তখন নিজেদের কাজে লেগে গেলো এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার উদ্দেশ্যে।

রবিনসনের ছেলেরা খুব কাজের সবাই, বেশ ভালো লাগছে হেসে খেলে কাজ করে এই বিপদের মাঝেও নিজেদের শান্ত রাখার ব্যাপারটা। জাহাজে তারা একটা মাত্র পরিবার, পুরো জাহাজ ঘুরে তারা অনেক রিসোর্স পেয়ে গেলো যার মধ্যে অনেক পশু – পাখিও ছিল।

সারাদিন খেটে তীরে যাবার মতো একটা নৌকাও বানিয়ে ফেলল রবিনসন তার ছেলেদেরকে নিয়ে। আর এর পরদিনই তারা জাহাজ থেকে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে নৌকাটায় চড়ে তীরের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালো। নৌকায় করে এক পাহাড়ি দ্বীপে পৌঁছায় পরিবারটি, থাকার মতো একটা তাঁবুও গড়ে ফেলে, আর রান্নার জন্য একটা চুলা। আপাতত আর কি চাই এই প্রতিকূলতায় টিকে থাকার জন্য!!

 

বিপদে মাথা ঠান্ডা রেখে ভাবলে যে কোনো বিপদই আসলে বড় বিপদ নয়, এই পরিবারটি এটা প্রমাণ করে ফেলেছে।

 

ছোট্ট একটা ঘটনা থেকে শিক্ষা

 

রবিনসনের বড় ছেলে একটা কচ্ছপ শিকার করেছে, বিশাল কচ্ছপ থেকে প্রচুর মাংস পেয়েছে তারা, আর পেয়েছে বিশাল খোলস। রবিনসন তার ৪ ছেলের মতামত জানতে চাইল এই খোলসটা পেলে কে কিভাবে একে কাজে লাগাবে।

 

এক ছেলে বলল- সে ঢাল বানাবে, কোনো শত্রুর আক্রমণ হলে নিজেকে রক্ষা করবে।

একজন বলল- নৌকা বানিয়ে সেটায় চড়ে নদীতে ঘুরে বেড়াবে।

একজন বলল- ছোট্ট একটা ঘর বানিয়ে, খোলসটা দিয়ে ঘরের ছাদ দিবে।

আর সবার বড় ছেলে বলল- নদী থেকে পানি ভরে এনে মা কে দিবে যেন থালা বাসন ধুয়ার সহজ হয়ে যায় মায়ের জন্য।

 

রবিনসন বড় ছেলের মতামত কে এপ্রিশিয়েট করে অন্যদের উদ্দেশ্যে বলল- দেখো, তোমরা সবাই নিজের কথা ভেবেছ শুধু, কিন্তু  তোমাদের বড় ভাই ওর মায়ের চিন্তা করেছে। তাই ভবিষ্যতে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে শুধু নিজের কথা না ভেবে সবার কথা ভাবতে হবে।

কি দারুণ শিক্ষা তাই না!!

আমরা সবাই শুধু নিজেতে মগ্ন থাকি, যা কখনোই ঠিক নয়। সবার কথা ভেবেই প্রতিটি কাজ করতে হবে, প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

রবিনসন এভাবেই ধাপে ধাপে ছোট্ট ছোট্ট কথা কাজের মধ্য দিয়ে তার সন্তানদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে বড় করছিল, একটা প্রতিকূল পরিবেশে সুন্দরভাবে অনেক দিন বেঁচে থাকার উপযোগী করে তুলছিল।

গল্পটা আমাকে ভীষণ পরিতৃপ্ত করেছে।

 

একাকী একটা পরিবারের নির্জন এক দ্বীপে সফলভাবে  কাটিয়ে দেয়ার ১০ বছর পূর্তিতে গল্পটার সমাপ্তি ঘটেছে।

একটানা ১০টা বছর সভ্যতার বাইরের একটা দ্বীপে পুরো পরিবার নিয়ে এভাবে কাটিয়ে দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়! তারা পেরেছিল কারণ তারা প্রত্যেকে ছিল পজিটিভ, পরিশ্রমী, উদ্দমী, সাহসী, আর আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ। ওরা কেউ কাউকে ফাঁকি দেয়নি, নিজেদেরকেও না।

সেখানে সারভাইভ করার জন্য প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিয়ে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করে গেছে, এবং তারা ব্যস্ততা আর কাজের মাঝে ছিল বলেই ১০টি বছর কখন কেটে গিয়েছে খোঁজই পায় নি। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর চেষ্টায় দ্বীপটা যেন স্বর্গে পরিণত হয়েছিল।

 

তবে আমি ওদের প্রতিটি সমস্যার মোকাবিলা এবং প্রতিটি কাজ দেখে যা শিখেছি তা হলো-

 

ওরা অনেক কঠিন এবং অনেক পরিশ্রমের কাজকেও টেকনিকাললি অনেক সহজ করে নিয়েছে, সবকিছু একটা সিস্টেমেটিক ওয়েতে প্ল্যান করে করে এগিয়েছে, তাই সবকিছু এতো সফলভাবে করতে পেরেছিল। তাই শুধু গাধার খাটুনি খেটে গেলেই কিন্তু সফলতা আসবে না, বুদ্ধি খাটিয়ে টেকনিকাললি সবকিছু করলে সব কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়, এবং সফল হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

আরেকটা বিষয় হলো – ওরা আরেকটা ব্যাপার স্ট্রিক্টলি মেনে চলেছে, সেটা হলো প্রতি রবিবারের নিয়মিত প্রার্থনা। হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও তারা এই দিনটা ছুটি নিয়ে প্রার্থনা করে, রেস্ট নিয়ে, নিজেরা গল্পগুজব করে কাটিয়েছে, এই ছুটিটা কিন্তু তাদের প্রশান্তি দিয়েছে, পুরো সপ্তাহের কাজের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করেছে।

তাই ব্যস্ততার মাঝেও নিজের জন্য, সৃষ্টিকর্তার জন্য এবং নিজের পরিবারের জন্য সময় বের করে নিতে হবে, এগুলো হচ্ছে মনের খোরাক।

পরিবার টি সেই প্রতিকূল পরিবেশেও পড়ালেখা থেকে দূরে থাকে নি, ওরা বই পড়েছে, সন্ধ্যাবেলায় সবাই নিয়ম করে পড়তে বসেছে, “রবিনসন ক্রুসো” বই পড়ে তারা প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার শিক্ষা পেয়েছে।

 

গল্পের একমাত্র নারী রবিনসনের স্ত্রী এলিজাবেথের ভূমিকাও নেহাৎ কম নয়। একজন নারী যেভাবে সবাইকে শক্ত বাঁধনে আবদ্ধ রেখে আগলে রাখে এটা কি আর পুরুষদের দ্বারা সম্ভব?!

 

এলিজাবেথকে খুব সাহসী,বুদ্ধিমতী এবং সাংসারিক নারী মনে হয়েছে আমার, একজন নারী ওই অবস্থায় সাপোর্ট দিতে যা যা করতে পারে সবই করেছেন উনি, দারুণ দারুণ কিছু আইডিয়াও দিয়েছেন উনি, যেমন – গাছের উপরে তৈরী সেই “ফেলকন নেস্ট” কিন্তু উনার বুদ্ধিতেই বানানো হয়েছিল।

এছাড়াও পরিবারের খাবার, পোশাক পরিচ্ছদের জোগানও এলিজাবেথই দিয়েছেন। বলা বাহুল্য, এই নারীর অস্তিত্ব ছাড়া শুধু ৪টা পরিশ্রমী পুরুষের দ্বারা এই নির্জন দ্বীপে টিকে থাকা আরও অনেক বেশি কঠিন হয়ে যেত বৈ কি!!

 

এই পরিবারটি সেখানে টিকে থাকতে পেরেছিল কারণ তারা কোনো বিপদ দেখে ভয় পেয়ে পালাতে চায় নি, প্রত্যেকটা বিপদকে সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করেছে। ওরা কোনো কিছু নিয়েই হতাশ হয় নি, সব কিছু থেকে আনন্দ নেয়ার চেষ্টা করেছে, ভালো দিক টা খুঁজে বের করেছে। তাদের জীবনে সবই ছিল, হাসি, আনন্দ, কাজ, ব্যস্ততা পরিশ্রম, ভালোবাসা, একতরফা কাজ আর ব্যস্ততা নিয়ে পরে না থেকে, গল্পগুজব, হাসি, আনন্দের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে দুশ্চিন্তামুক্ত রেখেছে।

পরিপূর্ণ জীবন যাকে বলে সেটাই তারা যাপন করেছে, তাই ভালো থেকেছে।

এই “সুইস ফ্যামিল রবিনসন” আমাদের জন্য অনুকরণীয় একটা পরিবার বলে আমি মনে করি। 😊


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

One thought on “কিশোর ক্লাসিক- সুইস ফ্যামিলি রবিনসন (Swiss Family Robinson)

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: