You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক – “সিরগা”

কিশোর ক্লাসিক – “সিরগা”

কিশোর ক্লাসিক সিরগা
Spread the love

কিশোর ক্লাসিক – “সিরগা

রেনে জুইঅ

 

এই কিশোর ক্লাসিকটি সভ্যতার বাইরের প্রকৃতিতে জন্ম নেয়া এক সিংহ কন্যা আর মানব পুত্রের গল্প।

আফ্রিকার এক জঙ্গলে রাজত্ব করে তখন ‘ওয়ারা’ নামের এক সিংহী। আর ওই বনেরই আদিবাসী পোরগা গ্রামের দলপতি মোকো কাউরো। বনের অন্য প্রানীরা তো বটেই, এই আদিবাসী মানুষগুলোও ওয়ারা কে তাদের রানী মেনেই সাধারণ প্রজা হিসেবে বাস করে সেখানে।

সেই সিংহী রানী ওয়ারা আর দলপতি মোকো কাউরোর স্ত্রী একিদিনে সন্তান জন্মদান করে। সিংহী ওয়ারা’র হলো মেয়ে যার নাম রাখা হল ‘সিরগা’ আর মোকো কাউরোর স্ত্রীর হল পুত্র যার নাম রাখা হল উলে। তারা একে প্রকৃতির খেলা বলে মেনে নিল, ভেবে নিল প্রকৃতি চায় সিংহী কন্যা আর মানবপুত্র একসাথে ভাই বোনের মতোই বেড়ে উঠবে।

হলোও তাই- সিরগা আর উলে গভীর জঙ্গলে বন্ধুর মতো বেড়ে উঠতে লাগল একসাথে, দুজন সারাক্ষন একসাথে খায়, খেলে, শিকার করে, ঘুমায়। একজন যেনো আরেকজনের অনুপস্থিতি ভাবতেও পারে না।

এদিকে হঠাৎ বনে কোনো বিপদ আসার গন্ধ পেল সিংহ রা, সব সিংহ এই বন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল। উলে আর সিরগার দুঃখজনক বিচ্ছেদ ঘটল। সিংহ শিশু কথা বলতে পারে না বলে ভাষা দিয়ে বোঝাতে পারল না বন্ধুকে ছেড়ে যেতে তার কতটা কষ্ট হচ্ছে, তবে উলে ঠিক বোঝে নিল ওর চোখ দেখে। উলে ভাবল সেদিন, আবার এ বনে সে সিংহদের ফিরিয়ে আনবে যে করেই হোক।

পোরগা গ্রামে সত্যিই ভয়াবহ বিপদ এলো, ডাকাতের দল গ্রাম আক্রমণ করল। ডাকাতদের সাথে তুমুল লড়াই এ যখন বুঝল পেরে উঠবে না ওরা, তখন মোকো কাউরো নির্দেশ দিল সব বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার জন্য, যেন ডাকাত রা লুট তরাজ করে নেয়ার মতো কিছু খুঁজে না পায়।

উলে এই আগুন ধরানোর কাজটা করল। পুরো গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে গেল, সব মারা পরল ডাকাত দের হাতে। ডাকাত রা শুধু ছোট বাচ্চাগুলো কে বাঁচিয়ে রেখে ধরে নিয়ে গেল ক্রিতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়ার জন্য, সেই বাচ্চাদের মাঝে উলে আর তার বোন লেনাও ছিল।

ডাকাত রা ওদের নিয়ে বন ছাড়ার পর থেকে উলে যত দেখল তত অবাক হল যে, পোরগা গ্রামের বাইরেও পৃথিবী আছে সেটা সে জানতই না। অনেক অভিজ্ঞতা সে অর্জন করল সভ্য সমাজ থেকে, কিন্তু সে সারাক্ষণ সেই পোরগা গ্রাম আর সিরগার কথাই ভাবত।

ক্রীতদাস হিসেবে উলে কে বেচে দেয়ার পর তাকে এক চিড়িয়াখানার পশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়, আর সব পশুদের সাথে তার প্রকৃতিগতভাবেই এক অদ্ভুত সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়। এই ব্যাপারটা চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ খেয়াল করে এবং তাকে এক বনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় যেখানে কোনো মানুষ কখনো যেতে পারেনা। সেই বন উবি-ইয়াবার দেশ নামে পরিচিত, সে বনে গিয়ে উলে কে সিংহদের রাখালের দায়িত্ব পালন করতে দেয়া হয়।

উলে সেখানে গিয়েও সব প্রানীদের কে খুব দ্রুত নিজের বন্ধু করে নেয়, সব প্রানীর ভাষা যেন তার জানা!! চিতা বাঘ কে পর্যন্ত বশ করে ফেলে এবং  সেই চিতারা তার বাড়ি পাহাড়া দেয়। সেখানেই সে আবার বনের রানী, তার প্রিয় বন্ধু সিরগা কে খুঁজে পায়। দুজনের সে কি খুশি দুজন কে পেয়ে!! তারা সেই বনে হাতির পালের সাথে বিশাল যুদ্ধ করেও জয় লাভ করে, তবে সেই যুদ্ধে “ওয়ারা” মৃত্যুবরন করে।

এরপর একদিন উলে সিরগা কে জানায় সে ওকে নিয়ে আবার পোরগায় ফিরে যেতে চায় তাদের পুরোনো সেই আবাসে। সিরগা রাজি হয়ে যায়। উবি-ইয়াবার দেশ ছেড়ে  উলে, সিরগা তাদের সব প্রানীদের নিয়ে পোরগার পথে পাড়ি জমায়।

সেখানে গিয়ে উলে তার মা কেও জীবিত দেখতে পেয়ে ভীষণ আনন্দিত হয়।  ধীরে ধীরে উলে আবার গড়ে তুলে পুরোনো সেই গ্রাম, অন্য জায়গা থেকে আদিবাসীরা এসে পোরগা তে আবাস গড়ে তুলে আর উলে কে তাদের দলপতি নির্বাচিত করে। আর সিরগা রানী হিসেবে নেয় সেই বনের দায়িত্ব।

আগের অবস্থারই পুনরাবৃত্তি ঘটে আবারও। সিংহ রানী আর মানব পুত্রের খেলা চলতেই থাকে। উলে আর সিরগার এই বন্ধুত্ব প্রকৃতি প্রদত্ত, তাই এটা ঠেকানোর সাধ্য নেই কারো।

সভ্যতার বাইরের প্রকৃতিতে যে সমাজ গড়ে উঠে সেখানে মানুষ আর অন্য প্রাণীদের মধ্যে পার্থক্য কিছু থাকে না, সব প্রানীই সেই সমাজে মিলেমিশে বাস করে প্রকৃতির সন্তান হিসেবে, প্রকৃতিই এর ভারসাম্য রক্ষা করে।


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: