কিশোর ক্লাসিক সামারি রিভিউ-“শ্বেতবসনা” Blog বুক সামারি & রিভিউ by খাতুনে জান্নাত আশা - July 28, 2021August 2, 20210 Spread the lovemore “শ্বেতবসনা”উইকি কলিন্স আটাশ বছর বয়সের ইংরেজ যুবক ওয়াল্টার হার্টরাইট একজন ছবি আঁকার শিক্ষক। তার এক ইতালীয়ান প্রফেসর বন্ধু পেসকার মাধ্যমে লন্ডনের এক অভিজাত জমিদার পরিবারের দুই মেয়েকে আর্ট শেখাবার চাকরি হয় হার্টরাইটের। চাকরিতে জয়েনের ঠিক আগের রাতে ঠিক ১টায় সে যখন মায়ের বাসা থেকে নিজের বাসায় ফিরছিল তখন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। সে ধীরপায়ে হেঁটে ফিরছিল, এমন সময় তার কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেল, চমকে ফিরেই দেখতে পেল ,তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক তরুণী, পরনে তার ধবধবে সাদা গাউন। এতো রাতে এভাবে একটা মেয়েকে রাস্তায় দেখে সে ভীষন অবাক না হয়ে পারল না। মেয়েটা তাকে লন্ডনে যাবার গাড়ি কোথায় পাওয়া যাবে সেখানে পৌঁছাতে সাহায্য করতে বলল। হার্টরাইট মেয়েটাকে পৌঁছে দেবার জন্য হাঁটতে লাগল। দুজন পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতেই অনেক কথা হয়ে গেল। হার্টরাইট জানল লন্ডনের কোনো এক অভিজাত পরিবারের লোক ব্যরনেট দ্বারা এই শ্বেতবসনা মেয়েটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর মেয়েটা জানল হার্টরাইট লন্ডনের লিমোরীজ হাউজের মেয়েদেরকে পরদিন থেকে আর্ট শেখাতে শুরু করবে এবং লিমোরীজ হাউজ এবং সেই পরিবারের মিসেস ফেয়ারলি শ্বেতবসনার খুব চেনা সেটাও জানল। হঠাত একটা ঘোড়ার গাড়ি চলে আসায় শ্বেতবসনা লাফিয়ে সেটায় উঠে হার্টরাইটকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিল। গাড়িটা চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পর ঝড়ের গতিতে আরেকটা গাড়ি এসে থামল এখানে আর জানতে চাইল সাদা পোশাক পরা একটা মেয়েকে দেখেছে কিনা, মেয়েটা পাগলা গারদ থেকে পালিয়েছে। হার্টরাইট শুনে অনেকটা ধাক্কার মতো খেল যে, সে একটা পাগলকে পালাতে সাহায্য করেছে মানে আরও অনেক মানুষের ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু মেয়েটাকে তো ওর কোনো ভাবেই পাগল মনে হয়নি। লিমোরিজ হাউজে এসে এসব ভাবতে ভাবতেই তার নির্ঘুম একটা রাত কেটে গেল। সকালে নাস্তার টেবিলে তার সাথে প্রথম দেখা হলো দুজন ছাত্রীর একজন মেরিয়ান হলকম্বের সাথে, এই মেয়েটাকে দেখতে হার্টরাইটের কাছে অনেকটা কুৎসিত মনে হলো, মুখটা বয়স্ক পুরুষলোকের মতো। মেরিয়ান জানাল আরেক স্টুডেন্ট তার বোন লরা এখন নাস্তা খেতে আসবে না, কারন ওর মাথা ধরেছে। আর বাসার একমাত্র পুরুষ লোক ওদের চাচা মিস্টার ফেয়ার্লি নিজের ঘর ছেড়ে কখনো বের হোন না, সারাবছর উনি অসুস্থ থাকেন। মেরিয়ানের সাথে কথা বলে হার্টরাইট জানতে পারেন যে, লরা আর মেরিয়ানের মা মিসেস ফেয়ার্লি হলেও তাদের বাবা ভিন্ন, মেরিয়ানের বাবা ছিল দরিদ্র আর লরার বাবা ধনী, মেরিয়ান কুৎসিত আর লরা ভীষন সুন্দরী। তবে তদের দুবোনের মাঝে আত্মার সম্পর্ক, একজন আরেকজঙ্কে ছেড়ে থাকতে পারেনা, তাই মেরিয়ান আশ্রয় পেয়েছে লিমোরিজ হাউজে লরার সঙ্গী হিসেবে। হার্টরাইট তখনও রাতে দেখা হওয়া সেই শ্বেতবসনার কথা ভুলতে পারছিল না, তাই কৌতূহল মেটাতে মেরিয়ান কে জিজ্ঞেস করে বসল। মেরিয়ান অবাক হলো, মেয়েটা কে চিনতে পারল না। তবে হার্টরাইটকে আশ্বাস দিল ওর মায়ের পুরোনো চিঠিগুলো বের করে পরবে আর সেখানে এমন কোনো মেয়ের পরিচয় পেলে জানাবে। মেরিয়ান অনেকগুলো চিঠি পড়ার পর একটা চিঠি পেল যেখানে তার মা অ্যান ক্যাথেরিক নামের এক মেয়ের কথা বলেছে, মিসেস ফেয়ার্লি যে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন ওই স্কুলে মেয়েটি এসে ভর্তি হয়েছিল এবং মেয়েটি দেখতে কিনা হুবুহু লরার মতো, কিন্তু লরার চেয়ে কয়েক বছরের বড়। মিসেস ফেয়ার্লির মেয়েটাকে খুব ভালো লাগত, খুব আদর করতেন উনি, তাই লরার কিছু পুরোনো সাদা জামা অ্যানকে উপহার দেন। এরপর থেকে অ্যান সাদাপোশাক ছাড়া অন্য রং পরেনি। চিঠিতে বর্নিত মেয়েটার সাথে শ্বেতবসনার সবই মিলে গেল, এবং হার্টরাইট লরাকে যখন দেখল অবাক হলো, সত্যিই শ্বেতবসনা আর লরার মাঝে অদ্ভুত মিল! রহস্য আরও ঘনীভূত হলো। মেরিয়ান আর হার্টরাইট এই ঘটনা কাউকে আর জানাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিল। এদিকে হার্টরাইট সুন্দরী লরার প্রেমে পরে গেল, লরাও ওর প্রেমে পরেছে মনে হলো ওর। মেরিয়ান এটা বুঝতে পেরে আগেই সাবধান করল হার্টরাইটকে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই তাকে লিমোরিজ হাউজ ছেড়ে চলে যেতে বলল, কারন লরার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে পার্সিভাল নামক এক ধনী লোকের সাথে। ওর মা বাবা মৃত্যুর আগে এই বিয়ে ঠিক করে গিয়েছেন তাই লরা এটা ভাঙতে পারবে না, কদিন পরই ওদের বিয়ে হবে। এটা শোনার পর হার্টরাইট আর এক মুহূর্তও এ বাড়িতে থাকতে চাইছিল না, যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে যেতে চাইল। পরদিনই লরার হবু স্বামী পার্সিভাল বেড়াতে আসবেন এখানে জানতে পারল। তবে হার্টরাইট মেরিয়ানের কাছ থেকে পার্সভালের পরিচয় পেয়ে বুঝতে পারল, শ্বেতবসনা যে লোকটির কথা বলেছিল ওর ক্ষতি করেছে, সেই লোকটাই এই পার্সিভাল। মেরিয়ান কে সাবধান করল ওর সম্পর্কে, কিন্তু মেরিয়ান ওর কথাকে পাত্তা দিল না। ওইদিনই এক অদ্ভুত চিঠি আসল লরার নামে প্রেরকের কোনো সাক্ষর না থাকায় কে পাঠিয়েছে বোঝার উপায় ছিল না। সেই চিঠিতেও লরাকে পার্সিভালকে বিয়ে করার ব্যাপারে সাবধান করা হলো, বলা হলো লোকটা একটা শয়তান। অনেক ভেবে হার্টরাইট সন্দেহ করল চিঠিটা শ্বেতবসনার লেখা। এই ভেবে অনেক খুঁজে সে শ্বেতবসনাকে পেল রাতের আঁধারে মিসেস ফেয়ার্লির কবরস্থানে, মেয়েটা চিঠি পাঠাবার কথা স্বীকার করল এবং পার্সিভালের কথা বলতেই রাগে উত্তেজিত হয়ে পরল। আর কিছুই ওর কাছ থেকে জানতে পারল না হার্টরাইট। যথারীতি পার্সিভাল আসল বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে আর হার্টরাইট বিদায় নিল, ওর বিদায়ে সবাই খুব দুঃখ পেল। কিন্তু লরা তো অপারগ, মা বাবার ঠিক করে যাওয়া বিয়েতে সে তো অমত করতে পারবে না, তাই ভালোবাসা হারাতে হল তাকে। পার্সিভাল সবাইকে হাসি ঠাট্টায় খুব মাতিয়ে রাখত, ওর ব্যবহারেও সন্দেহজনক কিছু মেরিয়ান খুঁজে পেল না, যার জন্য পার্সিভালকে খারাপ বলা যায়। লরা ওর বাবার রেখে যাওয়া এই জমিদারীর একমাত্র উত্তরাধিকারী, বিয়ের তারিখ ঠিক হলে ওর উইলেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। লরা শর্ত দিল ওর উইলে যেন সম্পত্তির কিছু অংশ ওর সৎ বোনের নামে দিয়ে দেয়া হয়, কিন্তু ওর হবুস্বামী এই শর্তে রাজি হলো না, তাই মেরিয়ানকে পুরোপুরি বঞ্চিত করা হলো, আর লেখা হলো লরা যদি তার স্বামীর আগে মারা যায় কোনো সন্তান না রেখে ,তবে ওর সব সম্পত্তি পাবে ওর স্বামী। আসলে পার্সিভালের মূল উদ্দেশ্যই ছিল লরাকে বিয়ে করে ওর সব সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়া, এটা সবাই যখন বুঝতে পারে তখন খুব দেরী হয়ে যায়, পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার কোনো উপায় থাকেনা আর। লরা আর পার্সিভালের বিয়ে হয়ে গেল, যে বিয়েতে কারো মনে আনন্দ বলে কিছু ছিল না। মেরিয়ানের মনে হল যেন লরাকে বিয়ে দিচ্ছে না, কবর দিচ্ছে। বিয়ের পর অনেকদিন লরা কে নিয়ে পার্সিভাল দেশের বাইরে কাটাল, কিন্তু ফিরে আসার পর মেরিয়ান তার মুখ দেখেই বুঝল লরা সুখী নয়।মেরিয়ান পার্সিভালের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তার বাড়িতে কিছুদিন লরার সাথে থাকবে বলল। এখানেও লুকিয়ে জিবনের ঝুঁকি নিয়ে লরার সাথে সেই অ্যানা ক্যাথেরিন বা শ্বেতবসনা দেখা করতে এলো পার্সিভাল সম্পর্কে যে গোপন কথা সে জানে সেটা বলার জন্য, কিন্তু বলতে পারার আগেই তাকে চলে যেতে হল গোপনে তাদের উপর কেউ নজর রাখছে এটা বুঝতে পেরে। পার্সিভালের সঙ্গে আসলে তখন তার আরেক শয়তান বন্ধু কাউন্ট জুটেছিল, যার ছিল পার্সিভালের মতোই মুখে মধু, অন্তরে বিষ। তবে পার্সিভাল বিয়ের পর থেকেই তার আসল রূপে ফিরে এসেছিলেন, লরার সাথে সব সময় খারাপ আচরণ করতেন। আর ওর বন্ধু কাউন্ট আর তার স্ত্রী লরা আর মেরিয়ানের উপর নজরদারী করত ,যা তারা অনেক পরে বুঝতে পারে। এই কাউন্ট ছিল পার্সিভালের থেকেও বড় শয়তান। এক সময় পার্সিভাল লরার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চায়, লরা দিতে রাজী না হওয়ায় শুরু হয় আরও নির্যাতন। আবার যখন শুনতে পায় অ্যানা লরার সাথে দেখা করার জন্য এখানে চলে এসেছে, তখন আরও অস্থির হয়ে যায়, অ্যানাকে খুঁজতে বেরিয়ে পরে সে, কিন্তু পায় না কোথাও। কাউন্ট ওকে তখন জঘন্য একটা বুদ্ধি দেয়, সেটা পার্সিভাল প্রথমে মেনে নিতে না পারলেও টাকার খুব বেশি দরকার ছিল বলে মারাত্মক অপরাধে জড়িয়েই যায়। ওদের পরিকল্পনা মেরিয়ান শুনতে পায়, কিন্তু এরপর প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় ওর আর কিছুই করার থাকে না। এরই মাঝে দ্রুত ঘটে যায় অনেক কাহিনী। হার্টরাইট দেশে ফিরে শুনতে পায় লরার আর নেই, মারা গেছে আর অ্যানা ক্যাথেরিন কে আবার পাগলা গারদে বন্দি করা হয়েছে। ভীষন কষ্ট পায় সে। হার্টরাইট পাগলা গারদে খোঁজ নিতে গেলে নিকাবে মুখ পুরো ডাকা দুইটা মেয়েলোকের সাথে দেখা হয়, এবং তারা কাছে এসে পরিচয় দিয়ে অবাক করে হার্টরাইটকে, ওরা দুজন আসলে মেরিয়ান আর লরা, লরাকেই অ্যান পরিচয়ে ওরা পাগলা গারদে ঢুকিয়েছিল, সেখান থেকে মেরিয়ান ওকে পালিয়ে নিয়ে আসে, আর লরার জায়গায় অ্যানকে ওরা মেরে ফেলেছে পার্সিভালের গোপন কথা যেন সে ফাঁস করে দিতে না পারে। পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে নিয়ে আসার পর লরাকে নিয়ে মেরিয়ান লিমোরিজ হাউজে গেলে ওর চাচা ওকে লরা হিসেবে মেনে নেয় না, কারন লরা মরে গেছে বলেই সে জানে। সেই থেকে ওরা দুজন বস্তির ছোট কুটিরে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে। ওরা জানত হার্টরাইট এখানে খোঁজ করতে আসবে, তাই তারা এখানে এসেছিল। এরপর হার্টরাইট সিদ্ধান্ত নেয় সে এর প্রতিশোধ নিবে। পার্সিভালের গোপনীয়তা ,দুর্বলতা যে করেই হোক খুঁজে বের করবে। অনেক খুঁজে অ্যানার মায়ের সাথে দেখা করে সে, এবং পার্সিভাল সম্পর্কিত সব তথ্য সে ধীরে ধীরে সংগ্রহ করতে থাকে। অবশেষে এতো চেষ্টার পর আসল রহস্য বের হয়ে আসে, পার্সিভাল গ্লাইড আসলে পার্সিভাল গ্লাইড নয়, মানে সে এই পরিচয়টাও চুরি করেছে। তার বিশাল প্রাসাদতুল্য বাড়ীতে আসলে তার অধিকার চাকর বাকর থেকেও কম। হার্টরাইট আরও জানতে পারে অ্যানা ক্যাথেরিনের বাবা আর লরার বাবা একজনই, তিনি মিস্টার ফেয়ার্লি। দুজনই সুদর্শন বাবার মতো হয়েছে বলেই ওদের চেহারায় এতো মিল। শ্বেতবসনার জন্য কষ্টই হলো ওর, মেয়েটা এতো কষ্ট জীবনে সহ্য করার পরপিতৃপরিচয়হীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করল। ওইদিকে হার্টরাইট তার ইতালীয়ান বন্ধু পেসকার মাধ্যমে পার্সিভালের সহযোগী কাউন্টের আসল পরিচয়ও পেয়ে গেল এবং তার কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে পুরো ঘটনার সীকারোক্তী আদায় করল। কাউন্টের মৃত্যু হলো ওর গোপন এক দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ওদের হাতেই। পার্সিভাল তো আগেই কুকর্মের জন্য আর নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করতে গিয়ে পুড়ে মরেছে।এই ভয়ংকর বাজে লোকগুলোর শাস্তি নিজ চোখে দেখার পর হার্টরাইট নিশ্চিন্ত হলো, লরাকে সে বিয়ে করল, সফল হলো তাদের ভালোবাসা। লরা আর মেরিয়ানকে তাদের চাচাও মেনে নিল সব প্রমান পাওয়ার পর। লরা আর হার্টরাইটের ঘর আলো করে জন্ম হলো এক ছোট হার্টরাইটের। ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকলে যে কোনো কাজে দেরীতে হলেও সফলতা আসবেই। হার্টরাইট হাজারও বাঁধার পরও হাল ছাড়েনি, অপরাধীদের দুর্বলতা খুঁজে বের করে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করে তবেই ছেড়েছে। Kh J Asha (শ্বেতবসনা) Like this:Like Loading... Related Spread the lovemoremore