কিশোর ক্লাসিক রিভিউ-“অভিশপ্ত হীরা” বুক সামারি & রিভিউ by খাতুনে জান্নাত আশা - August 2, 20210 Spread the lovemore“অভিশপ্ত হীরা” উইকি কলিন্স নাম শুনে কিছুটা অনুমান করতে পাড়ছেন কি হীরার মতো একটা মূল্যবান ধাতু অভিশপ্ত হলো কি করে!! তাহলে শুনুন এর রহস্য। ভারতের এক মন্দিরের চন্দ্রদেবতার কপালের ঠিক মাঝে বসানো একটা হলদে হীরা, যার নাম দেয়া হয় ‘মুনস্টোন’ বা ‘চন্দ্রকান্তমণি’। তিন সাধু ছিল এটার রক্ষক, সরাসরি ভগবান বিষ্ণু তাদের স্বপ্নে দেখা দিয়ে আদেশ করেছিল অনন্তকাল ধরে একে রক্ষা করার জন্য আর অভিশাপ দিয়েছিল, যে এই হীরার দিকে হাত বাড়াবে সে সপরিবারে দুর্দশাগ্রস্ত হবে। মুনস্টোন কিন্তু ঠিক একদিন চুরি করল এক ইংরেজ সৈন্য, তিন সাধু কিন্তু ঠিক চোরকে অনুসরণ করে চলল আর দেখল তার করুন মৃত্যু। সেই হীরার মালিকানা বদলাল অনেকবার আর সাধুরা তাদের সবার উপর ঠিক নজর রেখে চলল। এভাবে এক সময় হাত বদল হতে হতে এটা লন্ডন পৌছাল এক ধূর্ত ইংরেজ সৈন্যের হাত ধরে। সেই থেকে শুরু হল এর হীরে রহস্য। সেই সৈনিক জন হার্নক্যাসল মৃত্যুর আগে উইল করে তার ভাগ্নীর রাচেল কে জন্মদিনের উপহার হিসেবে হীরা টি দিয়ে যান, আর এটা পৌছানোর ভার দিয়ে যান আরেক ভাগ্নে ফ্রাঙ্কলিন ব্লাকের কাছে। রাচেলের জন্মদিনের আগেই তাই হীরেটা নিয়ে ফ্রাঙ্কলিন চলে আসে ওদের বাড়িতে। ওই তিন সাধু কিন্তু এখানেও হীরার খোঁজে উপস্থিত হয়ে গেল জাদুকরের ছদ্মবেশে। ফ্রাঙ্কলিন এটা বুঝতে পেরে জন্মদিন আসার আগের কয়েকটা দিন নিরাপদে হীরাটাকে রাখার জন্য ব্যাংকে গচ্ছিত রেখে আসে এবং ঠিক জন্মদিনেই সে ওটা রাচেলকে উপহার দেয়। রাচেল তো হীরা পেয়ে ভীষন খুশি, এটাকে সে ওর সাদা পোশাকে পিন দিয়ে আটকে পরে থাকে। কিন্তু পার্টি শেষে সবাই ঘুমাতে চলে গেলে সেই রাতে এটি রাচেলের ঘর থেকেই অদৃশ্য হয়ে যায়। সবাই প্রথমে সন্দেহ করে বাড়ির কাছাকাছি থাকা তিন ভারতীয় সাধুকে। তাদেরকে পুলিশ আটকও করে, তবে পুলিশ জানায় ওরা হীরা চুরি করেনি, বাসার ভেতর থেকেই কেউ সেটা সরিয়েছে। ওদের একজন পরিচারিকা নাম রোজানা স্পিয়ারম্যান, সবার নজর গিয়ে পরে ওর উপর, কারন সেদিন থেকেই সে অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করে। শুধু রোজানাই নয়, রাচেলের আচরণও সবার কাছে খুব অদ্ভুত ঠেকে। কারন সে ফ্রাঙ্কলিনকে ভালোবাসে এটা সবাই জানে, কিন্তু সেদিন থেকে কেনো জানি ফ্রাঙ্কলিনকে সহ্যই করতে পারছিল না, কথা বলছিল না, শুধু রেগে যাচ্ছিল আর হীরা রহস্য উদ্ঘাটন করতে আসা গোয়ান্দাকেও এর তদন্ত করতে বারন করছিল। ওদিকে পরিচারিকা রোজানা সমুদ্রে ডুবে আত্মহত্যা করে বসে। গোয়েন্দা তার কাজ চালিয়ে গেল এবং হীরার মালকিন রাচেলকেই সন্দেহ করে বসল যে, রাচেল নিজেই হয়ত হীরাটাকে লুকিয়ে ফেলেছে সবার অলক্ষ্যে বিক্রি করে দেয়ার জন্য। কেউ গোয়েন্দার এই কথাকে পাত্তা দিল না, এবং এখানেই তদন্তের সমাপ্তি ঘটল। ওদিকে রাচেলের দুর্ব্যবহারে দুঃখ পেয়ে ফ্রাঙ্কলিনও বাড়ি ছাড়লেন, একে একে সব অতিথিরাই চলে গেলেন। বহুদিন পর আবার খোঁজ পাওয়া যায় যে, হীরাটি বাড়ি থেকে সরানো হয়েছিল এবং লন্ডনের একটি ব্যাংক ভল্টে এর সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। ভারতীয় তিন সাধু কিন্তু ঠিকই জানে হীরাটা কোথায় আছে, তারা এর কাছাকাছিই রয়েছে, দেখছে এবং অপেক্ষা করছে উপযুক্ত সুযোগের। এর মাঝেই রাচেলের মা মারা যায়,রাচেল আরও বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, ভীষন মুষড়ে পরে এবং তার আরেক চাচাতো ভাই গডফ্রের কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেয়েও ফিরিয়ে দেয়,সেই ভাই কিন্তু রাচেলের জন্মদিনের পার্টিতেও উপস্থিত ছিলেন। ফ্র্যাঙ্কলিন ব্লেক বিদেশ থেকে আবার ফিরে এসে এই রহস্যের একটা কিনারা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে এসেই প্রথমে জানতে পারে রোজানা স্পিয়ারম্যান মৃত্যুর আগে তার উদ্দ্যেশ্যে একটা চিঠি লিখে যায় এবং তাতে সে ওর অদ্ভুত আচরণ এবং মৃত্যুর কারন উল্ল্যেখ করে। সে আসলে ফ্রাঙ্কলিনকে ভালবেসেছিল, তাই রাচেলের সাথে ওর প্রেমের ব্যাপারটা সহ্য করতে পারছিল না, তাই সে মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করে নেয় এবং হীরা চুরের একটা সূত্র সে সমুদ্র পাড়ের চূরাবালিতে লুকিয়ে রেখে যায়, যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় হীরা চুরে গাউনের ছেড়া কিছু অংশ যেখানে রং লেগে ছিল। রোজানা এই গাউনের ছেড়া অংশটা কেনো রেখে দিল এভাবে, এটা দিয়ে কিসের ইঙ্গিত করল ওরা বুঝতে পারল না। ফ্রাঙ্কলিন এইবার রাচেলের সাথে দেখা করতে যায়, কিন্তু রাচেল ওকে দেখে প্রচন্ড রেগে যায় এবং বলে যে, সেদিন রাতে আসলে ফ্রাঙ্কলিনকেই সে হীরাটা চুরি করতে দেখেছে স্পষ্টভাবে!! কিন্তু এটা কি করে সম্ভব!! ফ্রাঙ্কলিন নিজেই জানেনা, অথচ সে হীরা চুরি করেছে এতোটা শিউর হয়ে রাচেল বলছে কি করে!! এই ঘটনার পর ফ্রাঙ্কলিন খুব দুঃখ পেয়ে আবারও চলে যায় এবং আসল রহস্য বের করতে সক্ষম হয়। সেদিন জন্মদিনের পার্টিতে একজন ডাক্তারও উপস্থিত ছিলেন ,যিনি হিউম্যান সাইকোলোজি নিয়ে গবেষনা করতেন এবং সেটা নিয়ে ফ্রাঙ্কলিনের সাথে ছোট খাটো তর্কও বেঁধেছিল ওদের মাঝে। আর ডাক্তার যাস্ট মজা করেই ফ্রাঙ্কলিনের অলক্ষ্যে ওকে সামান্য পরিমাণ একটা ড্রাগ খাওয়িয়ে দেয়। আর ফ্রাঙ্কলিন আসলে সে রাতে হীরাটার নিরাপত্তা নিয়ে ছিল ভীষন চিন্তিত , তাই সেই ড্রাগের প্রতিক্রিয়ায় আর ওর হীরার চিন্তায় অস্থির , বিক্ষিপ্ত থাকা মন ঘুমের ঘোরে ওর অজান্তেই হীরেটা সরিয়ে ফেলে যার প্রত্যক্ষ্যদর্শী রাচেল নিজে। কিন্তু ঘুম ভাঙার পর সকালে তার আর কিচ্ছু মনে থাকেনা, রাচেলও ওর ভালোবাসার মানুষের এই চুরির ঘটনা গোপন রাখে। তবে রহস্যের শেষ তখনও হয় নি। এখন কথা হলো, হীরাটা তবে গেল কোথায়!! ফ্রাঙ্কলিনের তো কিছু মনে নেই ই। অবশেষে লন্ডনের ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে সেটারও সমাধান হলো। সে রাতে ফ্রাঙ্কলিন হীরাটা নিজের কাছে না রেখে, ঘুমের ঘোরেই গিয়ে ওদের আরেক কাজিন সেই গডফ্রের কাছে দিয়ে বলেছিল, হীরাটা এখানে নিরাপদ নয়, তুমি এটাকে তোমার বাবার ব্যংকের ভল্টে রেখে দাও। কিন্তু সকালে ওর আর কিছু মনে না পরায় সুযোগ পেয়ে গডফ্রে সেটা নিজের কাছেই রেখে দেয় আর লন্ডন গিয়ে এটা বন্ধক রেখে ঋন নেয়। সেই তিন ভারতীয় সাধু কিন্তু ঠিকই সব জানে এবং গডফ্রের পিছু নিয়ে হীরার বন্ধকের মেয়াদ যেদিন শেষ হয় সেদিনই ওকে মেরে হীরাটা ওরা হাতিয়ে নেয়। আর সেই তিন সাধু এতো বছর সাধনার পর মুনস্টোন কে উদ্ধার করে নিয়ে আবার তাদের চন্দ্রদেবতার কপালে একে স্থান দেয়। রাচেল আর ফ্রাঙ্কলিনও বিয়ে করে নেয়। সেই সাথে সব রহস্যের সমাধান এবং অভিশপ্ত হীরার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়ে সবার মাঝে শান্তি ফিরে আসে। আচ্ছা, এখন আপনারা বলুন তো, হীরাটা কি আসলেই অভিশপ্ত ছিল!! নাকি মানুষের লোভ একে অভিশপ্ত করেছে!! লোভে পাপ, পাপে বিনাশ.। এটা সবাই জানে, তারপরও মানুষ লোভ করে নিজেদেরকে অভিশপ্ত জীবনের দিকে ঠেলে দেয়। Like this:Like Loading... Related Spread the lovemoremore