You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক- “নিঝুম দ্বীপে একা”

কিশোর ক্লাসিক- “নিঝুম দ্বীপে একা”

কিশোর ক্লাসিক- "নিঝুম দ্বীপে একা"
Spread the love

“নিঝুম দ্বীপে একা”

স্কট ও ডেল

এই রিভিউটায় আমি অনেক বিশাল করে সেই গৎবাঁধা গল্প লিখতে চাইছি না। কারণ গল্পটা আমাকে ভিন্ন অনুভূতি দিয়েছে। কিশোর ক্লাসিকগুলো প্রায় সবই পেয়েছি পুরুষ কেন্দ্রিক, যেগুলোতে নারী চরিত্রগুলোকে অনেকটা দুর্বলভাবেই ফুটিয়ে তুলা হয়েছে। এই প্রথম একটা শক্তিশালী নারী চরিত্রের দেখা পেলাম। তাই সেই নারীর জায়গায় নিজেকে বসিয়ে ভাবার সুযোগও মিলে গেল।

ভাগ্যের পরিহাসে অ্যালিউটদের নির্মমতার শিকার হয়ে বাবাকে হারাল মেয়েটা আর তার ছোট ভাইটা। অ্যালিউটদের সাথে দ্বীপবাসীর সেই যুদ্ধে বেশির ভাগ পুরুষলোকই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল। একদিন দ্বীপে সাদা মানুষদের জাহাজ এলো, যাদেরকে দ্বীপবাসী আপন লোকের মতোই ভেবে থাকে।
সাদা মানুষেরা বলল, তাদেরকে ওরা নিয়ে যেতে এসেছে। ওদের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে দ্বীপবাসী জাহাজে চরে বসল, মেয়েটাও জাহাজে উঠেছিল। কিন্তু জাহাজটা ছেড়ে দেয়ার ঠিক আগমুহূর্তে তার ভাইকে দেখতে পেল সৈকতে হাত নেড়ে ছুটে আসছে, জাহাজ ততক্ষনে চালু হয়ে তীর থেকে দূরে সরে এসেছে, তাই জাহাজ আর থামাতে রাজি হলো না কেউ। মেয়েটা তখন ভাই এর জন্য জাহাজ থেকে ঝাপিয়ে পরল পানিতে, সাঁতরে পৌছালো দ্বীপে।
কিন্তু ভাই বোনের একসাথে থাকাটাও হয়ত সৃষ্টিকর্তা পছন্দ করতে পারলেন না। ভাইটার মৃত্যু হলো বুনো কুকুরের আক্রমণে। এইবার শুরু হলো একাকী নিঝুপ দ্বীপে থাকা এক মেয়ের আসল জীবন যুদ্ধ বেঁচে থাকার জন্য।
তবে এখানেও সেই মেয়েটা নিজের আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র বানাতে যেয়েও মানসিকভাবে বাঁধাগ্রস্ত হলো যে, তাদের গোত্রে মেয়েদের অস্ত্র বানানো অনেকটা নিষিদ্ধ বলা যায়, মেয়েরা অস্ত্র বানালে সেই অস্ত্রের জন্যই তার মৃত্যু হয় অনেকটা এরকম বলা হত। অনেকটা ভয়ে ভয়ে থেকেও সে অস্ত্র বানালো, কারণ সে এমনিই জীবন মৃতের সন্ধিক্ষনে অবস্থান করছে। এই মুহূর্তে সমাজের নিয়ম মানার চেয়ে বেঁচে থাকতে পারাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সমাজ এভাবেই অদ্ভুত সব নিয়ম তৈরী করে মেয়েদের পিছিয়ে রাখতে চায়, সেই দ্বীপবাসীও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তবে মেয়েটা নিজের জীবন বাঁচানোর তাগিদে হলেও সেই নিয়ম ভেঙেছিল!

অসম্ভব সাহসী একটা মেয়ে সে। দ্বীপের নিঃসঙ্গতা আর বুনো কুকুরের ভয় তাকে দ্বীপ ছেড়ে যেতেও প্ররোচিত করেছিল। একাই সে রওনাও হয় একটা নৌকায় চেপে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার উদ্দ্যেশ্যে!!

কিন্তু কিছুদূর যেতেই ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়, নৌকায় পানি উঠতে থাকে, কাঠে ফাটল দেখা দেয়, তাই বাধ্য হয়েই তাকে আবার ফিরে যেতে হয় নিঝুম দ্বীপে। বুঝতে পারে আবার কোনো জাহাজ এদিকে না আসা পর্যন্ত তাকে এখানেই কাটাতে হবে দিন রাত্রি।
আবার শুরু হয় একাকী বেঁচে থাকার লড়াই। তার সঙ্গী একটা কুকুর ছিল, কিন্তু সেটারও এক সময় বয়সের ভারে মৃত্যু হয়।
সেই নিঝুম নির্জন নিঃসঙ্গ দ্বীপে মেয়েটা জীবনের ২০ বছর কাটিয়ে দেয়ার পর একটা জাহাজ আসে এবং তাকে এই নির্জনতা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

রবিনসন ক্রুসো পুরুষ হয়ে যেমন পেরেছিল নির্জন দ্বীপে সার্ভাইব করে টিকে থাকতে, এই মেয়েটা নারী হয়েও প্রতিকূলতাকে জয় করে টিকে থাকতে পেরেছে।

তাই “আমি তো মেয়ে” একথা বলে যারা জীবনে ফাঁকিবাজি করেছেন, নিজেকে থামিয়ে রেখেছেন, তাদের অবশ্যই এই গল্প টা পড়া উচিত বলে মনে করি আমি।

মেয়েরা আসলে নিজেই নিজেদের পিছিয়ে থাকার জন্য অনেকাংশে দায়ী। যেহেতু মেয়েদের জীবন একটু বেশিই চ্যালেঞ্জিং, তাই সেই চ্যালেঞ্জকে সঙ্গী করেই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াই করে যেতে হবে।


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: