You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক- দ্য লস্ট কিং

কিশোর ক্লাসিক- দ্য লস্ট কিং

Spread the love

দ্য লস্ট কিং

রাফায়েল সাবাতিনি

ফরাসি বিপ্লবীদের হাতে বন্দি হলো রাজা লুই, রানী, রাজপুত্র আর রাজকন্যা।
দীর্ঘ চার বছর কারাবাসের পর রাজার মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করল তারা, এবার রানীকেও মেরে ফেলার সুযোগ খুঁজতে লাগল।
রাজাকে বিচারের আওতায় এনে মেরে ফেলা সহজ ছিল, কারন রাজা প্রজা স্বার্থবিরুধী কাজ অনেক করেছে। তবে রানীর যেহেতু শাসন কাজে কোনো হাত ছিল না, তাই তাকে শাস্তি দেয়াও সম্ভব হচ্ছিল না।
কিন্তু বিপ্লবীরা অনড়, রানীর কোনো অপরাধ না থাকলেও তার উপর দোষ চাপিয়ে হলেও মারবে। সেই লক্ষ্যেই মাত্র নয় বছরের ছোট রাজপুত্রকে নেশাগ্রস্ত করে ওর মায়ের নামে আজে বাজে কথা তোতা পাখির বুলির মতো শিখিয়ে নিল।
আর রাজপুত্র আদালতে নিজের মায়ের নামে তাকে শিখিয়ে দেয়া সেসব জঘন্য বুলি আওড়ালো। এই জবানবন্দিতেই রানীর মৃত্যুদন্ডও নিশ্চত করা হলো।
কারাগারে রয়ে গেল শুধু রাজকন্যা আর রাজপুত্র।
বিপ্লবীদের হাতে রাজতন্ত্রের অবসান হলেও তখনও রাজার অনুগত কিছু প্রজা ছিল, যারা রাজার উত্তরাধিকার একমাত্র রাজপুত্রকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে চাইল।
ওরা জীবনবাজি রেখে অনেক কৌশলে রাজপুত্রকে সরিয়ে আনল বন্দিদশা থেকে, তারা তাকে কোনোভাবে সুইজারল্যান্ডে ওর মামার কাছে পাঠাতে চেয়েছিল।
কিন্তু পরদিনই কারাগারে সবাই জানতে পেল রাজপুত্রকে নিয়ে কেউ পালিয়েছে, ওকে ধরার জন্য বিপ্লবীরা তৎপর হয়ে গেল। সীমান্তে ওদের পুলিশবাহিনী পাঠাল যেন দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে না পারে।
দুজন লোক ল্যা সালে আর ইনেজ রাজপুত্রকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার আগেই পেছনে পুলিশ লাগায়, ল্যা সালে আলাদা হয়ে পরল।
আর ইনেজ তাড়াতাড়ি করে নৌকায় করে রাজপুত্রকে নিয়ে পালানোর সময় নৌকাডুবি হয়ে মারা গেল। ইনেজের লাশ উদ্ধার করা গেলেও, রাজপুত্র একেবারেই নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। তাই বিপ্লবী বা রাজপুত্রের শুভাকাঙ্ক্ষীরা কেউ নিশ্চিত হতে পারল না, সত্যিই সে মরে গিয়েছে কি, নাকি বেঁচে আছে!!
এদিকে এই ঘটনার পর দীর্ঘ বিশ বছর কেটে গেছে। বিপ্লবীদের পরাজিত করে ফরাসীদের শাসনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে খুব সাধারণ পরিবারের ছেলে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট।
কিন্তু ফরাসীদের এই প্রিয় পরাক্রমশালী সম্রাটও হার মানল এক সময়, পরাজিত হল ইংল্যান্ড, রাশিয়া, প্রুশিয়াদের যৌথ আক্রমণে কোনঠাসা হয়ে, আর নির্বাসিত হলো এক নির্জন দ্বীপে।
তখন আর ফ্রান্সকে শাসন করার মতো কেউ ছিল না, রাজবংশের উত্তরাধিকারের মাঝে শুধু বেঁচে ছিল অষ্টাদশ লুই, তাও ইংল্যান্ডে পলাতক হিসেবে ছিল। অতপর সে-ই ফ্রান্সে এসে আবার রাজতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করল।
তবে রাজা হিসেবে এই অষ্টাদশ লুই মোটেই সুবিধার ছিল না, দেশটা কে ভালো ভাবে পরিচালনার কোনো স্বদিচ্ছাই তার ছিল না, শুধু সিংহাসনে বসে থাকা ছাড়া।
এদিকে ল্যা সালে, যে ছোট রাজপুত্রকে কারাগার থেকে উদ্ধার করেছিল, সে কখনোই মন থেকে বিশ্বাস করতে পারেনা যা রাজপুত্রের মৃত্যু হয়েছে। মনে মনে সে সব সময় রাজপুত্রের প্রত্যাবর্তন কামনা করে, আর অযোগ্য রাজার অবসান চায়।
সৌভাগ্যক্রমে রাজপুত্রের সাথে ল্যা সালের মোলাকাত হয়ে যায়, আর ওকে নিয়ে সে ফ্রান্সে ফিরে আসে। রাজতন্ত্রের সমর্থকরা সবাই ওকে রাজা মেনে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানায়।
কিন্তু রাজপুত্রের এই ফিরে আসা বর্তমান নামমাত্র রাজা আর ওর বোন ম্যাডাম রয়েল মেনে নিতে পারেনা। ম্যাডাম রয়েল জোর গলায় দাবি করে এটা তার ভাই রাজপুত্র ডফিন নয়, অন্য কাউকে মিথ্যা রাজপুত্র সাজিয়ে আনা হয়েছে, রাজকন্যা রয়েল কে যথাযথ প্রমান দেয়ার পরও সে বিশ্বাস করতে চায় না।
এদিকে হঠাৎ খবর আসে সম্রাট নেপোলিয়ন ফিরে এসেছে বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে, হারিয়ে যাওয়া রাজপুত্র থেকে হওয়া নতুন রাজাকে রাতেই পালিয়ে যেতে হবে।
কিন্তু নতুন রাজা নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চান জানালেন, তাকে এতে কেউ সমর্থন করল না।
কারণ সবাই সুশাসক নেপোলিয়ন কে ভালোবাসে, ওর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রশ্নই উঠেনা। নেপোলিয়ন যে ফ্রান্সের চেহারা পালটে দিয়েছিল তার সুশাসনের জোরে এতো সত্যিই কারো অস্বীকার করার উপায় নাই।
তাই দুর্ভাগা রাজপুত্র আবার ল্যা সালেকে নিয়ে দেশ ছাড়া হয়ে চলে যায় পুরোনো আবাসে, যেখানে নৌকাডুবির পর আশ্রয় পেয়ে দীর্ঘ বিশটা বছর অতিবাহিত করেছিল।

গল্পটা পড়ে আমার উপলব্ধি-

** পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আসলে এমন অনেক ঘটনা পাওয়া যায় রাজা, রাজ্য, রাজপুত্র, শাসক, শোষক আর যুদ্ধ জয়ের। তবে এতোকিছুর ধার কে ধারে?

মানুষ চায় শান্তি, জীবনের নিরাপত্তা। সেই শান্তি রাজতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র বা গনতন্ত্র, যেভাবেই আসুক না কেনো, মানুষ তাকে গ্রহণ করতে এক মুহূর্ত দ্বিধা করে না।
সম্রাট নেপোলিয়ন তার শাসন দ্বারা দেশের মানুষের সেই বিশ্বাস ভালোবাসাই অর্জন করে নিয়েছিল, তাই তার হঠাৎ প্রত্যাবর্তন সবাইকে খুশিই করেছিল, রাজতন্ত্রের সমর্থকরাও তার আনুগত্য করেছিল নির্দ্বিধায়। আর এই সম্রাট নেপোলিয়ন কে যে শুধু ফ্রান্সের মানুষই মনে রেখেছে তা নয়, সারাবিশ্বের সবাই আজো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে মরেও অমর হয়ে থাকা এই সম্রাট কে।

Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: