You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক- “দ্যা লস্ট ওয়ার্ল্ড”

কিশোর ক্লাসিক- “দ্যা লস্ট ওয়ার্ল্ড”

দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড
Spread the love

“দ্যা লস্ট ওয়ার্ল্ড”

আর্থার কোনান ডয়েল

 

(“হারানো পৃথিবী”

বিখ্যাত লেখক আর্থার কোনান ডয়েল মূলত শার্লক হোমসের জন্য সারাবিশ্বে জনপ্রিয়তা পেলেও ওনার লেখা “দ্যা লস্ট ওয়ার্ল্ড” জনপ্রিয়তায় কোনো অংশে কম নয়। আমার খুব পছন্দের একটা বই এটা।

 

প্রথমবার পড়েছিলাম খুব ছোটবেলায়। আমার সংগ্রহে থাকা এই বই টা সেই ১৯৯৫ সালের সংস্করণ, প্রজাপতি প্রকাশনীর ছাপানো যা সেবা’র ই এক অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। কম হলেও বইটা আমার ৩-৪ বার পড়া হয়েছে। আজ আবারও পড়ছি।

 

এই গল্পটা মূলত আমাকে আকর্ষন করে এতে বর্ণিত সেই প্রাগৈতিহাসিক লস্ট ওয়ার্ল্ডের সবুজ সমভূমির অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে। পড়তে পড়তে আমারও মারকুটে অধ্যাপক চ্যালেঞ্জারের ভ্রমণ সঙ্গী হয়ে হারানো পৃথিবীর অজানা রহস্য উদঘাটন করতে ইচ্ছে করে, সেটার সৌন্দর্যে হারাতে ইচ্ছে করে, আর ইচ্ছে করে সেই বিশাল বিশাল অদ্ভুত প্রানীগুলোকে স্বচক্ষে অবলোকন করতে।

 

সত্যিই যদি এমন এক পৃথিবীর সন্ধান পাওয়া যেতো, আমি দু’চোখ বন্ধ করে কতগুলো বই সঙ্গে করে নিয়ে সেখানে হারিয়ে যেতাম। নিবিড় প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতাম আর বই পড়তাম।

বেশ পুরোনো সংস্করণ বলে এই বইটাকে আমার সংগ্রহের অন্যতম একটা ট্রেজারী বলে মনে করি আমি।)

 

 

বিজ্ঞানী চ্যালেঞ্জার দক্ষিন আমেরিকায় অভিযান চালিয়ে এসে এক অদ্ভুত কথা শুনালেন!

উনার ভাষ্যমতে প্রাগৈতিহাসিক জীব বিলুপ্ত হয় নি, আমাজনের গহীনের এক বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এখনো সেসব প্রানী বিচরণ করছে!

 

উনার এই কথা কে অন্য সব বিজ্ঞানীরা পাগলের প্রলাপ বলে মনে করলেন, এবং এটাই চ্যালেঞ্জার কে খেপিয়ে দিল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো যে, অন্য বিজ্ঞানী এবং সাংবাদিকদের সাথে মোটামুটি মারামারির পর্যায়ে চলে গেলো।

 

এডোয়ার্ড মেলোন ‘ডেইলি গেজেট’ পত্রিকার একজন তরুন সাংবাদিকের উপর দায়িত্ব পরল খেপাটে অধ্যাপক চ্যালেঞ্জারের ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য। অধ্যাপক এই সাংবাদিক ভাইটিরও একদম নাজেহাল অবস্থা করেছিলেন, তবে পছন্দও করে ফেলেন এবং অন্য কাউকে উনার কাহিনী না জানানোর শর্তে ম্যালোন কে চ্যালেঞ্জার উনার অবিশ্বাস্য অভিযানের কাহিনীটা শোনান।

 

তারপর ম্যালোনকে হঠাৎ উনার সঙ্গে আবারও সেই হারানো পৃথিবী ভ্রমন করতে যাওয়ার প্রস্তাব করেন। যেহেতু ম্যালোন সাংবাদিক, তাই তাকে নিয়ে যেতে চান সম্পূর্ন ঘটনা নিজ চোখে দেখে ছবি তুলে আর লিখে রাখার জন্য যেনো সবার কাছে সেটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলে ধরা যায়।

 

এদিকে ম্যালোনের বান্ধবী গ্ল্যাডিস ওকে শর্ত দিয়েছিল, যদি সে বিখ্যাত কোনো ব্যক্তিত্ত্ব হতে পারে তবেই ওকে বিয়ে করবে। তাই ম্যালোন এই অদ্ভুত অভিযানে শরীক হয়ে নিজের বিখ্যাত হয়ে উঠার সুযোগ টা হাতছাড়া করতে চাইল না।

 

ওরা ৪জন অভিযাত্রী – চ্যালেঞ্জার, ম্যালোন, বিখ্যাত শিকারী লর্ড রক্সটন আর সঙ্গী হলে অধ্যাপক সামারলি, যিনি চ্যালেঞ্জারের কাহিনীকে অসত্য বলে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

 

শুরু হলো তাদের নতুনের অনুসন্ধানের অভিযাত্রা আমাজনের দুর্গম বনের ভেতর দিয়ে। অবশেষে পৌঁছাল তারা সেই হারানো পৃথিবীতে যা সভ্যতার আড়ালে বহুবছর ধরে ঢাল পালা মেলে আছে বিশাল বিশাল সব অদ্ভুত প্রানী, উদ্ভিদ আর স্বপ্নের মতো এক প্রকৃতি নিয়ে। স্বচক্ষে সবাই দেখল সব প্রাগৈতিহাসিক প্রানী ডাইনোসর, বানর মানুষ, টেরোডাকটাইল আরও নাম না জানা অসংখ্য প্রানীদের মিলনমেলা যেন এই প্রকৃতিরাজ্য।

 

অধ্যাপক সামারলি নিজে চাক্ষুস প্রমান এখন, তাই বিশ্বাস না করে আর উপায় নেই, অধ্যাপক চ্যালেঞ্জারকে বাহবা না দিয়ে পারলেন না। তবে এই দুই অধ্যাপকের মাঝে সারাক্ষন ছেলেমানুষী ঝগড়া লেগেই থাকত কোন প্রানী উদ্ভিত কোন গোত্রের এ নিয়ে৷

 

আচ্ছা ভাবছেন কি, তাদের এই অভিযাত্রা খুব সহজ ছিল?

 

অবশ্যই না, অসংখ্য প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে তাদের এই অচেনা পৃথিবীতে দিন রাত্রি কাটাতে হয়েছি, আক্রমণের শিকার হয়েছিল প্রাগৈতিহাসিক সেই অদ্ভুত প্রানীদের দ্বারা, এক রেড ইন্ডিয়ানের শত্রুতায় সভ্য পৃথিবীর সাথে তাদের প্রায় যোগাযোগই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

 

যাক গে, এই হারানো পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার আগে চ্যালেঞ্জার পুরো এলাকাটার একটা মানচিত্র একে নিতে চাইলেন এবং সাংবাদিক ম্যালোন একটা বিশাল গাছের শীর্ষে উঠে পুরো এলাকাটা দেখে একটা মানচিত্র একে নিল এবং তার এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একটা হ্রদের নামকরণের সুযোগ দেয়া হলো তাকে৷

 

ম্যালোন তার বান্ধবীর নামে সেটার নাম দিল ‘গ্ল্যাডিস হ্রদ’।

জর্জ রক্সটন চ্যালেঞ্জারের আদেশে বিশাল পাখি টোরোডাকটাইল কে খাঁচা বন্দী করে সভ্য জগতে নিয়ে নিলেন ওদের এইবারের অভিযানের প্রমাণ হিসেবে।

 

ফিরে এসে তারা বিশাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সবাইকে উপযুক্ত প্রমানের মাধ্যমে ‘দ্যা লস্ট ওয়ার্ল্ড’ এর অস্তিত্বের জানান দিলেন, এর পর আর কারো একে নিয়ে প্রশ্ন তুলার সাহস থাকল না।

আর এদিকে বেচারা ম্যালান এসে দেখে বান্ধবী গ্লাডিস এক কেরানীকে বিয়ে করে বসে আছে!! ম্যালান বিদ্রুপ করে গ্ল্যাডিসের স্বামীকে প্রশ্ন করেছিল সেদিন ‘ আপনি কি জয় করে এসেছেন? ‘

 

দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে তখন ম্যালান ভাবল-

‘গ্ল্যাডিস হ্রদ’ এর নাম পরিবর্তন করে এর নাম ‘সেন্ট্রাল হ্রদ’ রাখবে সে।

 

গল্পটি থেকে শিক্ষা

 

  • মানুষ পরিপক্ক প্রমান ছাড়া কিছু বিশ্বাস করবে না এটাই স্বাভাবিক।

যেমন- বিজনেসের ক্ষেত্রে আপনি যখন ব্যাংক লোন নিতে যাবেন তখন ব্যাংক চাইবে আপনার সব ডকুমেন্টস, আপনি আসলেই লাখ লাখ টাকা সেল করছেন কিনা সেগুলোর রিসিট, আপনার ব্যবসার অস্তিত্বের প্রমান হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি।

 

  • নিজের যোগ্যতার উপর শতভাগ আস্থা থাকতে হবে, নিজের বিশ্বাসে অটল থাকতে হবে। আমি ঠিক এটা প্রমাণ করতে হবে যত বাঁধাই আসুক না কেনো, যে করেই হোক না কেনো, যেমনটা চ্যালেঞ্জার করেছেন।

 

  • আর নিজের স্বপ্ন পূরনের দায়ভার কখনো অন্যের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া ঠিক না, আমি যা করব নিজের ইচ্ছেয়, নিজের জন্য করব। তবেই আর দিনশেষে ম্যালানের মতো এমন দুঃখ পেতে হবে না।

 

 


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: