You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক- “ড. জেকিল ও মি. হাইড”

কিশোর ক্লাসিক- “ড. জেকিল ও মি. হাইড”

Spread the love

লিখছি রবার্ট লুই স্টিভেনসনের লেখা. জেকিল মি. হাইড এর  রিভিউ।

প্রথমে বলে নেই,

“Hyde Jekyll, Me” নামে একটা কোরিয়ান ড্রামা দেখেছিলাম। ড্রামার স্টোরি লাইন ছিল এমন একটা মানুষের মাঝে দুই সত্তার বসবাস। মানুষটা দিনে একরকম হয়ে যায়, রাতে আবার অন্যরকম, সম্পূর্ন ভিন্ন আচরণের দুই মানুষ।

South korean drama

একটা চরিত্র চরম স্বার্থপর, কাপুরুষ আর আরেকটা সত্তা খুব বেশি অমায়িক আর পরোপকারী। তার দুইটা সত্তাই তাদের দুইটা চরিত্র সম্পর্কেই সচেতন ছিল, একজন আরেকজনকে ভাই বলে সম্বোধন করত। ড্রামার অনেকগুলো পর্ব পর্যন্ত অন্ধকারে ছিলাম পুরাই, ভেবেছিলাম বোধহয় জমজ ভাই।

কিন্তু আশ্চর্য হয়েছিলাম আসল ব্যাপার জানতে পেরে। এটাকে একটা সাইকোলজিকাল প্রব্লেম হিসেবে দেখানো হয়েছিল সেখানে।

তখন জানতাম না আমি যে রবার্ট স্টিভেনসনের মতো বিখ্যাত লেখক বহু বছর আগেই এমন একটা প্লট নিয়ে লিখে গেছেন। এখন বুঝতে পারছি এই “ড. জেকিল ও মি. হাইড” থেকে আইডিয়া নিয়েই ড্রামাটা হয়ত বানানো হয়েছে।

যাই হোক, গল্পটা পড়ে শেষ করলে লেখক কি মেসেজ দিতে চেয়েছেন এর দ্বারা, তা বুঝতে পারবেন সবাই।

 

“ড. জেকিল ও মি. হাইড

রবার্ট লুই স্টিভেনসন

 

ড. জেকিল আগাগোড়ায় একজন ভদ্র, অমায়িক, গুনী, এবং সম্মানিত লোক। উনার প্রভাব প্রতিপত্তির অভাব নেই। তারপরও তার একটা সত্তা ভেতরে ভেতরে আরও স্বাধীন হতে চায়, নিজের মতো করে আনন্দে থাকতে চায়, মোদ্দাকথা সামাজিক শৃঙ্খল থেকে বের হতে চায়।

 

সে তার অনুভবকৃত দুই সত্তা নিয়ে গবেষণা করতে শুরু করে। সে চায় একটা সত্তা আরেকটা সত্তার আড়ালে সুপ্ত না থেকে দুইটা আলাদা ভাবে স্বাধীনতা পাক।

অবশেষে সে একটা লিকুইড আবিষ্কার করে, যা একবার খেলে তার ভেতর থেকে অন্য এক মানুষের আবির্ভাব হয়, চিন্তা ভাবনাহীন, একদম চাপমুক্ত সেই সত্তা যেন কাউকে, কোনো কিছুকে পরোয়া করেনা। যাবতীয় খারাপ কাজেই আনন্দ পায়।

 

সেই লিকুইড ২য় বার খেলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

 

ওর হাইডিয়াস সেই অন্য রূপকেই সে নাম দেয় মি. হাইড।

ধীরে ধীরে এমন অবস্থা হয় যে ড. জেকিল এর উপর মি. হাইড আধিপত্য বিস্তার করে, খারাপ কাজের জন্য তৃষার্ত আর পাগলপ্রায় হয়ে মানুষ খুন করে মনের আনন্দ পায়। তখন আর লিকুইডও খেতে হয় না, ইচ্ছে করলেই নিজে নিজেই মি. হাইড বের হয়ে আসতে পারে ড. জেকিলের ভেতর থেকে!

জয় হয় খারাপ সত্তার আর মরতে হয় ড. জেকিল কে।

 

** প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে দ্বৈত সত্তা বাস করে-

ভালো(মনুষ্যত্ত্ব) এবং খারাপ(পশুত্ব)।

 

কারো হয়ত ভালো সত্তার প্রকাশটা বেশি হয়, আর কারো খারাপ সত্তার প্রকাশ বেশি হয়, আবার কারো হয়ত ভালো খারাপের সংমিশ্রণে ভিন্ন সত্তার প্রকাশ ঘটে।

 

তবে পশুবৃত্তির প্রভাব টা এতোটাই প্রবল, যে কোনো সময় এটা যে কোনো মানুষের ভালো সত্তাকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিতে পারে।

পশুবৃত্তি বা খারাপ সত্তাটা আসলে সামাজিক বন্ধন, রীতিনীতি, সভ্যতা, আর বিবেকবোধের আড়ালে সুপ্ত থাকে, তবে এই খারাপ সত্তার প্রকাশ যদি একবার ঘটে যায় এবং একে পাত্তা দেয়া যায় তবে এক সময় একে আর নিয়ন্ত্রন করা যায় না, তখন ভালোর উপর খারাপের স্থায়ীত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মানুষটা কোনো জঘন্য কাজ করতেই আর দ্বিধা করেনা।

লেখক আসলে এই খারাপ সত্তাটাকেই মানুষের প্রকৃত সত্তা বলে বুঝিয়েছেন, যা হয়ত সভ্যতা আর সামাজিক রীতিনীতির আড়ালে চাপা পড়ে আছে সাময়িক, যে কোনো সময় এর আবির্ভাব ঘটতে পারে।

 

আর আমি যা মনে করি,

 

ভালো খারাপ মিলিয়েই মানুষ, এখন আমি ভালো গুনগুলোর প্রকাশ চাই, নাকি খারাপ গুনগুলোর প্রকাশ চাই এটা সম্পূর্ন আমার দৈনন্দিন প্র‍্যাক্টিসের উপর নির্ভর করে।

 

আমরা ভালো কাজ এবং ভালো চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখলে, খারাপ সত্তা চিরদিন সুপ্তই থাকবে।

 

কিন্তু যদি আমরা খারাপ বা নেগেটিভ চিন্তা করা শুরু করে দেই, তবে এটা খুব দ্রুত ডাল পালা গজিয়ে ভালো সত্তাটাকে গ্রাস করে ফেলবে, সম্পূর্ন ভাবনার জগৎ নিজের কন্ট্রোলে নিয়ে নিবে, সব খারাপ কাজই তখন আনন্দের বলে মনে হব,  সমাজ সভ্যতা বিদ্রোহী এক পাপাত্বার আবির্ভাব ঘটবে।

 

আর এর জন্যই কেউ খারাপ কাজ করতে শুরু করলে ধীরে ধীরে আরও জঘন্য, আরও ভয়ংকর হয়ে উঠে।

 

তাই নেগেটিভিটিকে মনে স্থান দিতে নেই।

 

কোরিয়ান ড্রামা “Hyde Jekyll, Me” ঠিক এই গল্পটার প্লট নিয়েই বানানো নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমি। ড্রামাতে শুধু বাড়তি কিছু গ্লামার, রোমান্স আর কমেডির মিশ্রন ঘটিয়েছে এই যা। তবে বেশ এঞ্জয় করেছিলাম তখন। ড্রামাটা দেখার সময় ভেবেছিলাম আসলেই কি এটা সম্ভব!!

 

এখন নিশ্চিত আমি যে, অবশ্যই সম্ভব!!

হিউম্যান সাইকোলজি বরাবরই আমার কাছে এক বিশাল রহস্য।


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

One thought on “কিশোর ক্লাসিক- “ড. জেকিল ও মি. হাইড”

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: