You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক- “গালিভার্স ট্র‍্যাভেল”

কিশোর ক্লাসিক- “গালিভার্স ট্র‍্যাভেল”

কিশোর ক্লাসিক -গালিভার্স ট্র‍্যাভেল
Spread the love

কিশোর ক্লাসিক- “গালিভার্স ট্র‍্যাভেল”

জোনাথান সুইফট

 

 

এই বইটা লেখক সেই ১৭২৬ সালে লিখেছিলেন। বইটা কে আপাত দৃষ্টিতে যাস্ট একটা মজার বই মনে হলেও, এর প্রতিটি অংশবিশেষ বেশ মিনিংফুল অর্থবহন করে।

লেখক জোনাথান সুইফট তখনকার মানুষ আর সমাজব্যবস্থার অসামঞ্জস্যতা নিয়ে খুব নাখোশ ছিলেন। এই বই এর মাধ্যমে তিনি সমাজ এবং মানুষের বিভিন্ন অসংগতিগুলোকে ব্যাঙ্গাত্মক রূপ দিয়েছেন।

এই উপন্যাস কয়েক শতাব্দী আগেকার লেখা হলেও, লেখকের ব্যাঙ্গাত্মক সেইসব ঘটনা এবং চরিত্র এখনকার সমাজব্যবস্হারও প্রতিচ্ছবি যেনো!!

 

এই গল্পটা পড়ে আমি যা যা উপলব্ধি করেছি তাই লিখছি গল্পের কিছু অংশের বর্ণনা সাথে দিয়ে।

 

* গালিভার জাহাজের চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন, কিছুদিন জাহাজে থাকার পর যেই তার কিছু টাকা জমে যেত, তখনই সে জাহাজের চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্ত্রী সন্তানদের কাছে থেকে সুখী জীবন কাটাতে চাইত। চলে আসার পর সেই জমানো টাকা দিয়ে খুব বেশিদিন সংসার চালানো সম্ভব হতো না।

কথায় বলে না- “বসে খেলে রাজার ভান্ডারও ফুরিয়ে যায়।”

তারও সেই জমানো টাকা ফুরাবার পর এতো নাজেহাল অবস্থায় পরতে হত যে, স্ত্রী সন্তান সহ ছেড়া পোশাক পড়ে না খেয়ে কাটাতে হত।

 

এ থেকে শেখার হলো- চিন্তা ভাবনাটা শুধু বর্তমান কেন্দ্রিক হওয়া যাবে না, ভবিষ্যতের জন্যও ভেবে কাজ করতে হবে। বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিতেই হয়। পরিবারকে সুখী স্বাচ্ছন্দ জীবন দিতে চাইলে, নিয়মিত কাজ করে যেতে হবে, উপার্জন করতে হবে৷

 

আর ভাবতে হবে সুযোগ ব্যয়ের কথা যে, আমি কি অল্প কিছুদিনের জন্য সুখী স্বাভাবিক জীবন চাই নাকি দীর্ঘস্থায়ী ভাবে নিজের এবং পরিবারের জীবনযাপনের নিশ্চয়তা চাই।

 

* জাহাজ ডুবি হয়ে সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে গালিভার হাজির হয়েছিল এক অজানা অচেনা লিলিপুটদের দেশে, একথা আমরা সবাই জানি। সেখানে প্রথমে সে ছিল লিলিপুটদের ভয় এবং দুশ্চিন্তার কারণ। পরে আস্তে আস্তে তাদের ভয় কেটে যেতে থাকে, ওরা গালিভার যে প্রপারলি আপ্যায়ন করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায়। আকারে বড় বলে গালিভারকে বিশেষ মর্যাদা তারা দেয়, যেমনটা আমরা আমাদের ভিআইপি পার্সনদেরকে দিয়ে থাকি।

 

লিলিপুটদের দেশে আইন শৃঙ্খলা খুব কড়া এটা ভালো দিক যদিও, তবে কিছু হাস্যকর রুলসের কারণে, খুব সাধারণ একটা ব্যাপারের জন্য পাশের দেশের সাথে যুদ্ধও লেগে যায়!

 

গালিভার্স সেই যুদ্ধ একাই সামলে নিয়েছিলেন ওর বিশাল দৈত্যাকার বডির জোড়ে। ওর এই বীরত্বে লিলিপুট রাজ্যের সেনাপতিরা মোটেই খুশি হতে পারেনি,  কারণ তাদের জায়গা গালিভার নিয়ে নিয়েছে।

 

লিলিপুটের দেশের অভিজ্ঞতার পর গালিভার আবারও সমুদ্র যাত্রায় বের হলেন আরেকটা নতুন দেশের সন্ধানে এবং এইবার উনি এমন এক আজব দেশে গিয়ে হাজির হোন যেখানের মানুষ ৬০ ফুট লম্বা৷ সেই দেশে গালিভারের নিজেকে লিলিপুটদের মতো মনে হল।

 

সেই দেশের মানুষ ওকে পুতুলের মতো ভেবে অবাক হয়ে দেখে। সেখানে সে সবার হাসির খোরাক হয়, তার আশ্র‍য়দাতা ওকে নিয়ে সার্কাস দেখিয়ে টাকা উপার্জন করতে থাকে দেদারসে। আর গালিভার অসহায়ের মতো সব দুঃখ কষ্ট সয়ে যায় খাঁচায় আবদ্ধ থেকে।

 

হঠাৎ করেই ওদের দেশের রানীর কানে গালিভারের কথা যায়, গালিভার আর ওর দেখভালের দায়িত্বে থাকা মেয়েটা কে রানী ওর আশ্রয়ে রেখে দেয়, রাজা রানী খুব সমীহ করেন গালিভারকে, রানী গালিভারের সাথে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় মেতে উঠেন সমাজ, দেশ, আর মানবজাতি নিয়ে।

দৈত্যের মতো রাজা রানী গালিভারকে সম্মান করলেও, একটা বামনের মতো লোক যে কিনা ওই রাজ্যের সব চেয়ে ছোট ব্যক্তি, সেই ব্যক্তি এসে গালিভারকে নিয়ে হাসি তামাশায় মেতে উঠে।

 

এই ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায় –

 

একজন মানুষ কতটা ছোট বা বড় তা তার আকারের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে সে কোন অবস্থায় আছে তার উপর। আমাদের পারিপার্শ্বিক মানুষগুলো আমাকে নিয়ে যেভাবে ভাবছে আমি আসলে তাই।

 

আমরা সবাই বড় হতে চাই, সেরা হতে চাই, তবে জানতে হবে বড় হওয়ার যেমন সুবিধা আছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে।

 

সমাজের ভালো করতে যাওয়া মানুষগুলোর শত্রু বেশি, কারণ মানুষ ভাবে যা আমার দ্বারা হয় নি তা ও কেনো করবে! ও কেনো একা সব বাহবা নিবে!

 

সম্মানী ব্যক্তিরা সবাইকে সম্মান করে আর মানুষের পেছনে যারা লেগে থাকে তারা যে আদতেই নীচ পর্যায়ের লোক তা তো বলতেই হয়।

 

পরিবেশ পরিস্থিতি কাকে যে কোথায় নিয়ে যাবে কেউ বলতে পারেনা,  তাই যে কোনো পরিস্থিতি কে সামাল দেয়ার মতো মানসিক প্রস্তুতি অন্তত রাখতেই হবে।

 

আপনি আকারে কতটা ছোট বা বড় তার থেকে জরুরী হলো আপনি কতটা জ্ঞানী, আকারে যাই হোন জ্ঞান থাকলে যে কোনো পরিস্থিতিকে টেকনিকাললি সামলে নেয়া যায়।

 

 

আর অবশ্যই সব কিছুর উর্ধ্বে হলো বিনয়, গালিভার ছিল খুব বিনয়ী একজন মানুষ। সে লিলিপুট দের কেও ছোট বলে তুচ্ছজ্ঞান করেনি, তাদের প্রতিটি আদেশ, নির্দেশ, নিয়ম মেনেই সব কিছু করেছে, আর এই বিনয়ের জন্যই দুই দেশের দুই অদ্ভুত পরিস্থিতিতে টিকে থাকার কাজটা সহজ হয়েছে ওর জন্য।

আরও অনেক শিক্ষা এই কিশোর ক্লাসিক গল্পটির পরতে পরতে লুকিয়ে আছে।


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

One thought on “কিশোর ক্লাসিক- “গালিভার্স ট্র‍্যাভেল”

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: