You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক- “দ্য কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো”- আলেকজান্ডার দ্যুমা

কিশোর ক্লাসিক- “দ্য কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো”- আলেকজান্ডার দ্যুমা

দ্য কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো
Spread the love

যতগুলো ওয়েস্টার্ণ ক্লাসিক আমি পড়েছি, সবগুলোর ভীড়ে আলেকজান্ডার দ্যুমা’র “কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো” অন্যতম সেরা ক্লাসিক গল্প হিসেবে থাকবে সারাজীবন। কিশোর ক্লাসিকগুলো আসলে আমার কাছে শুধু গল্প নয়, এগুলো লাইফ লেসন নেয়ার অন্যতম মাধ্যম। অনেক জীবন দর্শন উপলব্ধির সুযোগ করে দিয়েছিল আমাকে এই কিশোর ক্লাসিক গল্পটি। এই সামারি রিভিউটা পড়ে আশা করছি প্রায় অনেকখানিই বুঝতে পারবেন আপনারাও। ভালো লাগবে এবং পুরো বইটাই আবার পড়ার আকাঙ্ক্ষা জাগবে।

“কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো”

আলেকজান্ডার দ্যুমা

এই গল্পের শুরুর কয়েকটা পর্ব পড়ার পর হঠাৎ খুব বিষন্নতায় পেয়ে বসেছিল আমাকে, কোনোভাবেই চোখের জল আটকে রাখতে পারছিলাম না আমি। বাধ্য হয়ে পড়া থামিয়ে কিছু সময় জানালার ধারে বসে আকাশ পানে তাকিয়ে অঝোরে চোখের জল ফেলছিলাম। কি যে শূন্য লাগছিল ভেতরটা বোঝাতে পারব না। দুঃখের গল্প তো আরও পড়েছি, এতোটা ইমোশনাল হয়ে যাই না অনেকদিন হলো!!
আসলে ভাবছিলাম মানুষের অনিশ্চিত জীবনের কথা। কে, কখন, কি অবস্থায় থাকব আমরা কেউ বলতে পারিনা!! সৃষ্টিকর্তার প্ল্যান বোঝা বড় দায়!! তবে গল্পের শেষটা আমাকে আবার প্রশান্তি দিয়েছে, ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি এনে দিয়েছে।

তবে সেই গল্পটা শুরু করা যাক!

“ফারাও” নামের জাহাজটি বন্দরে ফিরেছে আজ বহুদিন পর। এডমন্ড দান্তে এ জাহাজের একজন ফার্স্ট অফিসার, জাহাজটির ক্যাপ্টেন লে ক্লার্কের মৃত্যু হয়েছে সমুদ্রে থাকা অবস্থায়ই, আর তখন থেকেই এর ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিল দান্তে, এটা তার সঙ্গী দাঁগলারের পছন্দ হলো না, সে দান্তে কে তার শত্রু ভাবতে শুরু করল।
ক্যাপ্টেন লে ক্লার্ক মৃত্যুর আগে দান্তে কে ২টা চিঠি দিয়ে শপথ করিয়ে যায় চিঠিগুলো কে নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেয়ার জন্য। একটা ছিল নেপোলিয়নের উদ্দেশ্যে লেখা, তখন নেপোলিয়ন এবং তার সমর্থকদের দেশদ্রোহী বলা হত। দান্তে জানত না চিঠিগুলো তে কি লেখা আছে, শুধু মৃত্যুপথযাত্রী ক্যাপ্টেনের অসিয়ত রক্ষা করা তার গুরু দায়িত্ব জেনে সেগুলোকে পোঁছে দিল। এটাই তার জন্য কাল হলো!
বিয়ের আসর থেকে বেচারাকে দেশদ্রোহী বলে গ্রেফতার করে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ করা হলো, সে জানতেই পারল না কেনো তাকে বন্দী করা হয়েছে!! দান্তের সব স্বপ্ন এক নিমেষে মিথ্যে হয়ে গেল। না হতে পারল জাহাজের ক্যাপ্টেন, না প্রেমিকাকে নিয়ে করা হলো সুখের সংসার!! ভীষণ ভালোবাসত সে বান্ধবী মার্সিডিস কে, মার্সিডিসও ওকে কম ভালোবাসত না! কিন্তু পাওয়া হলো না, বিয়ের সাজে মেয়েটা কে ফেলে আসতে হলো তার! এদিকে অসুস্থ অসহায় বাবার জন্যও সুখী জীবনযাপনে ব্যবস্থা করার সুযোগ হলো না। কি নির্মম সে দৃশ্য!
আসলে ষড়যন্ত্র টা করেছিল জাহাজের সেই দাঁগলার, আর দান্তের বান্ধবীর আরেক পাণিপ্রার্থী ফার্নান্দ। দাঁগলার ভেবেছিল দান্তে কে সরিয়ে সে হবে জাহাজের ক্যাপ্টেন আর ফার্নান্দ চেয়েছিল মার্সিডিস কে।
দান্তে তাদের এই কুটচাল আঁচ করতে পারেনি। বিনা দোষে কারাবাসের যন্ত্রনা কোনোভাবেই সইতে পারছিল না সে। তারপরও অন্ধকার প্রকোষ্ঠে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছিল তার।
হঠাৎ একদিন ফারিয়া নামের আরেক কয়েদীর সাথে তার কথা হয়, কারাগারের দেয়াল ভেঙে ফোকর বানিয়ে তারা দুজন সাক্ষাৎ করে, একে অপরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে। সেই সাথে তাদের একাকীত্বের অবসান ঘটে।
দান্তে বুঝতে পারে ফারিয়া লোকটা অসম্ভব জ্ঞানী, শান্ত, ধীরস্তির, ধৈর্যশীল, সাহসী, দৃড়প্রতিজ্ঞ আর প্রচন্ড মনোবলের অধিকারী একজন মানুষ, কারাগারে থেকেও যে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে, বই লিখে ফেলেছে, কারাগার থেকে পালাবার জন্য সুরঙ্গ তৈরী করে কাটিয়েছে একা হাতে এতোগুলো বছর ধরে।
দান্তে ফারিয়া কে দেখে নিজের প্রতি লজ্জাবোধ করল, সে ওই লোকটা থেকে অনেক কম বয়সের আর অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েও কারাগারের এতোগুলো বছর পুরো হেলায় কাটিয়ে দিল, অথচ ফারিয়ার মতো ভাবলে এতোদিনে পালিয়ে যেতে পারত।
দান্তে ফারিয়া কে দেখে নিজেকে খুবই অজ্ঞ ভাবতে লাগল। তাই ফারিয়ার কাছে দান্তে পড়তে শুরু করল, অনেক নতুন সব জিনিস জানতে লাগল সে, শিখে ফেলল ইংরেজি, জার্মান আর স্পেনিশ ভাষা।

দুই কারাবন্দি বন্ধু মিলে পড়তে পড়তে আর শিখতে শিখতে যে কিভাবে আবারও বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছিল বুঝতেই পারছিল না তারা। এরি মাঝে চলছিল পালানোর জন্য তাদের সুরঙ্গ তৈরীর কাজও।

কিন্তু ফারিয়া খুব কঠিন এক রোগে আক্রান্ত ছিল, সে বুঝতে পারছিল কারাগার থেকে পালাবার সুযোগ আর ওর হবে না, সৃষ্টিকর্তাই তাকে মুক্তি দিবে। তাই সে দান্তেকে একাই পালিয়ে যেতে বলল আর জানাল মন্টিক্রিস্টো নামক এক দ্বীপে গুপ্তধন লুকানো আছে, তা যেন দান্তে উদ্ধার করে।
দান্তেকে বৃদ্ধ ফারিয়া নিজের পুত্র ভেবে সেই গুপ্তধনের পুরোটাই নিয়ে নিতে বলে। কিন্তু দান্তে তার এই পরম বন্ধুকে রেখে কোনোভাবেই কারাগার ত্যাগ করবে না জানায়। এদিকে ঠিকই হতভাগ্য ফারিয়াকে সৃষ্টিকর্তা মুক্তি দেন, কারাগারেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে সে। দান্তে ভীষণ মুষড়ে পরে পরম বন্ধুর মৃত্যুতে। পরক্ষনেই ভাবে, তাকে পালাতে হবে এখান থেকে, তবেই ফারিয়ার আত্মা শান্তি পাবে।
কারারক্ষীরা যখন টের পায় ফারিয়ার মৃত্যু, তখন লাশ নেয়ার জন্য তারা একটা বস্তা এনে ফারিয়ার লাসটা ভরে ওর কুঠুরি তে রেখে বাইরে যায়। হঠাৎ দান্তের মাথায় এক বুদ্ধি আসে। সে লাশটা কে বের করে সুরঙ্গ দিয়ে তার ঘরে নিয়ে এসে ঢেকে শুইয়ে রাখে, আর সে একটা ছোরা নিয়ে বস্তার ভেতর ঢুকে যায়।

লাশ নিতে এসে ওরা দান্তে কে নিয়ে যায়, আর বস্তা সহ ফেলে দেয় গভীর সমুদ্রে।

দান্তে ছোরা দিয়ে বস্তা কেটে বাইরে বেরিয়ে এসে, অনেক যন্ত্রনার ভোগ করে কোনো রকমে সাঁতরে একটা দ্বীপে এসে পৌঁছে, সেখান থেকে সৌভাগ্যক্রমে একটা জাহাজে উঠতে পারে সে এবং সেই জাহাজে করেই মন্টিক্রিস্টো দ্বীপে গিয়ে গুপ্তধনেরও সন্ধান পেয়ে যায় সে। অবসান ঘটে দান্তের দুঃখজনক তিক্ত জীবনের।
গুপ্তধন পেয়ে দান্তে বিশাল ধনী হয়ে যায়, কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো নামে পরিচিত হয় সে। নয় বছর পর ফ্রান্সে ফিরে এসে জানতে পারে ওর বাবা না খেতে পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। বিয়ের আসরে ফেলে যাওয়া বান্ধবী মার্সিডিস ফার্নান্দ কে বিয়ে করেছে, ওদের একটা ছেলেও হয়েছে, বিশাল প্রাচুর্যের মাঝে জীবনযাপন তাদের। সেই দাঁগলারও এখন এক ব্যাংকের মালিক, বিশাল ধনী ব্যারন। শত্রুদের খুঁজে পেয়েছে, এইবার তার প্রতিশোধ নেয়ার পালা।

দান্তে “কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো” হয়ে একে একে শত্রুদের প্রতিশোধ নেয়ার পর আবার এডমন্ড দান্তে নামে স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করল সে।

উপলব্ধি

জীবনে যত বিপর্যয়ই নেমে আসুক না কেনো, হতাশ হওয়া যাবে না। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ে যেতে হবে। যতক্ষন নিঃশ্বাস, ততক্ষনই আশ্বাস। কাঙ্ক্ষিত সুযোগ কখন মিলে যাবে কেউ বলতে পারে না।
জ্ঞানার্জন, পড়ালেখা আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে মানুষের মাঝে হতাশা আসার সুযোগই পায় না। ফারিয়া কারাগারেও তার সময় হেলায় নষ্ট করেনি, নিজেকে পড়াশোনা, বই লেখা আর বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রাখার কারণে দুর্বিষহ কারাবাসও তার কাছে আনন্দময় হয়ে উঠেছিল, বছরের পর বছর তার চোখের পলকে কেটেছিল। গল্পের এই বৃদ্ধ লোকটা অনেক কিছুই শেখাল আমাদের।
আর দান্তে এক সহজ সরল ভালো মানুষের প্রতিচ্ছবি যে তার আশেপাশের সবাইকে খুব বিশ্বাস করত, এই বিশ্বাসই তাকে ধোঁকা দিয়েছে বার বার।
আর পরিশেষে সেই কমন শিক্ষার পুনরাবৃত্তি করছি-
পাপীদের শাস্তি পেতেই হয়, পাপ কাজ করে কেউ পার পেয়ে যাবে এ হতেই পারে না।
আলেকজান্ডার দ্যুমা’র কিশোর ক্লাসিক “কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো” এর এই রিভিউ প্রথমে লিখেছিলাম সোয়াপিবুক্সের কিশোর ক্লাসিক ওয়েবের অংশ হিসেবে।

Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

One thought on “কিশোর ক্লাসিক- “দ্য কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো”- আলেকজান্ডার দ্যুমা

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: