কিশোর ক্লাসিক- “এমা”- জেন অস্টেন বুক সামারি & রিভিউ by খাতুনে জান্নাত আশা - September 14, 20210 Spread the lovemoreকিশোর ক্লাসিক- “এমা“ জেন অস্টেন বইটির নামকরণ করা হয়েছে এর প্রধান চরিত্র “এমা’র নামে। এমা খুব স্ট্রং উইমেন পার্সোনালিটি। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে হিসেবে অহংবোধটাও তার মাঝে বেশ পরিলক্ষিত হয়েছে, যা তাকে তার ক্লাস থেকে নীচু ক্লাসের লোকদের থেকে দূরে রেখেছে, অনেকটা আমাদের দেশের সমাজব্যবস্থার মতোই কিন্তু। আমাদের দেশেও যেমন বৈবাহিক ক্ষেত্রে সেইম ক্লাস, সেইম স্টেটাসের সম্বন্ধ খোঁজা হয়। উচ্চশ্রেণির ছেলেমেয়েরা মধ্যবিত্ত বা নিম্নশ্রেণীর ছেলেমেয়েদের সঙ্গ এড়িয়ে চলতে চায়। অনেকটা সেরকম মনোভাবই এমা তার ভেতরে পুষে রাখে। তাই নিজে সব সময় তার এলাকার কৃষক পরিবারের লোকদের সঙ্গ এড়িয়ে চলে এবং তার বান্ধবীটিকেও সেসব লোকদের এড়িয়ে চলতে উৎসাহিত করে, তাদের সঙ্গ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে আনে। কৃষক পরিবারের ছেলেটা যথেষ্ট ভদ্রলোক, পার্সোনালিটি সম্পন্ন এবং তার বান্ধবীকে ভালোবেসে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পরও, এমা ওকে রিজেক্ট করে দিতে প্ররোচিত করে। এমার কাছে ভদ্রলোক মানে তাদের সম পর্যায়ের পরিবারের ছেলে, কৃষক পরিবারের ছেলের ভদ্রতা আর বিশেষত্ব সে বুঝেও পাত্তা দিতে চায় না ওর অহংবোধের কারণে। এমা তার বান্ধবীর জন্য পছন্দ করে তাদের সমপর্যায়েরই এক সম্ভান্ত ছেলেকে। এই “এমা” মেয়েটা যথেষ্ট ভোগিয়েছে আমায়!!!! মেয়েটা যে এতো বোকা, বাবা!! কি জগাখিঁচুড়ি অবস্থাটাই না পাকাল, মাথাটা আমার পুরা জট পাকিয়ে দিয়েছে। এমনি কোনো অনুবাদ বই পড়লে চরিত্রগুলোর নাম আমি মনে রাখতে পারিনা। আর এখানে এমা আর তার বান্ধবী হ্যারিয়েট কে ঘিরে থাকা চরিত্রগুলো তো মোটামুটি আমার ব্রেনের উপর ভালো অত্যাচার চালিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। * এমাকে দেখে আমার প্রথম উপলব্ধি ছিল মেয়েটা তার অভিজাত সমাজ এবং সৌন্দর্য নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত অহংকারী। * আর দ্বিতীয় উপলব্ধি হল- অহংকার মানুষকে অন্ধ করে দেয়, বোকা বানিয়ে দেয়, যা মানুষকে তার হৃদয় গহীনে থাকা আবেগ, অনুভূতি, ভালোবাসাকে প্রকাশ পেতে দেয় না, সব কিছু গ্রাস করে নেয় অহংকার নামক এই প্রবৃত্তিটি। এমা তার এই অহংবোধের জন্যই তার সবচেয়ে কাছে থাকা মানুষটির ভালোবাসা টের পায় নি, নিজের হৃদয় সেই মানুষটার কাছে কখন সঁপে দিয়ে বসে আছে সেটাও বুঝে উঠতে পারেনি। তবে প্রকৃত ভালোবাসার প্রকাশ মানুষকে বদলে দেয় সত্যিই, তাই কোনোদিন বিয়ে করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া এমাও সেই ভালোবাসার খাঁচায় নিজেকে আবদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। আর এমার বান্ধবী হ্যারিয়েট, যাকে কিনা এমা অভিজাত সমাজ থেকে বের হয়ে গৃহস্থবাড়ির ছেলেকে বিয়ে করা থেকে বিরত রেখেছিল। সেই হ্যারিয়েট কিন্তু বার কয়েক এমার বোকামীর শিকার হয়ে কষ্ট পেয়ে দিন শেষে তার রিজেক্ট করা ছেলেটার সঙ্গীনিই হয়েছিল। কারণ ছেলেটা নীচু সমাজের হলেও ব্যক্তিত্ববান, ভদ্র, সুপুরুষ, ছেলেটা ঠিকই হ্যারিয়েট কে ভুলতে পারে নি, তাই আপন করে নিয়েছিল। এমাও এতে খুব খুশি হয়েছিল, কারণ ভালোবাসার কাছে তার সব অহংবোধ ধুলিস্মাৎ হয়েছে, সে বদলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। পুরো গল্পটা পড়ে আমার কেনো জানি বার বারই মনে হচ্ছে, মানুষ নিজেকে চিনতে পারে সবচেয়ে কম। সবাই তার বাইরের দিক টা কেই পাত্তা দেয় বেশি, ভিতরেও যে আরেকটা আমি আছে, তার গহীনে অনাবিষ্কৃত অনেক আবেগ অনুভূতি আছে, সেটা কেউ আবিষ্কার করতে চায় না। ভেতরের আমিটা কি চায়, তা ভাবা হয় না বলেই মানুষ অনেক কিছু কাছে পেয়েও হয়ত হারায়। পরিবার, সমাজ, ক্লাস, স্টেটাস মেইনটেইন করতে গিয়ে তাই মানুষ কে হতাশায় পেয়ে বসে, ধরাছোঁয়ার বাইরে গিয়ে সুখের অনুসন্ধান করে, অথচ ভেতরের আমিকে আবিষ্কার করলে বুঝত সে কত অল্পেই সুখী হয়, তুষ্ট থাকে। জেন অস্টেন কি তবে এটাই বোঝাতে চেয়েছেন আমাদের, নাকি এর বাইরেও আরও মেসেজ আছে??? যারা পড়েছেন তারা আশা করি নিজস্ব মতামত দিবেন। Like this:Like Loading... Related Spread the lovemoremore