You are here
Home > বুক সামারি & রিভিউ > কিশোর ক্লাসিক(অ্যাক্রস দ্য পিরেনীজ)

কিশোর ক্লাসিক(অ্যাক্রস দ্য পিরেনীজ)

Spread the love

“অ্যাক্রস দ্য পিরেনীজ”
রাফায়েল সাবাতিনি

প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চলছে এক ফরাসী বীর সৈনিক চার্লি সেন্ট সাভানা, তাকে দ্রুত পৌঁছাতে হবে স্পেনের আলমাঞ্জার দূর্গে।

গুরুত্বপূর্ন সামরিক কাজের দায়িত্ব্যভার দেয়া হয়েছে তাকে, ডিউক দ্য অলিয়া ফরাসী বাহিনীর সর্বাধিনায়ক তাকে একটা চিঠি দিয়ে পাঠিয়েছে দূর্গপতি ফার্ডিনান্ডের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য। হঠাত ওর কানের দুপাশ দিয়ে ছুটে গেল বন্দুক থেকে ছোড়া দুইটা বুলেট। অবাক হল সে, এই ঝড় বৃষ্টির রাতে কারা এখানে গুলি ছুড়ছে, কি উদ্দ্যেশ্য তাদের!

ভাবতে ভাবতেই তার পিস্তল টা বের করে এগুলো সামনের দিকে, দেখতে পেল একটা পাহাড়ের নীচে গুহার মতো জায়গার সামনে দুইটা লোক, আবার গুলি ছোড়ার জন্য তৈরী হচ্ছে তারা। তার আগেই সাভানা গুলি ছুড়ল তার পিস্তল থেকে, গিয়ে লাগল একজনের বুকে, আরেকজন ছুটে পালাল। সে গুহার মতো জায়গাটা দেখে এবার খুশি হল যে, এখানে অন্তত ঝড় বৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাত্রিযাপন করতে পারবে।

কিন্তু এর ভেতরে ঢুকতেই সাভানা দেখল আরেকটা ব্যক্তি মরার মতো পরে আছে। কাছে গিয়ে দেখল সেটা একটা মেয়ে, এখনও হৃদস্পন্দন চলছে। অচেনা অসহায় এই নারীটিকে সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তুলল সে।

মেয়েটির চেতনা ফিরে আসতেই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, সে এখন কোথায়! এদিকে সাভানা নিজেও জানেনা ও যে কোথায় আছে, কারন সে এখানে নতুন। সাভানা ওকে অপহরণকারীদের থেকে উদ্ধার করেছেন বুঝে মেয়েটি কৃতজ্ঞতা বোধ করল।

সাভানা জানতে পারল ওর গন্তব্যস্থল আলমাঞ্জায় মেয়েটির আবাস, সেই প্রতাপশালী দূর্গপ্রধান হোসে ফার্ডিনান্ডের মেয়ে কর্নেলিয়া, যার কাছে সাভানা চিঠি নিয়ে যাচ্ছিল। মেয়েটির সাথে কথা বলে আলমাঞ্জা যাবার পথ সম্পর্কে কিছুটা ধারনা নিয়ে নিল সে, পাহাড়ের উপর দিয়ে যেতে হবে।
সাভানা সকালের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল, তবে এটাও বুঝল যে অপহরণকারী পালিয়েছে সে আবার দলবল নিয়ে ফিরে আসবে। সকাল হলো, সাভানা মেয়েটাকে নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে রওনা হল।

ওদিকে বাবা দূর্গপতি ফার্ডিনান্ড যখন পুরো দূর্গ খোঁজেও মেয়ের সন্ধান পাচ্ছিলেন না, তখনও অনুমান করলেন তার মেয়েকে অপহরণ করেছে কোয়ামোদো, সার্ভেরো দূর্গের দূর্গপ্রধান ম্যাজেন্টো গুইশাম্পোর ছোট ছেলে।

কোয়ামোদো কর্নেলিয়াকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, ভেবেছিল ওর বাবার পরে তাদের দূর্গপ্রধান হবে তার বড় ভাই, সে কিছুই হতে পারবে না। তাই ভেবেছিল কর্নেলিয়াকে বিয়ে করে আলমাঞ্জার দুর্গপ্রধান হবে সে। কিন্তু ফার্ডিনান্ড তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আর তাই সে কর্নেলিয়াকে অপহরন করে নিয়ে এসেছিল। ফার্ডিন্যান্ড এটা বুঝতে পেরে তখনই তার সৈনিকদের নিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে রওনা হয় মেয়েকে উদ্ধারের জন্য।

এদিকে কোয়ামোদো অপেক্ষা করছে পাহাড়ের উপর কখন সাভানা কর্নেলিয়াকে নিয়ে যাবে, কারন আলমাঞ্জা যাওয়ার সেই একটাই পথ বলে জানে তারা। যথারীতি সাভানা পাহাড় পেরোবার জন্য ঘোড়া ছুটিয়ে চলল কর্নেলিয়াকে নিয়ে, আর উপরে পৌঁছাতেই কোয়ামোদো আর ওর দলের লোকেরা গুলি ছুড়তে শুরু করল। ঘোড়ার পায়ে গুলি করায় ঘোড়াটা পরে গেল, আর কর্নেলিয়া ঘোড়াটার নিচে চাপা পরে জ্ঞান হারাল। সাভানার গায়েও গুলি লাগায় সেও লুটিয়ে পরল।

কোয়ামোদো দ্রুত কর্নেলিয়াকে নিয়ে পালাতে চাইল, কারন পাহাড়ের নীচেই দেখতে পাচ্ছে ফার্ডিন্যান্ড তার সৈন্যদের নিয়ে পৌঁছে গেছে, তাদেরকে খুঁজে বের করতেও সময় লাগবে না।

অচেতন কর্নেলিয়াকে তুলে নিল তারা, কোয়ামোদো সাভানার পকেট হাতড়ে সেই মূল্যবান চিঠি হাতিয়ে নিল। চিঠিটা পেয়ে যে বেজায় খুশি হলো, কারন এই চিঠি পেয়ে তার বাবা তার উপর খুব খুশি হবে, কারন এটা ফ্রান্সিসকে কে দেখিয়ে ফার্ডিন্যান্ড কে দেশদ্রোহী প্রমান করতে পারবে। ফ্রান্সিস হলো বর্তমান রাজা ফিলিপের চাচা।

রাজা ফিলিপ নাবালক ছিলেন সময় তার চাচার উপর রাজ্য চালনার ভার ছিল, কিন্তু রাজা ফিলিপ সাবালক হওয়ার পরও ওর হাতে ফ্রান্সিস ক্ষমতা হস্তান্তর করে নি বলেই ফ্রান্স থেকে ফিলিপকে সাহায্য করার জন্য সৈন্য পাঠিয়েছে সরকার, এবং ওদের সাহায্য করার জন্যই ফার্ডিন্যান্ডকে চিঠি দিয়েছে।

এদিকে ঘোড়ার খুড়ের ছাপ অনুসরণ করে পাহাড়ের উপর পৌঁছে গেলেন ফার্ডিন্যান্ড তার সেনাদের নিয়ে, দেখলেন সাভানা পরে আছে, ওর কাছে পুরো ঘটনা শুনতে পেয়ে দ্রুত কোয়ামোদোকে ধাওয়া করতে ছুটলেন, দেখলেন তার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছে ওরা।

সৈন্যরা গুলি ছুড়তে চাইলে ওর মেয়ের গায়ে লাগবে বলে ছুড়তে দিতে চাইলেন না, এর মাঝেই এই সৈন্যের গুলি গিয়ে লাগল কোয়ামোদোর মাথায়। সে লুটিয়ে পরল। ওইদিকে কোয়ামোদোর বাবা ম্যাজেন্টোও শুনতে পেল এই ঘটনা, দ্রুত ওর সৈন্যদের নিয়ে এদিকে আসতে লাগল ছেলেকে বাঁচাবার জন্য। দুইদল মুখোমুখি হলো। ফার্ডান্যান্ড ওদের সাথে পেরে উঠবে না বলে পিছু হটল। ম্যাজেন্টো কি মনে করে মৃত ছেলের পকেট হাতড়ে পেয়ে গেলেন চিঠিটা।

এমন গুরুত্বপূর্ন একটা চিঠি পেয়ে, আর ফার্ডিন্যান্ডকে জব্দ করার এই বিশাল সুযোগ পেয়ে সাথে সাথে তার বড় ছেলে জ্যাভেদো কে দুর্গের দায়িত্ব্য দিয়ে কোয়ামোদোর বাবা রওনা হয়ে গেলেন ফ্রান্সিন্সের কাছে। চিঠির লেখা পড়ে ফ্রান্সিস ভীষন রেগে আর ম্যাজেন্টো গুইশ্যাম্পোর উপর খুশি হয়ে সাথে সাথে ওকে কর্নেল পদে নিয়োগ করে ১০ হাজার সেনাবাহিনী দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন ফার্ডিন্যান্ডের আলমাঞ্জো দুর্গ আক্রমন করার জন্য।

কর্নেলিয়া এখন ম্যাজেন্টোর দুর্গে অসুস্থ বন্দি। ওর সেবার জন্য আনা হলো ডাক্তার, একজন পরিচারিকাকে ওর দেখাশোনার দায়িত্ব্য দেয়া হলো। জ্যাভেদো তার বাবা আর ভাই এর মতো না, সে প্রকৃতপক্ষেই ভালো মনের অধিকারী একজন মানুষ, আর তাই অকারণ রক্তারক্তি তার ভালো লাগে না।

কোয়ামোদোর শেষ্কৃত্যানুষ্ঠানের দিন ওর মা ভেনডেনা ঘোষনা করার নির্দেশ দিলেন জ্যাভেদোকে, ওর মায়ের সাথে আরও সবাই এর জোর দাবি জানালো। ভেনডেটা হল পাল্টা প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষনা দেয়া। কিন্তু জ্যাভেদোর মতে, প্রথমে দোষ করেছে ওর ভাই ফার্ডিন্যন্ডের মেয়েকে অপহরণ করে, এখনও মেয়েটা বিছানায় কাতড়াচ্ছে অসুস্থতায়।

ভেনডাটা তো তারা ঘোষনা করবে যাদের উপর অন্যায় হয়েছে। ভেনডাটা চালু হলে দুই পক্ষে ততদিন পাল্টাপাল্টি রক্তের প্রতিশোধ নেয়া চলতে থাকবে যতদিন না একটা বংশ পুরোপুরি নির্বংশ হয়ে যায়। জ্যাভেদো এই প্রস্তাব এড়িয়ে যেতে চাইল যে, বাবা এসে যা সিদ্ধান্ত নেয়ার নিবে, আমি কোনো ঘোষণা দিব না। এতে ওর মা রাগ হল, ওকে কাপুরুষ বলতেও ছাড়ল না।

এদিকে সাভানা ফার্ডিন্যান্ডের দুর্গে সেবা পেয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠল। ফার্ডিন্যান্ড তো সব সময় মেয়েকে উদ্ধার করতে পারেনি বলে খুব অসহায়ত্ব বোধ করে। সাভানা আবার এগিয়ে এলো, কর্নেলিয়াকে সে আবার উদ্ধার করে আনবে জানাল, ফার্ডিন্যান্ড প্রথমে রাজি হল না, সাভানা পুরোপুরি সুস্থ হয় নি বলে। কিন্তু সাভানা তো নাছোড়বান্দা, সে যাবেই।

ম্যাজেন্টোর দুর্গে সাভানা রাতের অন্ধকারে ডাক্তারের ছদ্মবেশে গিয়ে হাজির হল, তাই তাকে কেউ সন্দেহ করতে পারল না। কর্নেলিয়ার রুমে গিয়ে, ওর পরিচারিকা কে বোকা বানিয়ে বেঁধে রেখে ,পরিচারিকার পোশাক কর্নেলিয়াকে পরিয়ে নিল, এতে তাদের বের হতে দেখে কেউ সন্দেহ করল না, অন্ধকারে মুখও দেখতে পেল না।

ঘোড়ায় চড়ে রওনা হল তারা। কিছুক্ষন পরই ডিনারে বসে পরিচারিকাকে খুঁজে না পেয়ে বুঝতে পারল কিছু একটা গন্ডগোল তো হয়েছেই। জ্যাভেদো তার ঘোড়া নিয়ে রওনা হল ডাক্তার ওদের পরিচারিকাকে নিয়ে কোথায় গেল সেটা দেখার জন্য। কিছুদূর যেতেই দেখতে পেল ডাক্তার ঘোড়া ছুটিয়ে এদিকেই আসছে, সে তখনও অন্ধকারে চিনতে পারল না যে এটা অন্য কেউ। সাভানাই কথা বলে উঠল। ও চাচ্ছিল জ্যাভেদোর ঘোড়াটা নিতে, তাই অপেক্ষা করছিল।

শুরু হল জাভেদো আর সাভানার তলোয়ার যুদ্ধ, জ্যাভেদো আর পেরে উঠল না ,ঘোড়া থেকে পরে গেল আঘাত পেয়ে। সাভানা পারত ওকে এখানে ফেলে রেখেই ঘোড়া নিয়ে চলে যেতে, কিন্তু তা না করে অপেক্ষা করল জ্যাভেদোর খুঁজে ওদের দুর্গের সৈন্যদের আসার জন্য। কারন আঘাতপ্রাপ্ত ওকে এভাবে ফেলে রেখে গেলে নেকড়ের দল এসে আক্রমন করবে। যখন শুনতে পেল আরও ঘোড়ার খুড়ের শব্দ, বুঝল জ্যাভেদোর খুঁজে আসছে। তখন সে ঘোড়া নিয়ে ছুটল কর্নেলিয়াকে সঙ্গী করে।

কর্নেলিয়াকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার খুশিতে ওর বাবা শরীক হতে পারল না, কারন তার আগেই ওদের দুর্গ ঘিরে ফেলল ম্যাজেন্টোর সৈন্যরা। ভাগ্যিস এই আক্রমন হবে জেনে যতটা সম্ভব পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল, হোক সেটা সামান্য।

ম্যাজেন্টো অতিরিক্ত উত্তেজনায় সৈন্যদের প্রথমে থেকে সবার আগে গিয়ে দুর্গ আক্রমন করল আর ফার্ডিন্যান্ডের এক সৈন্যের তলোয়ারের আঘাতে ধরাশায়ী হল। কর্নেলের মৃত্যুতে তখন যুদ্ধ স্থগিত ঘোষনা করা হল। খবর পেয়ে ছুটে এলো জ্যাভেদো ওর মাকে নিয়ে। জ্যাভেদো এসে সাভানার সাথে দেখা হলে ওকে ধন্যবাদ জানালো সেদিন ওকে একা ফেলে না আসার জন্য, জানাল এমন প্রতিবেশি পেয়ে সে খুব আনন্দিত।

সাভানা শুনে অবাক হল যে, সে তো ফ্রান্সের সৈনিক, ওর প্রতিবেশি কি করে হল! তখন কর্নেলিয়া বলল, “আহা, যেতে দিলে তো! বাবা চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছেন, এদেশ ছেড়ে তোমাকে আর যেতে দেয়া হচ্ছেনা।“

বেশ ভালো লাগল গল্পটা- যুদ্ধ, রক্তারক্তি আর বীরত্ব ছাপিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করল বীরত্বের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কোমল মন, যা রক্ত জড়িয়ে নয়, কোমলতা আর মানবিকতা দিয়ে জয় করে নেয় মানুষের হৃদয়।


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

One thought on “কিশোর ক্লাসিক(অ্যাক্রস দ্য পিরেনীজ)

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: