ই-কমার্সে শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহ আরিফা মডেল ই-কমার্স ময়মনসিংহ ময়মনসিংহ বিভাগ সংবাদ by খাতুনে জান্নাত আশা - August 6, 20210 Spread the lovemoreশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল একটা দেশের মানবসম্পদ তৈরীর কারখানা। তাই যে কোনো দেশ বা অঞ্চলের আর্থ সামাজিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভর করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর। আর ছাত্র ও যুবসমাজই হল দেশের চালিকা শক্তি, এই শক্তিকে কাজে লাগাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা তাই অনস্বীকার্য। বিশ্ব এখন এগিয়ে যাচ্ছে ই-কমার্সকে কেন্দ্র করে, কোভিড সিচুয়েশনে বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরের প্রশংসনীয় গ্রোথ হলেও, এখনো এই সেক্টর সম্পর্কে দেশের অধিকাশ জনগোষ্ঠীর ধারণা খুব অস্পষ্ট। এই অস্পষ্টতা দূর করে সম্ভাবনাময় এই সেক্টরকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হলে ই-কমার্স বিষয়ক শিক্ষা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। তাই ই-কমার্স সেক্টরে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ যত বাড়বে, এই খাতের গ্রোথ তত উর্ধ্বমুখী হবে। আর তাই ই-কমার্স সেক্টরের সমৃদ্ধিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে ময়মনসিংহ জেলা ও এর স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে, দেশসেরা অনেকগুলো স্কুল, কলেজ, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক এবং ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এখানে রয়েছে। আর এজন্যই ময়মনসিংহ বাংলাদেশের অন্যতম “শিক্ষা নগরী” হিসেবে পরিচিত হয়ে এসেছে বহু বছর ধরে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকেই শুরু হয়েছিল এই অঞ্চলের শিক্ষাখাতের গৌরবগাঁথা। এক নজরে উচ্চশিক্ষার জন্য ময়মনসিংহের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও বিশ্বের অন্যতম সেরা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। ১৯৬১ সালে মাত্র দুটি অনুষদ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল তখন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নাম দেয়া হয়। এটি ২০১৩-২০১৪ সালের জন্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাজেটের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ওয়েবম্যাট্রিক্স বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং ২০১৭ অনুসারে এটি বাংলাদেশের এক নম্বরের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থান পেয়েছিল। ছবিঃ-বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি অনুষদ এবং ৪১ টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮০৮০ জন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে ই-কমার্স বিষয়ক জ্ঞান প্রদান করে, এই সেক্টরে কাজ করতে উৎসাহিত করা গেলে দেশের কৃষি খাতের ব্যাপক উন্নতির পাশাপাশি ই-কমার্স সেক্টর অনেক বেশি এগিয়ে যাবে। আর কৃষি গবেষনার দিক থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক এগিয়ে, যা কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষি খাতের সমৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানী গবেষণা তৎপরতার মাধ্যমে টেকসই শস্যবীমা কার্যক্রম, উন্নত জাত উদ্ভাবন, ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রমের উন্নয়ন, পশুসম্পদ উপখাত ও ডেয়রি উৎপাদনের উন্নয়ন, স্বল্প ব্যয়ে সেচ নালা তৈরি, উন্নত ধরনের লাঙ্গল ও স্প্রে মেশিন, বাকৃবি জিয়া সার-বীজ ছিটানো যন্ত্র, সোলার ড্রায়ার, উন্নত ধরনের হস্তচালিত টিউবয়েল পাম্প, জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নতমানের দেশি চুলা, মাগুর ও শিং মাছের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল, ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, খাচায় পাঙ্গাস চাষ, পেরিফাইটন বেজড মৎস্যচাষ, দেশি পাঙ্গাসের কৃত্রিম প্রজনন, ডাকউইড দিয়ে মিশ্র মৎস্যচাষ, মাছের জীবন্ত খাদ্য হিসেবে টিউবিফিসিড উৎপাদনের কলাকৌশল, পুকুরে মাগুর চাষের উপযোগী সহজলভ্য মৎস্যখাদ্য তৈরি, শুক্রাণু ক্রয়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তি, স্বল্প ব্যয়-মিডিয়ামে ক্লোরেলার চাষ, মাছের পোনা পালনের জন্য রটিফারের চাষ, মাছের রোগ প্রতিরোধকল্পে ঔষধি গাছের ব্যবহার এবং মলিকুলার পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছের বংশ পরিক্রম নির্ণয়, তারাবাইম, গুচিবাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, ধানক্ষেতে মাছ ও চিংড়ি চাষ, পুকুরে মাছ চাষ, সহজলভ্য মাছের খাদ্য তৈরি, একোয়াপনিক্সের মাধ্যমে মাছ এবং সবজি উৎপাদন, মাছের বিকল্প খাদ্যের জন্য ব্লাক সোলজার ফ্লাই চাষ এবং কচি গমের পাউডার উৎপাদন ইত্যাদি সফল গবেষণা সমৃদ্ধ করছে দেশের কৃষি খাতকে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বীনা কৃষক এবং উদ্যোক্তাদেরকে কৃষিখাতে ইনভেস্ট করতে উৎসাহিত করে, প্রয়োজনীয় সব ধরণের সাহায্য সহযোগীতা এই প্রতিষ্ঠান করে থাকে। ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় সৃষ্ট এই ময়মনসিংহ অঞ্চল প্রাচীন কাল থেকেই উর্বর ভূমি হিসেবে খ্যাত, তাই যুগ যুগ ধরেই কৃষিখাতে এই জেলা বেশ সমৃদ্ধ। আর এই খাতকে আরও এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে এই জেলায় অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম সেরা এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তাই বলা যায়, কৃষি খাতে ময়মনসিংহ জেলার ই-কমার্স সেক্টরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর, যদি একে সঠিক উপায়ে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করা যায়। আর এর জন্যই শিক্ষার্থীদের মাঝে ই-কমার্স জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন, যেন এই সেক্টরকে কেন্দ্র করে শিক্ষিত ই-কমার্স উদ্যোক্তা কৃষিখাতে তৈরী হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ দেশের প্রথম সারির সরকারি মেডিকেল কলেজের একটি ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত “ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ”। এটি ১৯২৪ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাংলার তৎকালীন গভর্নর মিঃ লিটনের নামানুসারে বাঘমারা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল “লিটন মেডিকেল স্কুল”, যেখানে প্রথম চার বছরমেয়াদী এল.এম.এফ. কোর্স চালু ছিল। ছবিঃ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ১৯৬২ সালে একে “ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ”-এ উন্নীত করা হয় এবং মাত্র ৩২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজের প্রথম ব্যাচ “ম-০১”-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এর ১০টি অনুষদের ২৭টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৩০০। প্রতি বছর এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে মোট ২৪৯জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, যার ১০% হয় বিদেশী শিক্ষার্থী। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে অন্যতম হলেন ভূটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টান্ডি দর্জি এবং অভ্র কী-বোর্ডের উদ্ভাবক মেহেদী হাসান খান। কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ বৃহত্তর ময়মনসিংহের একমাত্র বেসরকারী মেডিকেল কলেজ কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ দেশের সেরা বেসরকারী মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা ১৯৯৫ সাল থেকে কমিউনিটি হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সে এর মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৫৯ জন। মেডিকেল সার্ভিস ই-কমার্সের বাইরে নয়। বর্তমান বিশ্বের মেডিকেল ইন্সটিটিউটগুলো ডিজিটাল মেডিকেল টেকনোলোজি বাবদ প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার বা এর বেশি খরচ করছে। তার মানে মেডিকেল প্রোডাক্ট সার্ভিসগুলো ডিজিটালাইজড হচ্ছে, ই-কমার্সে মেডিকেল সেক্টরে জড়িত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। ডাক্তাররা এখন বাসা থেকেই রোগীর ট্রিট্মেন্ট করতে পারছে, রোগীরা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল সার্ভিস এবং ডাক্তারদের সাথে কনসাল্টিং এর এক্সাক্ট সময় জেনে নিতে পারছে, দীর্ঘ সময় হাসপাতালে যেয়ে ওয়েটিং রুমে বসে থাকতে হচ্ছে না। যদিও ডিজিটাল মেডিকেল সার্ভিস ট্র্যাডিশনাল মেডিকেলের সার্ভিসের অলটারনেটিভ হতে পারে না, কারণ সরাসরি রোগী দেখে ডায়াগনোসিস করার দরকার হয়, তবে মেডিকেল সার্ভিস ই-কমার্স সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত হলে অনেক সময় শ্রম বেঁচে যায়। আর তাই প্রথমে ডাক্তার এবং মেডিকেল অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের টেকনোলজি এবং ই-কমার্স এর ব্যবহার, সুবিধা, অসুবিধা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি) বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশাল উপজেলার নামাপাড়ার বটতলায় অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমানে এতে ৫ টি অনুষদের অধীনে মোট ২৩ টি বিভাগে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। ছবিঃ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন সংগঠন সহ শিক্ষামূলক কাজে সক্রিয়। এখানে বছরের অধিকাংশ দিন বিভিন্ন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এবং বিভিন্ন সংঘটন প্রতিনিয়ত কাজ করে, যা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং করতে এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যেমন- চাকরি মেলা, উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সেমিনার, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, টুর্নামেন্ট, জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা, নাট্যোৎসব, স্কিলস হান্ট, রিসার্চ এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের গবেষনায় আগ্রহী করে তোলা, ক্যারিয়ার ক্লাব ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাবের মাধ্যমে দক্ষতা তৈরী ইত্যাদি কার্যক্রম সারাবছর চলতে থাকে। সুতরাং বলা যায়, এটা ময়মনসিংহের অন্যতম সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে দক্ষ জনশক্তি বের হচ্ছে। আর এই দক্ষ জনগোষ্ঠী কে ই-কমার্স সেক্টরে আগ্রহী করে তুলতে পারলে, দেশের এই সম্ভাব্য সেক্টর অনেক এগিয়ে যাবে। ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ময়মনসিংহ শহরে ২০০৭ সালে স্থাপিত একটি স্নাতক পর্যায়ের সরকারি প্রকৌশল কলেজ এটি, যা মাত্র ৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে এর যাত্রা শুরু করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদের অধিভূক্ত এই কলেজটির তিনটি বিভাগে বর্তমানে ৮০০ এর বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা দক্ষ প্রকৌশলী হিসেবে নিজেদের তৈরী করে যাচ্ছে। ছবিঃ ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ই-কমার্স সেক্টরে এরূপ দক্ষ জনশক্তির অংশগ্রহণ বাড়লে এই সেক্টরের অগ্রগতি তরান্বিত হবে। এই প্রকৌশলী কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের দক্ষতাকে ই-লার্নিং এবং ই-কমার্স সেক্টরে কাজে লাগাতে পারে, আর এরজন্যই এই সেক্টরগুলোর সম্ভাবনা সম্পর্কে তাদের অবহিত করতে হবে। আনন্দ মোহন কলেজ ১৮৮৩ সালে উপমহাদেশের সমাজ সংস্কারক আনন্দ মোহন বসু প্রতিষ্ঠিত ‘ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন’টি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯০৮ সালে যাত্রা শুরু করে আজকের আনন্দ মোহন কলেজ নামে। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৩ সালে সরকারীকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালে আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্র ছিল মাত্র ১৭৮ জন ও শিক্ষক ছিলেন ৯ জন। বর্তমানে আনন্দ মোহন কলেজে ২২টি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে এবং শিক্ষক রয়েছেন ২০৭ জন। কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল এবং প্রায় ৫০,০০০ বই নিয়ে আছে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। এই কলেজের ছাত্র ছিলেন প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ, লেখক সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, নীহাররঞ্জন রায়, জাদুকর পিসি সরকার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম মোফাখখারুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. আনোয়ারুল ইসলাম, বিশ্বভারতীর শিক্ষক অরবিন্দ পোদ্দার, লেখক যতীন সরকার, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শামসুর রহমান, বিচারপতি এম এ রশিদ, কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। ছবিঃ আনন্দমোহন কলেজ, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ ময়মনসিংহের সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এর সাফল্যমন্ডিত পথচলা আমাদের গর্বিত করে। প্রতিবছর হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান থেকে, যাদেরকে ই-কমার্স সেক্টরের সমৃদ্ধিতে কাজে লাগাতে পারলে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে সংকটে পরতে হবে না। তাই শিক্ষার্থীদেরকে ই-কমার্স বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে এই সেক্টরে কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দেশে মধ্যম স্তরের প্রকৌশলী তৈরীর লক্ষ্যে ১৯৬৩ খৃষ্টাব্দে ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপিত হয় ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দায়, যা দেশের বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ও বৃহত্তম সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। মোট ২৭.৩৮৫২ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি দু-অংশে বিভক্ত করে রেখেছে। সড়কের পূর্বপাশ্বে একাডেমিক-কাম প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার্কসপ/ল্যাব, শিক্ষক-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনসমূহ, মসজিদ,কেজি স্কুল ও ছাত্রী নিবাস এবং পশ্চিম পার্শ্বে খেলার মাঠ, পুকুরসহ ছাত্রাবাসগুলো রয়েছে। ছবিঃ ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে তিনতলা বিশিষ্ট একটি ভবন, অফিস, লাইব্রেরী, আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ওয়ার্কশপ ভবন ,ল্যাবরেটরি এবং একটি ৪০০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতির জনক বঙ্গবনধু শেখ মুজিবুর রহমান অডিটোরিয়াম। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০০০। এই শিক্ষার্থীগুলোকে ই-কমার্স সেক্টরের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানাতে পারলে, ঠিকভাবে গাইড করতে পারলে যেমন তাদের দক্ষতা কে এই সেক্টরের সমৃদ্ধিতে কাজে লাগানো যাবে, তেমনি ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রেও তারা এগিয়ে যেতে পারবে। উপরোক্ত প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই সমৃদ্ধ নয়, এগুলোর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, সুনিপুণ নির্মানশৈলী এবং সৌন্দর্য এদেরকে পর্যটন প্লেসের মর্যাদাও দিয়েছে, শুধু দরকার সঠিক উপায়ে রিপ্রেজেন্ট করা। তবেই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ অঞ্চলের পর্যটনশিল্পকে সমৃদ্ধ করতে পারে। এদের প্রেজেন্ট করতে হবে ই-কমার্সকে কাজে লাগিয়েই। এছাড়াও ময়মনসিংহ শহরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত আরও কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সহ এই জেলায় ডিগ্রীকলেজ ২৭টি (সরকারী ৩টি, বেসরকারী ২৪টি), চারুকলা ইনষ্টিটিউট ১টি, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১টি, কারিগরি শারীরিক মহাবিদ্যালয় ১টি, ভোকেশনাল ইনষ্টিটিউট ২টি, শিক্ষা মহাবিদ্যালয় ১টি, কামিল মাদ্রাসা ৪টি, ফাযিল মাদ্রাসা ৪৭টি এবং ৪২টি আলিম মাদ্রাসা রয়েছে, যেগুলো থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত জনগোষ্ঠী তৈরী হচ্ছে। শুধুমাত্র ময়মনসিংহ জেলা থেকেই প্রতিবছর লাখো শিক্ষার্থী স্নাতক বা স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছে এবং ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটছে। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের জন্য দেশে কর্মক্ষেত্রের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না বলে বেকারত্বের হার দেশে বেড়েই চলেছে। আর তাই এই শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করতে ই-কমার্স হতে পারে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। আর এরজন্য প্রথমে ই-কমার্স এর জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই সেক্টরকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে নিজেদের ক্যারিয়ার ঘরে তোলা যায়, নতুন নতুন ইনোভেটিব আইডিয়া গুলোকে কিভাবে কাজে লাগিয়ে দেশ ও সমাজের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখা যায়, চাকরি প্রার্থী না হয়ে বরং চাকরি দাতা হওয়া যায়, এই শিক্ষা এবং সচেতনতা শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরী করতে হবে। আর শিক্ষার্থীদের ই-কমার্সমুখী করতে অবশ্যই এডুকেশন গাইডলাইনে ই-কমার্স কোর্স সংযুক্তিকরণ করা প্রয়োজন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিমাসে ই-কমার্স বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করা যেতে পারে, ক্যারিয়ার ক্লাবগুলো নিয়মিত ই-কমার্স বিষয়ক জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে, ই-কমার্স ও ই-লার্নিং ক্লাব সংঘটিত হতে পারে। শিক্ষা নগরী খ্যাত ময়মনসিংহের শিক্ষার গৌরব বৃদ্ধি করতে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত ই-কমার্স চর্চা এবং আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষার পাশাপাশি কৃষি, শিল্প, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং পর্যটনে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। এই অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ই-কমার্স সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী হলে এই অঞ্চলের সকল সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে সারাদেশ এবং বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে খুব দ্রুত। ই-কমার্সকে কাজে লাগিয়ে কন্টেন্ট রাইটিং, পডকাস্ট, ব্লগিং, ভিডিও প্রামান্যচিত্র তৈরী ইত্যাদির মাধ্যমে নিজ অঞ্চলের বিশেষ পণ্য এবং জায়গাগুলোকে আকর্ষনীয়রূপে প্রেজেন্ট করা যায়, যা খুব সহজে মানুষকে আকর্ষন করতে পারে। এভাবেই একটা জেলার ব্র্যান্ডিং করা সম্ভব, শুধু দেশে না সারাবিশ্বেই একে পরিচিত করা সম্ভব। তাই ময়মনসিংহ অঞ্চলের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে ই-কমার্স সেক্টরকে এগিয়ে নিতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা আবশ্যক। সবশেষে বলা যায়, বৃহত্তর এই ময়মনসিংহ জেলার বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী নিজেদের দক্ষ করে তুলবে, ই-কমার্স সেক্টরে ইনোভেটিব আইডিয়া জেনারেশনের মাধ্যমে নিজ জেলার ব্র্যান্ডিং এর পাশাপাশি নিজেদেরকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে তুলবে এটাই কাম্য। লেখকঃ খাতুনে জান্নাত আশা Like this:Like Loading... Related Spread the lovemoremore