
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ডলারের মূল্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এর ঘাটতি এসব নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা বাড়ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে সংকট তৈরি হচ্ছে। ডলার যেহেতু গ্লোবাল কারেন্সি তাই বাংলাদেশের টাকা, ভারতীয় রুপি বা পাকিস্তানি রুপির মত বিভিন্ন দেশের মুদ্রা বা কারেন্সির উঠানামা সেসব দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো বা খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন প্রধানত ডলারে হয়, ফলে এর রিজার্ভ কমে গেলে যে কোন দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে পরতে পারে।
তাই বিভিন্ন দেশ এখন আমদানি কমানোর রাস্তা খুঁজছে এবং আমদানি করতে হয় এমন পণ্যের ব্যবহার কমাতে উদ্যোগী হয়েছে। বিদ্যুৎ আর যানবাহনের জন্য যে জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয় ডলারে তার ব্যয় কমাতে বিভিন্ন দেশ চেষ্টা করছে।
ঘুরে ফিরে সেই ডলারের রিজার্ভ কমে যাওয়া নিয়েই শঙ্কিত সবাই এবং এজন্য ডলারের গুরুত্ব নিয়ে আমাদের এই লেখাটি। এর একটা বড় অংশ ইনভেস্টোপিডিয়া ওয়েবসাইটের আর্টিকেল থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। সেই লেখার লিঙ্ক এখানে দেয়া হলো।
ইউএস ডলার বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী কারেন্সি, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এটি কীভাবে এতোটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং কীভাবে বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সিতে পরিণত হয়েছে এই ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা খুব কমজনেরই আছে।
ইউএস ডলার আমেরিকা ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি দেশের অফিসিয়াল কারেন্সি। এর বেশ সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, সেদিকে আমরা আপাতত না যাই। তবে প্রথমবার আমাদের সবার চেনা এই ডলার কারেন্সি প্রিন্টেড হয়েছিল ১৯১৪ সালে। ডলার প্রিন্ট শুরু হয়েছিল ফেডারেল রিজার্ভ আইন পাস এবং আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আরও এক বছর পর। সেই সময়ই ইস্যু করা প্রথম রিজার্ভ নোট ছিল এন্ড্রু জ্যাক্সনের ছবি সংবলিত ১০ ডলার মূল্যের নোট। এর আরও তিন দশক পর ইউএস ডলার বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সি হয়ে ওঠে।
শর্ট নোটঃ
১। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর ১৯১৪ সালে প্রথমবার ডলার কারেন্সি মুদ্রিত হয়।
২। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্ররা গোল্ড সরবরাহের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থ প্রদান করেছিল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গোল্ডের সর্ববৃহৎ সংগ্রাহকে পরিণত করেছিল
৩। যুদ্ধের পর দেশগুলো তাদের কারেন্সি ডলারে স্থির রাখে এবং গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড এর অবসান ঘটে।
৪। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল রিপোর্ট করেছিল যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকগুলোর রিজার্ভের ৫৯% ইউএস ডলার এ সংরক্ষিত আছে।
৫। বিশ্ব বাজারে এমন অবস্থান থাকার পরও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কারেন্সি তালিকার ১০ম স্থানে রয়েছে ইউএস ডলার (মূল্যের দিক থেকে কুয়েতি দিনার সবচেয়ে দামি মুদ্রা)।
ইউএস ডলারের ইতিহাসঃ
১৬৯০ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কাগজের মুদ্রার নথিভুক্ত ব্যবহার হয়, যখন ম্যাসাচুসেটস বে কলোনি দ্বারা ঔপনিবেশিক নোট জারি করা হয়েছিল। এই নোটগুলো সামরিক অভিযানের অর্থায়নের কাজে ব্যবহার হতো। এটি ১৭৭৬ সালের আগে নয়, যখন প্রথম ২ ডলার বিল প্রবর্তিত হয়েছিল স্বাধীনতার নয় দিন আগে। এর নয় বছর পর, ১৭৮৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অফিসিয়ালভাবে স্প্যানিশ আমেরিকান পেসোর সাইন হিশেবে ডলার সাইন ব্যবহার শুরু করে। ১৮৬৩ সালে মার্কিন সরকার মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী অফিস (OCC) এবং ন্যাশনাল কারেন্সি ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করে। এই দুটি সংস্থাকে নতুন নোট পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ১৮৬৯ সালে ব্যুরো অব এনগ্রেভিং অ্যান্ড প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রিতভাবে মুদ্রা ছাপানো শুরু করে। এর আগে প্রাইভেট কোম্পানিগুলো মুদ্রা ছাপাতো। আমরা বর্তমানে যে ডলারকে জানি তা এবং ফেডারেল রিজার্ভ তৈরির এক দশকেরও বেশি আগে ১৮৯০ সালে ইউএস ট্রেজারি অফিসিয়ালভাবে দেশের আইনি দরপত্র জারির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল।
গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডঃ
১৯১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল রিজার্ভ অ্যাক্টের মাধ্যমে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুদ্রা ব্যবস্থার অস্থিতিশীলতা এবং অবিশ্বস্ততা দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা পূর্বে বিভিন্ন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে জারিকৃত বা মুদ্রিত নোটের উপর ভিত্তি করে ছিল। এই সময়টায় মার্কিন অর্থনীতি বিশালাকার ধারণ করে এবং যুক্তরাজ্যকে ছাড়িয়ে যায়।
মুদ্রা ব্যবস্থা স্থিতিশীল করার জন্য বেশির ভাগ উন্নত দেশ তাদের মুদ্রাকে গোল্ডে রূপান্তর করে। কিন্তু ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে অনেক দেশ তাদের সামরিক ব্যয় মেটাতে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড স্থগিত করে কাগজের মুদ্রার ব্যবহার শুরু করে, যা তাদের মুদ্রার মান কমিয়ে দেয়। যুক্তরাজ্য যদিও তখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মুদ্রা হিশেবে নিজেদের অবস্থান ঠিক রাখতে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ধরে রেখেছিল, কিন্তু যুদ্ধের তৃতীয় বছরে এসে প্রথমবার তাদেরকেও মুদ্রা ধার করতে হয়েছিল।
বিশ্বের অনেক দেশের জন্য তখন পছন্দের ঋনদাতা হয়ে উঠেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তারা ডলার নির্ধারিত মার্কিন বন্ড কিনতে শুরু করছিল। যুক্তরাজ্য অবশেষে ১৯৩১ সালে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড পরিত্যাগ করে যা পাউন্ডে লেনদেনকারি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীদের একাউন্টগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। আর ততদিনে মার্কিন ডলার নেতৃস্থানীয় আন্তর্জাতিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবে ব্রিটিশ পাউন্ডের জায়গা দখল করে নেয়।
ব্রেটন উডস চুক্তিঃ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতোই, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়ার আগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্র পক্ষদের অস্ত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের প্রধান সরবরাহকারী হিশেবে কাজ করেছিল। বেশির ভাগ দেশই তখন সেগুলোর মূল্য পরিশোধ করেছিল গোল্ডের মাধ্যমে, যা যুদ্ধশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের সর্বাধিক গোল্ডের মালিক করেছিল। যেগুলো দেশ এভাবে তখন তাদের গোল্ড রিজার্ভ খালি করেছিল, তাদের জন্য পুনরায় আর গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডে ফিরে আসা সম্ভব ছিল না।
এই সমস্যার সমাধানে বিশ্বের ৪৪টি মিত্র দেশের ৭০০ প্রতিনিধি ১৯৪৪ সালে নিউ হ্যাম্পশায়ারের ব্রেটন উডে মিলিত হয় বৈদেশিক মুদ্রা পরিচালনার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা ঠিক করতে যা কোনো দেশের জন্যই ক্ষতির কারণ হবে না। সেই প্রতিনিধিদল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে বিশ্বের মুদ্রা ব্যবস্থা আর গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডে থাকবে না, কিন্তু তা মার্কিন ডলারে পেগ করা যেতে পারে। এটিই “ব্রেটন উডস চুক্তি” নামে পরিচিত।
এই চুক্তিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ডলারের সাথে তাদের নিজস্ব মুদ্রার ফিক্সড বিনিময় হার বজায় রাখার জন্য। পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র চাহিদা অনুযায়ী গোল্ডের জন্য মার্কিন ডলার যোগান দিবে। দেশগুলো তখন ডলারের তুলনায় তাদের নিজস্ব মুদ্রার দুর্বল বা শক্তিশালী হয়ে উঠাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তারা তাদের মুদ্রা কেনাবেচা করতে পারত।
মার্কিন ডলারের বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রায় পরিণত হওয়াঃ
ব্রেটন উড সম্মেলনের মাধ্যমে মার্কিন ডলারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রার মুকুট দেওয়া হয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম গোল্ড রিজার্ভকারী হিশেবে সমর্থন পেয়েছিল। গোল্ডের পরিবর্তে তখন অন্যান্য দেশগুলো মার্কিন ডলার রিজার্ভ করতে শুরু করে এবং তাদের ডলার রিজার্ভের নিরাপদ উপায় হিশেবে তারা মার্কিন ট্রেজারি সিকিউরিটিজ কিনতে শুরু করে।
ট্রেজারি সিকিউরিটিজের চাহিদা, ভিয়েতনাম যুদ্ধ এবং গ্রেট সোসাইটির প্রোগ্রামের অর্থায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ঘাটতি ব্যয় মেটাতে গিয়ে যুক্তরাষ্টের কাগজের মুদ্রা সরবরাহ অনেক বেড়ে যায়। যেসব দেশ ডলার রিজার্ভ করেছিল তারা তখন ডলারের স্থিতিশীল বাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ডলারকে আবার গোল্ড রিজার্ভে রূপান্তর করতে শুরু করে। গোল্ডের চাহিদা এতোই বেড়ে যায় যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হোন এবং ডলারের সাথে গোল্ডের কানেকশন বিচ্ছিন্ন করেন, যা বর্তমানের ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেটের দিকে পরিচালিত করেছিল। যদিও তখন স্ট্যাগফ্ল্যাশন শুরু হয়েছিল অর্থাৎ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং উচ্চ বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু মার্কিন ডলার রিজার্ভ মুদ্রা হিশেবেই থেকে গিয়েছিল।
মার্কিন ডলারের বর্তমান অবস্থাঃ
বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা হিশেবে ডলার আজও বর্তমান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অনুসারে, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি তাদের রিজার্ভের প্রায় 59% মার্কিন ডলারে রাখে। ডলার রিজার্ভের কিছু অংশ ক্যাশে এবং কিছু অংশ ইউএস বন্ড যেমন ইউএস ট্রেজারি বন্ডে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ডলার নির্ধারিত ঋন বাড়ছে, ২০২২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এর পরিমাণ ১৩.৪ ট্রিলিয়নে পৌঁছেছে। অনেকে তাই মনে করবে যে, এটি ডলারকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রায় পরিণত করেছে। তবে CMC মার্কেট অনুসারে, বিশ্ব বাজারে ডলারের অবস্থান এবং এর উপর এতোটা নির্ভরতা থাকার পরও বর্তমানে ১০ম শক্তিশালী মুদ্রা হিশেবে স্থান পেয়েছে ডলার। এই সাইটটি সাইটটি কুয়েতি দিনারকে সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা হিসাবে স্থান দিয়েছে যেখানে ব্রিটিশ পাউন্ড এবং ইউরো যথাক্রমে পঞ্চম এবং অষ্টম স্থান অর্জন করেছে।
কোন দেশের মুদ্রা পরবর্তী বিশ্ব রিজার্ভ মুদ্রা হতে পারে?
বিশ্বের পরবর্তী রিজার্ভ মুদ্রা হিশেবে ডলারের জায়গা দখল করার মতো বেশ কয়েকটি বিকল্প মুদ্রা আছে। সর্বাধিক ব্যবহৃত রিজার্ভ মুদ্রা হিশেবে এখন ডলারের পরেই আছে ইউরো এবং এটি ডলারের স্থান দখল করতে পারে যদি অর্থনৈতিক অবস্থা এর অনুকূলে যায়। তবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) কেন্দ্রীয় ট্রেজারি ইউনিটের অভাব রয়েছে, যা এক্ষেত্রে একটি বাঁধা। চীনের রেনমিনবিও ডলারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, এ দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা তাই উপলব্ধি করছেন।
গ্লোবাল কারেন্সি হিসেবে ডলারের আধিপত্য ভাঙতে চাইছে যেসব দেশ তাদের মধ্যে প্রধান হল চীন এবং রাশিয়া। বিশেষ করে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু হবার পর রাশিয়া এর প্রয়োজনীয়তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। অন্যদিকে চীন চায় নতুন এক বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠুক যেখানে আমেরিকার দাপট কমবে এবং চীনের গুরুত্ব বাড়বে। আর এজন্যই গ্লোবাল কারেন্সি হিসেবে ডলারের আধিপত্য ভাঙতে চায় তারা।
কাজটা মোটেও সহজ নয়। কারন সারা বিশ্বের সব কেন্দ্রিয় ব্যাংক গুলোতে যে পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে তার ৬০% হল ডলারে। আর এরপরে আছে ইউরো ২০%। ইউরো দেশ গুলো আবার আমেরিকার বেশ ঘনিষ্ঠ মিত্র। তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর এমনকি সামরিক দিক থেকেও আমেরিকার খুব ঘনিষ্ঠ মিত্র।
রাশিয়া, চীনের পাশাপাশি ভারতও তাদের নিজস্ব মুদ্রা রুপিতে বৈদেশিক বানিজ্যের লেনদেন চালাতে আগ্রহী। তবে ভারতের সাথে চীনের রাজনৈতিক সম্পর্ক অনেক দশক ধরেই খারাপ। তাই ভারত আর চীনের মধ্যে ডলারকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন কতটা টেকসই হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাবে।
ডলারের বাইরে গিয়ে নিজেদের মুদ্রায় লেনদেনের অন্যতম প্রধান কারণ হলো, ডলারের উপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীলতা। এটিকে আমেরিকার একটি অস্ত্রে পরিণত করে ফেলেছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সময় আমেরিকা আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার উপর নানা ধরনের বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে রাশিয়া ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ধাবিত হতে পারে।
ডলারকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের মুদ্রায় লেনদেনের কিছু সুবিধা অবশ্যই আছে কিন্তু অসুবিধাও কম নয়। ডলারের মূল্য মোটামুটি স্থিতিশীল এবং বিশ্বের প্রায় সব দেশ ডলারকে কেন্দ্র করে গত প্রায় ১০০ বছর ধরে বৈদেশিক বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। এখন নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন করতে গেলে তা জটিলতা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশকে তাহলে ভারতের সাথে টাকা-রুপি, জাপানের সাথে টাকা-ইয়েন, ব্রিটেনের সাথে টাকা-পাউন্ড, জার্মানির সাথে টাকা-ইউরো এমনি ভাবে লেনদেন পরিচালনা করতে হবে যা মোটেও সহজ হবে না।
কোন দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যার জন্য সে দেশের মুদ্রার মান অনেক কমে যেতে পারে। যেমন গত ১ বছরে শ্রীলংকার রুপি আর পাকিস্তানি রুপির মান কমে গেছে।
গ্লোবাল কারেন্সি হিসেবে ডলারের আধিপত্য শেষ হবার কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই। চীন, রাশিয়া আর ভারত এ নিয়ে আগ্রহী হলেও বিশ্বের বেশীরভাগ দেশ এ নিয়ে এখনো খুব বেশি আগ্রহী নয় বা সত্যিকার কোন উদ্যোগ তারা নিচ্ছে না। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে আমেরিকার ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের উদাহরণ বিভিন্ন দেশকে তাদের নিজেদের মুদ্রায় বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেন বাড়াতে সিরিয়াস ভাবে ভাবতে শেখাবে তা বলা যায়।
লেখকঃ
রাজিব আহমেদ, সাবেক ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এবং
খাতুনে জান্নাত আশা, রিসার্চার, দেশি পণ্য ই-কমার্স