You are here
Home > প্রযুক্তি > আইপি এড্রেস (IP Address) কি? এর কাজ, ভার্সন এবং প্রকারভেদ

আইপি এড্রেস (IP Address) কি? এর কাজ, ভার্সন এবং প্রকারভেদ

আইপি এড্রেস (IP Address) কি? এর কাজ, ভার্সন এবং প্রকারভেদ
Spread the love

আইপি এড্রেস (IP Address)

ইন্টারনেট একটা আলাদা জগত। সেই জগতে আপনার পরিচয় বা ঠিকানা কি? কি পরিচয়ে আপনি  ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন, বিভিন্ন ডাটা বা তথ্য আপনার ডিভাইসে করায়ত্ত করছেন? 

যেহেতু আমাদের জীবনযাত্রা এখন টোটালি ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পরেছে, তাই এই জগতের সবকিছু সম্পর্কে আমাদের ভালো ধারণা থাকা চাই। 

আর তাই ইন্টারনেট জগতে আপনার পরিচয় এবং ঠিকানা সম্পর্কে জানতে হলে আইপি এড্রেস কি এবং কিভাবে কাজ করে জানতে হবে, এর সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। 

আইপি এড্রেস(IP Address) কি? 

আইপি এড্রেস নামটা প্রায় সবারই বেশ পরিচিত। কিন্তু এটার মানে আসলে কি, এই সম্পর্কে হয়ত বা স্পষ্ট ধারণা সবার নেই। এই লেখাটা তাদের জন্যই। 

আইপি এড্রেস (IP Address) এর পূর্ণরূপ হল “ইন্টারনেট প্রোটোকল এড্রেস (Internet Protocol Address)” । 

IANA(Internet Assigned Numbers Authority) সংস্থা আইপি এড্রেস ম্যানেজমেন্ট করে থাকে। 

আপনার ফোন, ল্যাপটপ বা যে কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস যখন আপনি ইন্টারনেটে কানেক্ট করবেন, ঠিক তখনই প্রত্যেক ডিভাইসের জন্য সেটার আলাদা আলাদা ইউনিক আইপি এড্রেস তৈরী হয়ে যাবে। একটা ডিভাইসের আইপি এড্রেস কোনোভাবেই আরেকটার সাথে মিলবে না। ইন্টারনেটে আপনি যত ডাটা বা তথ্য আদান-প্রদান করবেন সবই এই আইপি এড্রেসের মাধ্যমেই হবে। 

সহজ কথায় একে আপনার নিজের বাড়ির সাথে তুলনা করতে পারেন। কেউ যদি আপনার বাসায় আসতে চায় বা কোনো পার্সেল পাঠাতে চায়, তবে তো অবশ্যই তাকে যাস্ট আপনার এলাকার নাম বলবেন না। বাসার নাম, নাম্বার সহ সম্পূর্ণ ঠিকানা দিবেন, যা হবে ইউনিক। সেই রকম ইউনিক একটা এড্রেসই ইন্টারনেট আপনার ডিভাইসের জন্য তৈরী করবে, ইন্টারনেট জগতে আপনার তথ্য আদান-প্রদান করার জন্য। 

এই আইপি এড্রেস কিভাবে কাজ করে তার আগে জেনে নেই ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে!

ইন্টারনেট হলো তথ্য বা ডাটা আদান-প্রদান মাধ্যম। ইন্টারনেট জগতে যা দেখি, যা পড়ি এই সব তথ্য একটা নির্দিষ্ট অনলাইন সার্ভারে জমা থাকে। আমরা ইন্টারনেটে যখন কোনো কিছু সার্চ করি বা কোনো ওয়েবসাইট ভিজিট করি, যেসব তথ্য দেখতে পাই, সেই সব তথ্য সার্ভার থেকে ডাউনলোড করা তথ্য।

ব্লকচেইন প্রযুক্তি কি? কিভাবে কাজ করে?

কোনো ওয়েবসাইট এড্রেস আমরা যখন এন্ট্রি করি ব্রাউজারে, তখন ব্রাউজার সেটাকে ওয়েবলিংক থেকে আইপি এড্রেসে রূপান্তর করে ডিএনএসের মাধ্যমে পুরো ইন্টারনেট জগত সার্চ করে, যে সার্ভারে সেই আইপি এড্রেস আছে সেখানে গিয়ে সেটাকে আমাদের সামনে নিয়ে আসে। অর্থাৎ আমাদের আইপি এড্রেসে সেই ডাটাগুলো পাঠিয়ে দেয়। একটা নির্দিষ্ট আইপি এড্রেস ছাড়া বিশাল ইন্টারনেট জগত থেকে কোনো ভাবেই ডিভাইসগুলোকে আলাদা করা যেত না, আর তথ্য আদান-প্রদানও করা যেত না।

আইপি এড্রেসের মাধ্যমেই এক ডিভাইস থেকে আরেক ডিভাইসে নির্দিষ্ট আইডেন্টিটির মাধ্যমে তথ্য বিনিময় সহজ হয়েছে।

 

আইপি এড্রেস কিভাবে কাজ করে?

আইপি এড্রেসের দুইটা ভার্সন রয়েছে –

১) আইপিভি৪(IPV4) এবং

২) আইপিভি৬(IPV6)

এই দুটোর মাঝে সর্বাধিক পরিচিত এবং বহুপ ব্যবহৃত আইপি ভার্সন হল আইপিভি৪(IPV4)।  আইপিভি৬ এখনো এতোটা জনপ্রিয়তা পায় নি। 

আইপিভি৪(IPV4)

আইপিভি’র চতুর্থ ভার্সন হল IPV4, যা ১৯৮৩ সালে প্রথম লঞ্চ করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে একটা নেটওয়ার্কের অভ্যন্তরীণ ডিভাইসগুলোকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়। 

IPV4  হল একটি ৩২ বিটের বাইনারী নাম্বার, যা কিছু “Addressing System” এর মাধ্যমে কাজ করে এবং সর্বোচ্চ ৪.৩ বিলিয়ন বা ৪৩০ কোটি এড্রেস জেনারেট করতে পারে। কিন্তু সারাবিশ্বে বর্তমানে সাড়ে ৪ বিলিয়নের বেশি ইন্টারনেট ইউজার থাকায় আইপিভি৪ ভার্সনের আইপি এড্রেস শেষ হয়ে গিয়েছে। 

আইপিভি৪ এর চারটি অংশ থাকে, এই প্রত্যেক অংশে ৮টি করে বিট একটি করে অক্টেট গঠন করে, ৩২ বিটের জন্য চারটি অক্টেট গঠিত হয় এবং প্রত্যেক অক্টেট .ডট দ্বারা আলাদা থাকে। প্রথম দুটি অক্টেট নেটওয়ার্ক আইডি এবং পরের দুইটি অক্টেট হোস্ট আইডি প্রকাশ করে।

আইপিভি৪ এর ভ্যালু ০ থেকে ২৫৫ পর্যন্ত সংখ্যা হয়ে থাকে। 

একটা আইপি এড্রেসকে তিন ভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে-

১) বাইনারি – 11001011.10001011.1011011.10

২) ডটেট ডেসিমাল 103.119.95.21..

৩) হেক্সাডেসিমাল- CB:5B:8B:2

আইপি এড্রেসের এসব দুর্বোধ্য সংখ্যা মনে রাখা সহজ নয়, তাই ডোমেইন নেইম ব্যবহার করা হয়। 

আচ্ছা-

IPV4 ভার্সনের এড্রেস যে শেষ হয়ে গিয়েছে, তবে এখনো আমরা এই ভার্সনের আইপি ইউজ করছি কি করে? 

হুম, এটা সম্ভব হয়েছে এনএটি(NAT) বা নেটওয়ার্ক এড্রেস টেকনোলজির কারণে। এনএটি একটা ইউনিক হোস্ট আইপি এড্রেসের ভেতরে আরো অনেকগুলো লোকাল আইপি এড্রেস তৈরী করতে পারে। 

সহজ উদাহরণ দেই-

আমরা যখন রাউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকশন নেই, তখন কিন্তু অনেকগুলো ডিভাইস সেটার সাথে কানেক্ট করি। আর একেক ডিভাইস থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য সার্চ করি। কোনোটা দিয়ে ফেসবুক, কোনোটা দিয়ে ইউটিউব বা কোনোটা দিয়ে শুধু গুগল ব্যবহার করি। প্রত্যেকটা ডিভাইস কানেক্ট করার পর, সেটার তথ্য আলাদা আলাদা ভাবে ব্রাউজারগুলো প্রথম রাউটারে পাঠায়। রাউটার সেই সব আলাদা আলাদা লোকাল আইপি থেকে পাওয়া রিকুয়েষ্টকে একটা হোস্ট আইডির মাধ্যমে সার্ভারে পাঠাবে। রাউটার আবার সার্ভার থেকে ডাটাগুলো রিসিভ করে লোকাল আইপিগুলোতে পাঠাবে। ইন্টারনেটে ডাটাগুলো আদান-প্রদান হচ্ছে কিন্তু হোস্ট আইপির মাধ্যমেই। 

Baidu vs Google: A comparison

আইপিভি৬

আইপিভি৪ এর লিমিট শেষ হয়ে গিয়েছে, আর তাই এখন অনেক বেশি সুবিধা নিয়ে আইপিভি৬ এসেছে মোস্ট আপডেটেড ভার্সন হিসেবে ১৯৯৫ সালে। 

IPV4 এর থেকে IPV6 অনেক বেশি শক্তিশালী। এটি ১২৮ বিটের একটি এড্রেসিং সিস্টেম। এর ৩৪০ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বা অগণিত ইউনিক এড্রেস তৈরী করার ক্ষমতা আছে। 

একটা মানুষের কয়েক লাখ ডিভাইস থাকলেও এর ইউনিক এড্রেস ব্যবহার  কখনো শেষ হবার নয়। কারণ এর সাথে NAT সিস্টেম ইউজ করা হলে, একটা মাত্র ইউনিক এড্রেস দিয়েই একটা নেটওয়ার্ক এর অন্তর্ভুক্ত সব ডিভাইসে তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে। 

IPV6 এর আরেকটা বড় সুবিধা হল, এর স্পীড IPV4 এর চেয়ে অনেক বেশি ফাস্ট। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারে কয়েকগুন বেশি স্পীড পাওয়া যাবে। 

তবে এখন পর্যন্ত আইপিভি৬ এড্রেস তেমন ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয় নি। হিউজ পরিমাণ ইউজার এক ভার্সন থেকে আরেক ভার্সনে মুভ করতে বেশ সময় লাগবে। কারণ আইপিভি৬ এ পুরোপুরি মুভ করতে হলে, সার্ভার, ডোমেইন এড্রেস, ব্রডব্যান্ড ইত্যাদি সব জায়গায়ই এর ব্যবহার শুরু করতে হবে। তবে ধীরে ধীরে অনেকেই এর ব্যবহার করতে শুরু করেছে। 

নিজের আইপি এড্রেস (IP address) বের করবেন কিভাবে?

আমাদের নিজেদের মোবাইল, ল্যাপটপ বা ডিভাইসগুলোর আইপি এড্রেস (IP address) আমরা কিভাবে পেতে পারি, তাই জানব এখন। 

নিজেদের ডিভাইসের আইপি আমরা দুইভাবে পেতে পারি-

1) Windows Command Prompt এর মাধ্যমে।

2) Interest Search করে 

  

1) Windows Command Prompt এর মাধ্যমে পেতে সেই কম্পিউটারের উইন্ডোজ লোগোর পাশের সার্চ বক্সে ঢুকে “CMD” টাইপ করলেই “Command prompt” নামের একটা অপশন চলে আসবে। এতে গিয়ে মাউসের রাইট বাটন ক্লিক করে “run as administration” এ ক্লিক করলেই “command prompt” ওপেন হয়ে যাবে। এরপর এতে কি-বোর্ড ব্যবহার করে “ipconflg” টাইপ করে Enter চাপলেই command prompt dialog box এর ভেতর নিজের কম্পিউটারের আইপি এড্রেস দেখা যাবে।

2) Interest Search করে বের করা খুবই ইজি। যে ডিভাইসের আইপি জানতে চান, সেই ডিভাইসের ব্রাউজারে ঢুকে যাস্ট গুগল সার্চ করবেন My IP লিখে। আর সাথে সাথে আপনার পাবলিক আইপি, লোকেশন, নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার,ম্যাপ এবং আরও কিছু তথ্য সহ আপনার সামনে চলে আসবে। 

অথবা, 

সরাসরি “whatismyipaddress.com” এ ঢুকলেই ডিভাইসের IP address এবং এর সাথের রিলেটেড সব তথ্য চলে আসবে। 

ইন্টারনেট প্রটোকল বা IP এড্রেসের প্রকারভেদ

মূলত দুই ধরনের IP address রয়েছেঃ

1) Private IP address

2) Public IP address

Private IP address

ব্যক্তিগতভাবে কোনো বাসা, অফিস বা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থাকা, সব ডিভাইসের IP address হল Private আইপি এড্রেস। একটি cable network বা wi-fi network এর সাথে যুক্ত সব ডিভাইসগুলোর একটা সমন্বিত network address তৈরী হয়, সেটাই প্রাইভেট আইপি এড্রেস। এই নেটওয়ার্ক এর বাইরের কেউ এটি ব্যবহার করতে পারবে না। 

Public IP address

এক্ষেত্রে প্রত্যেকটা ব্যবহারকারীর প্রতিটি ডিভাইসের জন্য আলাদা আইপি এড্রেস থাকবে, যেগুলো ISP(Internet Service Provider) দ্বারা প্রদান করা হয়। পাবলিক আইপি এড্রেস গ্লোবালি রাউটেবল আইপি এড্রেস, যা আইপিভি৬ এর এড্রেস ব্যবহার করে থাকে। 

সাইবার ক্রাইম ঠেকাতে আইপি এড্রেসের ভূমিকা

ইন্টারনেট জগতে অপরাধের শেষ নেই। হ্যাকিং, ভাইরাস, পাইরেসি, তথ্য বা ছবি চুরি এবং অপব্যবহার সহ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাবে মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়।

 ইন্টারনেটে অপরাধের পরিমান বেশি, কারণ বেশির ভাগই পরিচয় গোপন রেখে, বেনামে এসব অপরাধ করে থাকে। ভিক্টিমরা বেশির ভাগ সময় তাদের নাগাল পায় না বলে, উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারে না বা কিভাবে ব্যবস্থা নিবে সেই ব্যাপারটা জানেই না। 

 

তবে এখন প্রত্যেকটা দেশেই সাইবার ক্রাইমের শাস্তির জন্য নতুন আইন করা হচ্ছে এবং অপরাধী যতই নিজের আসল নাম, পরিচয় ব্যবহার না করে অপরাধ করুক না কেন, তার ডিভাইসের আইপি এড্রেস ঠিকই সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের নিরাপত্তা রক্ষীরা সহজেই খুঁজে বের করতে পারবে। কারণ ইন্টারনেটের সাথে ডিভাইস কানেক্ট করা মানেই তার আইপি এড্রেস লোকেশন সহ ইন্টারনেট জগতে উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া। 

সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে তাই আইপি এড্রেসের ভূমিকা অনেক বেশি।

আশা করছি এই লেখা পড়ে আইপি এড্রেস সম্পর্কে ডিটেইলস জানতে পেরেছেন। তারপরও কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। 


Spread the love
খাতুনে জান্নাত আশা
This is Khatun-A-Jannat Asha from Mymensingh, Bangladesh. I am entrepreneur and also a media activist. This is my personal blog website. I am an curious woman who always seek for new knowledge & love to spread it through the writing. That’s why I’ve started this blog. I’ll write here sharing about the knowledge I’ve gained in my life. And main focus of my writing is about E-commerce, Business, Education, Research, Literature, My country & its tradition.
https://khjasha.com

4 thoughts on “আইপি এড্রেস (IP Address) কি? এর কাজ, ভার্সন এবং প্রকারভেদ

  1. আপু অনেক কিছুই জানতে পড়লাম আপনার লেখাটা পড়ে।
    প্রতিনিয়তই আপনার লেখার মাধ্যমে নতুন কিছু জানতে পারবো এটাই আশা করি।

Leave a Reply

Top
%d bloggers like this: